চোখের সামনে বাস পিষে মারল পঙ্গু স্বামীকে

মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন স্ত্রী পারুল

ঢাকা থেকে স্ত্রী পারুল আক্তারকে নিয়ে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে শ্বশুরবাড়িতে ঈদ করে ঢাকায় ফিরতে চেয়েছিলেন পুঙ্গ ড্রাইভার সালাউদ্দিন। যথারীতি ফুলপুর থেকে আলম এশিয়া গাড়িতে স্ত্রী পারল আক্তারকে নিয়ে উঠেছিলেন। তার বাড়ি ফুলপুর উপজেলার খরিয়া নদী পারের শিলপুর গ্রামে। কিন্তু কে জানত এ যাওয়াই তার শেষ যাওয়া হবে। তিনিও গাড়িচালক। আলম এশিয়ার ড্রাইভারকে বার বার এ কথাই বলছিলেন। বলছিলেন, আমিও ড্রাইভার, আমার ভাড়া হাফ। তবে ঈদে আমি হাফ দিতে চাই না। অবশেষে মাত্র ৫০ টাকার জন্য তাকে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করে আলম এশিয়ার হেলপার ও ড্রাইভার।

নিহত সালাউদ্দিন ঢাকার আলু বাজারের মৃত শাহান উদ্দিনের পুত্র। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। প্রায় ১৮ বছর আগে বিয়ে করেন পারুল আক্তারকে। কয়েক মাস আগে মারাত্মক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসায় সুস্থ হলেও তার হাতের একপাশ অবস হয়ে যায়। আলম এশিয়ার চালকের নির্দেশেই হেলপার আনোয়ার মাত্র ৫০ টাকার জন্য ঢাকার বাগেরবাজার সংলগ্ন রাস্তার পাশে তাকে ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে তার ওপর দিয়ে বাস চালায় ড্রাইভার। এতে বাসের চাকায় পৃষ্ঠ হয়ে ঘটনাস্থলেই মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। পরে সালাউদ্দিনের স্ত্রী পারুলকে জোরপূর্বক নিয়ে যায়। অনেক কাকুতি-মিনতির পর দেড় মাইল দূরে পারুলকে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দিলে অল্পের জন্য রক্ষা পান পারুল। নিহতের ছোট ভাই মামলার বাদী জামাল উদ্দিন সেদিনের লৌমহর্ষক হত্যার বিবরণে বলেন, ভাইকে যখন হত্যা করা হয়, তখন আমি বাসের সামনে গেলে আমাকেও চাপা দিতে চেষ্টা করে। আমি তখন দ্রত সটকে পড়ি এবং কোন রকমভাবে বেঁচে যাই।

গতকাল বুধবার সরেজমিন নিহত সালাউদ্দিনের বাড়ি ফুলপুরের শিলপুর গ্রামে দেখা গেছে,বাড়িতে আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী মিলে চেহলামের আয়োজন করছেন। ছোট একটি টিনশেট বাড়িতে বিলাপ করছেন স্ত্রী পারুল আক্তার। স্বামীর জন্য বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। পরিবারের লোকজন জানায়, তিনি মাঝে মধ্যেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছেন। কোন সান্ত¡নাই যেন কাজে আসছে না। মাঝে মধ্যে ফাঁসি ফাঁসি বলে চিৎকার দিয়ে উঠছেন। সালাউদ্দিনের মৃত্যুর পর থেকে স্ত্রী পারুল আক্তারের মুখে কোন খাবার দেয়া যাচ্ছে না।

উল্লেখ্য, ঢাকা-হালুয়াঘাট মহাসড়কের গাজীপুর নামক স্থানে রোরবার গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে সালাউদ্দিনকে (৪৫) চলন্ত বাসের চাকায় পিষ্ট করে হত্যা করে আলম এশিয়ার চালক।

সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, নিহত সালাউদ্দিনের ছোট ভাই জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে গাজীপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। পুলিশ ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় ধোবাউড়া থেকে ড্রাইভার রোকন উদ্দিন ও শেরপুর থেকে হেলপারকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে।

এদিকে ঢাকা-হালয়াঘাাট মহাসড়কের ফুলপুর বাসস্ট্যান্ডে ঈদের ৭ দিন চলে গেলেও গাড়িচালকদের বেপোরোয়া মনোভাব থামছে না। যাত্রীদের কাছ থেকে ২০০ টাকার ভাড়া ৬০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন ২০১৯ , ৩০ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ৯ শাওয়াল ১৪৪০

