রাজধানী ছাড়ছে ঈদে বাড়িমুখো মানুষ

মহাসড়কে অনেকটাই স্বস্তি

ঈদ সামনে রেখে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছে নগরবাসী। আগামী ৫ জুন ঈদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে ৩ জুন একদিন অফিস খোলা থাকবে। আগামী মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে ঈদের ছুটি। তবে গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় পরিবার নিয়ে অনেকে আগেভাগে ঢাকা ছাড়ছেন। সড়কপথে ঢাকা থেকে বের হতে হালকা যানজটে শিকার হলেও মহাসড়কে অনেকটা স্বস্তিতেই অতিক্রম করছে যানবাহন। কিন্তু অতিরিক্ত বোঝাই ও ভাড়া বেশি নেয়ার অভিযোগ করেন যাত্রীরা। এছাড়া রেলপথে স্বস্তি থাকলেও শেডিউল বিপর্যয়ের কারণে ভোগান্তি শিকার হতে হয়েছে যাত্রীদের। গতকাল কমলাপুর স্টেশন থেকে একটি ট্রেনও সময়মতো ছেড়ে যায়নি। রেলওয়ে সময় ঠিক না থাকার কারণে যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন স্বয়ং রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। গতকাল কমলাপুর স্টেশনে পরিদর্শনে এসে রেলমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার সারা দিন কমলাপুর স্টেশন থেকে ৫২টি ট্রেন ছেড়ে যাবে। বেলা ১১টা পর্যন্ত মোট ১৮টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে দেরি হয়েছে চারটির। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেরি হচ্ছে রংপুর এক্সপ্রেসের। ট্রেনটির প্রথম দিন প্রায় সোয়া সাত ঘণ্টা দেরি হতে পারে। এ জন্য আমরা খুবই দুঃখিত। তবে এটি সমাধানে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রংপুর থেকে রংপুর এক্সপ্রেস নামে অন্য একটি ট্রেন যাত্রী নিয়ে ঢাকায় আসবে। ফলে আজকের (শুক্রবার) এ বিলম্ব শনিবার থেকে হবে না।

গত বৃহস্পতিবার রাত থেকেই শুরু হয়েছে ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা। গতকাল সকাল থেকে শুরু হয়েছে কর্মজীবী মানুষের ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার পালা। ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-মাওয়াসহ মহাসড়কে বৃদ্ধি পেয়েছে গাড়ির সংখ্যা। তবে ঢাকা থেকে বের হওয়ার মুখে কিছুটা যানজট শিকার হলেও মহাসড়কে স্বস্তিতে চলাচল করছে আন্তঃজেলা পরিবহনগুলো। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলাসহ মোট ২৬টি জেলার অন্তত ৯০টি সড়কে যানবাহন চলাচল করে। যান চলাচল নির্বিঘœ করতে ২০১৩ সালে দুই লেনের এ মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ২০১৬ সালে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে দুটি সার্ভিস লেন, ২৯টি নতুন ব্রিজ, চারটি ফ্লাইওভার ও ১৪টি আন্ডারপাস সংযুক্ত হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হয়নি। গতকাল থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু সংযোগ সড়ক দিয়ে ঈদে ঘরঘুখো মানুষ যাওয়া শুরু করায় এ মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ মহাসড়ক দিয়ে সেতু হয়ে ১৯ হাজার ৭৮৭টি যানবাহন চলাচল করেছে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসে ১০ হাজার ২৫৪টি ও উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকার দিকে যায় ৯ হাজার ৫৩৩টি যানবাহন। তবে কোথাও কোন যানজটের ভোগান্তি শিকার হতে হয়নি বলে স্থানীয় সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ওসি মোশারফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে। ফলে মহাসড়কে যানজট না থাকলেও কিছু এলাকায় ধীরগতিতে চলছে যানবাহন। শুক্রবার ঈদের প্রথম ছুটি হওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে এ সড়কে যানবাহনের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তাই মধ্যরাতে এ মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হয়। কিন্তু তা স্বাভাবিক হয়ে যায়।

