ব্যবসা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির বাজেট

বাস্তবায়নই বড় চ্যালেঞ্জ

রোকন মাহমুদ

http://print.thesangbad.net/images/2019/June/13Jun19/news/upload2.jpg

আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার বাজেট প্রস্তাবে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও প্রবাসী আয় বাড়ানোর পরিকল্পনা দিয়েছেন। এজন্য কর ও শুল্ক ছাড়, আর্থিক প্রণোদনা ও নীতিসহায়তা বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে আগামী অর্থবছরে। এছাড়া বাজেটে অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাবও করেছে এসব কিছুর জন্য। একই সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তার বেস্টনি বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়নে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং ভর্তুকি বৃদ্ধির প্রস্তাব রয়েছে অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবে।

সর্বোপরি গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ব্যয়ের তুলনায় আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট ব্যয় বাড়ছে ১৮ শতাংশ। অর্থের অঙ্কে যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। সে হিসেবে এবারের বাজেটকে ব্যবসা ও বিনিযোগ বান্ধব কর্মসংস্থানমুখী বলছেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু বিশাল এই বাজেট বাস্তবায়নের মূল রাজস্ব আয়ের পুরো পরিকল্পনাটিই এবার মূল্যসংযোজন কর বা ভ্যাটকে কেন্দ্র করে। এনবিআর নিয়ন্ত্রিত আয়ের ৩৮ শতাংশই ধরা হয়েছে ভ্যাট আয় থেকে। যা আদায় করা হবে ভোক্তার কাছ থেকে। এই ভোক্তার তালিকায় নি¤œ ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষই বেশি। সে হিসেবে বিশাল বাজেটের চাপ সাধারণ মানুষের উপরই বেশি পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবীদরা। আগামী জুলাই থেকে নতুন আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ অর্থ আদায় করা হবে। এছাড়া বাজেটের বিশাল ঘাটতির প্রভাবও সাধারণ মানুষের ওপর পড়বে বলে মনে করছেন অনেকে। যদিও অর্থমন্ত্রী আয়করের আওতা বাড়নোর একটি লক্ষ্য তার বক্তব্যে বলেছেন। তিনি আগামী অর্থবছর করদাতার সংখ্যা ১ কোটিতে উন্নীত করার প্রত্যশা করছেন। যা থেকে এনবিআরের রাজস্ব আয়ের ৩৫ শতাংশ আদায়ের পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি। এজন্য মাঠ পর্যায়ে কর অঞ্চলের সংখ্যা ৩১টি থেকে ৬৩টি করা, বিভিন্ন ইউনিট ও সেল বৃদ্ধি করা এবং সার্বিক কর ব্যবস্থাকে অটোমেশন করার পরিকল্পনার কথা বলেছেন বাজেট বক্তব্যে। এসব সংস্কারের মাধ্যমে আগামী বছরগুলোতে ২৫ শতাংশ হারে আয়কর বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করি আগামী বছরগুলোতে ২৫ শতাংশ হারে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হবে এবং এর ফলে ২০২১ সালের মধ্যে কর-জিডিপির অনুপাত ১৫ শতাংশ উন্নীত হবে।

তবে এসব সংস্কার এক বা দুই বছরে সম্ভব কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিশ্লেষকদের। সে হিসেবে এ খাত থেকে আগামী অর্থবছরেই বড় প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনা তেমন নেই। যদি তাই হয় তবে বাজেটের পরিণতি চলতি বছরের মতোই হবে। শেষ পর্যন্ত রাজস্ব ঘাটতির কারণে বাজেটের অনেক কিছুই বাস্তবায়ন হবে না। অথবা ভোক্তাদের ওপর চাপ বাড়িয়ে ভ্যাট আয় বাড়াতে হবে। সার্বিক বিশ্লেষণে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিশাল এই বাজেট বাস্তবায়নই বড় চ্যালেঞ্জ। বাজেট বাস্তবায়নের চ্যলেঞ্জকে বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যাংকি খাতের দুরাবস্থা। এখাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে পড়েছে। ফলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে অর্থমন্ত্রী তার বাজেটে সংস্কারের কথা বললেও ব্যাংকিং কমিশনের বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি। উদ্যোক্তা তৈরির বিষয়গুলো যেহেতু ব্যাংকিং অর্থায়নের ওপর নির্ভর করে তাই এক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হবে বলেই মনে করছেন অনেকে।

‘সমৃদ্ধ আগামীর’ প্রত্যাশা সামনে রেখে আওয়ামী লীগের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বছরে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদের সামনে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত এই ব্যয় বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ১৮ শতাংশ বেশি। বৃহস্পতিবার বিকেলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। তার আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল তার প্রথম বাজেটে খরচের যে হিসাব ধরেছেন, তা বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৮.১ শতাংশের সমান। আর বিদায়ী অর্থবছরে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের দিয়ে যাওয়া বাজেটের আকার ছিল ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ২৫ শতাংশ বেশি এবং জিডিপির ১৮.৩ শতাংশের সমান।

এবার সোয়া পাঁচ লাখ কোটি টাকার বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হচ্ছে ২ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ২২ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার দুই লাখ দুই হাজার ৭২১ কোটি টাকা।

এবার পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ১০ হাজার ২৬২ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে ১৬ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে ৬০ হাজার ১০৯ কোটি টাকা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধেই যাবে, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের ১৯ শতাংশের বেশি।

মোট বাজেটের ১৫ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষায়, ১০ দশমিক ৯ শতাংশ সুদ পরিশোধ, ১২ দশমকি ৪ শতাংশ পরিবহন ও যোগাযোগ, ৭ দশমিক ২ শতাংশ পল্লী উন্নয়ন, ৫ দশমিক ৪ শতাংশ জ্বলানি ও বিদ্যুৎ ৪ দশমকি ৯ শতাংশ স্বাস্থ্য ৫ দশমকি ৪ শতাংশ কৃষি, ৬ দশমিক ১ শতাংশ পরিরক্ষা, ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ জনপ্রশাসন, ৫ দশমিক ৬ শতাংশ সামাজিক নিরাপত্তায়, ৫ দশমিক ৩ শতাংশ জনশৃঙ্খলায়, ১ দশমিক ৩ শতাংশ গৃহায়ন, দশমিক ৯ শতাংশ বিনোদন ও সংস্কৃতি, দশমিক ৭ শতাংশ শিল্প ও অর্থনৈতি সার্ভিস এবং দশমিক ২ শতাংশ অন্যান্য খাতে ব্যয় করবেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী আশা করছেন, নতুন অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের ৭২ শতাংশ তিনি রাজস্ব খাত থেকে পাবেন। তার প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ১৯ শতাংশের বেশি।

এছাড়া ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ অভ্যন্তরীণ ঋণ, ১২ দশমিক ২ শতাংশ বৈদেশিক ঋণ ও দশমিক ৮ শতাংশ বৈদেশিক অনুদান থেকে আসবে। এসব ঋণ ও অনুদান দিয়ে ঘাটতি বাজেট পূরণ করার পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী।

এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন মুস্তফা কামাল। ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৬.২৮ শতাংশ। গতবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে, এক লাখ ২৩ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৭.২১ শতাংশের মতো। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। লক্ষ্য পূরণ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

আয়কর ও মুনাফার ওপর কর থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯১২ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। বিদায়ী সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৯৫ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। এছাড়া নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৩৬ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৪৮ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৫৪ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ২ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী।

