দারিদ্র্য বিমোচন এবং বৈষম্য কমাতে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রের আলোকে প্রতি বছরের মতো এবারও উপকারভোগী বাড়িয়েছে সরকার। নতুন করে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আরও ১৪ লাখ উপকারভোগী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আসছে। সব মিলিয়ে সুবিধা পাবেন প্রায় ৮৯ লাখ গরিব মানুষ। ভাতাভোগীর সংখ্যার পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে বিভিন্ন ভাতার হারও। এ জন্য বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৭৪ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। তা মোট বাজেটের ১৪ দশমিক ২১ এবং জিডিপির ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ৬৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা। গতকাল জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশকালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই প্রস্তাব করেন।
প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন শুরু করার পর অর্থমন্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেট উপস্থাপন শেষ করেন। ‘সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের’ শীর্ষক এ বাজেটের আকার ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।
বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির কার্যকারিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে সঠিক উপকারভোগী নির্বাচন নিশ্চিত করার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। এ উদ্দেশে সব কর্মসূচির এমআইএস এবং উপকারভোগীর তথ্যভা-ার প্রস্তুত এবং ভাতাভোগীদের কাছে সরাসরি কোষাগার থেকে জি-টু-পি পদ্ধতিতে অর্থ প্রেরণ করা হচ্ছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে মুক্তিযোদ্ধাদের বিদ্যমান সম্মানী ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সামাজিক সুরক্ষায় প্রস্তাবিত বরাদ্দের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ২ হাজার টাকা বৃদ্ধি করে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা করা হয়েছে, বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ৪০ লাখ থেকে উন্নিত করে ৪৪ লাখ টাকা করা হয়েছে। অন্যদিকে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত ভাতাভোগী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১৪ লাখ থেকে ১৭ লাখ, অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী গোষ্ঠীর সংখ্যা ১০ লাখ থেকে ১৫ দশমিক ৪৫ লাখ, উপকারভোগী হিজড়া গোষ্ঠীর সংখ্যা ৬ হাজার, বেঁদে ও অনগ্রসর গোষ্ঠীর সংখ্যা ৬৪ হাজার থেকে ৮৪ হাজার, দরিদ্র মায়ের জন্য মাতৃকালীন ভাতাভোগীর সংখ্যা ৭ লাখ থেকে ৭ লাখ ৭০ হাজার, কর্মজীবী ল্যাকরটটিং মাদার সহায়তার আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ ৭৫ হাজারে উন্নীত করা হয়েছে।
সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় সুবিধা দিতে নতুন করে আরও ১০ হাজার চা শ্রমিককে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। বর্তমানে ৪০ হাজার চা শ্রমিককে এ কর্মসূচির আওতায় সুবিধা দেয়া হচ্ছে। তা আগামী অর্থবছরে সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৫০ হাজারে উন্নীত করা হবে। এ জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। এছাড়া ক্যানসার, কিডনি, লিভার সিয়সিস, স্ট্রক, প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগী উপকারভোগীর সংখ্যা ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজারে উন্নীত করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে উপকারভোগী প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা। প্রতিবন্ধী উপবৃত্তি পাওয়া উপকারভোগীর সংখ্যা ৯০ হাজার হতে ১ লাখে বৃদ্ধি করে তাদের উপবৃত্তির হার নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সেখানে প্রথমিক স্তরে ৭০০ থেকে ৭৫০, মাধ্যমিকে ৭০০ থেকে ৮০০, উচ্চ মাধ্যমিকে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা করা হয়েছে।
বিগত বাজেট থেকে জানা যায়, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ৩৭৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। ২০০৫ সালে ১৩ শতাংশ পরিবার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা ভোগ করত। ২০১৬ সালে এ হার ২৮ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০১৬-১৭ সালে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১৯ হাজার ২৯১ কোটি টাকা। তা ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ২ শতাংশ। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১৭ হাজার ৮০ কোটি টাকা।
শুক্রবার, ১৪ জুন ২০১৯ , ২৯ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ১০ শাওয়াল ১৪৪০
