বিশ্বকাপ ডায়রি

দু’বছর পর লন্ডন আসার সুযোগ হলো আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সুবাদে। যদিও বিশ্বকাপ ফুটবল এবং বিশ্বকাপ ক্রিকেটের মধ্যে প্রায় যোজনসম ব্যবধান বললেও কম বলা হয়। বিশ্বে ফুটবলের যে সার্বজনীন জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা তার ২০/২৫ শতাংশও নেই ক্রিকেটের। যদিও দক্ষিণ এশিয়ার চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিশেষত, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে এ দু’টি খেলা প্রায় ৬০-৪০ শতাংশ দর্শকপ্রিয় বলা যায়। এর মধ্যেও ভারতীয়দের দৃষ্টিভঙ্গী অনেকটা ভিন্ন। ওদের জনমনের বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে ক্রিকেট ও ফুটবলের পাশাপাশি চলচ্চিত্র এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড। কিন্তু শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে ক্রিকেট নিয়ে যে মাত্রাতিরিক্ত মাতামাতি তা অনেক সময় অসহনীয় মনে হয়।

তারপরও অনেক সমস্যা জর্জরিত বাংলাদেশে ক্রিকেট নিয়ে হুজুগ মন্দ লাগে না। এর যথেষ্ট কারণও আছে। ফুটবল এবং অন্য খেলার মান বা সামগ্রিক অবস্থা মোটেও সন্তোষজনক নয়। এর মধ্যে ফুটবল এখন ফেডারেশন অফিস ও মাঠের বৃত্তে বন্দী। তাই ক্রিকেট বিশ্বকাপ বা আন্তর্জাতিক তরুণ সমাজকে আকৃষ্ট করে বেশি।

কিন্তু এ যুগে সূর্য ওঠা-ডুবার দেশে (অতীতে নাকি সূর্য ডুবতো না!) ক্রিকেট নিয়ে যত হৈ-হুল্লোর, প্রচার-প্রসার বা সরব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু শুধুই স্টেডিয়াম ও টিভিতেই সীমাবদ্ধ। রাস্তা-ঘাটে নেই কোন ব্যানার-পোস্টার বা বিশেষ প্রচার। এমনকি বিশ্বকাপেও ব্যতিক্রম নয়। যত আনন্দ-উল্লাস, হৈ-চৈ এবং খানাপিনা ( বিয়ার-ওয়াইন ) ঐ স্টেডিয়ামেই। তাতেও অরুচি তরুণ-তরুণীদের।

বিপরীতে এ বিশ্বকাপ নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশ ভিন্ন ভিন্ন স্বপ্ন দেখছে। ভারতের ৭০/৮০ ভাগ জনতার বিশ্বাস কোহলি বাহিনী হট ফেভারিট। অন্যদিকে আমাদের দেশের আপামর মানুষ মনে করেন মাশরাফির নেতৃত্বাধীন দলটির সেমি ফাইনাল খেলার যোগ্যতা রয়েছে। কারণ, ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল এবং ’১৭ তে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল খেলা। তবে বিসিবি’র এক নির্বাচকের মতে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে সেরা দল এবং সার্বিক ভারসাম্য। অবশ্য এ নিয়ে দ্বিমত হতেই পারে। এর নমুনাও দেখলাম গত বুধবার লন্ডনের ওভালে।

