গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর স্বার্থ রক্ষার বাজেট

গণফোরাম

আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জনগণের নয় বরং গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর স্বার্থ রক্ষা করবে বলে মন্তব্য করেছে গণফোরাম। তাই প্রস্তাবিত এই বাজেট প্রত্যাখ্যান করেছে দলটি। সংসদে বাজেট প্রস্তাবের দুদিন পর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিক্রিয়া জানায় দলটি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার গত বৃহস্পতিবার ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট সংসদে প্রস্তাব করেছে। ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার এই বাজেট আগেরটির চেয়ে ১৮ শতাংশ বড়।

প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটকে হতাশাজনক মন্তব্য করে গণফোরাম বলছে, বিগত বছরগুলোয় সামষ্টিক অর্থনীতির নীতির ফলে সার্বিক অর্থনীতিতে সৃষ্ট বিপদ ও ঝুঁকি সম্পর্কে এবারের বাজেটে অজ্ঞতা প্রকাশ পেয়েছে। এ বাজেটের ফলে অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এটা জনগণের বাজেট নয় উল্লেখ করে গণফোরাম একে প্রত্যাখ্যান করেছে। গণফোরাম মনে করে, সরকার একে ‘স্মার্ট’ বাজেট বললেও এটি ‘চটকদার’ বাজেট। অর্থনৈতিক বৈষম্য, দারিদ্র্য ও বেকারত্বের মতো সমস্যা মোকাবিলায় কোন উদ্যোগ নেই। দলটি অভিযোগ করে বলেছে, জনগণের স্বার্থকে উপেক্ষা করে শক্তিশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির স্বার্থ হাসিলের বাজেট এটি

ভুল মুদ্রাবিনিময় হার নীতি, ধান-চাল ক্রয়ে অব্যবস্থাপনা, ব্যাংকিং খাতে মন্দ প্রভাব, রাজস্ব আদায় কমে গিয়ে অর্থনীতিতে ভারসাম্যহীনতার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানায় গণফোরাম। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, কৃষকদের প্রতি সরকারের দয়ামায়া কম, কিন্তু ঋণখেলাপিদের সরকার পুরস্কৃত করেছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে আর্থিক বরাদ্দ অপর্যাপ্ত মনে হলেও গণফোরাম বলছে, দক্ষতার সঙ্গে সে অর্থ ব্যয় করলে সেবার মান ও পরিধি বাড়ানো সম্ভব। তারা অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় কমানোর দাবি জানায়। সরকারি ব্যাংকগুলোতে পুনঃঅর্থায়নে বাজেট বরাদ্দের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে গণফোরাম বাতিলের দাবি জানায়। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের জন্য বরাদ্দেরও সমালোচনা করে গণফোরাম বলে, এ অর্থ অপব্যয় হবে এবং জনমনে প্রশ্ন তৈরি হবে। প্রকৃত রাজস্ব সংগ্রহ পরিস্থিতি দুর্বল বলে মনে করে গণফোরাম। তারা বলে, রাজস্ব প্রশাসনে সংস্কার প্রয়োজন।

বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া বলেন, এটা জনগণের বাজেট নয়, এটা কয়েকটা শক্তিশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠির জন্য। এই বাজেট জনগণের ক্ষতি করবে এবং দেশকে খুব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নিয়ে যাবে বলে আমরা আশঙ্কা প্রকাশ করছি। সংবাদ সম্মেলনে দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল বাজেট নিয়ে গণফোরামের বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য অর্থনীতির ছাত্র রেজা কিবরিয়াকে দায়িত্ব দেন। আওয়ামী লীগের ১৯৯৬ সালের সরকারের অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে এবার নির্বাচনের আগে গণফোরামে যোগ দেয়ার পর এখন দলটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।

