থানায় সেবার মান কমেছে বেড়েছে দুর্নীতি

থানায় সেবার মান হ্রাস পেয়েছে। বেড়েছে দুর্নীতি-অনিয়ম। সেখানে সাধারণ মানুষ কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর পরিবর্তে হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা। থানার প্রধান কর্মকর্তা (অফিসার ইনচার্জ) নন-ক্যাডার কর্মকর্তা হওয়ায় এ সমস্য হচ্ছে বলে বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

পুলিশ হেডকোয়াটার্স থেকে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ৬শ’র বেশি থানা রয়েছে। দুদক বলেছে, দেশজুড়ে মাঠপর্যায়ে পুলিশের সেবার প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে এখন থানা। সেখানে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ পরিদর্শক (নন-ক্যাডার) পদমর্যাদার কর্মকর্তারা। সেবা প্রার্থী সম্মানিত নাগরিকরা থানা থেকে কাক্সিক্ষত মাত্রার সেবা পাচ্ছে না মর্মে প্রায়ই অভিযোগ পাওয়া যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে আচরণগত, হয়রানি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনে এসব সমস্যা সমাধানে দুদক দুর্নীতি ও অনিয়মের উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধে সুপারিশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, দেশের উপজেলা পর্যায়ে অধিকাংশ দফতরেই ক্যাডার কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। তাই থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পুলিশ) ক্যাডারের সহকারী পুলিশ সুপার অথবা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের পদায়ন প্রয়োজন। পুলিশের প্রতি জনআস্থাকে আরও বিকশিত করা ও উপজেলা পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পদে পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়নের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।

দুদকের প্রতিবেদন সম্পর্কে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মীর সোহেল রানা বলেন, থানায় এএসপি পদায়নের বিষয়ে অনেক দিন ধরেই চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। আমরা থানাগুলোকে সেবার মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। জনগণ যাতে থানা থেকে তাদের কাক্সিক্ষত সেবা পেতে পারে, এ জন্য আমরা কাজ করছি। থানায় এএসপি পদায়নের বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।

পুলিশের একাধিক পদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, থানায় এসে মানুষ যাতে নির্বিঘেœ তাদের অভিযোগ জানাতে পারেন, এ জন্য বেশ কয়েক বছর আগেই থানাগুলোয় অফিসার ইনচার্জ হিসেবে এএসপি বা অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের দায়িত্ব দেয়ার জন্য পুলিশ সদর দফতর থেকে একটি প্রস্তব করা হয়েছিল। কিন্তু নন-ক্যাডার হিসেবে বর্তমান ওসিদের বিরোধিতার কারণে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি। এসআই হিসেবে চাকরি নিয়ে যারা বর্তমানে বিভিন্ন থানায় অফিসার ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের একটি সংগঠন রয়েছে। ওই সংগঠন এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে রাজনৈতিকভাবে তদবিরও করেছিলÑ যাতে থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে এএসপি বা অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের দায়িত্ব দেয়া না হয়। নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা মনে করছেন, থানার ওসি হিসেবে এএসপি বা অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের দায়িত্ব দেয়া হলে তাদের ক্ষমতা আর থাকবে না। সাধারণ মানুষের সেবার কথা বিবেচনা করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে দুদক মতামত দিয়েছে। এখন বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়।

কয়েক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, থানায় এখন ইন্সপেক্টরের সংখ্যা বেড়েছে। ওসি (ইনচার্জ), ইন্সপেক্টর (তদন্ত), এমনকি ইন্সপেক্টদের ফাঁড়িতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ফলে থানা ইনচার্জের পদমর্যাদা আরও বাড়তে পারে। তাই সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) বা অতিক্তি পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়ে কিছু ক্ষেত্রে সুবিধা হবে। তবে মানুষ কাক্সিক্ষত সেবা পাবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, দেশব্যাপী জনগণ থানা থেকে সেবা পেতে হলে থানার রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় জনগণ সেবা পাবে না। অভিযোগ রয়েছে, অনেক থানার ওসি থেকে অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে অপরাধ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। অনেকে মিথ্যা মামলা, মাদক ও অস্ত্র মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের ফাঁসিয়ে দেয়। ঘটনা ধামাচাপা দিতে নানা কৌশল অবলম্বন করে তারা। ফলে সাধারণ মানুষ থানায় গিয়ে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সম্প্রতি ফেনীতে এক মাদ্রাসাছাত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ওসি থেকে এসপি পর্যন্ত ঘটনা ধামাচাপা ও কর্তব্যে গাফিলতি করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ সদর দফতরের আইজিপি কমপ্লেইন সেলে থানার কনস্টেবল থেকে শুরু করে ওসিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমা পড়ছে। ওসিসহ মাঠপর্যায়ের পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে নিরীহ মানুষকে জেলে পাঠানো, মামলার তদন্তের জন্য ঘুষ দাবি করা, প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে অপরাধীদের পক্ষ নেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। চাঞ্চল্যকর মামলার আসামিদের নাম বাদ দেয়া, আসামি গ্রেফতার না করা, ঘুষ না পেয়ে নিরীহ মানুষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া, দখল, ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ রয়েছে।

শুক্রবার, ৩১ মে ২০১৯ , ১৭ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ২৫ রমজান ১৪৪০

