ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২২১ জন, আহত ৬৫২

ঈদযাত্রায় এবার সারাদেশে ১৮৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২২১ জন নিহত ও ৬৫২ জন আহত বলে জানিয়েছে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এছাড়া এবার ঈদের সড়ক, রেল ও নৌপথে ২১২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৩৭৫ জন পঙ্গু হয়েছে বলে দাবি করেছে সংগঠনটি। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য প্রকাশ করে সংগঠনের সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জি এম কামরুল ইসলাম। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশনের সভাপতি ইসমাইল গাজী দেলোয়ার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামারুল ইসলাম, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সামমুদ্দীন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল যুবায়ের ও অর্থ সম্পাদক সায়মুন নাহার জিদনী প্রমুখ।

লিখিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এবারের ঈদে সরকারের সদিচ্ছা ও রেশনিং পদ্বতিতে ছুটি থাকায় ঈদযাত্রা খানিকটা স্বস্তিদায়ক হয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় সড়ক দুর্ঘটনা, প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও কিছুটা কমেছে। ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৩০ মে থেকে ঈদ শেষে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফেরা ১০ জুন পর্যন্ত বিগত ১২ দিনে ১৮৫টি সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে। একই সময়ে নৌপথে ৫টি দুর্ঘটনায় ৪ জন নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছে। এছাড়া এ সময় রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়ে পূর্বাঞ্চলে ১৩ জন ও পশ্চিমাঞ্চলে ৯ জনসহ মোট ২২ জন নিহত হয়। সড়ক, রেল ও নৌপথে সম্মিলিতভাবে ২১২টি দুর্ঘটনায় ২৪৭ জন নিহত ও ৬৬৪ জন আহত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঈদে গাজীপুরে ভাড়া নিয়ে বাগবিত-া হওয়ায় সালাউদ্দিন নামের এক যাত্রীকে বাসের চাকায় পিষে হত্যা করা হয়েছে, ২য় বার ভাড়া না দেয়ায় কুয়াকাটায় চলন্ত বাসে যাত্রীদের বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে পরিবহন শ্রমিকরা, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় পুলিশের হাতে নারী ট্রেনযাত্রী লাঞ্ছিত হওয়া, বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় যানজটে কুড়িগ্রাম এলাকার আফরোজা বেগম নামে এক নারীর পথেই সন্তান প্রসব করার ঘটনা ঘটেছে। একই সময়ে ময়মনসিংহের ভালুকায় ট্রাকচাপায় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম, সুনামগঞ্জে বাস-লেগুনা সংঘর্ষে শাল্লা ডিগ্রি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র নীতেশ দাস, নাটোরের বড়াইগ্রামে ডিএমপির পুলিশের উপ-পরিদর্শক আবদুল জলিলের মেয়ে আসনিম মীরা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রণিবিদ্যা বিভাগের ছাত্র সাদেকুল ইসলাম, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দিতে এসে বালিয়াকান্দিতে ট্রলির চাকায় পিষ্ট হয়ে মমতাজ মৌ, রাজধানীর ফার্মগেটে বাসের ধাক্কায় সিভিল এভিয়েশন কলেজের ছাত্রী তানজিলা আক্তার, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় প্রাইভেটকার খাদে পড়ে অগ্রণী ব্যাংকের ট্রেনিং সেন্টারের ব্যবস্থাপক এমারত হোসেন, কুমিল্লার গৌরীপুরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন, আশুলিয়ায় ট্রাকচাপায় পুলিশ কনস্টেবল নাদিম হোসাইনসহ ২২১ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া দুর্ঘটনায় সাতক্ষীরায় কালীগঞ্জ থানার ওসি হাসান হাফিজুর রহমানসহ ৬৫২ জন আহত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে- ৫১টি গাড়িচাপা, ৮১টি সংঘর্ষ, ১৯টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে ও অন্যান্য কারণে ৩৪টি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এতে ৬৩টি বাস, ৩৮টি ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপ, ১৯টি কার-মাইক্রো, ৩০টি নছিমন-করিমন, ভটভটি-ইজিবাইক, অটোরিকশা, ৬৪টি মোটরসাইকেল, ২৬টি অন্য যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত যাত্রী চাপ, চালকদের প্রতিযোগিতা করে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, মহাসড়কে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, নছিমন-করিমন, মোটরসাইকেল অবাধে চলাচল, ওভারটেকিং, বিশ্রামহীন গাড়ি চালানো, যাত্রীদের ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতাÑ এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এজন্য যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ ও মহাসড়কে নছিমন-করিমন, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে বাস্তবায়নসহ একাধিক সুপারিশ করে সংগঠনটি।

বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন ২০১৯ , ৩০ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ৯ শাওয়াল ১৪৪০