রেজা কিবরিয়া বলেন, এই বাজেট একটি অদূরদর্শী ও দুর্বলভাবে প্রণীত, যাতে দেশের প্রকৃত সমস্যা মোকাবিলার কোন চেষ্টা নেই। বর্তমানে দেশকে যারা লুটেপুটে খাচ্ছে এবং যারা অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করছে, বাজেটটি তাদের সুবিধার জন্যই তৈরি করা হয়েছে। এই সরকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না, এই সংসদ নির্বাচিত না। এই প্রতিনিধিত্বহীন ও অনির্বাচিত সরকারের বাজেট যে আমাদের নাগরিকদের ইচ্ছার প্রতিফলন নয় এবং এটি যে দেশের প্রয়োজনীয়তা পূরণের লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়নি- এটাতে অবাক হওয়ার কোন কারণ নেই। বাজেট নিয়ে সমালোচনার করতে গিয়ে ‘অনতিবিলম্বে দেশে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানান গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, বাজেটে যে ধরনের কর বসাচ্ছে, যে ধরনের ট্যারিফ বসাচ্ছে, ধরেন, আমদানি করা গুঁড়া দুধ, এটা জনগণের ওপর ট্যাক্স বসানো। জনগণের পকেট কেটে কিছু গোষ্ঠীকে সুবিধা দেয়ার চেষ্টা এই বাজেটে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন রেজা কিবরিয়া।

ড. কামাল হোসেন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণের মালিকানা নেই। সে জন্য বর্তমান বাজেটটি আমরা সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করছি।

‘গুটিকয়েক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী’র জন্য বাজেট কোন যুক্তিতে বলছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে রেজা কিবরিয়া বলেন, আপনার মনে আছে, পাকিস্তান আমলে কত পরিবার ছিল? আপনি দেখুন পাওয়ার সেক্টরে যে কনট্রাক্টগুলো হয়েছে, যে ধরনের কট্রাক্ট সই করেছে তার প্রত্যেকটির জবাব সরকারকে দিতে হবে একদিন। মন্দঋণ পুনঃসংজ্ঞায়িতকরণে সরকারের নতুন নীতিমালা, অনুৎপাদনশীল ব্যয়, রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা, কৃষি, স্বাস্থ্য ও শিল্প খাতে স্বল্প বরাদ্দ নিয়ে সরকারের সমালোচনা করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে গণফোরাম নেতা আবু সাইয়িদ, সুব্রত চৌধুরী, মহসিন রশিদ, মোশতাক আহমেদ, আমিন আহমেদ আফসারী, লতিফুল বারী হামিম উপস্থিত ছিলেন।

রবিবার, ১৬ জুন ২০১৯ , ২ আষাঢ় ১৪২৫, ১২ শাওয়াল ১৪৪০

গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর স্বার্থ রক্ষার বাজেট

গণফোরাম

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জনগণের নয় বরং গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর স্বার্থ রক্ষা করবে বলে মন্তব্য করেছে গণফোরাম। তাই প্রস্তাবিত এই বাজেট প্রত্যাখ্যান করেছে দলটি। সংসদে বাজেট প্রস্তাবের দুদিন পর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিক্রিয়া জানায় দলটি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার গত বৃহস্পতিবার ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট সংসদে প্রস্তাব করেছে। ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার এই বাজেট আগেরটির চেয়ে ১৮ শতাংশ বড়।

প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটকে হতাশাজনক মন্তব্য করে গণফোরাম বলছে, বিগত বছরগুলোয় সামষ্টিক অর্থনীতির নীতির ফলে সার্বিক অর্থনীতিতে সৃষ্ট বিপদ ও ঝুঁকি সম্পর্কে এবারের বাজেটে অজ্ঞতা প্রকাশ পেয়েছে। এ বাজেটের ফলে অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এটা জনগণের বাজেট নয় উল্লেখ করে গণফোরাম একে প্রত্যাখ্যান করেছে। গণফোরাম মনে করে, সরকার একে ‘স্মার্ট’ বাজেট বললেও এটি ‘চটকদার’ বাজেট। অর্থনৈতিক বৈষম্য, দারিদ্র্য ও বেকারত্বের মতো সমস্যা মোকাবিলায় কোন উদ্যোগ নেই। দলটি অভিযোগ করে বলেছে, জনগণের স্বার্থকে উপেক্ষা করে শক্তিশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির স্বার্থ হাসিলের বাজেট এটি

