দ্বিতীয় মেয়াদে মোদির শপথ

ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো শপথ নিলেন নরেন্দ্র মোদি। ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় তাকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। পরবর্তীতে একে একে শপথ নেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহসহ ২৪জন পূর্ণ মন্ত্রী। এবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া ৩ জন শপথবাক্য পাঠ করলেন বাংলায়। জমকালো অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি ৮ হাজার অতিথির মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইউপিএ চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধী এবং কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার চাদরে মোড়া হয় পুরো দিল্লিকে। মন্ত্রী কারা হবেন সেটা ঠিক করতে দফায় দফায় বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর নিজের মন্ত্রিসভা বেছে নিতে পেরেছেন মোদি। গতকাল শপথ গ্রহণকারী ৫৫ জন মন্ত্রীর মধ্যে রয়েছে রবি শংকর প্রসাদ, পীযুষ গোয়েল, স্মৃতি ইরানি, নির্মলা সীতারামণ, কিরেন রিজিজু, সুষমা স্বরাজ, রাজনাথ সিং, রতনলাল কাটারিয়া, ইন্দ্রজিৎ সিং, অর্জুন কৃষ্ণপাল, হারসিমরত কৌর, সদানন্দ গৌড়া, বাবুল সুপ্রিয়া, প্রকাশ জাভরেকর, রামদাস আটাওলে, জিতেন্দ্র সিং, সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি, পুরুষোত্তম রুপালা, রমেশ পখরিয়াল, থাওয়ার চাঁদ গেহলত, আর সি পি সিং, জি কিষান রেড্ডি, এ রবীন্দ্রনাথ, কৈলাস চৌধুরি, প্রল্লাদ জোশি, সোম প্রকাশ, রামেশ্বর তেলি, সুব্রত পাঠক, দেবশ্রী চৌধুরী।

শপথগ্রহণ ঘিরে রাইসিনা হিলসে ছিল বিপুল আয়োজন। এদের মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, নেপাল ও ভুটানের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ব নেতাদের পর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, রাজনৈতিক দলের নেতা, ব্যবসায়ী নেতা, কূটনীতিক, রাষ্ট্রদূত, যশস্বী ব্যক্তিবর্গ ও লোকসভার বিরোধীদলীয় সদস্য কংগ্রেস দলীয় সভাপতি রাহুল গান্ধী ও তার মা সোনিয়া গান্ধীসহ আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ থেকে উপস্থিত রয়েছেন ৫২ ‘শহীদ’ পরিবারের মোট ৭০ জন সদস্য।

শপথ গ্রহণের আগে মোদির মন্ত্রিসভা বিশ্লেষণ করে বলা হয়, এবার স্বরাষ্ট্র বা অর্থ, যেকোন একটি মন্ত্রণালয় পেতে পারেন অমিত শাহ। অন্যদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের কাজে বিজেপি নেতৃত্ব খুশি হলেও বাধ সাধতে পারে তার বয়স এবং স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা। যদিও শেষ পর্যন্ত তাকে বিদেশমন্ত্রী হিসেবেই রাখা হতে পারে বলেই বিজেপি সূত্রের খবর। আগের মন্ত্রিসভায় রাজনাথ সিংহ ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, এবারও মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া কার্যত নিশ্চিত। উত্তরপ্রদেশের লখনউ থেকে নির্বাচিত সাংসদ রাজনাথের মন্ত্রক পরিবর্তন হতে পারে বলে জল্পনা রাজনৈতিক মহলে। সড়ক পরিবহণ, হাইওয়ে, জাহাজ, জলসম্পদ, নদী উন্নয়ন ও গঙ্গা সংস্কারের মতো দফতর সামলেছেন নিতিন গডকড়ী। মোদি সময়ে পাশাপাশি বাজপেয়ী সরকারেও তিনি মন্ত্রী ছিলেন। আরএসএস ঘনিষ্ঠ নাগপুরের সাংসদ এবারও থাকছেন মন্ত্রিসভায়। ভোটের আগে অন্তর্বর্তী বাজেটের সময় শারীরিক অসুস্থতায় বিদেশে ছিলেন বিদায়ী অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। বাজেট পেশ করেছিলেন পীযূষ গয়াল। মোদির প্রথম মন্ত্রিসভায় ছিলেন রেল এবং কয়লা মন্ত্রকের গুরুদায়িত্বে। জেটলি অসুস্থতার জন্য মন্ত্রিসভায় থাকছেন না। ফলে এ বার জেটলির চেয়ারে দেখা যেতে পারে চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট গয়ালকে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে নির্মলা সীতারমণের ভূমিকায় খুশি বিজেপি নেতৃত্ব এবং প্রধানমন্ত্রী। রাফাল বিতর্ক যে ভাবে সামলেছেন বাগ্মী সীতারমণ, তাতে তাঁর পদোন্নতিও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিদেশমন্ত্রকের গুরুদায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। মহারাষ্ট্রের রাজাপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ সুরেশ প্রভু গত মন্ত্রিসভায় ছিলেন শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রক এবং অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের দায়িত্বে। তবে প্রথম দিকে রেল মন্ত্রকও সামলেছেন। তিনিও মন্ত্রিসভায় নিশ্চিত। কোন দফতর পাবেন, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে। বিজেপির বিপুল জয়ের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বড় নক্ষত্র স্মৃতি ইরানি।

শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এএনআইকে ডিসিপি মধুর ভার্মা জানান, তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে শপথের অনুষ্ঠানে। তিনি বলেন, ‘আমরা তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছি। প্রথম পর্যায়ে থাকবে ভিআইপি নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রপতি ভবন, তারপর থাকবে দিল্লি পুলিশের নিরাপত্তা। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াও থাকছে ট্রাফিকের ব্যবস্থাও’। নিরাপত্তার জন্য ৮০০০ থেকে ১০ হাজার পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশের কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান ভার্মা। দিল্লি ট্রাফিক পুলিশের থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নিউদিল্লি জেলার বেশ কিছু রাস্তায় বিকেল ৪টে থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

শুক্রবার, ৩১ মে ২০১৯ , ১৭ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ২৫ রমজান ১৪৪০

দ্বিতীয় মেয়াদে মোদির শপথ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো শপথ নিলেন নরেন্দ্র মোদি। ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় তাকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। পরবর্তীতে একে একে শপথ নেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহসহ ২৪জন পূর্ণ মন্ত্রী। এবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া ৩ জন শপথবাক্য পাঠ করলেন বাংলায়। জমকালো অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি ৮ হাজার অতিথির মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইউপিএ চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধী এবং কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার চাদরে মোড়া হয় পুরো দিল্লিকে। মন্ত্রী কারা হবেন সেটা ঠিক করতে দফায় দফায় বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর নিজের মন্ত্রিসভা বেছে নিতে পেরেছেন মোদি। গতকাল শপথ গ্রহণকারী ৫৫ জন মন্ত্রীর মধ্যে রয়েছে রবি শংকর প্রসাদ, পীযুষ গোয়েল, স্মৃতি ইরানি, নির্মলা সীতারামণ, কিরেন রিজিজু, সুষমা স্বরাজ, রাজনাথ সিং, রতনলাল কাটারিয়া, ইন্দ্রজিৎ সিং, অর্জুন কৃষ্ণপাল, হারসিমরত কৌর, সদানন্দ গৌড়া, বাবুল সুপ্রিয়া, প্রকাশ জাভরেকর, রামদাস আটাওলে, জিতেন্দ্র সিং, সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি, পুরুষোত্তম রুপালা, রমেশ পখরিয়াল, থাওয়ার চাঁদ গেহলত, আর সি পি সিং, জি কিষান রেড্ডি, এ রবীন্দ্রনাথ, কৈলাস চৌধুরি, প্রল্লাদ জোশি, সোম প্রকাশ, রামেশ্বর তেলি, সুব্রত পাঠক, দেবশ্রী চৌধুরী।

