ওসি মোয়াজ্জেমের অব্যাহতি প্রশ্নবিদ্ধ

টিআইবি

নুসরাত হত্যা মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেয়া অভিযোগপত্র থেকে ফেনীর সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের অব্যাহতি প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল এক বিবৃতিতে সংস্থাটি নৃশংস এই হত্যাকান্ডে পুলিশের ভূমিকা বিশেষ করে তৎকালীন ওসির দায়-দায়িত্ব নিরূপণে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, নুসরাত হত্যাকান্ডের পর পিবিআই উল্লেখযোগ্য তৎপরতার সঙ্গে তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র জমা দিলেও এর পরিপূর্ণতা ও বস্তুনিষ্ঠতা সম্পর্কে আমরা আশ্বস্ত হতে পারছি না। কারণ নুসরাত যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার পর তার পরিবারের মামলা দায়েরের দিন থেকে তার ওপর নৃশংস হামলার পুরো সময়ে সোনাগাজী থানার সাবেক ওসির প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার কথা গণমাধ্যমসূত্রে দেশবাসী জানতে পেরেছে।

বিশেষ করে তার বিরুদ্ধে ‘হত্যাকান্ডটিকে আত্মহত্যা বলে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা’ এবং ‘হত্যাকারীদের সুরক্ষা প্রদানে যোগসাজশ’র সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এমন বাস্তবতায় অভিযোগপত্রে তাকে অব্যাহতি দেয়ার কোন যুক্তিগ্রাহ্য কারণ রয়েছে কি-না, বা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য হওয়ায় তাকে দায়মুক্তি দেয়া হচ্ছে কি-না, সেই প্রশ্ন ওঠাটা অস্বাভাবিক নয়।

ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেয়াটা যথার্থ, তবে যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ব্যক্তির পরিচয়ের কারণে এক্ষেত্রে ‘গুরু পাপে লঘুদ-’ দিয়ে দায় সারার চেষ্টা হচ্ছে কিনাÑএরূপ প্রশ্ন ওঠা অযৌক্তিক নয়। নুসরাতকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় আইন-কানুনের ধার ধারেননি ওসি।

জিজ্ঞাসাবাদের যে ভিডিও এই পুলিশ কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন তাতে দেখা গেছে কোন নারী পুলিশ সদস্য সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। একের পর এক বিব্রতকর প্রশ্ন করে তাকে রীতিমতো হেনস্তা করা হয়েছে। একদিকে নুসরাতকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করে বাস্তবে তার জন্য নির্যাতনকারীর সঙ্গে যোগসাজশ করা হয়েছে ও অন্যদিকে তার অভিযোগকে ভিত্তিহীন প্রমাণের অপচেষ্টা হয়েছে।

শুধু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সীমাবদ্ধ রাখা ওই পুলিশ কর্মকর্তার বহুমুখী বিতর্কিত ভূমিকার একটি অংশকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে উল্লেখ করে ড. জামান বলেছেন, একজন প্রভাবশালী যৌন নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে মামলা করার পর নুসরাতকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ প্রশাসন। এমনকি মাদ্রাসার ছাদে তার হাত-পা বেঁধে আগুন দিয়ে গুরুতর আহত করার ঘটনাকে আত্মহত্যা চেষ্টা বলে চালিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টাও করেছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এছাড়া অভিযুক্তদের কয়েকজন পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করার কথাও বলেছে যেটা গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তার এমন কর্মকান্ডকে কেবলমাত্র দায়িত্বে অবহেলা বলে চালিয়ে দেয়া যাবে না। বরং ঘটনার পরম্পরা বিবেচনায় নিলে ওই কর্মকর্তার সঙ্গে ঘাতকদের যোগসাজশ ও অপরাধীদের সুরক্ষা দেয়ার প্রয়াসের অভিযোগ অমূলকÑএমনটা বলার সুযোগ নেই।

নুসরাত হত্যাকান্ডে স্থানীয় পুলিশ বাহিনী বিশেষ করে ওসি মোয়জ্জেমের ভূমিকা নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলছেন, দেশে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা ভয়াবহ ও গভীরতম উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আইনের কঠোরতম প্রয়োগ নিশ্চিত করা না গেলে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোন সম্ভাবনা নেই। এমন অবস্থায় নুসরাতের নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের নিরপেক্ষ বিচারবিভাগীয় তদন্তের বিকল্প নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ও পুলিশ কর্তৃপক্ষের প্রযোজ্য বিভাগীয় পদক্ষেপ যথার্থ, তবে যথেষ্ট নয়। এই অপরাধে পুলিশ কর্মকর্তার দায় কতটুকু তা পরিপূর্ণ ও বস্তুনিষ্ঠভাবে নির্ধারণ করে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত না হলে, তা হবে এ ধরনের জঘন্য অপরাধকে সুরক্ষা ও প্রণোদনা দেয়ার শামিল।

শনিবার, ০১ জুন ২০১৯ , ১৮ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ২৬ রমজান ১৪৪০

নুসরাত হত্যা মামলায় চার্জশিট

ওসি মোয়াজ্জেমের অব্যাহতি প্রশ্নবিদ্ধ

টিআইবি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

নুসরাত হত্যা মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেয়া অভিযোগপত্র থেকে ফেনীর সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের অব্যাহতি প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল এক বিবৃতিতে সংস্থাটি নৃশংস এই হত্যাকান্ডে পুলিশের ভূমিকা বিশেষ করে তৎকালীন ওসির দায়-দায়িত্ব নিরূপণে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, নুসরাত হত্যাকান্ডের পর পিবিআই উল্লেখযোগ্য তৎপরতার সঙ্গে তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র জমা দিলেও এর পরিপূর্ণতা ও বস্তুনিষ্ঠতা সম্পর্কে আমরা আশ্বস্ত হতে পারছি না। কারণ নুসরাত যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার পর তার পরিবারের মামলা দায়েরের দিন থেকে তার ওপর নৃশংস হামলার পুরো সময়ে সোনাগাজী থানার সাবেক ওসির প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার কথা গণমাধ্যমসূত্রে দেশবাসী জানতে পেরেছে।

বিশেষ করে তার বিরুদ্ধে ‘হত্যাকান্ডটিকে আত্মহত্যা বলে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা’ এবং ‘হত্যাকারীদের সুরক্ষা প্রদানে যোগসাজশ’র সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এমন বাস্তবতায় অভিযোগপত্রে তাকে অব্যাহতি দেয়ার কোন যুক্তিগ্রাহ্য কারণ রয়েছে কি-না, বা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য হওয়ায় তাকে দায়মুক্তি দেয়া হচ্ছে কি-না, সেই প্রশ্ন ওঠাটা অস্বাভাবিক নয়।

ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেয়াটা যথার্থ, তবে যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ব্যক্তির পরিচয়ের কারণে এক্ষেত্রে ‘গুরু পাপে লঘুদ-’ দিয়ে দায় সারার চেষ্টা হচ্ছে কিনাÑএরূপ প্রশ্ন ওঠা অযৌক্তিক নয়। নুসরাতকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় আইন-কানুনের ধার ধারেননি ওসি।

জিজ্ঞাসাবাদের যে ভিডিও এই পুলিশ কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন তাতে দেখা গেছে কোন নারী পুলিশ সদস্য সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। একের পর এক বিব্রতকর প্রশ্ন করে তাকে রীতিমতো হেনস্তা করা হয়েছে। একদিকে নুসরাতকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করে বাস্তবে তার জন্য নির্যাতনকারীর সঙ্গে যোগসাজশ করা হয়েছে ও অন্যদিকে তার অভিযোগকে ভিত্তিহীন প্রমাণের অপচেষ্টা হয়েছে।

শুধু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সীমাবদ্ধ রাখা ওই পুলিশ কর্মকর্তার বহুমুখী বিতর্কিত ভূমিকার একটি অংশকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে উল্লেখ করে ড. জামান বলেছেন, একজন প্রভাবশালী যৌন নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে মামলা করার পর নুসরাতকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ প্রশাসন। এমনকি মাদ্রাসার ছাদে তার হাত-পা বেঁধে আগুন দিয়ে গুরুতর আহত করার ঘটনাকে আত্মহত্যা চেষ্টা বলে চালিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টাও করেছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এছাড়া অভিযুক্তদের কয়েকজন পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করার কথাও বলেছে যেটা গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তার এমন কর্মকান্ডকে কেবলমাত্র দায়িত্বে অবহেলা বলে চালিয়ে দেয়া যাবে না। বরং ঘটনার পরম্পরা বিবেচনায় নিলে ওই কর্মকর্তার সঙ্গে ঘাতকদের যোগসাজশ ও অপরাধীদের সুরক্ষা দেয়ার প্রয়াসের অভিযোগ অমূলকÑএমনটা বলার সুযোগ নেই।

নুসরাত হত্যাকান্ডে স্থানীয় পুলিশ বাহিনী বিশেষ করে ওসি মোয়জ্জেমের ভূমিকা নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলছেন, দেশে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা ভয়াবহ ও গভীরতম উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আইনের কঠোরতম প্রয়োগ নিশ্চিত করা না গেলে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোন সম্ভাবনা নেই। এমন অবস্থায় নুসরাতের নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের নিরপেক্ষ বিচারবিভাগীয় তদন্তের বিকল্প নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ও পুলিশ কর্তৃপক্ষের প্রযোজ্য বিভাগীয় পদক্ষেপ যথার্থ, তবে যথেষ্ট নয়। এই অপরাধে পুলিশ কর্মকর্তার দায় কতটুকু তা পরিপূর্ণ ও বস্তুনিষ্ঠভাবে নির্ধারণ করে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত না হলে, তা হবে এ ধরনের জঘন্য অপরাধকে সুরক্ষা ও প্রণোদনা দেয়ার শামিল।