দ্বিতীয় ম্যাচে মাশরাফিরা ব্যাটিং ব্যর্থতায় নিউজিল্যান্ডের কাছে যেভাবে হেরেছে তাতে ভিন্নমত পোষণ করার যথেষ্ট ফাঁক- ফোকর দেখা যায়। বিশ্বকাপ শুরুর আগে পত্র-পত্রিকা ও টিভিতে দেখেছি এ বিশ্বকাপের পিচগুলো নাকি ব্যাটিংবান্ধব করা হয়েছে। কিন্তু ইতোমধ্যে কয়েকটি ম্যাচে তিন শতাধিক রান যেমন হয়েছে তেমনি ১০৫(পাক) ২২৭(দ.আফ্রিকা) ২৪৪ (বাংলাদেশ) করে হারার ঘটনাও প্রত্যক্ষ করেছে ক্রিকেটামোদীরা। এর কারণ, যে দলে যত বেশি বিশেষজ্ঞ পেসার-স্পিনার এবং ব্যাটসম্যান রয়েছে তাদের কর্তৃত্ব করার সুযোগও বেশি। বাংলাদেশ দলেও রয়েছে পঞ্চপান্ডবের নির্ভরযোগ্য ব্যাট এবং শীর্ষ অলরাউন্ডার সাকিবসহ কার্টার মাস্টার মুস্তাফিজুর ও তরুণ প্রতিভা সৌম্য, মোসাদ্দেক, সাইফুদ্দিন, মিরাজ, মিঠুন প্রমুখ ফলদায়ক ক্রিকেটার। কিন্তু একসঙ্গে ৫/৬ জন ব্যাটসম্যান ব্যর্থ হলে দলকে যে জেতানো সম্ভব নয় তার চাক্ষুস প্রমাণ দেখলাম ওভালে। তামিম, সৌম্য, মুশফিক, মিঠুন, মাহমুদুল্লাহ, মোসাদ্দেক ও মেহেদির মোট রান হচ্ছে মাত্র ১২০ এর মতো। বেশি ক্ষতি করেছে প্রবীণ মাহমুদুল্লাহ ও মোসাদ্দেক। তারা স্কোর বোর্ডে ৩১ রান যোগ করতে প্রায় ৬০ বল নষ্ট করেছে। তারপরও বোলারদের যথাসাধ্য চেষ্টায় খেলার ভাগ্য বদলানোর সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু ব্যর্থ হয় অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক মুশফিকের অমার্জনীয় ভুলে। ওদের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক রস টেলরকে (৫ রানে) নিশ্চিত রান আউটের সুযোগ হাত ছাড়া করায়। বল হাতে নেয়ার আগেই কনুইয়ে লেগে বেল পড়ে যায়। এমন সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে টেলর ৮২/৮৪ রান করেছে। এরপর শেষ কোপটি মারেন আম্পায়ার পল রেইফেল একটা প্লাম্ব এলবি না দিয়ে। তাতেও জিততে অসুবিধা হতো না যদি টেলর শুরুতেই বিদায় নিতেন। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ টুর্নামেন্টে ক্ষণিকের জন্যও ভুল করা বা অমনোযোগী হওয়া যে সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে তা দলের সবার নখদর্পণে থাকলেই

মঙ্গল।

অথচ এ ম্যাচেই কিউইদের বিরুদ্ধে বদলা নেয়ার মোক্ষম সুযোগ ছিল (গত সফরে হোয়াইট ওয়াশের)। কিন্তু কপালমন্দ; চরম পেশাদারিত্ব ও দায়বদ্ধতার অভাবেই হার মেনে ওভালের ঠান্ডা আবহাওয়া উপেক্ষা করে পরিবার-পরিজন নিয়ে হাজির হওয়া প্রায় ১৪/১৫ হাজার বাংলাদেশিদের হতাশ করেছে মাশরাফি বাহিনী।

শনিবার, ০৮ জুন ২০১৯ , ২৫ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ৪ শাওয়াল ১৪৪০

বিশ্বকাপ ডায়রি

image

দু’বছর পর লন্ডন আসার সুযোগ হলো আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সুবাদে। যদিও বিশ্বকাপ ফুটবল এবং বিশ্বকাপ ক্রিকেটের মধ্যে প্রায় যোজনসম ব্যবধান বললেও কম বলা হয়। বিশ্বে ফুটবলের যে সার্বজনীন জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা তার ২০/২৫ শতাংশও নেই ক্রিকেটের। যদিও দক্ষিণ এশিয়ার চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিশেষত, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে এ দু’টি খেলা প্রায় ৬০-৪০ শতাংশ দর্শকপ্রিয় বলা যায়। এর মধ্যেও ভারতীয়দের দৃষ্টিভঙ্গী অনেকটা ভিন্ন। ওদের জনমনের বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে ক্রিকেট ও ফুটবলের পাশাপাশি চলচ্চিত্র এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড। কিন্তু শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে ক্রিকেট নিয়ে যে মাত্রাতিরিক্ত মাতামাতি তা অনেক সময় অসহনীয় মনে হয়।

তারপরও অনেক সমস্যা জর্জরিত বাংলাদেশে ক্রিকেট নিয়ে হুজুগ মন্দ লাগে না। এর যথেষ্ট কারণও আছে। ফুটবল এবং অন্য খেলার মান বা সামগ্রিক অবস্থা মোটেও সন্তোষজনক নয়। এর মধ্যে ফুটবল এখন ফেডারেশন অফিস ও মাঠের বৃত্তে বন্দী। তাই ক্রিকেট বিশ্বকাপ বা আন্তর্জাতিক তরুণ সমাজকে আকৃষ্ট করে বেশি।

কিন্তু এ যুগে সূর্য ওঠা-ডুবার দেশে (অতীতে নাকি সূর্য ডুবতো না!) ক্রিকেট নিয়ে যত হৈ-হুল্লোর, প্রচার-প্রসার বা সরব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু শুধুই স্টেডিয়াম ও টিভিতেই সীমাবদ্ধ। রাস্তা-ঘাটে নেই কোন ব্যানার-পোস্টার বা বিশেষ প্রচার। এমনকি বিশ্বকাপেও ব্যতিক্রম নয়। যত আনন্দ-উল্লাস, হৈ-চৈ এবং খানাপিনা ( বিয়ার-ওয়াইন ) ঐ স্টেডিয়ামেই। তাতেও অরুচি তরুণ-তরুণীদের।

