ঈদকে ঘিরে ছুটিতেও চাঙ্গা অর্থনীতি

এক লাখ কোটি টাকার বেশি বাণিজ্য

ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ধনী-গরিব সবাই ছুটছেন কেনাকাটায়। নগরীর ফুটপাত থেকে শুরু করে মার্কেট, বিপণিবিতান শপিংমলে ক্রেতার উপচেপড়া ভিড়। শুধু নগরী নয়, সারাদেশের বিভাগ-জেলা-উপজেলা এমনকি গ্রামগঞ্জের হাটবাজারে কেনাকাটা করছেন সাধারণ মানুষ। এই কেনাকাটায় শুধু বস্ত্র কিংবা জুতা নয়, ভোগ্যপণ্য, ইলেক্ট্রনিক পণ্য, ভ্রমণ, পবিত্র ওমরা পালন, ফার্নিচার, গাড়ি ও আবাসন খাতসহ প্রতিটি খাতেই নগদ টাকার লেনদেন হচ্ছে। এর বাইরে সমাজের বিত্তবানদের যাকাত, ফিতরা দেয়ায় ধনী-গরিব সবার হাতে থাকে টাকার প্রবাহ। ফলে চাঙ্গা হয়ে ওঠছে দেশের গোটা অর্থনীতি। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে খাদ্যপণ্য, পোশাক, বিনোদন ও পরিবহন খাতে বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে। তেমন যোগানও এসেছে বেতন- বোনাস থেকে। ইতোমধ্যে ব্যাংকিং খাতে লেনদেনও বেড়েছে ব্যাপক হারে। রেকর্ড গতিতে দেশের অর্থনীতিতে জমা হচ্ছে প্রবাসীদের রেমিটেন্স। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চিরায়ত এ উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন খাতে বিপুল অঙ্কের অর্থ ঘন ঘন হাতবদল হওয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বেড়ে যাওয়ায় চাঙ্গা হয়ে ওঠেছে গোটা অর্থনীতি। এসময় ১ লাখ কোটি টাকার লেনদেন হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবীদরা। ঈদে চাঙ্গা অর্থনীতি সম্পর্কে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ঈদের সময় দেশে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ে। শহর থেকে গ্রামমুখী হয় টাকার প্রবাহ। এতে গ্রামীণ অর্থনীতিও চাঙ্গা হয়ে ওঠে। এর মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যে যে স্থবিরতা ছিল, সেটা অনেকটা কেটে যাবে। এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, এর ইতিবাচক দিক হলো, এ সময় বণ্টন ব্যবস্থায় একটি পরিবর্তন হয়। এতে অধিকাংশ মানুষের কাছেই টাকা পৌঁছে যায়।

