সরকারের অবস্থান মানবাধিকারের বিরুদ্ধে

সুলতানা কামাল

বাংলাদেশ রাষ্ট্র বা সরকার মানবাধিকারের বিপক্ষে বা বিরুদ্ধে অবস্থান করে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। গতকাল বুধবার রাজধানীর উইমেন্স ভলান্টারি অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুলতানা কামাল এ কথা বলেন। ‘কল্পনা চাকমার অপহরণের ২৩ বছর : ন্যায়বিচারের দাবি ও মামলার বর্তমান প্রেক্ষিত’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে ‘হিল উইমেন্স ফেডারেশন’ ও ‘বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক’।

সুলতানা কমাল বলেন, আমরা সবসময় মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলি। কিন্তু রাষ্ট্র বা বর্তমান সরকার আমাদের বিরুদ্ধাচারণ করে। এ থেকেই বোঝা যায় সরকার ‘মানবাধিকারবিরোধী’।

তিনি বলেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে যে আচরণের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম, সেই আচরণই আমরা দেশের একটি জনগোষ্ঠীর ওপর করছি। এমনকি একই পদ্ধতিতে, যা পাকিস্তান আমাদের ওপর করেছিল। আর যারা হত্যাকান্ড ঘটায় তারা অবশ্যই ক্ষমতার সঙ্গে জড়িত থাকে। সেই ক্ষমতা রাজনৈতিক বা অন্য যেকোনো ধরনের হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, দেশের শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানগুলোর করুণ অবস্থা আমরা দেখতে পাচ্ছি। দেশের মঙ্গলে কোন সরকার আজ পর্যন্ত তেমন কোন ভালো কাজ করতে পারেনি। অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন দেখালেও অভ্যন্তরীণ কোন উন্নয়ন হয়নি। এসব কিছু আমাদের বলেই যেতে হবে। হয়তো একদিন তাদের টনক নড়তে পারে।

‘হিল উইমেন্স ফেডারেশন’র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মনিরা ত্রিপুরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য লুৎফুননেছা খান, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রাখি দাস পুরকায়স্থ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, লেখক ও সাংবাদিক বিপ্লব রহমান, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য দীপায়ন খীসা, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব চঞ্চনা চাকমা, সমন্বয়কারী ফাল্গুনী ত্রিপুরা প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ২৩ বছরেও কল্পনা চাকমাকে ফিরিয়ে দিতে পারলো না রাষ্ট্র। নির্বাচনের আগের দিন তিনি অপহৃত হয়েছিলেন। আজ পর্যন্ত তার কোন খোঁজ নেই। সরকার আদিবাসীদের কোনভাবেই মূল্যায়ন করে না। পার্বত্যাঞ্চলে এখনো বাজারে গেলে তাদের পরিচয়পত্র দেখাতে হয়। এখনো গ্রেফতার আতঙ্ক নিয়ে অবরুদ্ধ জীবনযাপন করছে পাহাড়িরা। ২৩ বছরে ৪৩ জন তদন্তকারী অফিসারের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কল্পনা চাকমাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। অদূর ভবিষ্যতেও এর সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ বলে দায়িত্বহীন ও হতাশাব্যঞ্জক বক্তব্য দেয়া হয়। মাঝে কিছুদিন পাহাড়ে ভালো পরিস্থিতি বিরাজ করলেও বর্তমানে আবার আগের পরিস্থিতি ফিরে এসেছে। যেখানে আদিবাসী নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কারও কোন নিরাপত্তা নেই।

এ সময় কল্পনা চাকমার অপহরণকারীদের বিচার নিশ্চিতকরণসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীর মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তার স্বার্থে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে চার দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো- অবিলম্বে কল্পনা চাকমা অপহরণের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা এবং দোষীদের যথাযথ বিচার নিশ্চিত করা, অভিযুক্ত কল্পনা অপহরণকারীদের এবং রুপন, সুকেশ, মনোতোষ ও সমর বিজয় চাকমার হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা, আদিবাসী নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা।

বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন ২০১৯ , ৩০ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ৯ শাওয়াল ১৪৪০

সরকারের অবস্থান মানবাধিকারের বিরুদ্ধে

সুলতানা কামাল

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বাংলাদেশ রাষ্ট্র বা সরকার মানবাধিকারের বিপক্ষে বা বিরুদ্ধে অবস্থান করে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। গতকাল বুধবার রাজধানীর উইমেন্স ভলান্টারি অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুলতানা কামাল এ কথা বলেন। ‘কল্পনা চাকমার অপহরণের ২৩ বছর : ন্যায়বিচারের দাবি ও মামলার বর্তমান প্রেক্ষিত’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে ‘হিল উইমেন্স ফেডারেশন’ ও ‘বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক’।

সুলতানা কমাল বলেন, আমরা সবসময় মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলি। কিন্তু রাষ্ট্র বা বর্তমান সরকার আমাদের বিরুদ্ধাচারণ করে। এ থেকেই বোঝা যায় সরকার ‘মানবাধিকারবিরোধী’।

তিনি বলেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে যে আচরণের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম, সেই আচরণই আমরা দেশের একটি জনগোষ্ঠীর ওপর করছি। এমনকি একই পদ্ধতিতে, যা পাকিস্তান আমাদের ওপর করেছিল। আর যারা হত্যাকান্ড ঘটায় তারা অবশ্যই ক্ষমতার সঙ্গে জড়িত থাকে। সেই ক্ষমতা রাজনৈতিক বা অন্য যেকোনো ধরনের হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, দেশের শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানগুলোর করুণ অবস্থা আমরা দেখতে পাচ্ছি। দেশের মঙ্গলে কোন সরকার আজ পর্যন্ত তেমন কোন ভালো কাজ করতে পারেনি। অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন দেখালেও অভ্যন্তরীণ কোন উন্নয়ন হয়নি। এসব কিছু আমাদের বলেই যেতে হবে। হয়তো একদিন তাদের টনক নড়তে পারে।

‘হিল উইমেন্স ফেডারেশন’র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মনিরা ত্রিপুরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য লুৎফুননেছা খান, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রাখি দাস পুরকায়স্থ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, লেখক ও সাংবাদিক বিপ্লব রহমান, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য দীপায়ন খীসা, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব চঞ্চনা চাকমা, সমন্বয়কারী ফাল্গুনী ত্রিপুরা প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ২৩ বছরেও কল্পনা চাকমাকে ফিরিয়ে দিতে পারলো না রাষ্ট্র। নির্বাচনের আগের দিন তিনি অপহৃত হয়েছিলেন। আজ পর্যন্ত তার কোন খোঁজ নেই। সরকার আদিবাসীদের কোনভাবেই মূল্যায়ন করে না। পার্বত্যাঞ্চলে এখনো বাজারে গেলে তাদের পরিচয়পত্র দেখাতে হয়। এখনো গ্রেফতার আতঙ্ক নিয়ে অবরুদ্ধ জীবনযাপন করছে পাহাড়িরা। ২৩ বছরে ৪৩ জন তদন্তকারী অফিসারের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কল্পনা চাকমাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। অদূর ভবিষ্যতেও এর সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ বলে দায়িত্বহীন ও হতাশাব্যঞ্জক বক্তব্য দেয়া হয়। মাঝে কিছুদিন পাহাড়ে ভালো পরিস্থিতি বিরাজ করলেও বর্তমানে আবার আগের পরিস্থিতি ফিরে এসেছে। যেখানে আদিবাসী নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কারও কোন নিরাপত্তা নেই।

এ সময় কল্পনা চাকমার অপহরণকারীদের বিচার নিশ্চিতকরণসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীর মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তার স্বার্থে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে চার দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো- অবিলম্বে কল্পনা চাকমা অপহরণের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা এবং দোষীদের যথাযথ বিচার নিশ্চিত করা, অভিযুক্ত কল্পনা অপহরণকারীদের এবং রুপন, সুকেশ, মনোতোষ ও সমর বিজয় চাকমার হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা, আদিবাসী নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা।