ঈদ উপলক্ষে রাজধানী ছাড়ছেন নগরবাসী। পরিবারের আপনজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে আগেভাগে গ্রামে যাচ্ছেন তারা। তবে এবার সড়কপথে যানজট কিছুটা কম থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া নৈরাজ্যের শিকার হচ্ছেন ঘরমুখো মানুষ। গ্রামের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে বাস টার্মিনাল আসা পর্যন্ত প্রতিটি গণপরিবহনের চালকরা যাত্রীদের কাছে ২-৩ গুণ ভাড়া আদায় করছে। বাস-মিনিবাস, রিকশা, সিএনজি অটোরিক্সা, লেগুনাসহ সব গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এছাড়া দূরাপাল্লার এসি বাসের ভাড়ার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রতিদিনই এসি বাসের ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। রোজায় ঢাকা থেকে ঝিনাইদহ ভাড়া ছিল ৮০০ টাকা। এখন তা ১৩০০ টাকা নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা। পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন রুটে বাস-মিনিবাস চালকরা রিজার্ড গাড়ি নামের ২০ টাকা ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১০০ টাকা। এছাড়া ৫ টাকার সর্বনি¤œ ভাড়া ২০-২৫ টাকা হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান। অথচ ২০১৫ সালে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি)’র দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে রাজধানীর ও চট্টগ্রাম মহানগরী এবং ঢাকার আশপাশের জেলায় বড় বাস-মিনিবাসের ভাড়া বাড়ানো হয়। তখন ১০ পয়সা বাড়িয়ে বড় বাসে প্রতি কিলেমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা এবং মিনিবাসে ১ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। যা আগে ছিল বড় বাসে ১ টাকা ৬০ পয়সা ও মিনিবাসে ১ টাকা ৫০ পয়সা। সর্বনিম্ন ভাড়া বড় বাসের জন্য ৭ টাকা ও মিনিবাসের জন্য ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া ঢাকার বাইরে আন্তঃজেলা বাস সার্ভিসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয় প্রতিকিলোমিটার ১ টাকা ৪২ পয়সা। কিন্তু এটা মানছে না কোন পরিবহন মালিকরা।
সরেজমিনে বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, বাস-মিনিবাসের ভাড়া নিয়ে চলছে নৈরাজ্য। পুরোপুরি জিম্মি করে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন বাস-মিনিবাস চালকরা। এরা সরকারের কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করে না। রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলরত বাস-মিনিবাসে ‘সিটিং সার্ভিস’ নামে চলছে অনিয়ম। সব বাসেই এখন ১০-১৫ টাকার নিচে কোন ভাড়া নেয়া হয় না। একইভাবে রাজধানী চলাচল করা এসি পরিবহনে ভাড়া আদায়ের কোন নীতিমালা নেই। ইচ্ছেমত ভাড়া আদায় করে গণপরিবহন। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় হাচিব নামের এক যাত্রী বলেন, যাত্রাবাড়ী থেকে মতিঝিল আসারপথে আমার কাছে ২০ টাকা ভাড়া নিয়েছে বেস্টওয়ে পরিবহন। একই অবস্থা মিডলাইন পরিবহনের। সিটিং সার্ভিসের নামে ৫ টাকার ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১৫ টাকা। ১০ টাকার ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৩০ টাকা। এভাবে চলা যায় না। গণপবিহনের ভাড়ার ক্ষেত্রে একটি কঠোর নীতিমালা দেয়ার দাবি জানান তিনি।