থানায় সেবার মান কমেছে বেড়েছে দুর্নীতি

বাকী বিল্লাহ ও সাইফ বাবলু

থানায় সেবার মান হ্রাস পেয়েছে। বেড়েছে দুর্নীতি-অনিয়ম। সেখানে সাধারণ মানুষ কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর পরিবর্তে হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা। থানার প্রধান কর্মকর্তা (অফিসার ইনচার্জ) নন-ক্যাডার কর্মকর্তা হওয়ায় এ সমস্য হচ্ছে বলে বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

পুলিশ হেডকোয়াটার্স থেকে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ৬শ’র বেশি থানা রয়েছে। দুদক বলেছে, দেশজুড়ে মাঠপর্যায়ে পুলিশের সেবার প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে এখন থানা। সেখানে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ পরিদর্শক (নন-ক্যাডার) পদমর্যাদার কর্মকর্তারা। সেবা প্রার্থী সম্মানিত নাগরিকরা থানা থেকে কাক্সিক্ষত মাত্রার সেবা পাচ্ছে না মর্মে প্রায়ই অভিযোগ পাওয়া যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে আচরণগত, হয়রানি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনে এসব সমস্যা সমাধানে দুদক দুর্নীতি ও অনিয়মের উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধে সুপারিশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, দেশের উপজেলা পর্যায়ে অধিকাংশ দফতরেই ক্যাডার কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। তাই থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পুলিশ) ক্যাডারের সহকারী পুলিশ সুপার অথবা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের পদায়ন প্রয়োজন। পুলিশের প্রতি জনআস্থাকে আরও বিকশিত করা ও উপজেলা পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পদে পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়নের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।

দুদকের প্রতিবেদন সম্পর্কে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মীর সোহেল রানা বলেন, থানায় এএসপি পদায়নের বিষয়ে অনেক দিন ধরেই চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। আমরা থানাগুলোকে সেবার মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। জনগণ যাতে থানা থেকে তাদের কাক্সিক্ষত সেবা পেতে পারে, এ জন্য আমরা কাজ করছি। থানায় এএসপি পদায়নের বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।

পুলিশের একাধিক পদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, থানায় এসে মানুষ যাতে নির্বিঘেœ তাদের অভিযোগ জানাতে পারেন, এ জন্য বেশ কয়েক বছর আগেই থানাগুলোয় অফিসার ইনচার্জ হিসেবে এএসপি বা অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের দায়িত্ব দেয়ার জন্য পুলিশ সদর দফতর থেকে একটি প্রস্তব করা হয়েছিল। কিন্তু নন-ক্যাডার হিসেবে বর্তমান ওসিদের বিরোধিতার কারণে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি। এসআই হিসেবে চাকরি নিয়ে যারা বর্তমানে বিভিন্ন থানায় অফিসার ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের একটি সংগঠন রয়েছে। ওই সংগঠন এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে রাজনৈতিকভাবে তদবিরও করেছিলÑ যাতে থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে এএসপি বা অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের দায়িত্ব দেয়া না হয়। নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা মনে করছেন, থানার ওসি হিসেবে এএসপি বা অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের দায়িত্ব দেয়া হলে তাদের ক্ষমতা আর থাকবে না। সাধারণ মানুষের সেবার কথা বিবেচনা করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে দুদক মতামত দিয়েছে। এখন বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়।

কয়েক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, থানায় এখন ইন্সপেক্টরের সংখ্যা বেড়েছে। ওসি (ইনচার্জ), ইন্সপেক্টর (তদন্ত), এমনকি ইন্সপেক্টদের ফাঁড়িতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ফলে থানা ইনচার্জের পদমর্যাদা আরও বাড়তে পারে। তাই সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) বা অতিক্তি পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়ে কিছু ক্ষেত্রে সুবিধা হবে। তবে মানুষ কাক্সিক্ষত সেবা পাবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, দেশব্যাপী জনগণ থানা থেকে সেবা পেতে হলে থানার রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় জনগণ সেবা পাবে না। অভিযোগ রয়েছে, অনেক থানার ওসি থেকে অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে অপরাধ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। অনেকে মিথ্যা মামলা, মাদক ও অস্ত্র মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের ফাঁসিয়ে দেয়। ঘটনা ধামাচাপা দিতে নানা কৌশল অবলম্বন করে তারা। ফলে সাধারণ মানুষ থানায় গিয়ে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সম্প্রতি ফেনীতে এক মাদ্রাসাছাত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ওসি থেকে এসপি পর্যন্ত ঘটনা ধামাচাপা ও কর্তব্যে গাফিলতি করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ সদর দফতরের আইজিপি কমপ্লেইন সেলে থানার কনস্টেবল থেকে শুরু করে ওসিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমা পড়ছে। ওসিসহ মাঠপর্যায়ের পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে নিরীহ মানুষকে জেলে পাঠানো, মামলার তদন্তের জন্য ঘুষ দাবি করা, প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে অপরাধীদের পক্ষ নেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। চাঞ্চল্যকর মামলার আসামিদের নাম বাদ দেয়া, আসামি গ্রেফতার না করা, ঘুষ না পেয়ে নিরীহ মানুষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া, দখল, ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ রয়েছে।