এছাড়া বৈদেশিক অনুদান থেকে ৪ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে কাজেট প্রস্তাবে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে তিনি এবার নতুন কোন কর আরোপ করছেন না। বরং করের আওতা বাড়িয়ে তিনি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে চান। বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা, আদায় সন্তোষজনক না হওয়ায় তা সংশোধন করে ৩ লাখ ১৬ হাজার ৬১২ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এপ্রিল পর্যন্ত আদায় হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার কাছাকাছি।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। সংশোধনে তা ৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অর্থমন্ত্রী সংসদের সামনে যে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেছেন, তাতে আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে প্রায় এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশের সমান। অর্থনীতিবিদরা বাজেট ঘাটতির এই পরিমাণকে গ্রহণযোগ্য সীমার মধ্যেই ধরেন।

এই ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রীর সহায় অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋণ। তিনি আশা করছেন, বিদেশ থেকে ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ঋণ করে ওই ঘাটতি মেটান যাবে। এর মধ্যে এবার ব্যাংক থেকে ঋণের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের শুরু থেকে ২৬ মে পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বেসরকারি খাতকে চাপে ফেলবে। এতে ব্যবসা বান্ধব যেসব নীতি গ্রহণ করা হয়েছে তা অকার্যকর হয়ে পড়েবে। এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ব্যাংকে তারল্য সংকট রয়েছে। এখন যদি সরকার ৪৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয় তা হলে বেসরকারি খাত চাপে পড়বে। সরকার ব্যাংক খাত থেকে আরও ঋণ নিলে ব্যাংকিং খাতে আরও তারল্য সংকট তৈরি হবে। তাতে নতুন করে ব্যাংকগুলো ঋণ দেয়ার সক্ষমতা হারাবে।

এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে মূল্যস্ফীতি ৫.৫ শতাংশের মধ্যে আটকে রেখেই ৮.২০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়।

বিশাল এই বাজেট বাস্তবায়নে ভ্যাট আইনে ১১টি সংশোধন প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে একটি হার থেকে পাঁচটি হার করা, ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় ভ্যাট মুক্ত রাখা ও ভ্যাট নিবন্ধন সীমা ৮০ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকায় বৃদ্ধি করা অন্যতম।

আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে তিন কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেকারত্বের অবসান ঘটানো হবে বলে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, একদিকে শ্রমবাজারে বিপুল কর্মক্ষম জনশক্তির আগমন, অন্যদিকে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে শ্রমিকের চাহিদা কমে যাওয়ার বিষয়টি সরকার অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করেছে এবং এর সমাধানে নানাবিধ পদক্ষেপ নিচ্ছে।

এছাড়া সরকার শিল্পখাতে কর্মসৃজনের গতি বাড়ানোর লক্ষ্যে ব্যবসা ও বিনিয়োগ পরিবেশ আধুনিকায়ন, শ্রমিকের সুরক্ষা জোরদার করা এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অধিক হারে কর্ম প্রবেশ উপযোগী আইন-বিধি, নীতি-কৌশল সংস্কারের জন্য তিন বছর মেয়াদি কার্যক্রম শুরু করেছে। চলতি অর্থবছরে ১০টি আইন-বিধি, নীতি-কৌশল প্রণয়ন অথবা সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে। আগামী দুই বছরে অবশিষ্ট সংস্কার কাজ সম্পাদন করে ক্রমবর্ধমান জনশক্তির জন্য মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে বলে বাজেট পরিকল্পনায় বলা হয়েছে। এছাড়া বিশেষ জনগোষ্ঠীর প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।

আরও খবর
সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বেড়েছে

৪৮ বছরে বাজেট বেড়েছে ৬৬৬ গুণ

সঠিক সময়ে রাজস্ব আদায়ই বড় চ্যালেঞ্জ

আ’লীগের ইশতেহার অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেই

বাজেট বাস্তবায়ন করাই বড় চ্যালেঞ্জ

প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন কিছু নেই

দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বেড়েছে

জননিরাপত্তায় ব্যয় ২১ হাজার ৯২৩ কোটি ১৭ লাখ 

করমুক্ত আয়সীমা আগের মতোই

আবারও এমপিওভুক্ত হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ৬১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা

স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বেড়েছে

বড় দলের বিপক্ষে লড়াই করার সামর্থ্য আছে বাংলাদেশের : কোচ রোডস

পরিবহন ও যোগাযোগে বরাদ্দ ৬৪ হাজার ৮২০ কোটি টাকা

ভারত-নিউজিল্যান্ড ম্যাচও পরিত্যক্ত

তিন মোড়ল ছাড়া বাকি দেশগুলোর প্রতি কোন দায়দায়িত্ব বোধ আছে মনে করে না আইসিসি

শুক্রবার, ১৪ জুন ২০১৯ , ২৯ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ১০ শাওয়াল ১৪৪০

ব্যবসা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির বাজেট

বাস্তবায়নই বড় চ্যালেঞ্জ

রোকন মাহমুদ

image

http://print.thesangbad.net/images/2019/June/13Jun19/news/upload2.jpg

আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার বাজেট প্রস্তাবে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও প্রবাসী আয় বাড়ানোর পরিকল্পনা দিয়েছেন। এজন্য কর ও শুল্ক ছাড়, আর্থিক প্রণোদনা ও নীতিসহায়তা বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে আগামী অর্থবছরে। এছাড়া বাজেটে অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাবও করেছে এসব কিছুর জন্য। একই সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তার বেস্টনি বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়নে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং ভর্তুকি বৃদ্ধির প্রস্তাব রয়েছে অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবে।

সর্বোপরি গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ব্যয়ের তুলনায় আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট ব্যয় বাড়ছে ১৮ শতাংশ। অর্থের অঙ্কে যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। সে হিসেবে এবারের বাজেটকে ব্যবসা ও বিনিযোগ বান্ধব কর্মসংস্থানমুখী বলছেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু বিশাল এই বাজেট বাস্তবায়নের মূল রাজস্ব আয়ের পুরো পরিকল্পনাটিই এবার মূল্যসংযোজন কর বা ভ্যাটকে কেন্দ্র করে। এনবিআর নিয়ন্ত্রিত আয়ের ৩৮ শতাংশই ধরা হয়েছে ভ্যাট আয় থেকে। যা আদায় করা হবে ভোক্তার কাছ থেকে। এই ভোক্তার তালিকায় নি¤œ ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষই বেশি। সে হিসেবে বিশাল বাজেটের চাপ সাধারণ মানুষের উপরই বেশি পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবীদরা। আগামী জুলাই থেকে নতুন আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ অর্থ আদায় করা হবে। এছাড়া বাজেটের বিশাল ঘাটতির প্রভাবও সাধারণ মানুষের ওপর পড়বে বলে মনে করছেন অনেকে। যদিও অর্থমন্ত্রী আয়করের আওতা বাড়নোর একটি লক্ষ্য তার বক্তব্যে বলেছেন। তিনি আগামী অর্থবছর করদাতার সংখ্যা ১ কোটিতে উন্নীত করার প্রত্যশা করছেন। যা থেকে এনবিআরের রাজস্ব আয়ের ৩৫ শতাংশ আদায়ের পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি। এজন্য মাঠ পর্যায়ে কর অঞ্চলের সংখ্যা ৩১টি থেকে ৬৩টি করা, বিভিন্ন ইউনিট ও সেল বৃদ্ধি করা এবং সার্বিক কর ব্যবস্থাকে অটোমেশন করার পরিকল্পনার কথা বলেছেন বাজেট বক্তব্যে। এসব সংস্কারের মাধ্যমে আগামী বছরগুলোতে ২৫ শতাংশ হারে আয়কর বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করি আগামী বছরগুলোতে ২৫ শতাংশ হারে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হবে এবং এর ফলে ২০২১ সালের মধ্যে কর-জিডিপির অনুপাত ১৫ শতাংশ উন্নীত হবে।

