৪৫ হাজারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
কৃষিঋণ পরিশোধ করতে না পারায় দেশে ১ লাখ ৬৬ হাজার কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ৪৫ হাজার কৃষকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি করা হয়েছে। অথচ কোটি কোটি টাকার ঋণ খেলাপিদের দ্বিতীয় দফায় ২ ভাগ সুদে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন আয়োজিত ‘ধান ও কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য : সংকট ও প্রস্তাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন। বক্তারা বলেন, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে কৃষকদের ভর্তুকি দেয়া হয়। অথচ আমাদের দেশে ভর্তুকি তো দূরের কথা সরকারের কাছে কৃষকের কোন তালিকাই নেই। কৃষকরা যাতে ধানসহ সব পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় সেজন্য বক্তারা সিন্ডিকেট ভেঙে প্রতিটি জেলায় সরকারি কোল্ডস্টোরেজ বাড়ানোর দাবি জানান।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন’র (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কৃষক লীগের সহ-সভাপতি ছবি বিশ্বাস। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাভেল পার্থ।
পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, কৃষকরা আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে অথচ চিরজীবন তারা বঞ্চিত থেকে গেছে। সম্প্রতি কৃষকদের নিয়ে দেশের মানুষ যেভাবে ভাবছে আগে তাদের নিয়ে এত ভাবেনি। আমাদের মনে রাখতে হবে কৃষক বা কৃষি না বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে না। কৃষকদের প্রতি আমাদের মনোভাব পরিবর্তন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গণমাধ্যমসহ সবক্ষেত্রে কৃষকদের প্রতি আমাদের মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে। কৃষকরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে দেশের খাদ্য জোগায়, অথচ সে নিজে খাদ্য পায় না, এটা হতে পারে না। তিনি বলেন, জাতীয় কৃষি নীতি কৃষকবান্ধব না। চাতাল কেন্দ্রিক কৃষিনীতি নিয়ে কৃষক চলতে পারে না। কৃষকদের জীবন অনিশ্চয়তার জীবন। ধার করে দেশের জন্য চাল উৎপাদন করবে, আর নিজের জীবন অরক্ষিত হবে এটা হতে পারে না। এজন্য ঝুঁকি নিতে হবে রাষ্ট্রকে, ঝুঁকি নিতে হবে সরকারকে। প্রত্যেকটি ইউনিয়নে খাদ্য গুদাম তৈরির দাবি জানান পঙ্কজ ভট্টাচার্য।
ছবি বিশ্বাস বলেন, শ্রমিকদের দাবি সরকার অনেক মানছে, কিন্তু কৃষকের দাবি মানছে না। কারণ একটাই, কৃষকরা আন্দোলন করতে পারছে না। তিনি কৃষকদের আন্দোলনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন আমরা আমাদের দাবি আদায় করি। সভাপতির বক্তব্যে আবু নাসের খান বলেন, কৃষকের জন্য রাষ্ট্রকে ঝুঁকি নিতে হবে। প্রত্যেকটি ইউনিয়নে কোল্ডস্টোরেজ তৈরি করতে হবে। গুদাম মালিকদের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনতে হবে। একই সঙ্গে কৃষকের জন্য শস্য বীমা চালু করার দাবি জানান তিনি।
পাভেল পার্থ তার মূল প্রবন্ধে ধানসহ কৃষিপণ্যের একটি সুনির্দিষ্ট মূল্যতালিকা নির্ধারণ, ন্যায্যমূল্যে কৃষিপণ্য সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য একটি সক্রিয় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলা, সব কৃষকের জন্য কৃষিকার্ড ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরি করা, দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে ধানসহ কৃষিপণ্য মজুদকরণের শক্তিশালী ব্যবস্থা গড়ে তোলা। কৃষিপণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ফড়িয়া, মহাজন, দালাল, মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রতাপ ও খবরদারি বন্ধ করা, কৃষিজমির অকৃষিখাতে ব্যবহার সামগ্রিকভাবে নিষিদ্ধ করা এবং কৃষিতে তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ বাড়ানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ধানসহ কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য ও কৃষির চলামান সংকট নিরসনে সুনির্দিষ্ট কিছু কাজের কথা তুলে ধরে একটি কৃষকবান্ধব কৃষিনীতির দাবি তুলেছেন সেমিনারে উপস্থিত বক্তারা। বাংলাদেশ কৃষক লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক এমপি ছবি বিশ্বাস সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার মাঠ পর্যায়ের উদাহরণ দিয়ে বলেন, সেখানকার কৃষকরা মাত্র ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা দরে ধান বিক্রি করছে কিন্তু সরকার নির্ধারিত ১০৪০ টাকা দরে ধান বিক্রি করতে পারছে না তারা। ধানের ক্রয়সীমা বাড়িয়ে সব কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার প্রস্তাব রাখেন তিনি। কৃষক সমিতির সহ-সভাপতি আজহারুল ইসলাম আরজু মানিকগঞ্জের মাঠ পর্যায়ের উদাহরণ টেনে বলেন কৃষকরা সরকারের কাছে সরাসরি ধান বিক্রি করতে নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। এক্ষেত্রে ইউনিয়ন পর্যায়ে ফসলের গুদাম ও কোল্ডস্টোরেজ গড়ে তোলার দাবি জানান। মানিকগঞ্জের কৃষক রোকেয়া ও ইব্রাহিম মিয়া ন্যায্যমূল্যে কৃষিপণ্য কেনার জন্য সকল পর্যায়ে সহযোগিতা করার দাবি জানান। তারা কৃষকের জন্য শস্য বীমা, ঝুঁকি ভাতা ও পেনশনের জোর দাবি জানান।
মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০১৯ , ১৪ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ২২ রমজান ১৪৪০
৪৫ হাজারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
কৃষিঋণ পরিশোধ করতে না পারায় দেশে ১ লাখ ৬৬ হাজার কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ৪৫ হাজার কৃষকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি করা হয়েছে। অথচ কোটি কোটি টাকার ঋণ খেলাপিদের দ্বিতীয় দফায় ২ ভাগ সুদে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন আয়োজিত ‘ধান ও কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য : সংকট ও প্রস্তাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন। বক্তারা বলেন, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে কৃষকদের ভর্তুকি দেয়া হয়। অথচ আমাদের দেশে ভর্তুকি তো দূরের কথা সরকারের কাছে কৃষকের কোন তালিকাই নেই। কৃষকরা যাতে ধানসহ সব পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় সেজন্য বক্তারা সিন্ডিকেট ভেঙে প্রতিটি জেলায় সরকারি কোল্ডস্টোরেজ বাড়ানোর দাবি জানান।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন’র (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কৃষক লীগের সহ-সভাপতি ছবি বিশ্বাস। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাভেল পার্থ।
পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, কৃষকরা আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে অথচ চিরজীবন তারা বঞ্চিত থেকে গেছে। সম্প্রতি কৃষকদের নিয়ে দেশের মানুষ যেভাবে ভাবছে আগে তাদের নিয়ে এত ভাবেনি। আমাদের মনে রাখতে হবে কৃষক বা কৃষি না বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে না। কৃষকদের প্রতি আমাদের মনোভাব পরিবর্তন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গণমাধ্যমসহ সবক্ষেত্রে কৃষকদের প্রতি আমাদের মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে। কৃষকরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে দেশের খাদ্য জোগায়, অথচ সে নিজে খাদ্য পায় না, এটা হতে পারে না। তিনি বলেন, জাতীয় কৃষি নীতি কৃষকবান্ধব না। চাতাল কেন্দ্রিক কৃষিনীতি নিয়ে কৃষক চলতে পারে না। কৃষকদের জীবন অনিশ্চয়তার জীবন। ধার করে দেশের জন্য চাল উৎপাদন করবে, আর নিজের জীবন অরক্ষিত হবে এটা হতে পারে না। এজন্য ঝুঁকি নিতে হবে রাষ্ট্রকে, ঝুঁকি নিতে হবে সরকারকে। প্রত্যেকটি ইউনিয়নে খাদ্য গুদাম তৈরির দাবি জানান পঙ্কজ ভট্টাচার্য।
ছবি বিশ্বাস বলেন, শ্রমিকদের দাবি সরকার অনেক মানছে, কিন্তু কৃষকের দাবি মানছে না। কারণ একটাই, কৃষকরা আন্দোলন করতে পারছে না। তিনি কৃষকদের আন্দোলনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন আমরা আমাদের দাবি আদায় করি। সভাপতির বক্তব্যে আবু নাসের খান বলেন, কৃষকের জন্য রাষ্ট্রকে ঝুঁকি নিতে হবে। প্রত্যেকটি ইউনিয়নে কোল্ডস্টোরেজ তৈরি করতে হবে। গুদাম মালিকদের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনতে হবে। একই সঙ্গে কৃষকের জন্য শস্য বীমা চালু করার দাবি জানান তিনি।
পাভেল পার্থ তার মূল প্রবন্ধে ধানসহ কৃষিপণ্যের একটি সুনির্দিষ্ট মূল্যতালিকা নির্ধারণ, ন্যায্যমূল্যে কৃষিপণ্য সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য একটি সক্রিয় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলা, সব কৃষকের জন্য কৃষিকার্ড ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরি করা, দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে ধানসহ কৃষিপণ্য মজুদকরণের শক্তিশালী ব্যবস্থা গড়ে তোলা। কৃষিপণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ফড়িয়া, মহাজন, দালাল, মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রতাপ ও খবরদারি বন্ধ করা, কৃষিজমির অকৃষিখাতে ব্যবহার সামগ্রিকভাবে নিষিদ্ধ করা এবং কৃষিতে তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ বাড়ানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ধানসহ কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য ও কৃষির চলামান সংকট নিরসনে সুনির্দিষ্ট কিছু কাজের কথা তুলে ধরে একটি কৃষকবান্ধব কৃষিনীতির দাবি তুলেছেন সেমিনারে উপস্থিত বক্তারা। বাংলাদেশ কৃষক লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক এমপি ছবি বিশ্বাস সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার মাঠ পর্যায়ের উদাহরণ দিয়ে বলেন, সেখানকার কৃষকরা মাত্র ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা দরে ধান বিক্রি করছে কিন্তু সরকার নির্ধারিত ১০৪০ টাকা দরে ধান বিক্রি করতে পারছে না তারা। ধানের ক্রয়সীমা বাড়িয়ে সব কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার প্রস্তাব রাখেন তিনি। কৃষক সমিতির সহ-সভাপতি আজহারুল ইসলাম আরজু মানিকগঞ্জের মাঠ পর্যায়ের উদাহরণ টেনে বলেন কৃষকরা সরকারের কাছে সরাসরি ধান বিক্রি করতে নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। এক্ষেত্রে ইউনিয়ন পর্যায়ে ফসলের গুদাম ও কোল্ডস্টোরেজ গড়ে তোলার দাবি জানান। মানিকগঞ্জের কৃষক রোকেয়া ও ইব্রাহিম মিয়া ন্যায্যমূল্যে কৃষিপণ্য কেনার জন্য সকল পর্যায়ে সহযোগিতা করার দাবি জানান। তারা কৃষকের জন্য শস্য বীমা, ঝুঁকি ভাতা ও পেনশনের জোর দাবি জানান।