শপথগ্রহণ ঘিরে রাইসিনা হিলসে ছিল বিপুল আয়োজন। এদের মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, নেপাল ও ভুটানের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ব নেতাদের পর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, রাজনৈতিক দলের নেতা, ব্যবসায়ী নেতা, কূটনীতিক, রাষ্ট্রদূত, যশস্বী ব্যক্তিবর্গ ও লোকসভার বিরোধীদলীয় সদস্য কংগ্রেস দলীয় সভাপতি রাহুল গান্ধী ও তার মা সোনিয়া গান্ধীসহ আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ থেকে উপস্থিত রয়েছেন ৫২ ‘শহীদ’ পরিবারের মোট ৭০ জন সদস্য।

শপথ গ্রহণের আগে মোদির মন্ত্রিসভা বিশ্লেষণ করে বলা হয়, এবার স্বরাষ্ট্র বা অর্থ, যেকোন একটি মন্ত্রণালয় পেতে পারেন অমিত শাহ। অন্যদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের কাজে বিজেপি নেতৃত্ব খুশি হলেও বাধ সাধতে পারে তার বয়স এবং স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা। যদিও শেষ পর্যন্ত তাকে বিদেশমন্ত্রী হিসেবেই রাখা হতে পারে বলেই বিজেপি সূত্রের খবর। আগের মন্ত্রিসভায় রাজনাথ সিংহ ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, এবারও মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া কার্যত নিশ্চিত। উত্তরপ্রদেশের লখনউ থেকে নির্বাচিত সাংসদ রাজনাথের মন্ত্রক পরিবর্তন হতে পারে বলে জল্পনা রাজনৈতিক মহলে। সড়ক পরিবহণ, হাইওয়ে, জাহাজ, জলসম্পদ, নদী উন্নয়ন ও গঙ্গা সংস্কারের মতো দফতর সামলেছেন নিতিন গডকড়ী। মোদি সময়ে পাশাপাশি বাজপেয়ী সরকারেও তিনি মন্ত্রী ছিলেন। আরএসএস ঘনিষ্ঠ নাগপুরের সাংসদ এবারও থাকছেন মন্ত্রিসভায়। ভোটের আগে অন্তর্বর্তী বাজেটের সময় শারীরিক অসুস্থতায় বিদেশে ছিলেন বিদায়ী অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। বাজেট পেশ করেছিলেন পীযূষ গয়াল। মোদির প্রথম মন্ত্রিসভায় ছিলেন রেল এবং কয়লা মন্ত্রকের গুরুদায়িত্বে। জেটলি অসুস্থতার জন্য মন্ত্রিসভায় থাকছেন না। ফলে এ বার জেটলির চেয়ারে দেখা যেতে পারে চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট গয়ালকে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে নির্মলা সীতারমণের ভূমিকায় খুশি বিজেপি নেতৃত্ব এবং প্রধানমন্ত্রী। রাফাল বিতর্ক যে ভাবে সামলেছেন বাগ্মী সীতারমণ, তাতে তাঁর পদোন্নতিও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিদেশমন্ত্রকের গুরুদায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। মহারাষ্ট্রের রাজাপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ সুরেশ প্রভু গত মন্ত্রিসভায় ছিলেন শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রক এবং অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের দায়িত্বে। তবে প্রথম দিকে রেল মন্ত্রকও সামলেছেন। তিনিও মন্ত্রিসভায় নিশ্চিত। কোন দফতর পাবেন, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে। বিজেপির বিপুল জয়ের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বড় নক্ষত্র স্মৃতি ইরানি।

শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এএনআইকে ডিসিপি মধুর ভার্মা জানান, তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে শপথের অনুষ্ঠানে। তিনি বলেন, ‘আমরা তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছি। প্রথম পর্যায়ে থাকবে ভিআইপি নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রপতি ভবন, তারপর থাকবে দিল্লি পুলিশের নিরাপত্তা। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াও থাকছে ট্রাফিকের ব্যবস্থাও’। নিরাপত্তার জন্য ৮০০০ থেকে ১০ হাজার পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশের কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান ভার্মা। দিল্লি ট্রাফিক পুলিশের থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নিউদিল্লি জেলার বেশ কিছু রাস্তায় বিকেল ৪টে থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।