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
দারিদ্র্য বিমোচন এবং বৈষম্য কমাতে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রের আলোকে প্রতি বছরের মতো এবারও উপকারভোগী বাড়িয়েছে সরকার। নতুন করে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আরও ১৪ লাখ উপকারভোগী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আসছে। সব মিলিয়ে সুবিধা পাবেন প্রায় ৮৯ লাখ গরিব মানুষ। ভাতাভোগীর সংখ্যার পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে বিভিন্ন ভাতার হারও। এ জন্য বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৭৪ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। তা মোট বাজেটের ১৪ দশমিক ২১ এবং জিডিপির ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ৬৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা। গতকাল জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশকালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই প্রস্তাব করেন।
প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন শুরু করার পর অর্থমন্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেট উপস্থাপন শেষ করেন। ‘সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের’ শীর্ষক এ বাজেটের আকার ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।
বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির কার্যকারিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে সঠিক উপকারভোগী নির্বাচন নিশ্চিত করার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। এ উদ্দেশে সব কর্মসূচির এমআইএস এবং উপকারভোগীর তথ্যভা-ার প্রস্তুত এবং ভাতাভোগীদের কাছে সরাসরি কোষাগার থেকে জি-টু-পি পদ্ধতিতে অর্থ প্রেরণ করা হচ্ছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে মুক্তিযোদ্ধাদের বিদ্যমান সম্মানী ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সামাজিক সুরক্ষায় প্রস্তাবিত বরাদ্দের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ২ হাজার টাকা বৃদ্ধি করে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা করা হয়েছে, বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ৪০ লাখ থেকে উন্নিত করে ৪৪ লাখ টাকা করা হয়েছে। অন্যদিকে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত ভাতাভোগী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১৪ লাখ থেকে ১৭ লাখ, অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী গোষ্ঠীর সংখ্যা ১০ লাখ থেকে ১৫ দশমিক ৪৫ লাখ, উপকারভোগী হিজড়া গোষ্ঠীর সংখ্যা ৬ হাজার, বেঁদে ও অনগ্রসর গোষ্ঠীর সংখ্যা ৬৪ হাজার থেকে ৮৪ হাজার, দরিদ্র মায়ের জন্য মাতৃকালীন ভাতাভোগীর সংখ্যা ৭ লাখ থেকে ৭ লাখ ৭০ হাজার, কর্মজীবী ল্যাকরটটিং মাদার সহায়তার আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ ৭৫ হাজারে উন্নীত করা হয়েছে।
সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় সুবিধা দিতে নতুন করে আরও ১০ হাজার চা শ্রমিককে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। বর্তমানে ৪০ হাজার চা শ্রমিককে এ কর্মসূচির আওতায় সুবিধা দেয়া হচ্ছে। তা আগামী অর্থবছরে সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৫০ হাজারে উন্নীত করা হবে। এ জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। এছাড়া ক্যানসার, কিডনি, লিভার সিয়সিস, স্ট্রক, প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগী উপকারভোগীর সংখ্যা ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজারে উন্নীত করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে উপকারভোগী প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা। প্রতিবন্ধী উপবৃত্তি পাওয়া উপকারভোগীর সংখ্যা ৯০ হাজার হতে ১ লাখে বৃদ্ধি করে তাদের উপবৃত্তির হার নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সেখানে প্রথমিক স্তরে ৭০০ থেকে ৭৫০, মাধ্যমিকে ৭০০ থেকে ৮০০, উচ্চ মাধ্যমিকে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা করা হয়েছে।
বিগত বাজেট থেকে জানা যায়, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ৩৭৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। ২০০৫ সালে ১৩ শতাংশ পরিবার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা ভোগ করত। ২০১৬ সালে এ হার ২৮ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০১৬-১৭ সালে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১৯ হাজার ২৯১ কোটি টাকা। তা ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ২ শতাংশ। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১৭ হাজার ৮০ কোটি টাকা।