বাধা পেরিয়ে তিনটি পাঠ্যবই বাজারে আসছে আগামী মাসেই

সিন্ডিকেট মুক্ত করার ঘোষণা শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর

সিন্ডিকেটের বাধা পেরিয়ে আগামী মাসেই এনসিটিবি অনুমোদিত উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের আবশ্যিক তিনটি পাঠ্যবই বাজারে আসছে। জুলাইয়ের প্রথম দিন নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে এ তিনটি বই কিনতে পারবে।

এদিকে নকল বই ঠেকাতে ও কার্যাদেশ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের বাইরে যেকোন অননুমোদিত প্রতিষ্ঠানের অবৈধ বইয়ের বিষয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। আর সরকারি বই মুদ্রণের কার্যক্রমকে সিন্ডিকেটমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রী। এনসিটিবি চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের আবশ্যিক তিনটি পাঠ্যবই হচ্ছে সাহিত্য পাঠ (গদ্য ও কবিতা), বাংলা সহপাঠ (উপন্যাস ও নাটক) এবং ইংরেজি। এবার উচ্চ মাধ্যমিকের সব বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য আবশ্যিক এ তিনটি পাঠ্যবইয়ের কার্যাদেশ পেয়েছে মেসার্স অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেস। ইতোমধ্যেই পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির চুক্তিপত্রও সম্পন্ন হয়েছে।’

শিক্ষাবর্ষের প্রথম থেকেই শিক্ষার্থীরা যাতে তাদের আবশ্যিক তিনটি সরকার অনুমোদিত বই বাজারে পায় তা নিশ্চিত করতে এনসিটিবি কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী মাসের প্রথম দিনই শুরু হচ্চে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের নতুন শিক্ষা বর্ষের ক্লাস।’

এনসিটিবি সূত্র জানায়, গত কয়েক বছর ধরেই নোট-গাইড বই ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট একাদশ শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকের কাজ কৌশলে বাগিয়ে নিচ্ছিল। এতে প্রতি বছরই সরকার ৫/৭ কোটি টাকার ‘রয়্যালিটি’ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এছাড়াও এই সিন্ডিকেট প্রতিবারই সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বাজারে বিক্রি করত এসব বই। কিছু অসৎ ব্যবসায়ীর কারণে ছাত্রছাত্রীদের সরকার নির্ধারিত মূল্য থেকে অনেক বেশি মূল্য দিয়ে বই কিনতে হতো। তবে এবার নতুন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরীর সরাসরি তদারকিতে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক সিন্ডিকেটমুক্ত করার উদ্যোগ নেয় এনসিটিবি। লক্ষ্য বাস্তবায়নে এবার কোন অসাধু অযোগ্য ভূইফোঁর প্রতিষ্ঠান যাতে কাজ না পায় সেভাবেই নেয়া হয়েছে পদক্ষেপ।

এনসিটিবির কর্মকর্তারা অভিযোগ করছেন, সিন্ডিকেট এসসিটিবিকে জিম্মি করতে চায়। এমনকি সিন্ডিকেট হুমকি দেয় তাদের বাইরে কাউকে ১টি কাজও দিলে তারা অন্য কোন কাজও করবে না এবং তারা রয়্যালিটি দিতে পারবে না। এনসিটিবি বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে। তবে সিন্ডিকেট সক্রিয় থাকলেও এখন পর্যন্ত তারা সফল হতে পারেনি।

প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা জানান, ‘এনসিটিবি’র সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের তিনটি পাঠ্যপুস্তকের একক প্রতিষ্ঠান হিসাবে বইয়ের মুদ্রণ, বাঁধাই ও বাজারজাতকরণের কাজ করবে অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেস। নতুন শিক্ষাবর্ষের বইয়ে আছে অনেক নতুনত্ব। এসেছে অনেক পরিবর্তন। সদ্য এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীরা যাতে পুরনো বই কিনে প্রতারিত না হয় সেদিকেও নজর রাখছে সরকার। চুক্তিতেও তাই স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেসের নামে বরাদ্ধকৃত পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই, বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, গোষ্ঠী কিংবা সমিতি বাধা দিলে তার বিরুদ্ধে সরকার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। চুক্তির ১১ নং শর্তে বলা হয়েছে, চুক্তিকৃত বই নকলকারী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, বিক্রতা, প্রেস, বাইন্ডিং কারখানাকে জাতীয় স্বার্থ বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত বলে বোর্ড চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যাতে সঠিক বইটি কিনতে পারে ন্যায্যমূল্যে তা নিশ্চিত করতে যা যা করা প্রয়োজন আমরা তাই করব। আমরা গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিঘ্রই দেশবাসীতে সকল তথ্য জানাবো। কেউ যাতে নির্ধারিত বইয়ের বাইরে কোন নকল বা অননুমোদিত প্রতিষ্ঠানের বই কিনে প্রতারিত না হন সেজন্য আমরা শতর্ক আছি ও থাকবো।’

সিন্ডিকেট বাজারে নকল বই বেশি দাবে ছেড়ে দিলে কি পদক্ষেপ নেয়া হবে- জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘এ ধরনের যে কোন অপরাধ দেখার জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। সব জেলার ডিসিসহ (জেলা প্রশাসক) সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে আমরা জানিয়ে দেব তথ্য। এছাড়া আমরা নিজেরাও সতর্ক আছি। কোন ধরনের অভিযোগ পেলেই দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে।’

