ঈদযাত্রায় আতঙ্কে রেলযাত্রীরা

২ জনের মৃত্যু, অর্ধশতাধিক আহত

চলন্ত ট্রেনে ঢিল নিক্ষেপের ঘটনা বাড়ছে। নিরাপত্তাহীন সারাদেশে রেলপথ। মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে চলছেন ট্রেনের যাত্রীরা। প্রতিনিয়ত চলন্ত ট্রেনে দুর্বৃত্তদের পাথর নিক্ষেপে আহত হচ্ছেন যাত্রীরা। গত দেড় বছরে রেলওয়ের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে দেড় শতাধিক পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় রেল কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং যাত্রীসহ অর্ধশত ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

সম্প্রতি রাজশাহীতে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় এক শিশু মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার পর ঈদমুখী যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। তবে রেল পুলিশ ঢিল নিক্ষেপ বন্ধে রেলপথের ৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট চিহ্নিত করেছে। এসব পয়েন্টে নাশকতা থেকে শুরু করে শিশু-কিশোররা খেলার সময় চলন্ত ট্রেনে ইট-পাথর নিক্ষেপ করে। এ নিয়ে চলতি বছর ৪ জন আহত হয়েছেন। চলন্ত ট্রেন লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করা পাথর শিশু জিসাননের মাথায় পড়ে। তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ রোধে রেলওয়ে আইন প্রয়োগ ছাড়াও বিভিন্ন সচেতনামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

জানা গেছে, সারাদেশের ২ হাজার ৮৭৭ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে ১ হাজার ৩০৭ ও পশ্চিমাঞ্চল ১ হাজার ৫৬৯ কিলোমিটার রয়েছে। প্রায় দুই শতাধিক স্থানে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। তবে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ৩৮টি স্থান চিহ্নিত করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ঢাকা রেল অঞ্চলে ৫টি, চট্টগ্রামে ৮টি, সৈয়দপুরে ১১টি, পাকশীতে ১৪টিসহ ৩৮টি পয়েন্টে চলন্ত ট্রেন লক্ষ্য করে ইট-পাথর নিক্ষেপ করা হয়। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ২০টি পয়েন্ট হলো চট্টগ্রামের পাহাড়তলী, সীতাকুন্ডু-বাড়বকুন্ডু, ফেনীর ফাজিলপুর-কালীদহ, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ-মাইজগঁও, নরসিংদীর পলাশের জিনারদী ও ঘোড়াশাল এলাকায় প্রতিনিয়ত চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পশ্চিমাঞ্চলে চুয়াডাঙ্গার আউটার, নাটোরের লালপুরের আবদুলপুর স্টেশন, সিরাজগঞ্জ শহীদ এস মনসুর আলী স্টেশন, উল্লাপাড়া স্টেশন, সলপ স্টেশন, কামারখন্দের জামতৈল ও বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থান, পাবনায় ঈশ^রদীর মুলাডুলি ও ভাঙ্গুরা স্টেশন, পঞ্চগড়ের আটোয়ারী, ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়ার কিসমত-রুহিয়া, বগুড়ার সোনাতলার বামনডাঙ্গা স্টেশন, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর স্টেশন এবং খুলনার ফুলতলা রেলওয়ে স্টেশনে প্রতিনিয়ত ঘটছে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত চলন্ত ট্রেনে ইট ও পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় জিআরপি থানায় একটি মামলা ও ১০টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা এবং ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব পয়েন্টের তালিকা রেল পুলিশসহ পুলিশ হেডকোয়াটার্সে পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি পয়েন্টে কারা ট্রেনে ঢিল নিক্ষেপ করে তা চিহ্নিত করতে রেল পুলিশের সাদা পোশাকের টিম অভিযান চালিয়ে ইতোমধ্যে ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে।