যাত্রী অধিকার পরিষদের প্রতিবেদন

ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২২১ জন, আহত ৬৫২

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ঈদযাত্রায় এবার সারাদেশে ১৮৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২২১ জন নিহত ও ৬৫২ জন আহত বলে জানিয়েছে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এছাড়া এবার ঈদের সড়ক, রেল ও নৌপথে ২১২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৩৭৫ জন পঙ্গু হয়েছে বলে দাবি করেছে সংগঠনটি। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য প্রকাশ করে সংগঠনের সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জি এম কামরুল ইসলাম। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশনের সভাপতি ইসমাইল গাজী দেলোয়ার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামারুল ইসলাম, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সামমুদ্দীন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল যুবায়ের ও অর্থ সম্পাদক সায়মুন নাহার জিদনী প্রমুখ।

লিখিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এবারের ঈদে সরকারের সদিচ্ছা ও রেশনিং পদ্বতিতে ছুটি থাকায় ঈদযাত্রা খানিকটা স্বস্তিদায়ক হয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় সড়ক দুর্ঘটনা, প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও কিছুটা কমেছে। ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৩০ মে থেকে ঈদ শেষে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফেরা ১০ জুন পর্যন্ত বিগত ১২ দিনে ১৮৫টি সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে। একই সময়ে নৌপথে ৫টি দুর্ঘটনায় ৪ জন নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছে। এছাড়া এ সময় রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়ে পূর্বাঞ্চলে ১৩ জন ও পশ্চিমাঞ্চলে ৯ জনসহ মোট ২২ জন নিহত হয়। সড়ক, রেল ও নৌপথে সম্মিলিতভাবে ২১২টি দুর্ঘটনায় ২৪৭ জন নিহত ও ৬৬৪ জন আহত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঈদে গাজীপুরে ভাড়া নিয়ে বাগবিত-া হওয়ায় সালাউদ্দিন নামের এক যাত্রীকে বাসের চাকায় পিষে হত্যা করা হয়েছে, ২য় বার ভাড়া না দেয়ায় কুয়াকাটায় চলন্ত বাসে যাত্রীদের বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে পরিবহন শ্রমিকরা, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় পুলিশের হাতে নারী ট্রেনযাত্রী লাঞ্ছিত হওয়া, বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় যানজটে কুড়িগ্রাম এলাকার আফরোজা বেগম নামে এক নারীর পথেই সন্তান প্রসব করার ঘটনা ঘটেছে। একই সময়ে ময়মনসিংহের ভালুকায় ট্রাকচাপায় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম, সুনামগঞ্জে বাস-লেগুনা সংঘর্ষে শাল্লা ডিগ্রি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র নীতেশ দাস, নাটোরের বড়াইগ্রামে ডিএমপির পুলিশের উপ-পরিদর্শক আবদুল জলিলের মেয়ে আসনিম মীরা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রণিবিদ্যা বিভাগের ছাত্র সাদেকুল ইসলাম, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দিতে এসে বালিয়াকান্দিতে ট্রলির চাকায় পিষ্ট হয়ে মমতাজ মৌ, রাজধানীর ফার্মগেটে বাসের ধাক্কায় সিভিল এভিয়েশন কলেজের ছাত্রী তানজিলা আক্তার, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় প্রাইভেটকার খাদে পড়ে অগ্রণী ব্যাংকের ট্রেনিং সেন্টারের ব্যবস্থাপক এমারত হোসেন, কুমিল্লার গৌরীপুরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন, আশুলিয়ায় ট্রাকচাপায় পুলিশ কনস্টেবল নাদিম হোসাইনসহ ২২১ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া দুর্ঘটনায় সাতক্ষীরায় কালীগঞ্জ থানার ওসি হাসান হাফিজুর রহমানসহ ৬৫২ জন আহত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে- ৫১টি গাড়িচাপা, ৮১টি সংঘর্ষ, ১৯টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে ও অন্যান্য কারণে ৩৪টি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এতে ৬৩টি বাস, ৩৮টি ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপ, ১৯টি কার-মাইক্রো, ৩০টি নছিমন-করিমন, ভটভটি-ইজিবাইক, অটোরিকশা, ৬৪টি মোটরসাইকেল, ২৬টি অন্য যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত যাত্রী চাপ, চালকদের প্রতিযোগিতা করে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, মহাসড়কে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, নছিমন-করিমন, মোটরসাইকেল অবাধে চলাচল, ওভারটেকিং, বিশ্রামহীন গাড়ি চালানো, যাত্রীদের ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতাÑ এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এজন্য যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ ও মহাসড়কে নছিমন-করিমন, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে বাস্তবায়নসহ একাধিক সুপারিশ করে সংগঠনটি।