রবিবার, ১৬ জুন ২০১৯ , ২ আষাঢ় ১৪২৫, ১২ শাওয়াল ১৪৪০

ফলোআপ : উচ্চ মাধ্যমিক

বাধা পেরিয়ে তিনটি পাঠ্যবই বাজারে আসছে আগামী মাসেই

সিন্ডিকেট মুক্ত করার ঘোষণা শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সিন্ডিকেটের বাধা পেরিয়ে আগামী মাসেই এনসিটিবি অনুমোদিত উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের আবশ্যিক তিনটি পাঠ্যবই বাজারে আসছে। জুলাইয়ের প্রথম দিন নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে এ তিনটি বই কিনতে পারবে।

এদিকে নকল বই ঠেকাতে ও কার্যাদেশ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের বাইরে যেকোন অননুমোদিত প্রতিষ্ঠানের অবৈধ বইয়ের বিষয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। আর সরকারি বই মুদ্রণের কার্যক্রমকে সিন্ডিকেটমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রী। এনসিটিবি চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের আবশ্যিক তিনটি পাঠ্যবই হচ্ছে সাহিত্য পাঠ (গদ্য ও কবিতা), বাংলা সহপাঠ (উপন্যাস ও নাটক) এবং ইংরেজি। এবার উচ্চ মাধ্যমিকের সব বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য আবশ্যিক এ তিনটি পাঠ্যবইয়ের কার্যাদেশ পেয়েছে মেসার্স অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেস। ইতোমধ্যেই পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির চুক্তিপত্রও সম্পন্ন হয়েছে।’

শিক্ষাবর্ষের প্রথম থেকেই শিক্ষার্থীরা যাতে তাদের আবশ্যিক তিনটি সরকার অনুমোদিত বই বাজারে পায় তা নিশ্চিত করতে এনসিটিবি কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী মাসের প্রথম দিনই শুরু হচ্চে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের নতুন শিক্ষা বর্ষের ক্লাস।’

এনসিটিবি সূত্র জানায়, গত কয়েক বছর ধরেই নোট-গাইড বই ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট একাদশ শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকের কাজ কৌশলে বাগিয়ে নিচ্ছিল। এতে প্রতি বছরই সরকার ৫/৭ কোটি টাকার ‘রয়্যালিটি’ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এছাড়াও এই সিন্ডিকেট প্রতিবারই সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বাজারে বিক্রি করত এসব বই। কিছু অসৎ ব্যবসায়ীর কারণে ছাত্রছাত্রীদের সরকার নির্ধারিত মূল্য থেকে অনেক বেশি মূল্য দিয়ে বই কিনতে হতো। তবে এবার নতুন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরীর সরাসরি তদারকিতে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক সিন্ডিকেটমুক্ত করার উদ্যোগ নেয় এনসিটিবি। লক্ষ্য বাস্তবায়নে এবার কোন অসাধু অযোগ্য ভূইফোঁর প্রতিষ্ঠান যাতে কাজ না পায় সেভাবেই নেয়া হয়েছে পদক্ষেপ।

এনসিটিবির কর্মকর্তারা অভিযোগ করছেন, সিন্ডিকেট এসসিটিবিকে জিম্মি করতে চায়। এমনকি সিন্ডিকেট হুমকি দেয় তাদের বাইরে কাউকে ১টি কাজও দিলে তারা অন্য কোন কাজও করবে না এবং তারা রয়্যালিটি দিতে পারবে না। এনসিটিবি বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে। তবে সিন্ডিকেট সক্রিয় থাকলেও এখন পর্যন্ত তারা সফল হতে পারেনি।

প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা জানান, ‘এনসিটিবি’র সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের তিনটি পাঠ্যপুস্তকের একক প্রতিষ্ঠান হিসাবে বইয়ের মুদ্রণ, বাঁধাই ও বাজারজাতকরণের কাজ করবে অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেস। নতুন শিক্ষাবর্ষের বইয়ে আছে অনেক নতুনত্ব। এসেছে অনেক পরিবর্তন। সদ্য এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীরা যাতে পুরনো বই কিনে প্রতারিত না হয় সেদিকেও নজর রাখছে সরকার। চুক্তিতেও তাই স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেসের নামে বরাদ্ধকৃত পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই, বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, গোষ্ঠী কিংবা সমিতি বাধা দিলে তার বিরুদ্ধে সরকার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। চুক্তির ১১ নং শর্তে বলা হয়েছে, চুক্তিকৃত বই নকলকারী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, বিক্রতা, প্রেস, বাইন্ডিং কারখানাকে জাতীয় স্বার্থ বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত বলে বোর্ড চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যাতে সঠিক বইটি কিনতে পারে ন্যায্যমূল্যে তা নিশ্চিত করতে যা যা করা প্রয়োজন আমরা তাই করব। আমরা গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিঘ্রই দেশবাসীতে সকল তথ্য জানাবো। কেউ যাতে নির্ধারিত বইয়ের বাইরে কোন নকল বা অননুমোদিত প্রতিষ্ঠানের বই কিনে প্রতারিত না হন সেজন্য আমরা শতর্ক আছি ও থাকবো।’

সিন্ডিকেট বাজারে নকল বই বেশি দাবে ছেড়ে দিলে কি পদক্ষেপ নেয়া হবে- জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘এ ধরনের যে কোন অপরাধ দেখার জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। সব জেলার ডিসিসহ (জেলা প্রশাসক) সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে আমরা জানিয়ে দেব তথ্য। এছাড়া আমরা নিজেরাও সতর্ক আছি। কোন ধরনের অভিযোগ পেলেই দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে।’