সূত্র জানায়, রেললাইনসহ আশপাশের ইট-পাথর নিয়ে শিশু-কিশোররা চলন্ত ট্রেন লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করে। এর সংখ্যা শতকরা ৭০ ভাগ। আবার কিছু ক্ষেত্রে অনেক স্টেশনে ট্রেন থামানোর দাবিতেও ঢিল মারে। কোন কোন ক্ষেত্রে নাশকতার টার্গেট নিয়ে এ হামলা চালানো হয়। রেল পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ঢিল মারা বন্ধে চিহ্নিত পয়েন্টগুলোয় অভিযানের পাশাপাশি ঈদ নিরাপত্তায় বাড়তি ফোর্স মোতায়েন করা হচ্ছে। প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেনে ৩ থেকে ৫ পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। আর মৈত্রী এক্সপ্রেসে ৮ থেকে ১০ পুলিশ নিরাপত্তায় রয়েছে। জনবলের অভাবে লোকাল ট্রেনগুলোয় নিরাপত্তা দেয়া যাচ্ছে না।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত বছরের ৩০ এপ্রিল ফুলতলা স্টেশনে খুলনায় কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনে দায়িত্বরত টিকিট চেকার (টিআইসি) সিকদার বায়েজিত গুরুতর আহত হন। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যাল ও হাসপাতালে (পিজি) চিকিৎসাধীনে তিনি মারা যান। এর আগে ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় নিহত হয় প্রকৌশলী প্রীতি দাস। এছাড়া ২০১৪ সালের ২৩ মে সীতাকু- স্টেশনের কাছে একই ঘটনায় একটি বেসরকারি ব্যাংকের জুনিয়র কর্মকর্তা অরূপ চক্রবর্তীর একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। তবে এ পর্যন্ত পাথর নিক্ষেপকারী দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। রেলওয়ে আইনের ১২৭, ১২৮ ও ১৩০ ধারায় চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় ৫০ টাকা আর্থিক জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে এই আইনে পাথর নিক্ষেপে অভিযুক্তের অভিভাবককেই জরিমানা শোধ করতে হয় বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

অন্যদিকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে প্রতিদিন প্রায় আড়াইশ’ যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে। দীর্ঘ এই যাত্রাপথে অন্তত ২৭টি পয়েন্ট আছেÑ যেখানে প্রতিনিয়ত পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় অঞ্চলের অধীন চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ভৈরব স্টেশন পর্যন্ত ১২টি পয়েন্ট অন্যতম। পাথর নিক্ষেপ দিন দিন বাড়তে থাকায় আতঙ্কে রয়েছেন রেলযাত্রীরা জানান।

চট্টগ্রামের যাত্রী আনোয়ার হোসেন বলেন, নিয়মিত আমরা ট্রেনে যাতায়াত করি। পাথর নিক্ষেপের কারণে ট্রেনের মধ্যে কোনো ইনজুরি হলে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া যায় না। পাথর নিক্ষেপ রোধে আরও সচেতনতা বাড়ানো দরকার। রেললাইনের পাশে গড়ে ওঠা বস্তিগুলো থেকে পথশিশুরাই পাথর নিক্ষেপ করে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয় সচিব মো. মোফাজ্জল হোসেন সংবাদকে বলেন, চলন্ত ট্রেনের পাথর নিক্ষেপ একটি পুরনো সমস্যা। ফলে জাতীয় সম্পদের অনেক ক্ষতি হয়। অপরাধী ছাড়াও অনেক সময় অজ্ঞতা ও কেবল কৌতূহলবশত হয়ে কিশোর-বালকরা এ কাজটি করে থাকে। এরূপ কৌতূহলের কারণে কারও জীবন নাশ ও জাতীয় সম্পদের ক্ষতি হতে পারেÑ এ বোধ তাদের নেই। তবে পাথর নিক্ষেপ রোধে রেলপথ মন্ত্রণালয় রেলওয়ে আইন প্রয়োগ ছাড়াও বিভিন্ন সচেতনামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে লিফলেট বিতরণ ও প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করা।

বৃহস্পতিবার, ৩০ মে ২০১৯ , ১৬ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ২৪ রমজান ১৪৪০

চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ

ঈদযাত্রায় আতঙ্কে রেলযাত্রীরা

২ জনের মৃত্যু, অর্ধশতাধিক আহত

বাকী বিল্লাহ ও মাহমুদ আকাশ

চলন্ত ট্রেনে ঢিল নিক্ষেপের ঘটনা বাড়ছে। নিরাপত্তাহীন সারাদেশে রেলপথ। মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে চলছেন ট্রেনের যাত্রীরা। প্রতিনিয়ত চলন্ত ট্রেনে দুর্বৃত্তদের পাথর নিক্ষেপে আহত হচ্ছেন যাত্রীরা। গত দেড় বছরে রেলওয়ের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে দেড় শতাধিক পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় রেল কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং যাত্রীসহ অর্ধশত ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

সম্প্রতি রাজশাহীতে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় এক শিশু মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার পর ঈদমুখী যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। তবে রেল পুলিশ ঢিল নিক্ষেপ বন্ধে রেলপথের ৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট চিহ্নিত করেছে। এসব পয়েন্টে নাশকতা থেকে শুরু করে শিশু-কিশোররা খেলার সময় চলন্ত ট্রেনে ইট-পাথর নিক্ষেপ করে। এ নিয়ে চলতি বছর ৪ জন আহত হয়েছেন। চলন্ত ট্রেন লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করা পাথর শিশু জিসাননের মাথায় পড়ে। তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ রোধে রেলওয়ে আইন প্রয়োগ ছাড়াও বিভিন্ন সচেতনামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

জানা গেছে, সারাদেশের ২ হাজার ৮৭৭ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে ১ হাজার ৩০৭ ও পশ্চিমাঞ্চল ১ হাজার ৫৬৯ কিলোমিটার রয়েছে। প্রায় দুই শতাধিক স্থানে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। তবে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ৩৮টি স্থান চিহ্নিত করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ঢাকা রেল অঞ্চলে ৫টি, চট্টগ্রামে ৮টি, সৈয়দপুরে ১১টি, পাকশীতে ১৪টিসহ ৩৮টি পয়েন্টে চলন্ত ট্রেন লক্ষ্য করে ইট-পাথর নিক্ষেপ করা হয়। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ২০টি পয়েন্ট হলো চট্টগ্রামের পাহাড়তলী, সীতাকুন্ডু-বাড়বকুন্ডু, ফেনীর ফাজিলপুর-কালীদহ, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ-মাইজগঁও, নরসিংদীর পলাশের জিনারদী ও ঘোড়াশাল এলাকায় প্রতিনিয়ত চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পশ্চিমাঞ্চলে চুয়াডাঙ্গার আউটার, নাটোরের লালপুরের আবদুলপুর স্টেশন, সিরাজগঞ্জ শহীদ এস মনসুর আলী স্টেশন, উল্লাপাড়া স্টেশন, সলপ স্টেশন, কামারখন্দের জামতৈল ও বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থান, পাবনায় ঈশ^রদীর মুলাডুলি ও ভাঙ্গুরা স্টেশন, পঞ্চগড়ের আটোয়ারী, ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়ার কিসমত-রুহিয়া, বগুড়ার সোনাতলার বামনডাঙ্গা স্টেশন, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর স্টেশন এবং খুলনার ফুলতলা রেলওয়ে স্টেশনে প্রতিনিয়ত ঘটছে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত চলন্ত ট্রেনে ইট ও পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় জিআরপি থানায় একটি মামলা ও ১০টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা এবং ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব পয়েন্টের তালিকা রেল পুলিশসহ পুলিশ হেডকোয়াটার্সে পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি পয়েন্টে কারা ট্রেনে ঢিল নিক্ষেপ করে তা চিহ্নিত করতে রেল পুলিশের সাদা পোশাকের টিম অভিযান চালিয়ে ইতোমধ্যে ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে।

সূত্র জানায়, রেললাইনসহ আশপাশের ইট-পাথর নিয়ে শিশু-কিশোররা চলন্ত ট্রেন লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করে। এর সংখ্যা শতকরা ৭০ ভাগ। আবার কিছু ক্ষেত্রে অনেক স্টেশনে ট্রেন থামানোর দাবিতেও ঢিল মারে। কোন কোন ক্ষেত্রে নাশকতার টার্গেট নিয়ে এ হামলা চালানো হয়। রেল পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ঢিল মারা বন্ধে চিহ্নিত পয়েন্টগুলোয় অভিযানের পাশাপাশি ঈদ নিরাপত্তায় বাড়তি ফোর্স মোতায়েন করা হচ্ছে। প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেনে ৩ থেকে ৫ পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। আর মৈত্রী এক্সপ্রেসে ৮ থেকে ১০ পুলিশ নিরাপত্তায় রয়েছে। জনবলের অভাবে লোকাল ট্রেনগুলোয় নিরাপত্তা দেয়া যাচ্ছে না।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত বছরের ৩০ এপ্রিল ফুলতলা স্টেশনে খুলনায় কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনে দায়িত্বরত টিকিট চেকার (টিআইসি) সিকদার বায়েজিত গুরুতর আহত হন। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যাল ও হাসপাতালে (পিজি) চিকিৎসাধীনে তিনি মারা যান। এর আগে ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় নিহত হয় প্রকৌশলী প্রীতি দাস। এছাড়া ২০১৪ সালের ২৩ মে সীতাকু- স্টেশনের কাছে একই ঘটনায় একটি বেসরকারি ব্যাংকের জুনিয়র কর্মকর্তা অরূপ চক্রবর্তীর একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। তবে এ পর্যন্ত পাথর নিক্ষেপকারী দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। রেলওয়ে আইনের ১২৭, ১২৮ ও ১৩০ ধারায় চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় ৫০ টাকা আর্থিক জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে এই আইনে পাথর নিক্ষেপে অভিযুক্তের অভিভাবককেই জরিমানা শোধ করতে হয় বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

অন্যদিকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে প্রতিদিন প্রায় আড়াইশ’ যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে। দীর্ঘ এই যাত্রাপথে অন্তত ২৭টি পয়েন্ট আছেÑ যেখানে প্রতিনিয়ত পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় অঞ্চলের অধীন চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ভৈরব স্টেশন পর্যন্ত ১২টি পয়েন্ট অন্যতম। পাথর নিক্ষেপ দিন দিন বাড়তে থাকায় আতঙ্কে রয়েছেন রেলযাত্রীরা জানান।

চট্টগ্রামের যাত্রী আনোয়ার হোসেন বলেন, নিয়মিত আমরা ট্রেনে যাতায়াত করি। পাথর নিক্ষেপের কারণে ট্রেনের মধ্যে কোনো ইনজুরি হলে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া যায় না। পাথর নিক্ষেপ রোধে আরও সচেতনতা বাড়ানো দরকার। রেললাইনের পাশে গড়ে ওঠা বস্তিগুলো থেকে পথশিশুরাই পাথর নিক্ষেপ করে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয় সচিব মো. মোফাজ্জল হোসেন সংবাদকে বলেন, চলন্ত ট্রেনের পাথর নিক্ষেপ একটি পুরনো সমস্যা। ফলে জাতীয় সম্পদের অনেক ক্ষতি হয়। অপরাধী ছাড়াও অনেক সময় অজ্ঞতা ও কেবল কৌতূহলবশত হয়ে কিশোর-বালকরা এ কাজটি করে থাকে। এরূপ কৌতূহলের কারণে কারও জীবন নাশ ও জাতীয় সম্পদের ক্ষতি হতে পারেÑ এ বোধ তাদের নেই। তবে পাথর নিক্ষেপ রোধে রেলপথ মন্ত্রণালয় রেলওয়ে আইন প্রয়োগ ছাড়াও বিভিন্ন সচেতনামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে লিফলেট বিতরণ ও প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করা।