চোখের সামনে বাস পিষে মারল পঙ্গু স্বামীকে

মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন স্ত্রী পারুল

প্রতিনিধি, ফুলপুর (ময়মনসিংহ)

image

ঢাকা থেকে স্ত্রী পারুল আক্তারকে নিয়ে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে শ্বশুরবাড়িতে ঈদ করে ঢাকায় ফিরতে চেয়েছিলেন পুঙ্গ ড্রাইভার সালাউদ্দিন। যথারীতি ফুলপুর থেকে আলম এশিয়া গাড়িতে স্ত্রী পারল আক্তারকে নিয়ে উঠেছিলেন। তার বাড়ি ফুলপুর উপজেলার খরিয়া নদী পারের শিলপুর গ্রামে। কিন্তু কে জানত এ যাওয়াই তার শেষ যাওয়া হবে। তিনিও গাড়িচালক। আলম এশিয়ার ড্রাইভারকে বার বার এ কথাই বলছিলেন। বলছিলেন, আমিও ড্রাইভার, আমার ভাড়া হাফ। তবে ঈদে আমি হাফ দিতে চাই না। অবশেষে মাত্র ৫০ টাকার জন্য তাকে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করে আলম এশিয়ার হেলপার ও ড্রাইভার।

নিহত সালাউদ্দিন ঢাকার আলু বাজারের মৃত শাহান উদ্দিনের পুত্র। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। প্রায় ১৮ বছর আগে বিয়ে করেন পারুল আক্তারকে। কয়েক মাস আগে মারাত্মক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসায় সুস্থ হলেও তার হাতের একপাশ অবস হয়ে যায়। আলম এশিয়ার চালকের নির্দেশেই হেলপার আনোয়ার মাত্র ৫০ টাকার জন্য ঢাকার বাগেরবাজার সংলগ্ন রাস্তার পাশে তাকে ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে তার ওপর দিয়ে বাস চালায় ড্রাইভার। এতে বাসের চাকায় পৃষ্ঠ হয়ে ঘটনাস্থলেই মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। পরে সালাউদ্দিনের স্ত্রী পারুলকে জোরপূর্বক নিয়ে যায়। অনেক কাকুতি-মিনতির পর দেড় মাইল দূরে পারুলকে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দিলে অল্পের জন্য রক্ষা পান পারুল। নিহতের ছোট ভাই মামলার বাদী জামাল উদ্দিন সেদিনের লৌমহর্ষক হত্যার বিবরণে বলেন, ভাইকে যখন হত্যা করা হয়, তখন আমি বাসের সামনে গেলে আমাকেও চাপা দিতে চেষ্টা করে। আমি তখন দ্রত সটকে পড়ি এবং কোন রকমভাবে বেঁচে যাই।

গতকাল বুধবার সরেজমিন নিহত সালাউদ্দিনের বাড়ি ফুলপুরের শিলপুর গ্রামে দেখা গেছে,বাড়িতে আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী মিলে চেহলামের আয়োজন করছেন। ছোট একটি টিনশেট বাড়িতে বিলাপ করছেন স্ত্রী পারুল আক্তার। স্বামীর জন্য বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। পরিবারের লোকজন জানায়, তিনি মাঝে মধ্যেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছেন। কোন সান্ত¡নাই যেন কাজে আসছে না। মাঝে মধ্যে ফাঁসি ফাঁসি বলে চিৎকার দিয়ে উঠছেন। সালাউদ্দিনের মৃত্যুর পর থেকে স্ত্রী পারুল আক্তারের মুখে কোন খাবার দেয়া যাচ্ছে না।

উল্লেখ্য, ঢাকা-হালুয়াঘাট মহাসড়কের গাজীপুর নামক স্থানে রোরবার গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে সালাউদ্দিনকে (৪৫) চলন্ত বাসের চাকায় পিষ্ট করে হত্যা করে আলম এশিয়ার চালক।

সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, নিহত সালাউদ্দিনের ছোট ভাই জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে গাজীপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। পুলিশ ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় ধোবাউড়া থেকে ড্রাইভার রোকন উদ্দিন ও শেরপুর থেকে হেলপারকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে।

এদিকে ঢাকা-হালয়াঘাাট মহাসড়কের ফুলপুর বাসস্ট্যান্ডে ঈদের ৭ দিন চলে গেলেও গাড়িচালকদের বেপোরোয়া মনোভাব থামছে না। যাত্রীদের কাছ থেকে ২০০ টাকার ভাড়া ৬০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে।