দ্বিতীয় মেঘনা ও গোমতী সেতু উদ্বোধনের পর

পাল্টে গেছে দৃশ্যপট

দ্বিতীয় মেঘনা ও গোমতী সেতু উদ্বোধনের পর পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নেই যানজট। এতে ১ ঘণ্টা ৫০ মিনিটে ঢাকা থেকে কুমিল্লায় আসতে পারছেন যাত্রীরা। আগে ৮ ঘণ্টা লাগত এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের কবলে আটকা পড়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হতো যাত্রীদের। গত শনিবার মহাসড়কে দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী ও দ্বিতীয় মেঘনা সেতু উদ্বোধনের পর পাল্টে গেছে ওই চিরচেনা দৃশ্যপট। নবনির্মিত দ্বিতীয় সেতুগুলো রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সড়কপথের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নবদিগন্তের সূচনা করেছে বলে জানায় স্থানীয়রা।

গত ৩ দিনে মহাসড়কের কোথাও যানজট দেখা যায়নি। এতে অনেকটা স্বস্তি বিরাজ করছে যাত্রী ও চালকদের মধ্যে। বিশেষ করে আসন্ন ঈদ ঘিরে মহাসড়কের দুটি সেতু এলাকায় যানজটের ভোগান্তির যে আশঙ্কা ছিল, তা এখন আর নেই। দাউদকান্দি ও মেঘনার টোল প্লাজা এলাকাতেও নেই যানজটের বিন্দুমাত্র রেশ। গতকাল সোমবার মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকা এবং নগরীর জাঙ্গালিয়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। ঈদের আগেই সেতু দুটি চালু হওয়ায় সরকারকে অভিনন্দন জানান যাত্রীরা। সড়ক বিভাগের কর্মকর্তা, গাড়িচালক, যাত্রী ও বিভিন্ন সূত্রে জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর লেন মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৩০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। এসব যানবাহনের আগে এক লেনে পুরনো মেঘনা-গোমতী, মেঘনা ও কাঁচপুর সেতুতে উঠতে হতো। এতে যানবাহনের চাপ বেড়ে গিয়ে ধীরগতির কারণে প্রতিটি ধর্মীয়সহ নানা উৎসব এবং সরকারি ছুটির দিনে যানজটে আটকা পড়ে ভোগান্তি পোহাতে হত যাত্রী ও চালকদের। কিন্তু এবার ঈদের আগে সেতুগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। এতে মানুষের সময়, খরচ ও ভোগান্তি কমেছে এবং আর লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। যানজটের কারণে এতদিন যে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হতো, তা আর হবে না। ফলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের মধ্যে এ তিনটি সেতু অন্তর্ভুক্ত। মূলত ৫টি উদ্দেশ্য সামনে রেখে ‘গোমতী, মেঘনা ও কাঁচপুর দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ’ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। উদ্দেশ্যগুলো হচ্ছে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত, ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কে ক্রমবর্ধমান যানবাহনের সংকুলান, সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাধন, প্রকল্প এলাকায় আর্থসামাজিক কর্মকান্ড উন্নত এবং সবার জন্য নিরাপদ ও সাশ্রয়ী সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

এ বিষয়ে কুমিল্লা-ঢাকা সড়কে চলাচলকারী এশিয়া এয়ারকনের চালক শাহ আলম জানান, দুটি সেতু এলাকায় আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে টোল দিতে হত। কিন্তু সোমবার ঢাকা থেকে মাত্র পৌনে ২ ঘণ্টায় কুমিল্লায় আসা সম্ভব হয়েছে।

ঢাকা থেকে কুমিল্লায় আসা প্রিন্স পরিবহনের যাত্রী তারেক হাসান ও মুন চৌধুরী জানান, সোমবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে কুমিল্লায় পৌঁছেছি। মহাসড়কে যানজট নেই। নিরাপদে মাত্র ১ ঘণ্টা ৫০ মিনিটে ঢাকা থেকে কুমিল্লায় আসতে পেরেছি। দুটি সেতু চালু হওয়ায় তারা সরকারকে অভিনন্দন জানান।

