তিন দেশ সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চায় না মায়ানমার

  • ঈদের দিন জঙ্গি হামলার হুমকি ছিল
  • বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে কঠোর হওয়ার নির্দেশ
  • তারেকের বিচার অবশ্যই হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মায়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চায় না। এখানেই সমস্যা। তাদের কাছ থেকে সাড়া পাই না। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে জাপান, চীনসহ বিভিন্ন সরকারের সহায়তা আছে। সবাই চান রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরুক। মায়ানমার নিতে চায় না। তিনি বলেন, সবাই মিলে সহযোগিতা করলে একটা ব্যবস্থা হবে। না হলে এত লোকের ব্যবস্থা করা কঠিন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা আলাদাভাবে ভারত, চীন ও জাপানের সঙ্গে কথা বলেছি। এসব দেশ মেনে নেয় যে, রোহিঙ্গারা মায়ানমারের নাগরিক। তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া উচিত। কিন্তু আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো কখনোই চায় না রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যাক। আমরা চুক্তি করলাম, তালিকা করলাম। এরপরই তারা আন্দোলন করল, তারা যাবে না। এই আন্দোলনের উস্কানিটা তাহলে কারা দিল? গতকাল রোববার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। গত ২৮ মে থেকে ৭ জুন পর্যন্ত তিন দেশ সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনসহ দলের জ্যেষ্ঠ ও কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে এবার ঈদ জামাতের সময় জঙ্গি হামলার হুমকি ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তবে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আন্তরিক চেষ্টায় কোন অঘটন ছাড়াই সব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, ঈদের জামাতের সময় আমি সত্যিই খুব চিন্তিত ছিলাম। কারণ এমন এমন ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, তা যেন কোনমতে না ঘটে। আমাদর গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ বাহিনী, র‌্যাব থেকে শুরু করে সবাই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে। এ জন্য খুব সুষ্ঠুভাবে ঈদের জামাতগুলো সম্পন্ন হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ত্রিদেশীয় সফরের শুরুতে গত ২৮ মে জাপান যান। সেখানে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের পর বাংলাদেশ-জাপানের মধ্যে ২৫০ কোটি ডলারের অফিশিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসট্যান্স (ওডিএ) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সফরের দ্বিতীয় পর্যায়ে তিনি ৩১ মে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে পবিত্র মক্কা নগরীতে অনুষ্ঠিত ১৪তম ওআইসি সম্মেলনে যোগ দেন। সৌদি আরব সফর শেষে তিনি ৫ দিনের সরকারি সফরে ৩ জুন ফিনল্যান্ড যান। সেখানে অবস্থানকালে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তোরের সঙ্গে বৈঠক করেন। ৮ জুন তিনি দেশে ফেরেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী তার তিন দেশ সফর সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। এছাড়া সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা ইস্যু, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় কার্যকর করা, আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা বলেন।

লন্ডনে পালিয়ে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নাম নিতেও ঘৃণা লাগে। আজ হোক, কাল হোকÑ একদিন না, একদিন তার (তারেক রহমান) শাস্তি কার্যকর হবে। তিনি বলেন, ওই একুশে আগস্টের হামলায় আইভি রহমানসহ ২৮ জন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হন। শুধু একুশে আগস্ট নয়, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের সঙ্গেও যুক্ত সে। এতিমের টাকা আত্মসাৎকারী। এসব ব্যক্তির জন্য অনেকের মায়াকান্না দেখছি। আমরা যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছি। তবে তারা অনেক টাকার মালিক। সব সময় চেষ্টা করে ঝামেলা সৃষ্টি করার। আমি সেখানে গেলেও ঝামেলা সৃষ্টি করতে চায়। তবে যাই হোক, তার শাস্তি কার্যকর হবে।