সরেজমিন রাজধানী বিভিন্ন বাস টার্মিনালে ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল সকালে রাজধানীর বাস টার্মিনালে ছিল ঘরমুখো মানুষের ভিড়। স্ত্রী ও সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য বাস কাউন্টারে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে যাত্রীদের। মহাসড়কে যানজট না থাকায় বেশিরভাগ বাস নির্ধারিত সময় টার্মিনাল ছেড়ে গেছে বলে যাত্রীরা জানান। তবে প্রচন্ড গরমে এসি বাসের চাহিদা বেশি। কিন্তু বাস সংখ্যা কম থাকায় টিকিট দাম বেশি নেয়ার অভিযোগ করেন অনেক যাত্রীরা।

রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে রাজশাহীর যাত্রী মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছেড়ে শিকড়ে ফিরছি। সড়ক মেরামত ও নতুন ফ্লাইওভার নির্মাণ হয়েছে। এবার যানজট নয়, স্বস্তির যাত্রা হবে বলা হচ্ছে। কিন্তু মনের মধ্যে এখনও অতীতের ভোগান্তির প্রভাবটাই বেশি। শঙ্কা কাটছেই না। না জানি, সড়কে যানজটে পড়ি।’ বরিশালের এক যাত্রী বলেন, ‘সকালে মন্ত্রী এসেছিলেন। বলে গেলেন সড়কে এবার যানজট নেই। স্বস্তির যাত্রা হবে। মন্ত্রী প্রতিবছরই তো বলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে যানজটে নাকাল হন ঈদযাত্রীরা। আশা করছি, এবার মন্ত্রীর কথামতো যানজট থাকবে না।’ রংপুরের যাত্রী সাইফুল আলম বলেন, ‘পরিবার নিয়ে এবার বাড়ি যাচ্ছি। মেয়ের মনে অনেক আনন্দ টের পাচ্ছি। অনেক দিন পর দাদা-দাদির দেখা পাবে। তাছাড়া নানার বাড়িও কাছেই। শুধু রাস্তায় যানজটটা না হলেই হয়।’

এদিকে গতকাল কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে একটি ট্রেনও ঠিক সময় প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে যায়নি। ট্রেনের শেডিউল বিপর্যয়ের কারণে ভোগান্তি শিকার হতে হয়েছে রেলপথের যাত্রীদের। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি শিকার হতে হয়েছে উত্তরবঙ্গের যাত্রীদের। কেননা ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া উত্তরবঙ্গগামী প্রায় সব ট্রেনই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে ছেড়ে গেছে। এছাড়া চট্টগ্রামগামী সোনার বাংলা, সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেসও দেরিতে কমলাপুর ছেড়ে গেছে। গতকাল সকাল থেকে কমলাপুর স্টেশনে ছিল ঘরমুখো মানুষের ভিড়। সবাই অপেক্ষায় ছিলেন কাক্সিক্ষত ট্রেনের। কিন্তু এর যেন দেখা নেই। কারণ গতকাল সকাল ৯টায় রংপুর এক্সপ্রেস কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও দুপুরে তা স্টেশনে এসেই পৌঁছায়নি। স্টেশনে ট্রেনের তথ্যের ডিসপ্লেতে ট্রেনটি ছাড়ার সম্ভাব্য সময় দেয়া হয় দুপুর ২টা ১০ মিনিট। এছাড়া রাজশাহীগামী ধূমকেতু ভোর ৬টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা দুই ঘণ্টা দেরিতে ছেড়ে গেছে। চট্টগ্রামগামী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে ছাড়ার নির্ধারিত সময় থাকলেও কমলাপুর ছেড়ে যায় সকাল সোয়া ৮টায়। সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছাড়ার নির্ধারিত সময় থাকলেও ছেড়ে যায় সাড়ে ৭টায়। সকাল ৮টার চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি আড়াই ঘণ্টা দেরি করে সকাল সাড়ে ১০টায় ছেড়ে যায়।

ট্রেনযাত্রী আনোয়ার হোসেন বলেন, ঈদযাত্রায় বিড়াম্বনা এড়াতে একটু আগেই বাড়ি যেতে চেয়েছিলাম। সঙ্গে যেহেতু স্ত্রী, সন্তানরা যাবেÑ সেহেতু একটু আগে বাড়ি গিয়ে ঈদের পরের দিন ফিরে আসব ভেবেছিলাম। সেভাবেই ছুটি নিয়েছি। কিন্তু স্টেশনে এসে দেখলাম সকাল ৯টার ট্রেন ছাড়বে দুপুর ২টা ১০ মিনিটে। শিশুসন্তানসহ পরিবার নিয়ে স্টেশনে এসে যদি এ দৃশ্য দেখতে হয়, তাহলে এর চেয়ে ভোগান্তি আর কিছু থাকতে পারে না। প্রতিবার ঈদে যাত্রীদের এমন ভোগান্তি পোহাতে হয়। মানুষ বিড়ম্বনা সহ্য করে ঈদে বাড়ি যায়। তাই বলে প্রথম দিনের ঈদযাত্রার একটি ট্রেন ৫-৭ ঘণ্টা দেরি করবেÑ এটি কীভাবে মেনে নেয়া সম্ভব! ঈদের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহের ক্ষেত্রে কমলাপুরের বাইরে যেমন কয়েকটা স্থান থেকে বিক্রি করা হয়েছে, তেমনি ঈদের সময় রেলওয়ের শেডিউল বিপর্যয় এড়াতে কিছু উদ্যোগ নেয়া দরকার বলে জানান যাত্রীরা।

শনিবার, ০১ জুন ২০১৯ , ১৮ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ২৬ রমজান ১৪৪০

রাজধানী ছাড়ছে ঈদে বাড়িমুখো মানুষ

মহাসড়কে অনেকটাই স্বস্তি

মাহমুদ আকাশ

ঈদ সামনে রেখে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছে নগরবাসী। আগামী ৫ জুন ঈদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে ৩ জুন একদিন অফিস খোলা থাকবে। আগামী মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে ঈদের ছুটি। তবে গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় পরিবার নিয়ে অনেকে আগেভাগে ঢাকা ছাড়ছেন। সড়কপথে ঢাকা থেকে বের হতে হালকা যানজটে শিকার হলেও মহাসড়কে অনেকটা স্বস্তিতেই অতিক্রম করছে যানবাহন। কিন্তু অতিরিক্ত বোঝাই ও ভাড়া বেশি নেয়ার অভিযোগ করেন যাত্রীরা। এছাড়া রেলপথে স্বস্তি থাকলেও শেডিউল বিপর্যয়ের কারণে ভোগান্তি শিকার হতে হয়েছে যাত্রীদের। গতকাল কমলাপুর স্টেশন থেকে একটি ট্রেনও সময়মতো ছেড়ে যায়নি। রেলওয়ে সময় ঠিক না থাকার কারণে যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন স্বয়ং রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। গতকাল কমলাপুর স্টেশনে পরিদর্শনে এসে রেলমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার সারা দিন কমলাপুর স্টেশন থেকে ৫২টি ট্রেন ছেড়ে যাবে। বেলা ১১টা পর্যন্ত মোট ১৮টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে দেরি হয়েছে চারটির। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেরি হচ্ছে রংপুর এক্সপ্রেসের। ট্রেনটির প্রথম দিন প্রায় সোয়া সাত ঘণ্টা দেরি হতে পারে। এ জন্য আমরা খুবই দুঃখিত। তবে এটি সমাধানে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রংপুর থেকে রংপুর এক্সপ্রেস নামে অন্য একটি ট্রেন যাত্রী নিয়ে ঢাকায় আসবে। ফলে আজকের (শুক্রবার) এ বিলম্ব শনিবার থেকে হবে না।

