৮৭ ঢাবি শিক্ষার্থীসহ ১২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র চূড়ান্ত

ঈদের পর আদালতে দাখিল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষা, বিসিএস ও ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতির অভিযোগে রাজধানীর শাহবাগ থানার মামলায় ১২৫ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রয়েছে ৮৭ জন। ঈদুল ফিতরের পর চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হবে। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহা. শফিকুল ইসলাম।

তিনি আরও জানান, পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা না পাওয়ায় প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত আরও ৫৫ জনকে বাদ দিয়ে চার্জশিট দেয়া হলেও পরবর্তীতে সম্পূরক চার্জশিটে তাদের যুক্ত করা হবে। আসামিদের মধ্যে প্রশ্ন ফাঁস মামলায় এজাহারভুক্ত ৮ আসামির ব্যাংক একাউন্টে প্রায় ১৫ কোটি টাকা লেনদেনেরও সন্ধান পাওয়া গেছে। এদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন ফাঁসের মামলার পাশাপাশি মানি লন্ডারিং আইনেও মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে।

গত বছরের ২০ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম শহীদুল্লাহ হল থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক ঢাবি ছাত্র মহিউদ্দিন রানা ও আবদুল্লাহ আল মামুন নামে দুই ছাত্রকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তাদের কাছ থেকে এটিএম কার্ডের মতো দেখতে ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করা হয়, যা দিয়ে পরীক্ষা চলাকালে কানে আরেকটি ডিভাইস রাখা পরীক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পরীক্ষার দিনও কয়েকজনকে ডিভাইসসহ গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৬৩ ধারা এবং ১৯৮০ সালের পাবলিক পরীক্ষা আইনের ৯ (খ) ধারায় মামলা করে সিআইডি।

সিআইডি প্রধান ও অতিরিক্ত আইজি মোহা. শফিকুল ইসলাম জানান, মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সাইবার ক্রাইম ইউনিটের এএসপি সুমনকে। দীর্ঘ দেড় বছর তদন্তের পর প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত বিশাল একটি চক্রকে শনাক্ত করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের বিভিন্ন দফায় রিমান্ডে এনে প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের ১২৫ জনকে শনাক্ত করা হয়। অভিযোগপত্রভুক্ত ১২৫ জনের মধ্যে ৮৭ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, যাদের মধ্যে ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই ১৮ জনসহ গ্রেফতার মোট ৪৭ জনের মধ্যে ৪৬ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আরও ৫৫ জনের সম্পৃক্ত থাকার তথ্য পাওয়া গেলেও তাদের পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা না পাওয়ায় চার্জশিটে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। তাদের বিষয়ে তদন্ত চালাচ্ছে সিআইডি। পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা পাওয়ার পর ওই ৫৫ জনকে পরবর্তীতে সম্পূরক চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

সিআইডি প্রধান বলেন, অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল দেড় বছর তদন্তের মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস ও ডিজিটাল জালিয়াত চক্রকে চিহ্নিত করে। তদন্ত করে সিআইডি জানতে পারে গ্রেফতারকৃত ৪৭ জনসহ চার্জশিটে নাম আসা আসামিরা ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে পর পর দুই বছর প্রশ্ন ফাঁস করে। এ প্রশ্ন সাভারের পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার একটি বাসায় ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছে। এর আগেও তারা প্রশ্ন ফাঁস করেছে। বিসিএস পরীক্ষারও প্রশ্ন ফাঁস করতো এরা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চক্রের মূল হোতা নাটোর জেলার ক্রীড়া কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান এছামী, প্রেস কর্মচারী খান বাহাদুর, তার নিকটাত্মীয় সাইফুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বরি এবং মারুফসহ প্রথমে ২৮ জনকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে চক্রের বাকিদের নাম পরিচয় বেরিয়ে আসে। চক্রটি দুইভাবে জালিয়াতি করে। একটি চক্র প্রেস থেকে প্রশ্ন ফাঁস করে। আরেকটি চক্র পরীক্ষা কেন্দ্রে সরবরাহ করা প্রশ্ন পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে কেন্দ্র থেকে নিয়ে এসে জিডিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে সমাধান করে শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করে। এ চক্রের মূল হোতা বিকেএসপির সহকারী পরিচালক অলিফ কুমার বিশ্বাস, ইব্রাহীম, মোস্তাফা কামাল, হাফিজুর রহমান হাফিজ এবং তাজুল ইসলাম। সিআইডি প্রধান জানান, চক্রের মূল হোতাদের ব্যাংক একাউন্টে ২০ কোটি টাকার নগদ অর্থ এবং বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে করা মামলার এজাহারে থাকা ৮ আসামির ব্যাংক একাউন্টে ১৫ কোটি টাকা লেনদেন হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তারা প্রশ্ন ফাঁস করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এসব অর্থে বাড়ি, জমি, গাড়িসহ বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছে। প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের টাকা ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে উত্তরা পশ্চিম থানায় মানি লন্ডারিং আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। সেই মামলার তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। সিআইডি প্রধান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ৮৭ জন শিক্ষার্থী আসামি হয়েছে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে চার্জশিটের কপি পাঠানো হবে। এ প্রশ্ন ফাঁসে যারা ভর্তি হয়েছে এবং যারা চাকরি নিয়েছে তাদের নাম পরিচয় বের করে তালিকা তৈরি করা হবে।

যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট ঃ সিআইডি প্রশ্ন ফাঁসের মামলায় যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রস্তত করেছে তারা হলো বিকেএসপির সহকারী পরিচালক অলিপ কুমার বিশ্বাস, মো. ইব্রাহিম, মোস্তফা কামাল, হাফিজুর রহমান, মো. মাসুদ রহমান তাজুল, মো. রিমন হোসেন, মো. মহিউদ্দিন রানা, মো. আইয়ুব আলী বাঁধন, আবদুল্লাহ আল মামুন, ইশরাক হোসেন রাফি, মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. মামুন মিয়া, অসিম বিশ্বাস, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. নুরুল ইসলাম, মো. হাসমত আলী সিকদার, হোসনে আরা বেগম, গোলাম মো. বাবুল, টিএম তানভির হাসনাইন, সুজাউর রহমান সাম্য, রাফসান করিম, মো. আখিনুর রহমান অনিক, নাজমুল হাসান নাঈম, ফারজাদ সোবহান নাফি, আনিন চৌধুরী, রকিবুল হাসান ইসামী, বনি ইসরাইল, মো. মারুফ হোসেন, সাইফুল ইসলাম, খান বাহাদুর, কাজী মিনহাজুল ইসলাম নাহিদ ইফতেখার, রিফাত হোসেন, মো. বায়োজিদ, ফারদিন আহম্মেদ সাব্বির, তানভির আহম্মেদ মল্লিক, প্রসেনজিত দাস, মো. আজিজুল হাকিম, নাভিদ আনজুম তনয়, সালমান এফ রহমান হৃদয়, সজীব আহম্মদ, শিহাব হোসেন খান, এনামুল হক আকাশ, মোশারফ মোসা, মোহায়মেনুল ইসলাম বাঁধন, সাইদুর রহমান, আবদুর রহমান রমিজ, গোলাম রাব্বী খান জেনিথ, উৎপল বিশ্বাস, বেলাল হোসেন বাপ্পি, মো. মশিউর রহমান সমির, মো. আবু জুনায়েদ সাকিব, মোস্তাফিজ উর রহমান মিজান, আবুল কালাম আজাদ, শরমিলা আক্তার আশা, মাসুদ রানা, জেরিন হোসাইন, শেখ জাহিদ বিন হোসেন ইমন, তাজুল ইসলাম স¤্রাট, আবির হাসান হৃদয়, মোর্শেদা আক্তার, সালমান হাবিব আকাশ, আলামিন পৃথক, শাহ মেহেদি হাসান হৃদয়, অনিকা বৃষ্টি, ফিওনা মহিউদ্দিন মৌমি, সিনথিয়া আহমেদ, শাবিরুল ইসলাম সনেট, মো. লাভলুর রহমান লাভলু, মো. ইসছাক আলী ইছা, মো. আবদুল ওয়াহিদ মিশন, তানজিলা সুলতানা ইভা, ইশরাত জাহান ছন্দা, মো. আশেক মাহমুদ জয়, নাফিসা তাসনিম বিন্তী, প্রণয় পান্ডে, নুরুল্লাহ নয়ন, জিয়াউল ইসলাম, মো. আশরাফুল ইসলাম আরিফ, জাকিয়া সুলতানা, মো. শাদমান শাহ, সাদিয়া সিগমা, মো. রবিউল ইসলাম রবি, মেহেজাবীন অনন্যা, মো. রাকিবুল হাসান, এফ ফাইজার নাইম সাগর, সাদিয়া সুলতানা এশা, সামিয়া সুলতানা, ফাতেমা আক্তার, তামান্না, নওশীন আফরিন মিথিলা, আমরিন আলম জুটি, সুবহা নিলায়া তালুকদার, মো. মেহাইমিনুল রায়হান ফারুক, সাফায়েতে নুর সাইয়ারা নোশিন, মো. মাসুদ রানা, ইফতেখার আলম জিসান, মো. রাকিব হাসান, মো. খালিদ হাসান, আজনাল শাহ ফাহাদ, ষৌভিক সরকার, মো. রিজন আহমদ পাঠান, মাহবুব আলশ সিদ্দিবী স¤্রাট, মো. হাসিবুর রশিদ, মোছা. আফসানা নওরিন ঋতু, মো. শারুফ হাসান খান, মো. তৌহিদুল হাসান আকাশ, শাহাৎ আল ফেরদৌস ফাহিম, আয়েশা আক্তার তামান্না, ফাতেমাতুজ জোহরা মীম, শ্বাসত কুমার ঘোষ শুভ, মো. রাশেল আলী, রাজীবুল ইসলাম রাজীব, মো. আবু মাসুম, জান্নাত সুলতানা, জিএম রাফসান কবির, সাগর সাহা, মো. সাদেকুল ইসলাম সুমন, মো. আবদুল্লাহ, মো. খাইরুজ্জামান সরকার সুজন, মো. শাহেদ আহমেদ, মুহাইমিনুল ইসলাম মাসুদ, আশরাফুল আলম, মো. হাসিবুর রহমান রুবেল এবং মো. মাকসুদুর রহমান শুভ।