রাজধানীর গাবতলী এলাকায় সারোয়ার নামের এক যাত্রী বলেন, গ্রামে যাওয়ার জন্য রামপুরা বাসা থেকে বের হয় সকাল ৮ টায়। বাসা থেকে বাসস্ট্যান আসার জন্য রিকশা নেয়া হয়। রিকশার ১০ টাকার ভাড়া হয় ৪০ টাকা। তারপর সিটিং সার্ভিস বাসে গাবতলী বাস টার্মিনালে আসি। এখানে ২৫ টাকার ভাড়া নেয়া হয়েছে ৫০ টাকা। এক কথা রিজার্ড গাড়ি ভাড়া বেশি। ঝিনাইদহ যাওয়া জন্য জিআর পরিবহন এসি গাড়ির ৮০০ টাকা ভাড়া নেয়া হয়েছে ১৩০০ টাকা। এভাবে প্রতিটি মুহূর্ত গণপরিবহনের ভাড়া নিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, ১৯৯০ সালে প্রতিকিলোমিটার বাসের ভাড়াছিল ৩২ পয়সা। আর মিনিবাসের ভাড়া ছিল ৩৫ পয়সা। ২০০৮ সালের ২২ জুলাই ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে পৃথকভাবে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। তখনই মিনিবাসের চেয়ে বড় বাসের ভাড়া বেশি নির্ধারণ করা হয়। তখন বাসের জন্য ১ টাকা ২০ পয়সা ও মিনিবাসের জন্য ১ টাকা ১০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। তখনেই মালিক সমিতির সম্মতিতে বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর ২০১১ সালের ১৮ মে গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে আবার বাস ও মিনিবাসের ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করা হয়। তখন বাসের জন্য ১ টাকা ৫৫ পয়সা ও মিনিবাসের জন্য ১ টাকা ৪৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। সে সময় বড় বাস ও মিনিবাসের জন্য সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকা ও ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে মালিক সমিতির আপত্তি ছিল বলে বিআরটিএ’র সূত্র জানায়। এরপর ২০১১ সালে গ্যাসের দাম ২০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বাস ও মিনিবাসের ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করা হয়। তখন বাসের জন্য ১ টাকা ৬০ পয়সা ও মিনিবাসের জন্য ১ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। তখনো বাস ও মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকা ও ৫ টাকা অপরিবর্তিত থাকে বলে বিআরটিএ’র সূত্রে জানায়। কিন্তু এই নীতিমালা মানছে না গণপরিবহন মালিকরা। ইচ্ছেমত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। সিটিং, গেটলক, স্পেশাল ও বিরতিহীন সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে চালকরা। রাজধানীর পরিবহন ভাড়া নির্ধারনের জন্য সরকারের দু’টি কমিটি রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো সাব কমিটি বা ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটি। অপরটি মূলকমিটি। দুটি কমিটিতে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের প্রতিনিধি আছেন। ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটি পরিবহনের যাবতীয় আয়-ব্যয় বিশ্লেষণ করে ভাড়া বৃদ্ধি একটি খসড়া প্রস্তাবনা মূল কমিটির কাছে পেশ করে। এরপর মূল কমিটি তারা চূড়ান্ত করে। কিন্তু রাজধানীর পরিবহনগুলো ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোন প্রকার বিরতিহীন, গেইটলক, সিটিং সার্ভিস, কাউন্টার সার্ভিসের নাম উল্লেখ নেই। এসব নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা সম্পূর্ণ অবৈধ ও বেআইনি বলে বিআরটিএ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা জানান।
এ দিকে ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষ অতিরিক্ত ভাড়া নৈরাজ্যের শিকার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতি। অনতিবিলম্বে ঈদযাত্রায় এহেন ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি বন্ধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায় সংগঠনটি। গত কয়েকদিনের ঈদযাত্রা পর্যবেক্ষণ শেষে গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে এই অভিযোগ করে সংগঠনটি। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ঈদযাত্রায় সড়ক, নৌ ও আকাশপথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে। ট্রেনের সিডিউল লন্ডভন্ড হওয়ায় রেলপথের যাত্রীসাধারণ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। সড়ক পথে হতেগুনা কয়েকটি রুট ছাড়া প্রায় সবকটি রুটে ঈদযাত্রার যাত্রীসাধারণ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যের শিকার হচ্ছে। নৌপথে লঞ্চের কর্মচারীরা ডেকে তাদের চাদর বিছিয়ে রেখে ডেকশ্রেণীর যাত্রীদের কাছ থেকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে। আবার টিকিটেও বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে। লঞ্চঘাট ও খেয়াঘাটগুলোতে নিয়োজিত ইজারাদাররা ঘাট ইজারার নামে, খেয়া পারাপারের নামে অতিরিক্ত টোল আদায়ের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরনের উদ্যোগের পরও যাত্রীরা এহেন নৈরাজ্যের শিকার হচ্ছে। এছাড়া রেলপথে বেশিরভাগ ট্রেনের শিডিউল লন্ডভন্ড থাকায় রেলপথের যাত্রীসাধারণ পরিবার-পরিজন নিয়ে স্টেশনে এসে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। আকাশপথে কোন কোন রুটে ঈদযাত্রার টিকিট ৩ থেকে ৪ গুণ বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। সড়ক, নৌ ও রেল-পথে বিভিন্ন সংস্থার তৎপরতা থাকলেও আকাশপথে ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বা অন্য কোন সংস্থার তৎপরতা দেখা যায়নি।
সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর অভিযোগ করে বলেন, এহেন ভাড়া নৈরাজ্য ও টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করা না গেলে ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও পণ্যবাহী পরিবহনে নিম্নআয়ের লোকজনের যাতায়াত কোনভাবেই ঠেকানো যাবে না। এতে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানী বাড়বে। গণপরিবহন সংকটের কারণে ও কম ভাড়ায় যাতায়াতের আশায় নিন্মআয়ের লোকজন ফিটনেসবিহীন যানবাহন, পণ্যবাহী যানবাহন, বাস-ট্রেন ও লঞ্চের ছাদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছে। তিনি অনতিবিলম্বে ঈদযাত্রায় এহেন ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি বন্ধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
সোমবার, ০৩ জুন ২০১৯ , ২০ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ২৮ রমজান ১৪৪০
মাহমুদ আকাশ
ঈদ উপলক্ষে রাজধানী ছাড়ছেন নগরবাসী। পরিবারের আপনজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে আগেভাগে গ্রামে যাচ্ছেন তারা। তবে এবার সড়কপথে যানজট কিছুটা কম থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া নৈরাজ্যের শিকার হচ্ছেন ঘরমুখো মানুষ। গ্রামের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে বাস টার্মিনাল আসা পর্যন্ত প্রতিটি গণপরিবহনের চালকরা যাত্রীদের কাছে ২-৩ গুণ ভাড়া আদায় করছে। বাস-মিনিবাস, রিকশা, সিএনজি অটোরিক্সা, লেগুনাসহ সব গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এছাড়া দূরাপাল্লার এসি বাসের ভাড়ার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রতিদিনই এসি বাসের ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। রোজায় ঢাকা থেকে ঝিনাইদহ ভাড়া ছিল ৮০০ টাকা। এখন তা ১৩০০ টাকা নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা। পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন রুটে বাস-মিনিবাস চালকরা রিজার্ড গাড়ি নামের ২০ টাকা ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১০০ টাকা। এছাড়া ৫ টাকার সর্বনি¤œ ভাড়া ২০-২৫ টাকা হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান। অথচ ২০১৫ সালে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি)’র দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে রাজধানীর ও চট্টগ্রাম মহানগরী এবং ঢাকার আশপাশের জেলায় বড় বাস-মিনিবাসের ভাড়া বাড়ানো হয়। তখন ১০ পয়সা বাড়িয়ে বড় বাসে প্রতি কিলেমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা এবং মিনিবাসে ১ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। যা আগে ছিল বড় বাসে ১ টাকা ৬০ পয়সা ও মিনিবাসে ১ টাকা ৫০ পয়সা। সর্বনিম্ন ভাড়া বড় বাসের জন্য ৭ টাকা ও মিনিবাসের জন্য ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া ঢাকার বাইরে আন্তঃজেলা বাস সার্ভিসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয় প্রতিকিলোমিটার ১ টাকা ৪২ পয়সা। কিন্তু এটা মানছে না কোন পরিবহন মালিকরা।