গত বৃহস্পতিবার রাত থেকেই শুরু হয়েছে ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা। গতকাল সকাল থেকে শুরু হয়েছে কর্মজীবী মানুষের ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার পালা। ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-মাওয়াসহ মহাসড়কে বৃদ্ধি পেয়েছে গাড়ির সংখ্যা। তবে ঢাকা থেকে বের হওয়ার মুখে কিছুটা যানজট শিকার হলেও মহাসড়কে স্বস্তিতে চলাচল করছে আন্তঃজেলা পরিবহনগুলো। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলাসহ মোট ২৬টি জেলার অন্তত ৯০টি সড়কে যানবাহন চলাচল করে। যান চলাচল নির্বিঘœ করতে ২০১৩ সালে দুই লেনের এ মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ২০১৬ সালে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে দুটি সার্ভিস লেন, ২৯টি নতুন ব্রিজ, চারটি ফ্লাইওভার ও ১৪টি আন্ডারপাস সংযুক্ত হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হয়নি। গতকাল থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু সংযোগ সড়ক দিয়ে ঈদে ঘরঘুখো মানুষ যাওয়া শুরু করায় এ মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ মহাসড়ক দিয়ে সেতু হয়ে ১৯ হাজার ৭৮৭টি যানবাহন চলাচল করেছে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসে ১০ হাজার ২৫৪টি ও উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকার দিকে যায় ৯ হাজার ৫৩৩টি যানবাহন। তবে কোথাও কোন যানজটের ভোগান্তি শিকার হতে হয়নি বলে স্থানীয় সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ওসি মোশারফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে। ফলে মহাসড়কে যানজট না থাকলেও কিছু এলাকায় ধীরগতিতে চলছে যানবাহন। শুক্রবার ঈদের প্রথম ছুটি হওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে এ সড়কে যানবাহনের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তাই মধ্যরাতে এ মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হয়। কিন্তু তা স্বাভাবিক হয়ে যায়।

সরেজমিন রাজধানী বিভিন্ন বাস টার্মিনালে ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল সকালে রাজধানীর বাস টার্মিনালে ছিল ঘরমুখো মানুষের ভিড়। স্ত্রী ও সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য বাস কাউন্টারে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে যাত্রীদের। মহাসড়কে যানজট না থাকায় বেশিরভাগ বাস নির্ধারিত সময় টার্মিনাল ছেড়ে গেছে বলে যাত্রীরা জানান। তবে প্রচন্ড গরমে এসি বাসের চাহিদা বেশি। কিন্তু বাস সংখ্যা কম থাকায় টিকিট দাম বেশি নেয়ার অভিযোগ করেন অনেক যাত্রীরা।

রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে রাজশাহীর যাত্রী মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছেড়ে শিকড়ে ফিরছি। সড়ক মেরামত ও নতুন ফ্লাইওভার নির্মাণ হয়েছে। এবার যানজট নয়, স্বস্তির যাত্রা হবে বলা হচ্ছে। কিন্তু মনের মধ্যে এখনও অতীতের ভোগান্তির প্রভাবটাই বেশি। শঙ্কা কাটছেই না। না জানি, সড়কে যানজটে পড়ি।’ বরিশালের এক যাত্রী বলেন, ‘সকালে মন্ত্রী এসেছিলেন। বলে গেলেন সড়কে এবার যানজট নেই। স্বস্তির যাত্রা হবে। মন্ত্রী প্রতিবছরই তো বলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে যানজটে নাকাল হন ঈদযাত্রীরা। আশা করছি, এবার মন্ত্রীর কথামতো যানজট থাকবে না।’ রংপুরের যাত্রী সাইফুল আলম বলেন, ‘পরিবার নিয়ে এবার বাড়ি যাচ্ছি। মেয়ের মনে অনেক আনন্দ টের পাচ্ছি। অনেক দিন পর দাদা-দাদির দেখা পাবে। তাছাড়া নানার বাড়িও কাছেই। শুধু রাস্তায় যানজটটা না হলেই হয়।’