জঙ্গিবাদ দমনে জনগণের সচেতনতাকে বাংলাদেশের ‘সবচেয়ে বড় শক্তি’ হিসেবে বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ যথেষ্ট সচেতন। আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করেই এ ধরনের হুমকি মোকাবিলা করতে চাই। এ জন্য জনগণের কাছে সব সময় আমার আবেদন থাকবে, তারা যেন এ ব্যাপারে সজাগ থাকেন, সচেতন থাকেন। কারণ এসব ঘটনা আমাদের উন্নয়নের গতিধারাটা ব্যাহত করবে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, কোথাও কোন তথ্য পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই তিন দেশ সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার সময় ও পরে আমাদের সহায়তা করেছে জাপান। এ প্রসঙ্গে এবারের সফরে আড়াই বিলিয়ন ডলারের চুক্তির কথা উল্লেখ করেন। ফিনল্যান্ড সফর নিয়ে তিনি বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে তারা খুব দক্ষ। তাদের একটি দল আসবে। তাদের বিনিয়োগে আমরা আহ্বান জানাই। এসব খাতে সম্ভাবনা দেখতে তারা বাংলাদেশে আসবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওআইসি সম্মেলনে আমার লিখিত বক্তব্যে অনেক কিছু ছিল না। আমি লিখিত বক্তব্যের বাইরেও অনেক কথা বলেছি। আমি বলেছি, ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যদি কোন দ্বন্দ্ব না থাকে, তাহলে কেন আমরা আলোচনা করে এসবের সমাধান করতে পারছি না? মুসলিম কান্ট্রির মধ্যেই খুনোখুনি হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আত্মঘাতী হচ্ছি। লাভবান কে হচ্ছে? যারা অস্ত্র বানাচ্ছে, তারা। যারা অস্ত্র দিচ্ছে, তারা। ওআইসিকে বলেছি, মুসলমান মুসলমানের রক্ত নিচ্ছে। এটা ওআইসিকে বন্ধ করতে হবে। ওআইসির এই ব্যাপারে আরও উদ্যোগ নেয়া দরকার। আমাদের সমস্যাগুলো যদি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারি, তাহলে আত্মঘাতী সংঘাত ও রক্তপাত আর হয় না।

মানুষ খুন করার অধিকার কাউকে দেয়া হয়নি বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এক সময় ধারণা করা হতো, কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা জঙ্গি হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ইংরেজি মিডিয়ামের ছাত্রদেরও হঠাৎ মনে হলো, বেহেশতে যেতে হবে, মানুষ খুন করতে হবে। কোথায় লেখা আছে মানুষ খুন করলে বেহেশতে পাঠানো হবে? কেউ কি মানুষ খুন করে বেহেশতে পৌঁছে মেসেজ দিয়েছে? শেষ বিচার আল্লাহ করবেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, কে ভালো মুসলমান, কে ভালো মুসলমান নন, কে সঠিক, কে সঠিক নন, কে ভালো কাজ করছেন, কে করছেন না- এর বিচার করার দায়িত্ব আল্লাহ ও রাসূল আমাদের দেননি। কেন মানুষ আল্লাহর ক্ষমতা কেড়ে নেবেন? কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, শেষ বিচার তিনি করবেন। সেখানে নিরীহ মানুষ মারলে বেহেশত পাওয়া যাবে, সেটি তো কোথাও লেখা নেই। আল্লাহ কি কাউকে মানুষ মারার ক্ষমতা দিয়েছেন?

এক প্রশ্নের জবাবে আগামী অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক কল্যাণ খাতে সরকারের অগ্রাধিকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাংলাদেশে বিশাল। প্রতিবন্ধী, বিধবা, অসহায় দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের জন্য সরকার নানা কর্মসূচি নিয়েছে। এসব অব্যাহত থাকবে। উন্নত দেশগুলোর জনসংখ্যা কম। তারা অনেক কিছু পারে। অনেক সম্পদ তাদের। কিন্তু আমাদের মতো সম্পদ ও বিপুল জনসংখ্যা থাকলে কী হতো, সেটিই প্রশ্ন।

বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাকে ফিনল্যান্ড থেকে আনতে যাওয়ার বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজের পাইলটের পাসপোর্ট ছেড়ে যাওয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা ইমিগ্রেশনের দুর্বলতা। দিনে দিনে ভিআইপি ও ভিভিআইপির সংখ্যা বাড়ছে। আরও যত ‘ভি’ লাগুক না কেন, কাউকে ছাড়া হবে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়- এই নীতিতে আমরা বিশ্বাসী এবং এটিই মেনে চলি। তিনি বলেন, এ কারণে পৃথিবীর সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্ক স্থাপনের একটাই উদ্দেশ্য, দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন। আমি সব সময় সব ফোরামে একটা কথা বলার চেষ্টা করি- আমাদের সবার একটা কমন এনিমি (অভিন্ন শত্রু) আছে। সেটি হলো দারিদ্র্য। তাই সবার প্রতি আহ্বান জানাই, আসুন- আমরা সাধারণ মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন করি। সাধারণ মানুষকে একটা সুন্দর জীবন দিই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপান সফর করেছি। চীনেও হবে। ইতোমধ্যে চীনে যাওয়ার দাওয়াত ছিল আমার। কিন্তু ওই সময় বোধহয় সংসদে জরুরি কিছু চলছিল। তখন যেতে পারিনি। আগামী জুলাইয়ে যাওয়ার দাওয়াত আছে। চীনের প্রেসিডেন্ট দাওয়াত দিয়েছেন। ৩০ জুন আমাদের বাজেট পাসের ব্যাপার আছে। বাজেট পাস হওয়ার পর চীনে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক সামিট। সামার সামিটটা হবে ওখানে। তখন যাব। বাংলাদেশ-চীনের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সবাই সম্মান করেন। যদিও বাংলাদেশ থেকে বহুবার বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল, তবুও ইতিহাস থেকে তো আর মুছতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় যারা ছাত্র ছিলেন, যুবক ছিলেন- আজ তাদের অনেকেই রাষ্ট্রক্ষমতায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তাদের একটা আগ্রহ আছে। কাজেই সেদিক থেকে আমাদের একটি ভালো সম্পর্ক আছে। তাড়াতাড়ি চীনে যাওয়ার একটা কর্মসূচি আছে। তিনি বলেন, দাওয়াত তো এত বেশি যে, সব জায়গায় যেতে হলে দেশে থাকব কখন? সব দেশ থেকে আমাকে চায়। এখন তো বয়স হয়েছে, সব জায়গায় যাওয়া সম্ভব হয় নয়। তবে চীনে যাব এবার। জুলাইয়ে চীনে যাচ্ছি।

এক সাংবাদিক জার্মানি সফরকালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি দেশে নিজের ইচ্ছামতো লিখতে পারেন না। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারও লেখায় আমি বাধা দিইনি তো! যার যা খুশি লিখুন না। তিনি হঠাৎ বলে ফেললেন, উনি লিখতে পারছেন না। তো আমি তো মনে করব ওটাই যে, উনি ফরমায়েশি লেখা পাচ্ছেন না। উনি যদি চান, ডিজিএফআই ওনাকে সাপ্লাই দিক। উনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তারা সাপ্লাই দেবেন। এর বাইরে আমি কী বলব?’

প্রধানমন্ত্রী অন্য এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমরা বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারাও আমাদের আমন্ত্রণ দিয়েছে। ভারত সফরেও যাব। তিস্তার পানি বণ্টনসহ দুই দেশের অমীমাংসিত বিষয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের যে সমস্যা সীমান্ত চুক্তি, সেটির সফল সমাধান হয়েছে। এটা অনেক বড় বিষয়। বিশ্বের অনেক দেশে সীমান্ত সমস্যা, ছিটমহল বিনিময় নিয়ে দ্বন্দ-সংঘাত রয়েছে। অথচ আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের সীমান্ত সমস্য সমাধান করেছি। তিস্তার পানির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ডেল্টা প্ল্যান করেছি। পানির অভাব হবে না। আমরা পানি সঞ্চয় করে রাখব।

দেশের পর্যটন খাতের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের যে দীর্ঘ ‘সেন্ডি বিচ’, এমনটি পৃথিবীর কোথাও নেই। কক্সবাজার এয়ারপোর্টকে আন্তর্জাতিকমানের করা হবে বলেও তিনি জানান। ভারত থেকে বর্তমানে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আরও বিদ্যুৎ আসবে। ২০২১ সালের মধ্যে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে।