শুক্রবার, ৩১ মে ২০১৯ , ১৭ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ২৫ রমজান ১৪৪০

প্রশ্নফাঁস

৮৭ ঢাবি শিক্ষার্থীসহ ১২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র চূড়ান্ত

ঈদের পর আদালতে দাখিল

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষা, বিসিএস ও ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতির অভিযোগে রাজধানীর শাহবাগ থানার মামলায় ১২৫ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রয়েছে ৮৭ জন। ঈদুল ফিতরের পর চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হবে। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহা. শফিকুল ইসলাম।

তিনি আরও জানান, পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা না পাওয়ায় প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত আরও ৫৫ জনকে বাদ দিয়ে চার্জশিট দেয়া হলেও পরবর্তীতে সম্পূরক চার্জশিটে তাদের যুক্ত করা হবে। আসামিদের মধ্যে প্রশ্ন ফাঁস মামলায় এজাহারভুক্ত ৮ আসামির ব্যাংক একাউন্টে প্রায় ১৫ কোটি টাকা লেনদেনেরও সন্ধান পাওয়া গেছে। এদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন ফাঁসের মামলার পাশাপাশি মানি লন্ডারিং আইনেও মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে।

গত বছরের ২০ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম শহীদুল্লাহ হল থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক ঢাবি ছাত্র মহিউদ্দিন রানা ও আবদুল্লাহ আল মামুন নামে দুই ছাত্রকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তাদের কাছ থেকে এটিএম কার্ডের মতো দেখতে ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করা হয়, যা দিয়ে পরীক্ষা চলাকালে কানে আরেকটি ডিভাইস রাখা পরীক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পরীক্ষার দিনও কয়েকজনকে ডিভাইসসহ গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৬৩ ধারা এবং ১৯৮০ সালের পাবলিক পরীক্ষা আইনের ৯ (খ) ধারায় মামলা করে সিআইডি।