তবে এসব সংস্কার এক বা দুই বছরে সম্ভব কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিশ্লেষকদের। সে হিসেবে এ খাত থেকে আগামী অর্থবছরেই বড় প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনা তেমন নেই। যদি তাই হয় তবে বাজেটের পরিণতি চলতি বছরের মতোই হবে। শেষ পর্যন্ত রাজস্ব ঘাটতির কারণে বাজেটের অনেক কিছুই বাস্তবায়ন হবে না। অথবা ভোক্তাদের ওপর চাপ বাড়িয়ে ভ্যাট আয় বাড়াতে হবে। সার্বিক বিশ্লেষণে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিশাল এই বাজেট বাস্তবায়নই বড় চ্যালেঞ্জ। বাজেট বাস্তবায়নের চ্যলেঞ্জকে বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যাংকি খাতের দুরাবস্থা। এখাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে পড়েছে। ফলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে অর্থমন্ত্রী তার বাজেটে সংস্কারের কথা বললেও ব্যাংকিং কমিশনের বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি। উদ্যোক্তা তৈরির বিষয়গুলো যেহেতু ব্যাংকিং অর্থায়নের ওপর নির্ভর করে তাই এক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হবে বলেই মনে করছেন অনেকে।

‘সমৃদ্ধ আগামীর’ প্রত্যাশা সামনে রেখে আওয়ামী লীগের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বছরে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদের সামনে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত এই ব্যয় বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ১৮ শতাংশ বেশি। বৃহস্পতিবার বিকেলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। তার আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল তার প্রথম বাজেটে খরচের যে হিসাব ধরেছেন, তা বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৮.১ শতাংশের সমান। আর বিদায়ী অর্থবছরে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের দিয়ে যাওয়া বাজেটের আকার ছিল ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ২৫ শতাংশ বেশি এবং জিডিপির ১৮.৩ শতাংশের সমান।

এবার সোয়া পাঁচ লাখ কোটি টাকার বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হচ্ছে ২ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ২২ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার দুই লাখ দুই হাজার ৭২১ কোটি টাকা।

এবার পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ১০ হাজার ২৬২ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে ১৬ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে ৬০ হাজার ১০৯ কোটি টাকা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধেই যাবে, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের ১৯ শতাংশের বেশি।

মোট বাজেটের ১৫ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষায়, ১০ দশমিক ৯ শতাংশ সুদ পরিশোধ, ১২ দশমকি ৪ শতাংশ পরিবহন ও যোগাযোগ, ৭ দশমিক ২ শতাংশ পল্লী উন্নয়ন, ৫ দশমিক ৪ শতাংশ জ্বলানি ও বিদ্যুৎ ৪ দশমকি ৯ শতাংশ স্বাস্থ্য ৫ দশমকি ৪ শতাংশ কৃষি, ৬ দশমিক ১ শতাংশ পরিরক্ষা, ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ জনপ্রশাসন, ৫ দশমিক ৬ শতাংশ সামাজিক নিরাপত্তায়, ৫ দশমিক ৩ শতাংশ জনশৃঙ্খলায়, ১ দশমিক ৩ শতাংশ গৃহায়ন, দশমিক ৯ শতাংশ বিনোদন ও সংস্কৃতি, দশমিক ৭ শতাংশ শিল্প ও অর্থনৈতি সার্ভিস এবং দশমিক ২ শতাংশ অন্যান্য খাতে ব্যয় করবেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী আশা করছেন, নতুন অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের ৭২ শতাংশ তিনি রাজস্ব খাত থেকে পাবেন। তার প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ১৯ শতাংশের বেশি।

এছাড়া ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ অভ্যন্তরীণ ঋণ, ১২ দশমিক ২ শতাংশ বৈদেশিক ঋণ ও দশমিক ৮ শতাংশ বৈদেশিক অনুদান থেকে আসবে। এসব ঋণ ও অনুদান দিয়ে ঘাটতি বাজেট পূরণ করার পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী।

এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন মুস্তফা কামাল। ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৬.২৮ শতাংশ। গতবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে, এক লাখ ২৩ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৭.২১ শতাংশের মতো। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। লক্ষ্য পূরণ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

আয়কর ও মুনাফার ওপর কর থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯১২ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। বিদায়ী সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৯৫ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। এছাড়া নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৩৬ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৪৮ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৫৪ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ২ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী।

এছাড়া বৈদেশিক অনুদান থেকে ৪ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে কাজেট প্রস্তাবে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে তিনি এবার নতুন কোন কর আরোপ করছেন না। বরং করের আওতা বাড়িয়ে তিনি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে চান। বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা, আদায় সন্তোষজনক না হওয়ায় তা সংশোধন করে ৩ লাখ ১৬ হাজার ৬১২ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এপ্রিল পর্যন্ত আদায় হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার কাছাকাছি।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। সংশোধনে তা ৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অর্থমন্ত্রী সংসদের সামনে যে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেছেন, তাতে আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে প্রায় এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশের সমান। অর্থনীতিবিদরা বাজেট ঘাটতির এই পরিমাণকে গ্রহণযোগ্য সীমার মধ্যেই ধরেন।

এই ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রীর সহায় অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋণ। তিনি আশা করছেন, বিদেশ থেকে ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ঋণ করে ওই ঘাটতি মেটান যাবে। এর মধ্যে এবার ব্যাংক থেকে ঋণের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের শুরু থেকে ২৬ মে পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বেসরকারি খাতকে চাপে ফেলবে। এতে ব্যবসা বান্ধব যেসব নীতি গ্রহণ করা হয়েছে তা অকার্যকর হয়ে পড়েবে। এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ব্যাংকে তারল্য সংকট রয়েছে। এখন যদি সরকার ৪৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয় তা হলে বেসরকারি খাত চাপে পড়বে। সরকার ব্যাংক খাত থেকে আরও ঋণ নিলে ব্যাংকিং খাতে আরও তারল্য সংকট তৈরি হবে। তাতে নতুন করে ব্যাংকগুলো ঋণ দেয়ার সক্ষমতা হারাবে।

এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে মূল্যস্ফীতি ৫.৫ শতাংশের মধ্যে আটকে রেখেই ৮.২০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়।

বিশাল এই বাজেট বাস্তবায়নে ভ্যাট আইনে ১১টি সংশোধন প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে একটি হার থেকে পাঁচটি হার করা, ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় ভ্যাট মুক্ত রাখা ও ভ্যাট নিবন্ধন সীমা ৮০ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকায় বৃদ্ধি করা অন্যতম।

আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে তিন কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেকারত্বের অবসান ঘটানো হবে বলে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, একদিকে শ্রমবাজারে বিপুল কর্মক্ষম জনশক্তির আগমন, অন্যদিকে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে শ্রমিকের চাহিদা কমে যাওয়ার বিষয়টি সরকার অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করেছে এবং এর সমাধানে নানাবিধ পদক্ষেপ নিচ্ছে।

এছাড়া সরকার শিল্পখাতে কর্মসৃজনের গতি বাড়ানোর লক্ষ্যে ব্যবসা ও বিনিয়োগ পরিবেশ আধুনিকায়ন, শ্রমিকের সুরক্ষা জোরদার করা এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অধিক হারে কর্ম প্রবেশ উপযোগী আইন-বিধি, নীতি-কৌশল সংস্কারের জন্য তিন বছর মেয়াদি কার্যক্রম শুরু করেছে। চলতি অর্থবছরে ১০টি আইন-বিধি, নীতি-কৌশল প্রণয়ন অথবা সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে। আগামী দুই বছরে অবশিষ্ট সংস্কার কাজ সম্পাদন করে ক্রমবর্ধমান জনশক্তির জন্য মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে বলে বাজেট পরিকল্পনায় বলা হয়েছে। এছাড়া বিশেষ জনগোষ্ঠীর প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।