ঈদে আর্থিক ব্যয়ের কোন সঠিক চিত্র পাওয়া না গেলেও ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর অনুমানের ভিত্তিতে করা এক তথ্যে জানা গেছে, এবার ঈদ-বাণিজ্যে ৬০ শতাংশ পোশাক, ২০ শতাংশ খাদ্যদ্রব্য এবং বাকি ২০ শতাংশ অন্য পণ্য বিক্রি হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তথ্যে আরও জানা যায়, ঈদ উৎসবে পোশাকসহ সব পরিধেয় খাতে ৪০ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা, জুতা-কসমেটিক্সে তিন হাজার কোটি, যাকাত-ফিতরা ও দান-খয়রাতে ৩৮ হাজার কোটি, যাতায়াত বা যোগাযোগ খাতে ১০ হাজার কোটি, ভোগ্যপণ্যে ৭ হাজার কোটি, সোনা-ডায়মন্ডে ৫ হাজার কোটি, ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যে ৪ হাজার কোটি, ভ্রমণে সাড়ে ৫ হাজার কোটি, স্থায়ী সম্পদ ক্রয় ১ হাজার কোটি, পবিত্র ওমরা পালন ৩ হাজার কোটি ও আইনশৃঙ্খলাসহ অন্য খাতে লেনদেন হয় ১ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া ফার্নিচার, গাড়ি ও আবাসন শিল্পে বড় ধরনের কেনাকাটা হয়ে থাকে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের ২৫ দিনে ১৩৫ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা দেশীয় মুদ্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার উপরে। এর সিংহভাগই খরচ হবে ঈদকে কেন্দ্র করে। এছাড়া ঈদের কেনাকাটায় এটিএম বুথে প্রতিদিন ২০ কোটি টাকার বেশি উত্তোলন করছেন গ্রাহকরা। মোবাইলে দৈনিক লেনদেন হচ্ছে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এদিকে ইতোমধ্যে বেতন-বোনাসের পুরো অর্থ যোগ হচ্ছে অর্থনীতিতে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর পাশাপাশি বেসরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠানগুলোও নিজস্ব কাঠামোতে বোনাস দিচ্ছে। এছাড়া পোশাক ও বস্ত্র খাতের প্রায় ৭০ লাখ কর্মীর বোনাসও যোগ হচ্ছে। যার পুরোটাই যোগ হচ্ছে ঈদ-অর্থনীতিতে। ঈদ উৎসব অর্থনীতিতে সারাদেশের দোকান কর্মচারীদের বোনাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ঈদ অর্থনীতির প্রবাহ ছড়িয়ে পড়ছে শহর থেকে গ্রামে। এটা খুবই ইতিবাচক দিক। ঈদ সামনে রেখে ক্রেতার খরচ বাড়ছে। আর ক্রেতার খরচ বাড়লে তার প্রভাব অর্থনীতির ওপর এসে পড়বে, যা ঈদ মার্কেট ঘিরে হচ্ছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ঈদের সময় যত ঘনিয়ে আসবে বিকিকিনি তত বাড়বে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। দোকান মালিক সমিতির তথ্যমতে, দেশব্যাপী ২২ লাখ দোকান আছে, যার মালিকরা বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সদস্য। তাদের দৈনিক মোট এক হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়। আর ঈদের আগে বিক্রি প্রায় পাঁচগুণ বেড়ে যায়। তাতে সাড়াদেশে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার দৈনিক বিকিকিনি হয়। এছাড়া টেলারিং এবং অনলাইনেও প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার কেনাবেচা হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির হিসাবে দেশে ২০ লাখ দোকান, শপিংমল, বিপণি বিতান রয়েছে। গড়ে একটি দোকানে ৩ জন করে হলেও ৬০ লাখ কর্মচারী ও কর্মকর্তা কাজ করছে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্য মতে, নিম্নে একজন কর্মীকে ৫ হাজার টাকা ও ঊর্ধ্বে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বোনাস দেয়া হয়। গড়ে বোনাস ৮ হাজার টাকা হিসাবে এ ক্ষেত্রে ৪ হাজার ৮শ কোটি টাকা বোনাস পাচ্ছেন এ খাতের শ্রমিকরা। যা পুরোটাই ঈদ উৎসব অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে। ইতোমধ্যে কিছু ভালো প্রতিষ্ঠান গার্মেন্টস শ্রমিকদের ঈদ বোনাস দিয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশ ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা রয়েছে ৯৫০। এর বাইরেও অনেক ই-কমার্স সাইট রয়েছে। এছাড়াও ফেসবুক পেজ রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। এসব সাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্যের মার্কেটিং নিয়ে এবারের ঈদ বাজার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি আবদুল ওয়াহেদ তমাল জানান, এবারের ঈদ উপলক্ষে অনলাইনভিত্তিক বাজার বেশ চাঙ্গা। ঈদকেন্দ্রিক এই ই-কমার্স রাজধানী ছাড়িয়ে জেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ই-কমার্সে বার্ষিক লেনদেনের আর্থিক আকার শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে হাজার কোটি টাকায় রূপ নিয়েছে। আগামী ৩ বা ৪ বছরের মধ্যে এ আকার ১০ হাজার কেটি টাকায় পরিণত হবে।

এছাড়া ঈদকে কেন্দ্র করে মানুষের সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বেগবান হচ্ছে, আর পর্যটন শিল্প তারই অংশ। পরিসংখ্যান অনুসারে, প্রতি ঈদে প্রায় দুই থেকে তিন লাখ পর্যটক ভ্রমণ করে কক্সবাজার। অন্যদিকে, সারাবছর কক্সবাজার ভ্রমণে আসে ১৫ থেকে ২০ লাখ পর্যটক।

সোমবার, ০৩ জুন ২০১৯ , ২০ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ২৮ রমজান ১৪৪০