ভুল মুদ্রাবিনিময় হার নীতি, ধান-চাল ক্রয়ে অব্যবস্থাপনা, ব্যাংকিং খাতে মন্দ প্রভাব, রাজস্ব আদায় কমে গিয়ে অর্থনীতিতে ভারসাম্যহীনতার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানায় গণফোরাম। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, কৃষকদের প্রতি সরকারের দয়ামায়া কম, কিন্তু ঋণখেলাপিদের সরকার পুরস্কৃত করেছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে আর্থিক বরাদ্দ অপর্যাপ্ত মনে হলেও গণফোরাম বলছে, দক্ষতার সঙ্গে সে অর্থ ব্যয় করলে সেবার মান ও পরিধি বাড়ানো সম্ভব। তারা অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় কমানোর দাবি জানায়। সরকারি ব্যাংকগুলোতে পুনঃঅর্থায়নে বাজেট বরাদ্দের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে গণফোরাম বাতিলের দাবি জানায়। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের জন্য বরাদ্দেরও সমালোচনা করে গণফোরাম বলে, এ অর্থ অপব্যয় হবে এবং জনমনে প্রশ্ন তৈরি হবে। প্রকৃত রাজস্ব সংগ্রহ পরিস্থিতি দুর্বল বলে মনে করে গণফোরাম। তারা বলে, রাজস্ব প্রশাসনে সংস্কার প্রয়োজন।

বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া বলেন, এটা জনগণের বাজেট নয়, এটা কয়েকটা শক্তিশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠির জন্য। এই বাজেট জনগণের ক্ষতি করবে এবং দেশকে খুব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নিয়ে যাবে বলে আমরা আশঙ্কা প্রকাশ করছি। সংবাদ সম্মেলনে দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল বাজেট নিয়ে গণফোরামের বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য অর্থনীতির ছাত্র রেজা কিবরিয়াকে দায়িত্ব দেন। আওয়ামী লীগের ১৯৯৬ সালের সরকারের অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে এবার নির্বাচনের আগে গণফোরামে যোগ দেয়ার পর এখন দলটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।

রেজা কিবরিয়া বলেন, এই বাজেট একটি অদূরদর্শী ও দুর্বলভাবে প্রণীত, যাতে দেশের প্রকৃত সমস্যা মোকাবিলার কোন চেষ্টা নেই। বর্তমানে দেশকে যারা লুটেপুটে খাচ্ছে এবং যারা অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করছে, বাজেটটি তাদের সুবিধার জন্যই তৈরি করা হয়েছে। এই সরকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না, এই সংসদ নির্বাচিত না। এই প্রতিনিধিত্বহীন ও অনির্বাচিত সরকারের বাজেট যে আমাদের নাগরিকদের ইচ্ছার প্রতিফলন নয় এবং এটি যে দেশের প্রয়োজনীয়তা পূরণের লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়নি- এটাতে অবাক হওয়ার কোন কারণ নেই। বাজেট নিয়ে সমালোচনার করতে গিয়ে ‘অনতিবিলম্বে দেশে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানান গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, বাজেটে যে ধরনের কর বসাচ্ছে, যে ধরনের ট্যারিফ বসাচ্ছে, ধরেন, আমদানি করা গুঁড়া দুধ, এটা জনগণের ওপর ট্যাক্স বসানো। জনগণের পকেট কেটে কিছু গোষ্ঠীকে সুবিধা দেয়ার চেষ্টা এই বাজেটে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন রেজা কিবরিয়া।

ড. কামাল হোসেন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণের মালিকানা নেই। সে জন্য বর্তমান বাজেটটি আমরা সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করছি।

‘গুটিকয়েক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী’র জন্য বাজেট কোন যুক্তিতে বলছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে রেজা কিবরিয়া বলেন, আপনার মনে আছে, পাকিস্তান আমলে কত পরিবার ছিল? আপনি দেখুন পাওয়ার সেক্টরে যে কনট্রাক্টগুলো হয়েছে, যে ধরনের কট্রাক্ট সই করেছে তার প্রত্যেকটির জবাব সরকারকে দিতে হবে একদিন। মন্দঋণ পুনঃসংজ্ঞায়িতকরণে সরকারের নতুন নীতিমালা, অনুৎপাদনশীল ব্যয়, রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা, কৃষি, স্বাস্থ্য ও শিল্প খাতে স্বল্প বরাদ্দ নিয়ে সরকারের সমালোচনা করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে গণফোরাম নেতা আবু সাইয়িদ, সুব্রত চৌধুরী, মহসিন রশিদ, মোশতাক আহমেদ, আমিন আহমেদ আফসারী, লতিফুল বারী হামিম উপস্থিত ছিলেন।