বিপরীতে এ বিশ্বকাপ নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশ ভিন্ন ভিন্ন স্বপ্ন দেখছে। ভারতের ৭০/৮০ ভাগ জনতার বিশ্বাস কোহলি বাহিনী হট ফেভারিট। অন্যদিকে আমাদের দেশের আপামর মানুষ মনে করেন মাশরাফির নেতৃত্বাধীন দলটির সেমি ফাইনাল খেলার যোগ্যতা রয়েছে। কারণ, ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল এবং ’১৭ তে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল খেলা। তবে বিসিবি’র এক নির্বাচকের মতে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে সেরা দল এবং সার্বিক ভারসাম্য। অবশ্য এ নিয়ে দ্বিমত হতেই পারে। এর নমুনাও দেখলাম গত বুধবার লন্ডনের ওভালে।

দ্বিতীয় ম্যাচে মাশরাফিরা ব্যাটিং ব্যর্থতায় নিউজিল্যান্ডের কাছে যেভাবে হেরেছে তাতে ভিন্নমত পোষণ করার যথেষ্ট ফাঁক- ফোকর দেখা যায়। বিশ্বকাপ শুরুর আগে পত্র-পত্রিকা ও টিভিতে দেখেছি এ বিশ্বকাপের পিচগুলো নাকি ব্যাটিংবান্ধব করা হয়েছে। কিন্তু ইতোমধ্যে কয়েকটি ম্যাচে তিন শতাধিক রান যেমন হয়েছে তেমনি ১০৫(পাক) ২২৭(দ.আফ্রিকা) ২৪৪ (বাংলাদেশ) করে হারার ঘটনাও প্রত্যক্ষ করেছে ক্রিকেটামোদীরা। এর কারণ, যে দলে যত বেশি বিশেষজ্ঞ পেসার-স্পিনার এবং ব্যাটসম্যান রয়েছে তাদের কর্তৃত্ব করার সুযোগও বেশি। বাংলাদেশ দলেও রয়েছে পঞ্চপান্ডবের নির্ভরযোগ্য ব্যাট এবং শীর্ষ অলরাউন্ডার সাকিবসহ কার্টার মাস্টার মুস্তাফিজুর ও তরুণ প্রতিভা সৌম্য, মোসাদ্দেক, সাইফুদ্দিন, মিরাজ, মিঠুন প্রমুখ ফলদায়ক ক্রিকেটার। কিন্তু একসঙ্গে ৫/৬ জন ব্যাটসম্যান ব্যর্থ হলে দলকে যে জেতানো সম্ভব নয় তার চাক্ষুস প্রমাণ দেখলাম ওভালে। তামিম, সৌম্য, মুশফিক, মিঠুন, মাহমুদুল্লাহ, মোসাদ্দেক ও মেহেদির মোট রান হচ্ছে মাত্র ১২০ এর মতো। বেশি ক্ষতি করেছে প্রবীণ মাহমুদুল্লাহ ও মোসাদ্দেক। তারা স্কোর বোর্ডে ৩১ রান যোগ করতে প্রায় ৬০ বল নষ্ট করেছে। তারপরও বোলারদের যথাসাধ্য চেষ্টায় খেলার ভাগ্য বদলানোর সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু ব্যর্থ হয় অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক মুশফিকের অমার্জনীয় ভুলে। ওদের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক রস টেলরকে (৫ রানে) নিশ্চিত রান আউটের সুযোগ হাত ছাড়া করায়। বল হাতে নেয়ার আগেই কনুইয়ে লেগে বেল পড়ে যায়। এমন সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে টেলর ৮২/৮৪ রান করেছে। এরপর শেষ কোপটি মারেন আম্পায়ার পল রেইফেল একটা প্লাম্ব এলবি না দিয়ে। তাতেও জিততে অসুবিধা হতো না যদি টেলর শুরুতেই বিদায় নিতেন। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ টুর্নামেন্টে ক্ষণিকের জন্যও ভুল করা বা অমনোযোগী হওয়া যে সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে তা দলের সবার নখদর্পণে থাকলেই

মঙ্গল।

অথচ এ ম্যাচেই কিউইদের বিরুদ্ধে বদলা নেয়ার মোক্ষম সুযোগ ছিল (গত সফরে হোয়াইট ওয়াশের)। কিন্তু কপালমন্দ; চরম পেশাদারিত্ব ও দায়বদ্ধতার অভাবেই হার মেনে ওভালের ঠান্ডা আবহাওয়া উপেক্ষা করে পরিবার-পরিজন নিয়ে হাজির হওয়া প্রায় ১৪/১৫ হাজার বাংলাদেশিদের হতাশ করেছে মাশরাফি বাহিনী।