সোমবার, ১০ জুন ২০১৯ , ২৭ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ৬ শাওয়াল ১৪৪০

তিন দেশ সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চায় না মায়ানমার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

  • ঈদের দিন জঙ্গি হামলার হুমকি ছিল
  • বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে কঠোর হওয়ার নির্দেশ
  • তারেকের বিচার অবশ্যই হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মায়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চায় না। এখানেই সমস্যা। তাদের কাছ থেকে সাড়া পাই না। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে জাপান, চীনসহ বিভিন্ন সরকারের সহায়তা আছে। সবাই চান রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরুক। মায়ানমার নিতে চায় না। তিনি বলেন, সবাই মিলে সহযোগিতা করলে একটা ব্যবস্থা হবে। না হলে এত লোকের ব্যবস্থা করা কঠিন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা আলাদাভাবে ভারত, চীন ও জাপানের সঙ্গে কথা বলেছি। এসব দেশ মেনে নেয় যে, রোহিঙ্গারা মায়ানমারের নাগরিক। তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া উচিত। কিন্তু আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো কখনোই চায় না রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যাক। আমরা চুক্তি করলাম, তালিকা করলাম। এরপরই তারা আন্দোলন করল, তারা যাবে না। এই আন্দোলনের উস্কানিটা তাহলে কারা দিল? গতকাল রোববার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। গত ২৮ মে থেকে ৭ জুন পর্যন্ত তিন দেশ সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনসহ দলের জ্যেষ্ঠ ও কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে এবার ঈদ জামাতের সময় জঙ্গি হামলার হুমকি ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তবে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আন্তরিক চেষ্টায় কোন অঘটন ছাড়াই সব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, ঈদের জামাতের সময় আমি সত্যিই খুব চিন্তিত ছিলাম। কারণ এমন এমন ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, তা যেন কোনমতে না ঘটে। আমাদর গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ বাহিনী, র‌্যাব থেকে শুরু করে সবাই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে। এ জন্য খুব সুষ্ঠুভাবে ঈদের জামাতগুলো সম্পন্ন হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ত্রিদেশীয় সফরের শুরুতে গত ২৮ মে জাপান যান। সেখানে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের পর বাংলাদেশ-জাপানের মধ্যে ২৫০ কোটি ডলারের অফিশিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসট্যান্স (ওডিএ) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সফরের দ্বিতীয় পর্যায়ে তিনি ৩১ মে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে পবিত্র মক্কা নগরীতে অনুষ্ঠিত ১৪তম ওআইসি সম্মেলনে যোগ দেন। সৌদি আরব সফর শেষে তিনি ৫ দিনের সরকারি সফরে ৩ জুন ফিনল্যান্ড যান। সেখানে অবস্থানকালে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তোরের সঙ্গে বৈঠক করেন। ৮ জুন তিনি দেশে ফেরেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী তার তিন দেশ সফর সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। এছাড়া সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা ইস্যু, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় কার্যকর করা, আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা বলেন।

লন্ডনে পালিয়ে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নাম নিতেও ঘৃণা লাগে। আজ হোক, কাল হোকÑ একদিন না, একদিন তার (তারেক রহমান) শাস্তি কার্যকর হবে। তিনি বলেন, ওই একুশে আগস্টের হামলায় আইভি রহমানসহ ২৮ জন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হন। শুধু একুশে আগস্ট নয়, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের সঙ্গেও যুক্ত সে। এতিমের টাকা আত্মসাৎকারী। এসব ব্যক্তির জন্য অনেকের মায়াকান্না দেখছি। আমরা যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছি। তবে তারা অনেক টাকার মালিক। সব সময় চেষ্টা করে ঝামেলা সৃষ্টি করার। আমি সেখানে গেলেও ঝামেলা সৃষ্টি করতে চায়। তবে যাই হোক, তার শাস্তি কার্যকর হবে।