সোমবার দুপুরে ঢাকা থেকে আসা শিহাব উদ্দিন, আসাদুজ্জামান চৌধুরী, জাকির হোসেনসহ এশিয়া এয়ারকন গাড়ির বেশ কয়েকজন যাত্রী জানান, তারা নিয়মিত ঢাকায় যাওয়া-আসা করেন। এক সপ্তাহ আগেও কুমিল্লা থেকে ঢাকায় যেতে তাদের সময় লেগেছে প্রায় ৮ ঘণ্টা। আর সোমবার ঢাকা থেকে দুই ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে তারা কুমিল্লায় পৌঁছেছেন।

কুমিল্লা জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা ফারুক হোসেন সুমন জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দ্বিতীয় কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী সেতু চালুর ফলে এবারের ঈদে যাত্রীরা খুব কম সময়েই বাড়ি ফিরতে পারবে। ৩ দিন ধরে কুমিল্লা থেকে ২ ঘণ্টা বা এরও কিছু কম সময়ে যাত্রীরা ঢাকা-কুমিল্লা যাতায়াত করতে পারছেন। প্রিন্স লাইন পরিবহনের চালক জয়নাল আবেদীন জানান, কুমিল্লা থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে আগে কত সময় লাগবে, তা একমাত্র আল্লাহই জানতেন। সব সময় ওই এলাকার যানজট নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতাম। কিন্তু এখন কেউ চাইলে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় গিয়ে অফিস করতে পারবেন।

তিশা পরিবহনের যাত্রী আরিফ খান মুন্না জানান, ব্যক্তিগত কাজে রোববার ঢাকায় গিয়েছিলাম। এত কম সময়ে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় যেতে পারব এবং ঢাকা থেকে কুমিল্লায় পৌঁছে আবার বাসায় ইফতার করতে পারব, তা ভাবতেই পারিনি।

কুমিল্লার দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর, মেঘনা ও মেঘনা-গোমতীসহ ৩টি সেতুকেন্দ্রিক তীব্র যানজটে পড়ে প্রায় প্রতিদিন পণ্যবাহী পরিবহন ও বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হতো। বিশেষ করে দুই ঈদ, পূজা-পার্বণ, নববর্ষ ও ছুটির দিনগুলোয় যানজটের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করত। কিন্তু এ বছর আসন্ন ঈদুল ফিতর সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক গত ১৬ মার্চ এ মহাসড়কের কাঁচপুর দ্বিতীয় সেতু এবং গত শনিবার দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতু উদ্বোধনের পর পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। মহাসড়কের সেতুকেন্দ্রিক কোনো যানজট না থাকায় যাত্রীরা খুব অল্পসময়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন।

দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতুর প্রকল্প পরিচালক আবু সালেহ মো. নুরুজ্জামান বলেন, নতুন দুটি সেতু চালু হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মানুষের যাত্রা আরামদায়ক হয়েছে। দ্বিতীয় সেতুগুলো ফোর লেন হওয়ায় যানবাহনের চাপ নেই। ঈদে ঘরমুখো মানুষ এর সুফল পাবে। পুরনো দুই লেনের সেতু দুটিরও সংস্কার কাজ চলমান। আগামী ডিসেম্বরে শেষ হবে। তখন চার লেনের মহাসড়কের যানবাহনগুলো সেতুগুলোর ৬ লেনে চলাচল করবে। ফলে স্বাভাবিকভাবে সেতুকেন্দ্রিক যানজট আর কখনোই চোখে পড়বে না।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) আলী রেজা জানান, মেঘনা সেতুর যানজটের কারণে চালক ও যাত্রীদের যেমন ভোগান্তিতে পড়তে হতো, তেমনি ভোগান্তি বেশি পোহাতে হয়েছে হাইওয়ে পুলিশকে। দিন-রাত নেই, খাওয়া-দাওয়ার কোন সময় নেই- মহাসড়ক জটমুক্ত রাখতে অনেক পেরেশন হতে হয়েছে। তবে ২৫ মে প্রধানমন্ত্রী সেতু দুটি উদ্বোধন করার পর থেকে কাঁচপুর থেকে মেঘনা পর্যন্ত যানজট কী জিনিস, তা আজ পর্যন্ত দেখিনি।

মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০১৯ , ১৪ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ২২ রমজান ১৪৪০

দ্বিতীয় মেঘনা ও গোমতী সেতু উদ্বোধনের পর

পাল্টে গেছে দৃশ্যপট

জাহিদুর রহমান ও মাহবুবুল ইসলাম সুমন

image

দ্বিতীয় মেঘনা ও গোমতী সেতু উদ্বোধনের পর পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নেই যানজট। এতে ১ ঘণ্টা ৫০ মিনিটে ঢাকা থেকে কুমিল্লায় আসতে পারছেন যাত্রীরা। আগে ৮ ঘণ্টা লাগত এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের কবলে আটকা পড়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হতো যাত্রীদের। গত শনিবার মহাসড়কে দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী ও দ্বিতীয় মেঘনা সেতু উদ্বোধনের পর পাল্টে গেছে ওই চিরচেনা দৃশ্যপট। নবনির্মিত দ্বিতীয় সেতুগুলো রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সড়কপথের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নবদিগন্তের সূচনা করেছে বলে জানায় স্থানীয়রা।

গত ৩ দিনে মহাসড়কের কোথাও যানজট দেখা যায়নি। এতে অনেকটা স্বস্তি বিরাজ করছে যাত্রী ও চালকদের মধ্যে। বিশেষ করে আসন্ন ঈদ ঘিরে মহাসড়কের দুটি সেতু এলাকায় যানজটের ভোগান্তির যে আশঙ্কা ছিল, তা এখন আর নেই। দাউদকান্দি ও মেঘনার টোল প্লাজা এলাকাতেও নেই যানজটের বিন্দুমাত্র রেশ। গতকাল সোমবার মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকা এবং নগরীর জাঙ্গালিয়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। ঈদের আগেই সেতু দুটি চালু হওয়ায় সরকারকে অভিনন্দন জানান যাত্রীরা। সড়ক বিভাগের কর্মকর্তা, গাড়িচালক, যাত্রী ও বিভিন্ন সূত্রে জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর লেন মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৩০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। এসব যানবাহনের আগে এক লেনে পুরনো মেঘনা-গোমতী, মেঘনা ও কাঁচপুর সেতুতে উঠতে হতো। এতে যানবাহনের চাপ বেড়ে গিয়ে ধীরগতির কারণে প্রতিটি ধর্মীয়সহ নানা উৎসব এবং সরকারি ছুটির দিনে যানজটে আটকা পড়ে ভোগান্তি পোহাতে হত যাত্রী ও চালকদের। কিন্তু এবার ঈদের আগে সেতুগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। এতে মানুষের সময়, খরচ ও ভোগান্তি কমেছে এবং আর লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। যানজটের কারণে এতদিন যে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হতো, তা আর হবে না। ফলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের মধ্যে এ তিনটি সেতু অন্তর্ভুক্ত। মূলত ৫টি উদ্দেশ্য সামনে রেখে ‘গোমতী, মেঘনা ও কাঁচপুর দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ’ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। উদ্দেশ্যগুলো হচ্ছে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত, ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কে ক্রমবর্ধমান যানবাহনের সংকুলান, সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাধন, প্রকল্প এলাকায় আর্থসামাজিক কর্মকান্ড উন্নত এবং সবার জন্য নিরাপদ ও সাশ্রয়ী সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

এ বিষয়ে কুমিল্লা-ঢাকা সড়কে চলাচলকারী এশিয়া এয়ারকনের চালক শাহ আলম জানান, দুটি সেতু এলাকায় আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে টোল দিতে হত। কিন্তু সোমবার ঢাকা থেকে মাত্র পৌনে ২ ঘণ্টায় কুমিল্লায় আসা সম্ভব হয়েছে।

ঢাকা থেকে কুমিল্লায় আসা প্রিন্স পরিবহনের যাত্রী তারেক হাসান ও মুন চৌধুরী জানান, সোমবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে কুমিল্লায় পৌঁছেছি। মহাসড়কে যানজট নেই। নিরাপদে মাত্র ১ ঘণ্টা ৫০ মিনিটে ঢাকা থেকে কুমিল্লায় আসতে পেরেছি। দুটি সেতু চালু হওয়ায় তারা সরকারকে অভিনন্দন জানান।