সিআইডি প্রধান ও অতিরিক্ত আইজি মোহা. শফিকুল ইসলাম জানান, মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সাইবার ক্রাইম ইউনিটের এএসপি সুমনকে। দীর্ঘ দেড় বছর তদন্তের পর প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত বিশাল একটি চক্রকে শনাক্ত করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের বিভিন্ন দফায় রিমান্ডে এনে প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের ১২৫ জনকে শনাক্ত করা হয়। অভিযোগপত্রভুক্ত ১২৫ জনের মধ্যে ৮৭ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, যাদের মধ্যে ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই ১৮ জনসহ গ্রেফতার মোট ৪৭ জনের মধ্যে ৪৬ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আরও ৫৫ জনের সম্পৃক্ত থাকার তথ্য পাওয়া গেলেও তাদের পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা না পাওয়ায় চার্জশিটে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। তাদের বিষয়ে তদন্ত চালাচ্ছে সিআইডি। পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা পাওয়ার পর ওই ৫৫ জনকে পরবর্তীতে সম্পূরক চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

সিআইডি প্রধান বলেন, অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল দেড় বছর তদন্তের মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস ও ডিজিটাল জালিয়াত চক্রকে চিহ্নিত করে। তদন্ত করে সিআইডি জানতে পারে গ্রেফতারকৃত ৪৭ জনসহ চার্জশিটে নাম আসা আসামিরা ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে পর পর দুই বছর প্রশ্ন ফাঁস করে। এ প্রশ্ন সাভারের পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার একটি বাসায় ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছে। এর আগেও তারা প্রশ্ন ফাঁস করেছে। বিসিএস পরীক্ষারও প্রশ্ন ফাঁস করতো এরা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চক্রের মূল হোতা নাটোর জেলার ক্রীড়া কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান এছামী, প্রেস কর্মচারী খান বাহাদুর, তার নিকটাত্মীয় সাইফুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বরি এবং মারুফসহ প্রথমে ২৮ জনকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে চক্রের বাকিদের নাম পরিচয় বেরিয়ে আসে। চক্রটি দুইভাবে জালিয়াতি করে। একটি চক্র প্রেস থেকে প্রশ্ন ফাঁস করে। আরেকটি চক্র পরীক্ষা কেন্দ্রে সরবরাহ করা প্রশ্ন পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে কেন্দ্র থেকে নিয়ে এসে জিডিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে সমাধান করে শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করে। এ চক্রের মূল হোতা বিকেএসপির সহকারী পরিচালক অলিফ কুমার বিশ্বাস, ইব্রাহীম, মোস্তাফা কামাল, হাফিজুর রহমান হাফিজ এবং তাজুল ইসলাম। সিআইডি প্রধান জানান, চক্রের মূল হোতাদের ব্যাংক একাউন্টে ২০ কোটি টাকার নগদ অর্থ এবং বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে করা মামলার এজাহারে থাকা ৮ আসামির ব্যাংক একাউন্টে ১৫ কোটি টাকা লেনদেন হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তারা প্রশ্ন ফাঁস করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এসব অর্থে বাড়ি, জমি, গাড়িসহ বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছে। প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের টাকা ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে উত্তরা পশ্চিম থানায় মানি লন্ডারিং আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। সেই মামলার তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। সিআইডি প্রধান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ৮৭ জন শিক্ষার্থী আসামি হয়েছে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে চার্জশিটের কপি পাঠানো হবে। এ প্রশ্ন ফাঁসে যারা ভর্তি হয়েছে এবং যারা চাকরি নিয়েছে তাদের নাম পরিচয় বের করে তালিকা তৈরি করা হবে।

যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট ঃ সিআইডি প্রশ্ন ফাঁসের মামলায় যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রস্তত করেছে তারা হলো বিকেএসপির সহকারী পরিচালক অলিপ কুমার বিশ্বাস, মো. ইব্রাহিম, মোস্তফা কামাল, হাফিজুর রহমান, মো. মাসুদ রহমান তাজুল, মো. রিমন হোসেন, মো. মহিউদ্দিন রানা, মো. আইয়ুব আলী বাঁধন, আবদুল্লাহ আল মামুন, ইশরাক হোসেন রাফি, মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. মামুন মিয়া, অসিম বিশ্বাস, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. নুরুল ইসলাম, মো. হাসমত আলী সিকদার, হোসনে আরা বেগম, গোলাম মো. বাবুল, টিএম তানভির হাসনাইন, সুজাউর রহমান সাম্য, রাফসান করিম, মো. আখিনুর রহমান অনিক, নাজমুল হাসান নাঈম, ফারজাদ সোবহান নাফি, আনিন চৌধুরী, রকিবুল হাসান ইসামী, বনি ইসরাইল, মো. মারুফ হোসেন, সাইফুল ইসলাম, খান বাহাদুর, কাজী মিনহাজুল ইসলাম নাহিদ ইফতেখার, রিফাত হোসেন, মো. বায়োজিদ, ফারদিন আহম্মেদ সাব্বির, তানভির আহম্মেদ মল্লিক, প্রসেনজিত দাস, মো. আজিজুল হাকিম, নাভিদ আনজুম তনয়, সালমান এফ রহমান হৃদয়, সজীব আহম্মদ, শিহাব হোসেন খান, এনামুল হক আকাশ, মোশারফ মোসা, মোহায়মেনুল ইসলাম বাঁধন, সাইদুর রহমান, আবদুর রহমান রমিজ, গোলাম রাব্বী খান জেনিথ, উৎপল বিশ্বাস, বেলাল হোসেন বাপ্পি, মো. মশিউর রহমান সমির, মো. আবু জুনায়েদ সাকিব, মোস্তাফিজ উর রহমান মিজান, আবুল কালাম আজাদ, শরমিলা আক্তার আশা, মাসুদ রানা, জেরিন হোসাইন, শেখ জাহিদ বিন হোসেন ইমন, তাজুল ইসলাম স¤্রাট, আবির হাসান হৃদয়, মোর্শেদা আক্তার, সালমান হাবিব আকাশ, আলামিন পৃথক, শাহ মেহেদি হাসান হৃদয়, অনিকা বৃষ্টি, ফিওনা মহিউদ্দিন মৌমি, সিনথিয়া আহমেদ, শাবিরুল ইসলাম সনেট, মো. লাভলুর রহমান লাভলু, মো. ইসছাক আলী ইছা, মো. আবদুল ওয়াহিদ মিশন, তানজিলা সুলতানা ইভা, ইশরাত জাহান ছন্দা, মো. আশেক মাহমুদ জয়, নাফিসা তাসনিম বিন্তী, প্রণয় পান্ডে, নুরুল্লাহ নয়ন, জিয়াউল ইসলাম, মো. আশরাফুল ইসলাম আরিফ, জাকিয়া সুলতানা, মো. শাদমান শাহ, সাদিয়া সিগমা, মো. রবিউল ইসলাম রবি, মেহেজাবীন অনন্যা, মো. রাকিবুল হাসান, এফ ফাইজার নাইম সাগর, সাদিয়া সুলতানা এশা, সামিয়া সুলতানা, ফাতেমা আক্তার, তামান্না, নওশীন আফরিন মিথিলা, আমরিন আলম জুটি, সুবহা নিলায়া তালুকদার, মো. মেহাইমিনুল রায়হান ফারুক, সাফায়েতে নুর সাইয়ারা নোশিন, মো. মাসুদ রানা, ইফতেখার আলম জিসান, মো. রাকিব হাসান, মো. খালিদ হাসান, আজনাল শাহ ফাহাদ, ষৌভিক সরকার, মো. রিজন আহমদ পাঠান, মাহবুব আলশ সিদ্দিবী স¤্রাট, মো. হাসিবুর রশিদ, মোছা. আফসানা নওরিন ঋতু, মো. শারুফ হাসান খান, মো. তৌহিদুল হাসান আকাশ, শাহাৎ আল ফেরদৌস ফাহিম, আয়েশা আক্তার তামান্না, ফাতেমাতুজ জোহরা মীম, শ্বাসত কুমার ঘোষ শুভ, মো. রাশেল আলী, রাজীবুল ইসলাম রাজীব, মো. আবু মাসুম, জান্নাত সুলতানা, জিএম রাফসান কবির, সাগর সাহা, মো. সাদেকুল ইসলাম সুমন, মো. আবদুল্লাহ, মো. খাইরুজ্জামান সরকার সুজন, মো. শাহেদ আহমেদ, মুহাইমিনুল ইসলাম মাসুদ, আশরাফুল আলম, মো. হাসিবুর রহমান রুবেল এবং মো. মাকসুদুর রহমান শুভ।