জঙ্গিবাদ দমনে জনগণের সচেতনতাকে বাংলাদেশের ‘সবচেয়ে বড় শক্তি’ হিসেবে বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ যথেষ্ট সচেতন। আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করেই এ ধরনের হুমকি মোকাবিলা করতে চাই। এ জন্য জনগণের কাছে সব সময় আমার আবেদন থাকবে, তারা যেন এ ব্যাপারে সজাগ থাকেন, সচেতন থাকেন। কারণ এসব ঘটনা আমাদের উন্নয়নের গতিধারাটা ব্যাহত করবে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, কোথাও কোন তথ্য পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই তিন দেশ সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার সময় ও পরে আমাদের সহায়তা করেছে জাপান। এ প্রসঙ্গে এবারের সফরে আড়াই বিলিয়ন ডলারের চুক্তির কথা উল্লেখ করেন। ফিনল্যান্ড সফর নিয়ে তিনি বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে তারা খুব দক্ষ। তাদের একটি দল আসবে। তাদের বিনিয়োগে আমরা আহ্বান জানাই। এসব খাতে সম্ভাবনা দেখতে তারা বাংলাদেশে আসবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওআইসি সম্মেলনে আমার লিখিত বক্তব্যে অনেক কিছু ছিল না। আমি লিখিত বক্তব্যের বাইরেও অনেক কথা বলেছি। আমি বলেছি, ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যদি কোন দ্বন্দ্ব না থাকে, তাহলে কেন আমরা আলোচনা করে এসবের সমাধান করতে পারছি না? মুসলিম কান্ট্রির মধ্যেই খুনোখুনি হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আত্মঘাতী হচ্ছি। লাভবান কে হচ্ছে? যারা অস্ত্র বানাচ্ছে, তারা। যারা অস্ত্র দিচ্ছে, তারা। ওআইসিকে বলেছি, মুসলমান মুসলমানের রক্ত নিচ্ছে। এটা ওআইসিকে বন্ধ করতে হবে। ওআইসির এই ব্যাপারে আরও উদ্যোগ নেয়া দরকার। আমাদের সমস্যাগুলো যদি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারি, তাহলে আত্মঘাতী সংঘাত ও রক্তপাত আর হয় না।

মানুষ খুন করার অধিকার কাউকে দেয়া হয়নি বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এক সময় ধারণা করা হতো, কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা জঙ্গি হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ইংরেজি মিডিয়ামের ছাত্রদেরও হঠাৎ মনে হলো, বেহেশতে যেতে হবে, মানুষ খুন করতে হবে। কোথায় লেখা আছে মানুষ খুন করলে বেহেশতে পাঠানো হবে? কেউ কি মানুষ খুন করে বেহেশতে পৌঁছে মেসেজ দিয়েছে? শেষ বিচার আল্লাহ করবেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, কে ভালো মুসলমান, কে ভালো মুসলমান নন, কে সঠিক, কে সঠিক নন, কে ভালো কাজ করছেন, কে করছেন না- এর বিচার করার দায়িত্ব আল্লাহ ও রাসূল আমাদের দেননি। কেন মানুষ আল্লাহর ক্ষমতা কেড়ে নেবেন? কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, শেষ বিচার তিনি করবেন। সেখানে নিরীহ মানুষ মারলে বেহেশত পাওয়া যাবে, সেটি তো কোথাও লেখা নেই। আল্লাহ কি কাউকে মানুষ মারার ক্ষমতা দিয়েছেন?

এক প্রশ্নের জবাবে আগামী অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক কল্যাণ খাতে সরকারের অগ্রাধিকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাংলাদেশে বিশাল। প্রতিবন্ধী, বিধবা, অসহায় দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের জন্য সরকার নানা কর্মসূচি নিয়েছে। এসব অব্যাহত থাকবে। উন্নত দেশগুলোর জনসংখ্যা কম। তারা অনেক কিছু পারে। অনেক সম্পদ তাদের। কিন্তু আমাদের মতো সম্পদ ও বিপুল জনসংখ্যা থাকলে কী হতো, সেটিই প্রশ্ন।

বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাকে ফিনল্যান্ড থেকে আনতে যাওয়ার বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজের পাইলটের পাসপোর্ট ছেড়ে যাওয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা ইমিগ্রেশনের দুর্বলতা। দিনে দিনে ভিআইপি ও ভিভিআইপির সংখ্যা বাড়ছে। আরও যত ‘ভি’ লাগুক না কেন, কাউকে ছাড়া হবে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়- এই নীতিতে আমরা বিশ্বাসী এবং এটিই মেনে চলি। তিনি বলেন, এ কারণে পৃথিবীর সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্ক স্থাপনের একটাই উদ্দেশ্য, দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন। আমি সব সময় সব ফোরামে একটা কথা বলার চেষ্টা করি- আমাদের সবার একটা কমন এনিমি (অভিন্ন শত্রু) আছে। সেটি হলো দারিদ্র্য। তাই সবার প্রতি আহ্বান জানাই, আসুন- আমরা সাধারণ মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন করি। সাধারণ মানুষকে একটা সুন্দর জীবন দিই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপান সফর করেছি। চীনেও হবে। ইতোমধ্যে চীনে যাওয়ার দাওয়াত ছিল আমার। কিন্তু ওই সময় বোধহয় সংসদে জরুরি কিছু চলছিল। তখন যেতে পারিনি। আগামী জুলাইয়ে যাওয়ার দাওয়াত আছে। চীনের প্রেসিডেন্ট দাওয়াত দিয়েছেন। ৩০ জুন আমাদের বাজেট পাসের ব্যাপার আছে। বাজেট পাস হওয়ার পর চীনে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক সামিট। সামার সামিটটা হবে ওখানে। তখন যাব। বাংলাদেশ-চীনের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সবাই সম্মান করেন। যদিও বাংলাদেশ থেকে বহুবার বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল, তবুও ইতিহাস থেকে তো আর মুছতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় যারা ছাত্র ছিলেন, যুবক ছিলেন- আজ তাদের অনেকেই রাষ্ট্রক্ষমতায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তাদের একটা আগ্রহ আছে। কাজেই সেদিক থেকে আমাদের একটি ভালো সম্পর্ক আছে। তাড়াতাড়ি চীনে যাওয়ার একটা কর্মসূচি আছে। তিনি বলেন, দাওয়াত তো এত বেশি যে, সব জায়গায় যেতে হলে দেশে থাকব কখন? সব দেশ থেকে আমাকে চায়। এখন তো বয়স হয়েছে, সব জায়গায় যাওয়া সম্ভব হয় নয়। তবে চীনে যাব এবার। জুলাইয়ে চীনে যাচ্ছি।

এক সাংবাদিক জার্মানি সফরকালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি দেশে নিজের ইচ্ছামতো লিখতে পারেন না। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারও লেখায় আমি বাধা দিইনি তো! যার যা খুশি লিখুন না। তিনি হঠাৎ বলে ফেললেন, উনি লিখতে পারছেন না। তো আমি তো মনে করব ওটাই যে, উনি ফরমায়েশি লেখা পাচ্ছেন না। উনি যদি চান, ডিজিএফআই ওনাকে সাপ্লাই দিক। উনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তারা সাপ্লাই দেবেন। এর বাইরে আমি কী বলব?’

প্রধানমন্ত্রী অন্য এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমরা বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারাও আমাদের আমন্ত্রণ দিয়েছে। ভারত সফরেও যাব। তিস্তার পানি বণ্টনসহ দুই দেশের অমীমাংসিত বিষয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের যে সমস্যা সীমান্ত চুক্তি, সেটির সফল সমাধান হয়েছে। এটা অনেক বড় বিষয়। বিশ্বের অনেক দেশে সীমান্ত সমস্যা, ছিটমহল বিনিময় নিয়ে দ্বন্দ-সংঘাত রয়েছে। অথচ আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের সীমান্ত সমস্য সমাধান করেছি। তিস্তার পানির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ডেল্টা প্ল্যান করেছি। পানির অভাব হবে না। আমরা পানি সঞ্চয় করে রাখব।

দেশের পর্যটন খাতের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের যে দীর্ঘ ‘সেন্ডি বিচ’, এমনটি পৃথিবীর কোথাও নেই। কক্সবাজার এয়ারপোর্টকে আন্তর্জাতিকমানের করা হবে বলেও তিনি জানান। ভারত থেকে বর্তমানে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আরও বিদ্যুৎ আসবে। ২০২১ সালের মধ্যে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে।