দেশের সকল নাগরিকের জন্য ইউনিক আইডি

থাকবে সব তথ্য

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের প্রায় ৯ বছর পর দেশের সব নাগরিকের জন্য একটি ‘ইউনিক আইডি’ (একক পরিচয়) তৈরির উদ্যোগ আলোর মুখ দেখছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালে এই আইডি তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই ইউনিক আইডিতে প্রত্যেক নাগরিকের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যাবতীয় ঘটনাক্রম সংরক্ষিত থাকবে। নাগরিকের পেশা ও কর্মজীবনের সব ঘটনাপ্রবাহ সংরক্ষিত থাকবে ইউনিক আইডিতে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে দেশের সবস্তরের নাগরিকের জন্যই পৃথক পৃথক আইডি নাম্বর থাকবে, যেটিতে ক্লিক করলেই ওই নাগরিকের সম্পূর্ণ পরিচিতি ভেসে উঠবে। ইউনিক আইডি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর আগে ইউনিক আইডির বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গৃহীত কার্যক্রম সমন্বয় করে জনগণের জন্য ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস’ (সিআরভিএস) তৈরি করা হচ্ছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ‘সিআরভিএস অধিশাখা’র অধীনে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিভিন্ন সিআরভিএস কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি তৈরি করছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের আইডি তৈরি করছে বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস), হাসপাতালে শিশু জন্মের পর এর আইডি তৈরি করবে স্বাস্থ্য অধিদফতর, নাগরিকের জন্ম ও মৃত্যুর বিষয়ের আইডি সংরক্ষণ করবে স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের শিক্ষার্থীদের বয়স যেহেতু ১৮ বছরের বেশি তাদের বিষয়টি সংরক্ষণ করবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্যানবেইসের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ (অতিরিক্ত সচিব) সংবাদকে বলেছেন, ‘এটি চমৎকার একটি কাজ। আমরা ইতোমধ্যে সিআরভিএস বাস্তবায়ন শুরু করেছি। প্রথম পর্যায়ে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের সব শিক্ষার্থীকে এই আইডির আওতায় আনা হবে।’

সিআরভিএস কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত সরকারের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘এটি বাস্তবায়ন হলে একজন নাগরিক বা সরকারি কর্মীর সারাজীবনের ভালো-মন্দসহ সব ধরনের কর্মকান্ড একটি ইউনিক আইডিতে চলে আসবে। এতে সরকারের কেউ ইচ্ছে করলে এক ক্লিকেই ওই নাগরিকের চরিত্র, ব্যক্তিগত জীবন, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশাজীবনের ইতিবাচক ও নেতিবাচক কর্মকান্ড, তার বিরুদ্ধে কোন মামলা বা থানায় জিডি (সাধারণ ডায়েরি) থাকলে ইত্যাদি তথ্য সম্পর্কে জানতে পারবে।’

এছাড়াও অপরাধীকে চিহ্নিত করা, নির্বাচনে ভুয়া ভোটার শনাক্ত করা, রাজনৈতিক দলের পরিচিতি থাকলে সেটিও ওই আইডিতে উল্লেখ করা যেতে পারে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সিআরভিএসকে অনেকটা সরকারি চাকরিজীবীদের এসিআর’র সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে।’

জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন সরকারি সংস্থা (প্রধানত স্থানীয় সরকারি বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়) পৃথক পৃথকভাবে বহু আগে থেকেই সিভিল রেজিস্ট্রেশন এবং ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছে। এসব কার্যক্রমে দ্বৈততা, অসামঞ্জস্য এবং কখনো কখনো বৈপরিত্য দেখা যায়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে একটি সমন্বিত ও কার্যকর সিআরভিএস ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চলছে।

সিআরভিএস ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৩ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে সিআরভিএস সংক্রান্ত স্টিয়ারিং কমিটি গঠন হয়। ২০১৫ সালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সিআরভিএস সচিবালয় গঠন হয়। এই স্টিয়ারিং কমিটির নির্দেশনায় এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের সহায়তায় ‘সিআরভিএস সচিবালয়’ সিআরভিএস বাস্তবায়ন করছে।

সিআরভিএস বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সরকারের অপর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে ১০ সংখ্যা বিশিষ্ট একটি একক পরিচিতি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সব নাগরিককে নিবন্ধনের আওতায় এতে তাদের জীবন প্রবাহের উল্লেখযোগ্য (ঈরারষ জবমরংঃৎধঃরড়হ ধহফ ঠরঃধষ ঝঃধঃরংঃরপং-ঈজঠঝ) ঘটনাসমূহ তথ্য-উপাত্ত আকারে সংরক্ষণ করে সরকারের সব সেবা নিশ্চিত করা। রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিককেই চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে তার জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে, তালাক, দুর্ঘটনা, একাডেমিক ক্যারিয়ার, ইত্যাদি সংঘটিত হবার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পরিসংখ্যান তৈরি করার নিয়মিত প্রশাসনিক প্রক্রিয়াই হলো সিআরভিএস।

ওই কর্মকর্তা জানান, আন্তর্জাতিকভাবে জন্ম, মৃত্যু, মৃত্যুর কারণ, বিবাহ, তালাক এবং দত্তক এ ছয়টি বিষয়ই সিআরভিএস-এর অংশ হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু বাংলাদেশে এগুলোসহ জনগণের স্থানান্তর বিশেষ করে পেশায় উন্নতি-অবনতি ও শাস্তি, পেশা বদল এবং শিক্ষাকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এমনকি গাড়ি চালকের ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স’ও ইউনিক আইডির অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এ প্রক্রিয়ায় সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিসমূহের বাস্তবায়ন সহজ এবং অপচয় রোধ হবে। এজন্য একটি সমন্বিত সেবা প্রদান ব্যবস্থাপনা ইন্টিগ্রেটেড সার্ভিস ডেলিভারি প্লাটফর্ম গড়ে তোলা হবে।

সিআরভিএস বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিককেই চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও তথ্যাদি সংঘটিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিবন্ধিত করা এবং তার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পরিসংখ্যান তৈরি করার নিয়মিত প্রশাসনিক প্রক্রিয়াই হলো সিআরভিএস।

তিন ধাপে সিআরভিএস : সিআরভিএসের প্রস্তাবিত ডিপিপিতে ‘বাংলাদেশে বিদ্যমান বিভিন্ন আইডিগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের সম্ভাব্য সমাধান সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রথম ধাপে থাকবে একজন নাগরিকের জন্ম। এ ক্ষেত্রে কমিউটিনিটি স্বাস্থ্যকর্মী এবং প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক বা এনজিও কর্মীরা জন্মের ঘটনাটি জানাবেন।

দ্বিতীয় ধাপে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান জন্মের ঘটনা জানানোর বিষয়টি স্বীকৃতি দিবে এবং নবজাতককে জন্মনিবন্ধন নম্বর প্রদান করবেন।

তৃতীয় ধাপে নির্বাচন কমিশন জন্মনিবন্ধন নম্বরকে স্বীকৃতি দিবে এবং নবজাতকের জন্য এনআইডি প্রদান করবে।

পাইলট প্রকল্প সম্পন্ন : জানা গেছে, সিআরভিএস কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা মডেল হিসেবে নির্বাচিত করে ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে কার্যক্রম শুরু করা হয়। উপজেলার ইউনিয়নসমূহে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মী এবং পরিবার কল্যাণকর্মীরা ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম বা মৃত্যু নিবন্ধন কাজে সহায়তা করেন। নাগরিকের তথ্য সংরক্ষণ করে সরকারের সব সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পাইলট প্রকল্পটি গাজীপুরের কালিগঞ্জে বাস্তবায়ন হয়।

কালীগঞ্জকে মডেল হিসেবে অনুসরণ পরবর্তীতে ঢাকার বাইরের ৬টি বিভাগের ৬টি উপজেলা, কালীগঞ্জসহ গাজীপুরের ৫টি উপজেলা এবং ময়মনসিংহের ২টি উপজেলাসহ মোট ১৩টি উপজেলায় পাইলটিংয়ের মাধ্যমে এ কর্মসূচির সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়।

বুধবার, ২৯ মে ২০১৯ , ১৫ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ২৩ রমজান ১৪৪০