ঈদকে ঘিরে ছুটিতেও চাঙ্গা অর্থনীতি

এক লাখ কোটি টাকার বেশি বাণিজ্য

রোকন মাহমুদ

ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ধনী-গরিব সবাই ছুটছেন কেনাকাটায়। নগরীর ফুটপাত থেকে শুরু করে মার্কেট, বিপণিবিতান শপিংমলে ক্রেতার উপচেপড়া ভিড়। শুধু নগরী নয়, সারাদেশের বিভাগ-জেলা-উপজেলা এমনকি গ্রামগঞ্জের হাটবাজারে কেনাকাটা করছেন সাধারণ মানুষ। এই কেনাকাটায় শুধু বস্ত্র কিংবা জুতা নয়, ভোগ্যপণ্য, ইলেক্ট্রনিক পণ্য, ভ্রমণ, পবিত্র ওমরা পালন, ফার্নিচার, গাড়ি ও আবাসন খাতসহ প্রতিটি খাতেই নগদ টাকার লেনদেন হচ্ছে। এর বাইরে সমাজের বিত্তবানদের যাকাত, ফিতরা দেয়ায় ধনী-গরিব সবার হাতে থাকে টাকার প্রবাহ। ফলে চাঙ্গা হয়ে ওঠছে দেশের গোটা অর্থনীতি। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে খাদ্যপণ্য, পোশাক, বিনোদন ও পরিবহন খাতে বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে। তেমন যোগানও এসেছে বেতন- বোনাস থেকে। ইতোমধ্যে ব্যাংকিং খাতে লেনদেনও বেড়েছে ব্যাপক হারে। রেকর্ড গতিতে দেশের অর্থনীতিতে জমা হচ্ছে প্রবাসীদের রেমিটেন্স। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চিরায়ত এ উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন খাতে বিপুল অঙ্কের অর্থ ঘন ঘন হাতবদল হওয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বেড়ে যাওয়ায় চাঙ্গা হয়ে ওঠেছে গোটা অর্থনীতি। এসময় ১ লাখ কোটি টাকার লেনদেন হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবীদরা। ঈদে চাঙ্গা অর্থনীতি সম্পর্কে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ঈদের সময় দেশে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ে। শহর থেকে গ্রামমুখী হয় টাকার প্রবাহ। এতে গ্রামীণ অর্থনীতিও চাঙ্গা হয়ে ওঠে। এর মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যে যে স্থবিরতা ছিল, সেটা অনেকটা কেটে যাবে। এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, এর ইতিবাচক দিক হলো, এ সময় বণ্টন ব্যবস্থায় একটি পরিবর্তন হয়। এতে অধিকাংশ মানুষের কাছেই টাকা পৌঁছে যায়।

ঈদে আর্থিক ব্যয়ের কোন সঠিক চিত্র পাওয়া না গেলেও ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর অনুমানের ভিত্তিতে করা এক তথ্যে জানা গেছে, এবার ঈদ-বাণিজ্যে ৬০ শতাংশ পোশাক, ২০ শতাংশ খাদ্যদ্রব্য এবং বাকি ২০ শতাংশ অন্য পণ্য বিক্রি হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তথ্যে আরও জানা যায়, ঈদ উৎসবে পোশাকসহ সব পরিধেয় খাতে ৪০ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা, জুতা-কসমেটিক্সে তিন হাজার কোটি, যাকাত-ফিতরা ও দান-খয়রাতে ৩৮ হাজার কোটি, যাতায়াত বা যোগাযোগ খাতে ১০ হাজার কোটি, ভোগ্যপণ্যে ৭ হাজার কোটি, সোনা-ডায়মন্ডে ৫ হাজার কোটি, ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যে ৪ হাজার কোটি, ভ্রমণে সাড়ে ৫ হাজার কোটি, স্থায়ী সম্পদ ক্রয় ১ হাজার কোটি, পবিত্র ওমরা পালন ৩ হাজার কোটি ও আইনশৃঙ্খলাসহ অন্য খাতে লেনদেন হয় ১ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া ফার্নিচার, গাড়ি ও আবাসন শিল্পে বড় ধরনের কেনাকাটা হয়ে থাকে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের ২৫ দিনে ১৩৫ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা দেশীয় মুদ্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার উপরে। এর সিংহভাগই খরচ হবে ঈদকে কেন্দ্র করে। এছাড়া ঈদের কেনাকাটায় এটিএম বুথে প্রতিদিন ২০ কোটি টাকার বেশি উত্তোলন করছেন গ্রাহকরা। মোবাইলে দৈনিক লেনদেন হচ্ছে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এদিকে ইতোমধ্যে বেতন-বোনাসের পুরো অর্থ যোগ হচ্ছে অর্থনীতিতে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর পাশাপাশি বেসরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠানগুলোও নিজস্ব কাঠামোতে বোনাস দিচ্ছে। এছাড়া পোশাক ও বস্ত্র খাতের প্রায় ৭০ লাখ কর্মীর বোনাসও যোগ হচ্ছে। যার পুরোটাই যোগ হচ্ছে ঈদ-অর্থনীতিতে। ঈদ উৎসব অর্থনীতিতে সারাদেশের দোকান কর্মচারীদের বোনাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ঈদ অর্থনীতির প্রবাহ ছড়িয়ে পড়ছে শহর থেকে গ্রামে। এটা খুবই ইতিবাচক দিক। ঈদ সামনে রেখে ক্রেতার খরচ বাড়ছে। আর ক্রেতার খরচ বাড়লে তার প্রভাব অর্থনীতির ওপর এসে পড়বে, যা ঈদ মার্কেট ঘিরে হচ্ছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ঈদের সময় যত ঘনিয়ে আসবে বিকিকিনি তত বাড়বে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। দোকান মালিক সমিতির তথ্যমতে, দেশব্যাপী ২২ লাখ দোকান আছে, যার মালিকরা বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সদস্য। তাদের দৈনিক মোট এক হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়। আর ঈদের আগে বিক্রি প্রায় পাঁচগুণ বেড়ে যায়। তাতে সাড়াদেশে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার দৈনিক বিকিকিনি হয়। এছাড়া টেলারিং এবং অনলাইনেও প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার কেনাবেচা হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির হিসাবে দেশে ২০ লাখ দোকান, শপিংমল, বিপণি বিতান রয়েছে। গড়ে একটি দোকানে ৩ জন করে হলেও ৬০ লাখ কর্মচারী ও কর্মকর্তা কাজ করছে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্য মতে, নিম্নে একজন কর্মীকে ৫ হাজার টাকা ও ঊর্ধ্বে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বোনাস দেয়া হয়। গড়ে বোনাস ৮ হাজার টাকা হিসাবে এ ক্ষেত্রে ৪ হাজার ৮শ কোটি টাকা বোনাস পাচ্ছেন এ খাতের শ্রমিকরা। যা পুরোটাই ঈদ উৎসব অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে। ইতোমধ্যে কিছু ভালো প্রতিষ্ঠান গার্মেন্টস শ্রমিকদের ঈদ বোনাস দিয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশ ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা রয়েছে ৯৫০। এর বাইরেও অনেক ই-কমার্স সাইট রয়েছে। এছাড়াও ফেসবুক পেজ রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। এসব সাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্যের মার্কেটিং নিয়ে এবারের ঈদ বাজার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি আবদুল ওয়াহেদ তমাল জানান, এবারের ঈদ উপলক্ষে অনলাইনভিত্তিক বাজার বেশ চাঙ্গা। ঈদকেন্দ্রিক এই ই-কমার্স রাজধানী ছাড়িয়ে জেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ই-কমার্সে বার্ষিক লেনদেনের আর্থিক আকার শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে হাজার কোটি টাকায় রূপ নিয়েছে। আগামী ৩ বা ৪ বছরের মধ্যে এ আকার ১০ হাজার কেটি টাকায় পরিণত হবে।

এছাড়া ঈদকে কেন্দ্র করে মানুষের সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বেগবান হচ্ছে, আর পর্যটন শিল্প তারই অংশ। পরিসংখ্যান অনুসারে, প্রতি ঈদে প্রায় দুই থেকে তিন লাখ পর্যটক ভ্রমণ করে কক্সবাজার। অন্যদিকে, সারাবছর কক্সবাজার ভ্রমণে আসে ১৫ থেকে ২০ লাখ পর্যটক।