এদিকে গতকাল কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে একটি ট্রেনও ঠিক সময় প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে যায়নি। ট্রেনের শেডিউল বিপর্যয়ের কারণে ভোগান্তি শিকার হতে হয়েছে রেলপথের যাত্রীদের। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি শিকার হতে হয়েছে উত্তরবঙ্গের যাত্রীদের। কেননা ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া উত্তরবঙ্গগামী প্রায় সব ট্রেনই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে ছেড়ে গেছে। এছাড়া চট্টগ্রামগামী সোনার বাংলা, সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেসও দেরিতে কমলাপুর ছেড়ে গেছে। গতকাল সকাল থেকে কমলাপুর স্টেশনে ছিল ঘরমুখো মানুষের ভিড়। সবাই অপেক্ষায় ছিলেন কাক্সিক্ষত ট্রেনের। কিন্তু এর যেন দেখা নেই। কারণ গতকাল সকাল ৯টায় রংপুর এক্সপ্রেস কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও দুপুরে তা স্টেশনে এসেই পৌঁছায়নি। স্টেশনে ট্রেনের তথ্যের ডিসপ্লেতে ট্রেনটি ছাড়ার সম্ভাব্য সময় দেয়া হয় দুপুর ২টা ১০ মিনিট। এছাড়া রাজশাহীগামী ধূমকেতু ভোর ৬টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা দুই ঘণ্টা দেরিতে ছেড়ে গেছে। চট্টগ্রামগামী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে ছাড়ার নির্ধারিত সময় থাকলেও কমলাপুর ছেড়ে যায় সকাল সোয়া ৮টায়। সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছাড়ার নির্ধারিত সময় থাকলেও ছেড়ে যায় সাড়ে ৭টায়। সকাল ৮টার চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি আড়াই ঘণ্টা দেরি করে সকাল সাড়ে ১০টায় ছেড়ে যায়।

ট্রেনযাত্রী আনোয়ার হোসেন বলেন, ঈদযাত্রায় বিড়াম্বনা এড়াতে একটু আগেই বাড়ি যেতে চেয়েছিলাম। সঙ্গে যেহেতু স্ত্রী, সন্তানরা যাবেÑ সেহেতু একটু আগে বাড়ি গিয়ে ঈদের পরের দিন ফিরে আসব ভেবেছিলাম। সেভাবেই ছুটি নিয়েছি। কিন্তু স্টেশনে এসে দেখলাম সকাল ৯টার ট্রেন ছাড়বে দুপুর ২টা ১০ মিনিটে। শিশুসন্তানসহ পরিবার নিয়ে স্টেশনে এসে যদি এ দৃশ্য দেখতে হয়, তাহলে এর চেয়ে ভোগান্তি আর কিছু থাকতে পারে না। প্রতিবার ঈদে যাত্রীদের এমন ভোগান্তি পোহাতে হয়। মানুষ বিড়ম্বনা সহ্য করে ঈদে বাড়ি যায়। তাই বলে প্রথম দিনের ঈদযাত্রার একটি ট্রেন ৫-৭ ঘণ্টা দেরি করবেÑ এটি কীভাবে মেনে নেয়া সম্ভব! ঈদের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহের ক্ষেত্রে কমলাপুরের বাইরে যেমন কয়েকটা স্থান থেকে বিক্রি করা হয়েছে, তেমনি ঈদের সময় রেলওয়ের শেডিউল বিপর্যয় এড়াতে কিছু উদ্যোগ নেয়া দরকার বলে জানান যাত্রীরা।