সোমবার দুপুরে ঢাকা থেকে আসা শিহাব উদ্দিন, আসাদুজ্জামান চৌধুরী, জাকির হোসেনসহ এশিয়া এয়ারকন গাড়ির বেশ কয়েকজন যাত্রী জানান, তারা নিয়মিত ঢাকায় যাওয়া-আসা করেন। এক সপ্তাহ আগেও কুমিল্লা থেকে ঢাকায় যেতে তাদের সময় লেগেছে প্রায় ৮ ঘণ্টা। আর সোমবার ঢাকা থেকে দুই ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে তারা কুমিল্লায় পৌঁছেছেন।

কুমিল্লা জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা ফারুক হোসেন সুমন জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দ্বিতীয় কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী সেতু চালুর ফলে এবারের ঈদে যাত্রীরা খুব কম সময়েই বাড়ি ফিরতে পারবে। ৩ দিন ধরে কুমিল্লা থেকে ২ ঘণ্টা বা এরও কিছু কম সময়ে যাত্রীরা ঢাকা-কুমিল্লা যাতায়াত করতে পারছেন। প্রিন্স লাইন পরিবহনের চালক জয়নাল আবেদীন জানান, কুমিল্লা থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে আগে কত সময় লাগবে, তা একমাত্র আল্লাহই জানতেন। সব সময় ওই এলাকার যানজট নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতাম। কিন্তু এখন কেউ চাইলে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় গিয়ে অফিস করতে পারবেন।

তিশা পরিবহনের যাত্রী আরিফ খান মুন্না জানান, ব্যক্তিগত কাজে রোববার ঢাকায় গিয়েছিলাম। এত কম সময়ে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় যেতে পারব এবং ঢাকা থেকে কুমিল্লায় পৌঁছে আবার বাসায় ইফতার করতে পারব, তা ভাবতেই পারিনি।

কুমিল্লার দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর, মেঘনা ও মেঘনা-গোমতীসহ ৩টি সেতুকেন্দ্রিক তীব্র যানজটে পড়ে প্রায় প্রতিদিন পণ্যবাহী পরিবহন ও বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হতো। বিশেষ করে দুই ঈদ, পূজা-পার্বণ, নববর্ষ ও ছুটির দিনগুলোয় যানজটের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করত। কিন্তু এ বছর আসন্ন ঈদুল ফিতর সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক গত ১৬ মার্চ এ মহাসড়কের কাঁচপুর দ্বিতীয় সেতু এবং গত শনিবার দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতু উদ্বোধনের পর পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। মহাসড়কের সেতুকেন্দ্রিক কোনো যানজট না থাকায় যাত্রীরা খুব অল্পসময়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন।

দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতুর প্রকল্প পরিচালক আবু সালেহ মো. নুরুজ্জামান বলেন, নতুন দুটি সেতু চালু হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মানুষের যাত্রা আরামদায়ক হয়েছে। দ্বিতীয় সেতুগুলো ফোর লেন হওয়ায় যানবাহনের চাপ নেই। ঈদে ঘরমুখো মানুষ এর সুফল পাবে। পুরনো দুই লেনের সেতু দুটিরও সংস্কার কাজ চলমান। আগামী ডিসেম্বরে শেষ হবে। তখন চার লেনের মহাসড়কের যানবাহনগুলো সেতুগুলোর ৬ লেনে চলাচল করবে। ফলে স্বাভাবিকভাবে সেতুকেন্দ্রিক যানজট আর কখনোই চোখে পড়বে না।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) আলী রেজা জানান, মেঘনা সেতুর যানজটের কারণে চালক ও যাত্রীদের যেমন ভোগান্তিতে পড়তে হতো, তেমনি ভোগান্তি বেশি পোহাতে হয়েছে হাইওয়ে পুলিশকে। দিন-রাত নেই, খাওয়া-দাওয়ার কোন সময় নেই- মহাসড়ক জটমুক্ত রাখতে অনেক পেরেশন হতে হয়েছে। তবে ২৫ মে প্রধানমন্ত্রী সেতু দুটি উদ্বোধন করার পর থেকে কাঁচপুর থেকে মেঘনা পর্যন্ত যানজট কী জিনিস, তা আজ পর্যন্ত দেখিনি।