সরেজমিনে বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, বাস-মিনিবাসের ভাড়া নিয়ে চলছে নৈরাজ্য। পুরোপুরি জিম্মি করে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন বাস-মিনিবাস চালকরা। এরা সরকারের কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করে না। রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলরত বাস-মিনিবাসে ‘সিটিং সার্ভিস’ নামে চলছে অনিয়ম। সব বাসেই এখন ১০-১৫ টাকার নিচে কোন ভাড়া নেয়া হয় না। একইভাবে রাজধানী চলাচল করা এসি পরিবহনে ভাড়া আদায়ের কোন নীতিমালা নেই। ইচ্ছেমত ভাড়া আদায় করে গণপরিবহন। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় হাচিব নামের এক যাত্রী বলেন, যাত্রাবাড়ী থেকে মতিঝিল আসারপথে আমার কাছে ২০ টাকা ভাড়া নিয়েছে বেস্টওয়ে পরিবহন। একই অবস্থা মিডলাইন পরিবহনের। সিটিং সার্ভিসের নামে ৫ টাকার ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১৫ টাকা। ১০ টাকার ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৩০ টাকা। এভাবে চলা যায় না। গণপবিহনের ভাড়ার ক্ষেত্রে একটি কঠোর নীতিমালা দেয়ার দাবি জানান তিনি।
রাজধানীর গাবতলী এলাকায় সারোয়ার নামের এক যাত্রী বলেন, গ্রামে যাওয়ার জন্য রামপুরা বাসা থেকে বের হয় সকাল ৮ টায়। বাসা থেকে বাসস্ট্যান আসার জন্য রিকশা নেয়া হয়। রিকশার ১০ টাকার ভাড়া হয় ৪০ টাকা। তারপর সিটিং সার্ভিস বাসে গাবতলী বাস টার্মিনালে আসি। এখানে ২৫ টাকার ভাড়া নেয়া হয়েছে ৫০ টাকা। এক কথা রিজার্ড গাড়ি ভাড়া বেশি। ঝিনাইদহ যাওয়া জন্য জিআর পরিবহন এসি গাড়ির ৮০০ টাকা ভাড়া নেয়া হয়েছে ১৩০০ টাকা। এভাবে প্রতিটি মুহূর্ত গণপরিবহনের ভাড়া নিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, ১৯৯০ সালে প্রতিকিলোমিটার বাসের ভাড়াছিল ৩২ পয়সা। আর মিনিবাসের ভাড়া ছিল ৩৫ পয়সা। ২০০৮ সালের ২২ জুলাই ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে পৃথকভাবে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। তখনই মিনিবাসের চেয়ে বড় বাসের ভাড়া বেশি নির্ধারণ করা হয়। তখন বাসের জন্য ১ টাকা ২০ পয়সা ও মিনিবাসের জন্য ১ টাকা ১০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। তখনেই মালিক সমিতির সম্মতিতে বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর ২০১১ সালের ১৮ মে গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে আবার বাস ও মিনিবাসের ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করা হয়। তখন বাসের জন্য ১ টাকা ৫৫ পয়সা ও মিনিবাসের জন্য ১ টাকা ৪৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। সে সময় বড় বাস ও মিনিবাসের জন্য সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকা ও ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে মালিক সমিতির আপত্তি ছিল বলে বিআরটিএ’র সূত্র জানায়। এরপর ২০১১ সালে গ্যাসের দাম ২০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বাস ও মিনিবাসের ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করা হয়। তখন বাসের জন্য ১ টাকা ৬০ পয়সা ও মিনিবাসের জন্য ১ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। তখনো বাস ও মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকা ও ৫ টাকা অপরিবর্তিত থাকে বলে বিআরটিএ’র সূত্রে জানায়। কিন্তু এই নীতিমালা মানছে না গণপরিবহন মালিকরা। ইচ্ছেমত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। সিটিং, গেটলক, স্পেশাল ও বিরতিহীন সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে চালকরা। রাজধানীর পরিবহন ভাড়া নির্ধারনের জন্য সরকারের দু’টি কমিটি রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো সাব কমিটি বা ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটি। অপরটি মূলকমিটি। দুটি কমিটিতে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের প্রতিনিধি আছেন। ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটি পরিবহনের যাবতীয় আয়-ব্যয় বিশ্লেষণ করে ভাড়া বৃদ্ধি একটি খসড়া প্রস্তাবনা মূল কমিটির কাছে পেশ করে। এরপর মূল কমিটি তারা চূড়ান্ত করে। কিন্তু রাজধানীর পরিবহনগুলো ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোন প্রকার বিরতিহীন, গেইটলক, সিটিং সার্ভিস, কাউন্টার সার্ভিসের নাম উল্লেখ নেই। এসব নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা সম্পূর্ণ অবৈধ ও বেআইনি বলে বিআরটিএ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা জানান।
এ দিকে ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষ অতিরিক্ত ভাড়া নৈরাজ্যের শিকার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতি। অনতিবিলম্বে ঈদযাত্রায় এহেন ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি বন্ধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায় সংগঠনটি। গত কয়েকদিনের ঈদযাত্রা পর্যবেক্ষণ শেষে গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে এই অভিযোগ করে সংগঠনটি। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ঈদযাত্রায় সড়ক, নৌ ও আকাশপথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে। ট্রেনের সিডিউল লন্ডভন্ড হওয়ায় রেলপথের যাত্রীসাধারণ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। সড়ক পথে হতেগুনা কয়েকটি রুট ছাড়া প্রায় সবকটি রুটে ঈদযাত্রার যাত্রীসাধারণ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যের শিকার হচ্ছে। নৌপথে লঞ্চের কর্মচারীরা ডেকে তাদের চাদর বিছিয়ে রেখে ডেকশ্রেণীর যাত্রীদের কাছ থেকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে। আবার টিকিটেও বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে। লঞ্চঘাট ও খেয়াঘাটগুলোতে নিয়োজিত ইজারাদাররা ঘাট ইজারার নামে, খেয়া পারাপারের নামে অতিরিক্ত টোল আদায়ের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরনের উদ্যোগের পরও যাত্রীরা এহেন নৈরাজ্যের শিকার হচ্ছে। এছাড়া রেলপথে বেশিরভাগ ট্রেনের শিডিউল লন্ডভন্ড থাকায় রেলপথের যাত্রীসাধারণ পরিবার-পরিজন নিয়ে স্টেশনে এসে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। আকাশপথে কোন কোন রুটে ঈদযাত্রার টিকিট ৩ থেকে ৪ গুণ বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। সড়ক, নৌ ও রেল-পথে বিভিন্ন সংস্থার তৎপরতা থাকলেও আকাশপথে ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বা অন্য কোন সংস্থার তৎপরতা দেখা যায়নি।
সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর অভিযোগ করে বলেন, এহেন ভাড়া নৈরাজ্য ও টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করা না গেলে ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও পণ্যবাহী পরিবহনে নিম্নআয়ের লোকজনের যাতায়াত কোনভাবেই ঠেকানো যাবে না। এতে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানী বাড়বে। গণপরিবহন সংকটের কারণে ও কম ভাড়ায় যাতায়াতের আশায় নিন্মআয়ের লোকজন ফিটনেসবিহীন যানবাহন, পণ্যবাহী যানবাহন, বাস-ট্রেন ও লঞ্চের ছাদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছে। তিনি অনতিবিলম্বে ঈদযাত্রায় এহেন ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি বন্ধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।