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের ৯ বছর পর

দেশের সকল নাগরিকের জন্য ইউনিক আইডি

থাকবে সব তথ্য

রাকিব উদ্দিন

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের প্রায় ৯ বছর পর দেশের সব নাগরিকের জন্য একটি ‘ইউনিক আইডি’ (একক পরিচয়) তৈরির উদ্যোগ আলোর মুখ দেখছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালে এই আইডি তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই ইউনিক আইডিতে প্রত্যেক নাগরিকের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যাবতীয় ঘটনাক্রম সংরক্ষিত থাকবে। নাগরিকের পেশা ও কর্মজীবনের সব ঘটনাপ্রবাহ সংরক্ষিত থাকবে ইউনিক আইডিতে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে দেশের সবস্তরের নাগরিকের জন্যই পৃথক পৃথক আইডি নাম্বর থাকবে, যেটিতে ক্লিক করলেই ওই নাগরিকের সম্পূর্ণ পরিচিতি ভেসে উঠবে। ইউনিক আইডি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর আগে ইউনিক আইডির বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গৃহীত কার্যক্রম সমন্বয় করে জনগণের জন্য ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস’ (সিআরভিএস) তৈরি করা হচ্ছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ‘সিআরভিএস অধিশাখা’র অধীনে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিভিন্ন সিআরভিএস কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি তৈরি করছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের আইডি তৈরি করছে বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস), হাসপাতালে শিশু জন্মের পর এর আইডি তৈরি করবে স্বাস্থ্য অধিদফতর, নাগরিকের জন্ম ও মৃত্যুর বিষয়ের আইডি সংরক্ষণ করবে স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের শিক্ষার্থীদের বয়স যেহেতু ১৮ বছরের বেশি তাদের বিষয়টি সংরক্ষণ করবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্যানবেইসের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ (অতিরিক্ত সচিব) সংবাদকে বলেছেন, ‘এটি চমৎকার একটি কাজ। আমরা ইতোমধ্যে সিআরভিএস বাস্তবায়ন শুরু করেছি। প্রথম পর্যায়ে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের সব শিক্ষার্থীকে এই আইডির আওতায় আনা হবে।’

সিআরভিএস কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত সরকারের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘এটি বাস্তবায়ন হলে একজন নাগরিক বা সরকারি কর্মীর সারাজীবনের ভালো-মন্দসহ সব ধরনের কর্মকান্ড একটি ইউনিক আইডিতে চলে আসবে। এতে সরকারের কেউ ইচ্ছে করলে এক ক্লিকেই ওই নাগরিকের চরিত্র, ব্যক্তিগত জীবন, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশাজীবনের ইতিবাচক ও নেতিবাচক কর্মকান্ড, তার বিরুদ্ধে কোন মামলা বা থানায় জিডি (সাধারণ ডায়েরি) থাকলে ইত্যাদি তথ্য সম্পর্কে জানতে পারবে।’

এছাড়াও অপরাধীকে চিহ্নিত করা, নির্বাচনে ভুয়া ভোটার শনাক্ত করা, রাজনৈতিক দলের পরিচিতি থাকলে সেটিও ওই আইডিতে উল্লেখ করা যেতে পারে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সিআরভিএসকে অনেকটা সরকারি চাকরিজীবীদের এসিআর’র সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে।’

জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন সরকারি সংস্থা (প্রধানত স্থানীয় সরকারি বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়) পৃথক পৃথকভাবে বহু আগে থেকেই সিভিল রেজিস্ট্রেশন এবং ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছে। এসব কার্যক্রমে দ্বৈততা, অসামঞ্জস্য এবং কখনো কখনো বৈপরিত্য দেখা যায়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে একটি সমন্বিত ও কার্যকর সিআরভিএস ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চলছে।

সিআরভিএস ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৩ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে সিআরভিএস সংক্রান্ত স্টিয়ারিং কমিটি গঠন হয়। ২০১৫ সালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সিআরভিএস সচিবালয় গঠন হয়। এই স্টিয়ারিং কমিটির নির্দেশনায় এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের সহায়তায় ‘সিআরভিএস সচিবালয়’ সিআরভিএস বাস্তবায়ন করছে।

সিআরভিএস বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সরকারের অপর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে ১০ সংখ্যা বিশিষ্ট একটি একক পরিচিতি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সব নাগরিককে নিবন্ধনের আওতায় এতে তাদের জীবন প্রবাহের উল্লেখযোগ্য (ঈরারষ জবমরংঃৎধঃরড়হ ধহফ ঠরঃধষ ঝঃধঃরংঃরপং-ঈজঠঝ) ঘটনাসমূহ তথ্য-উপাত্ত আকারে সংরক্ষণ করে সরকারের সব সেবা নিশ্চিত করা। রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিককেই চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে তার জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে, তালাক, দুর্ঘটনা, একাডেমিক ক্যারিয়ার, ইত্যাদি সংঘটিত হবার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পরিসংখ্যান তৈরি করার নিয়মিত প্রশাসনিক প্রক্রিয়াই হলো সিআরভিএস।

ওই কর্মকর্তা জানান, আন্তর্জাতিকভাবে জন্ম, মৃত্যু, মৃত্যুর কারণ, বিবাহ, তালাক এবং দত্তক এ ছয়টি বিষয়ই সিআরভিএস-এর অংশ হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু বাংলাদেশে এগুলোসহ জনগণের স্থানান্তর বিশেষ করে পেশায় উন্নতি-অবনতি ও শাস্তি, পেশা বদল এবং শিক্ষাকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এমনকি গাড়ি চালকের ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স’ও ইউনিক আইডির অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এ প্রক্রিয়ায় সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিসমূহের বাস্তবায়ন সহজ এবং অপচয় রোধ হবে। এজন্য একটি সমন্বিত সেবা প্রদান ব্যবস্থাপনা ইন্টিগ্রেটেড সার্ভিস ডেলিভারি প্লাটফর্ম গড়ে তোলা হবে।

সিআরভিএস বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিককেই চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও তথ্যাদি সংঘটিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিবন্ধিত করা এবং তার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পরিসংখ্যান তৈরি করার নিয়মিত প্রশাসনিক প্রক্রিয়াই হলো সিআরভিএস।

তিন ধাপে সিআরভিএস : সিআরভিএসের প্রস্তাবিত ডিপিপিতে ‘বাংলাদেশে বিদ্যমান বিভিন্ন আইডিগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের সম্ভাব্য সমাধান সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রথম ধাপে থাকবে একজন নাগরিকের জন্ম। এ ক্ষেত্রে কমিউটিনিটি স্বাস্থ্যকর্মী এবং প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক বা এনজিও কর্মীরা জন্মের ঘটনাটি জানাবেন।

দ্বিতীয় ধাপে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান জন্মের ঘটনা জানানোর বিষয়টি স্বীকৃতি দিবে এবং নবজাতককে জন্মনিবন্ধন নম্বর প্রদান করবেন।

তৃতীয় ধাপে নির্বাচন কমিশন জন্মনিবন্ধন নম্বরকে স্বীকৃতি দিবে এবং নবজাতকের জন্য এনআইডি প্রদান করবে।

পাইলট প্রকল্প সম্পন্ন : জানা গেছে, সিআরভিএস কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা মডেল হিসেবে নির্বাচিত করে ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে কার্যক্রম শুরু করা হয়। উপজেলার ইউনিয়নসমূহে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মী এবং পরিবার কল্যাণকর্মীরা ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম বা মৃত্যু নিবন্ধন কাজে সহায়তা করেন। নাগরিকের তথ্য সংরক্ষণ করে সরকারের সব সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পাইলট প্রকল্পটি গাজীপুরের কালিগঞ্জে বাস্তবায়ন হয়।

কালীগঞ্জকে মডেল হিসেবে অনুসরণ পরবর্তীতে ঢাকার বাইরের ৬টি বিভাগের ৬টি উপজেলা, কালীগঞ্জসহ গাজীপুরের ৫টি উপজেলা এবং ময়মনসিংহের ২টি উপজেলাসহ মোট ১৩টি উপজেলায় পাইলটিংয়ের মাধ্যমে এ কর্মসূচির সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়।