বিভিন্ন জাতীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত নিউজ পেপার ওনারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) ‘নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের সুপারিশ কতটা বাস্তব?’ শীর্ষক বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) গতকাল একটি বিবৃতি দিয়েছে। বিএফইউজে সভাপতি মোল্লা জালাল, মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ডিইউজে সভাপতি আবু জাফর সূর্য ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরীর দেয়া এ যৌথ বিবৃতিতে বলেন, নিউজ পেপার ওনারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) বিবৃতিটি সাংবাদিক সমাজকে দারুণভাবে মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন করেছে। সহকর্মী ও সহযোগীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে মালিক পক্ষের এ ধরনের ধারণা পোষণ করে দেয়া বিবৃতি বিএফইউজে- বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) কাছে অগ্রহণযোগ্য, অবাস্তব, প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করার অপপ্রয়াস ও নৈতিকতা বিবর্জিত বলে বিবেচিত হয়েছে।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, মালিক পক্ষের প্রতিষ্ঠানকে নিজের প্রতিষ্ঠান মনে করে সবসময় কাজ করে থাকেন সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীরা। সেখানে ৯ম মজুরি বোর্ড ঘোষণার চূড়ান্ত সময়ে গণমাধ্যমকর্মীদের রুটি-রুজি ও মর্যাদার জায়গাটিকে মালিক পক্ষ যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তা সংবাদপত্র শিল্পের জন্য নতুন সংকট তৈরি করবে। মালিকের সঙ্গে শ্রমিক তথা গণমাধ্যমকর্মীদের দূরত্ব ও বৈরী সম্পর্ক সৃষ্টি করবে। যার প্রভাব পুরো শিল্পকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
নোয়াবের দেয়া বিবৃতিতে ‘সরকারি বেতন স্কেলের অধীনে সেরা ছাত্ররা একজন সিভিল ক্যাডার শুরুতে গ্রেড-৯ এ যোগদান করেন ৩৫,৬০০ টাকা বেতনে।’-এটি সাংবাদিকদের সম্পর্কে অমর্যাদাকর বক্তব্য বলে মনে করে বিএফইউজে ও ডিইউজে। অংশটি পড়ে মনে হয়েছে সাংবাদিকদের মধ্যে সেরা ছাত্র নেই। ক্যাডাররাই একমাত্র সেরা। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী অসংখ্য সেরা ছাত্র সাংবাদিকতা পেশায় রয়েছেন।
বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতারা বিবৃতিতে বলেন, ২০১৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সরকার ৮ম মজুরি বোর্ড রোঁয়েদাদ ঘোষণা করে গেজেট প্রজ্ঞাপন জারি করলেও সংবাদপত্র মালিকরা নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছেন। ২০১৮ সালে সরকার ৯ম মজুরি বোর্ড ৪৫ শতাংশ হারে মহার্ঘ্য ভাতা প্রদানের প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও সংবাদপত্র মালিকরা সেটিকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে প্রায় একবছর ধরে গণমাধ্যমকর্মীদের মহার্ঘ্য ভাতা পরিশোধ না করে বঞ্চিত করছেন। যেটি বেআইনি। ৮ম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডে সাংবাদিক-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে ২৫০% শতাংশ বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছিল। মালিক পক্ষের চাপে সেসময় ৭৫% বেতন বৃদ্ধি করা হয়। ৯ম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড ৮৫% বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। অথচ সভায় গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য ২০০% বেতন-ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছিল। একইসঙ্গে মালিকদের প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিতের বিষয়টিও আমলে নেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। বিবৃতির একটি অংশে বলা বলা হয়েছে ‘নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান এককভাবে মজুরি বোর্ডের রোঁয়েদাদ চূড়ান্ত করে এ সংক্রান্ত সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন।...সপ্তম ও অষ্টম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডও এভাবে একতরফাভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল।’ যা সম্পূর্ণ অসত্য। ৯ম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের সভায় মালিক পক্ষের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ৮ম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডে নোয়াবের নেতা মাহফুজ আনাম, মতিউর রহমান, এনায়েত উল্লাহ খান, মতিউর রহমান চৌধুরী, এম এ মালেক, এ এস এম শহীদুল্লাহ খান মালিক প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন। ধারাবাহিকভাবে তারা বৈঠক করেছেন। মালিক পক্ষ লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন এবং বিভিন্ন অজুহাতে ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নে বিরোধিতা করেছিলেন। মালিকদের সুপারিশের ভিত্তিতে সার্কুলেশন এবং গ্রস আয়ের ভিত্তিতে পত্রিকার ক্যাটাগরি নির্ধারণ করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানের কোন জনবল কাঠামো এবং ভৌত অবকাঠামোর কথা সেসময় উল্লেখ করা হয়নি। যা ছিল বেআইনি। ৮ম মজুরি বোর্ড বেতন কাঠামো ৫টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হলেও নোয়াব বিবৃতিতে শুধুমাত্র ‘ক’ ক্যাটাগরির হিসাব দিয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীদের প্রারম্ভিক গ্রেড-৩ বলে যে তথ্য দেয়া হয়েছে তাও সঠিক নয়। গ্রেড-৩ হচ্ছে স্টাফ রিপোর্টারের গ্রেড। ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী প্রারম্ভিক বেতন গ্রেড হচ্ছে-৪। ‘ক’ ক্যাটাগরির একটি পত্রিকায় গ্রেড ৪-এর বেতন স্কেল হচ্ছে ১২,৬০০ টাকা, আর ‘ঙ’ গ্রেডের পত্রিকায় ৫,২৫০ টাকা। নোয়াব বা সংবাদপত্র মালিকরা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন, সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ও পেশা। সুতরাং এ বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান বা পেশার জন্য বিশেষভাবেই রাষ্ট্রকে ভাবতে হয়। সেখানে সরকারি চাকরির কোন গ্রেডের সঙ্গে এর তুলনা করা মানেই গণমাধ্যমকর্মীদের মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন তোলা। যা কখনোই মালিক পক্ষের কাছ থেকে কাম্য নয়। বিশেষায়িত পেশার কারণে অন্য কোন পেশার গ্রেডিংয়ের সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের গ্রেডের তুলনা চলে না বা এর সুবিধাদি নিয়েও প্রশ্ন তোলা অবান্তর।
নোয়াবের বিবৃতিতে আয়কর নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে সেটি ৮ম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডেও তোলা হয়েছিল। ৫ম মজুরি বোর্ড রোঁয়েদাদে আয়কর সংবাদপত্র মালিক পক্ষ কর্তৃক প্রদেয় হবে উল্লেখ ছিল এবং প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষ বরাবরই আয়কর প্রদানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ৭ম মজুরি বোর্ডের সুপারিশমালায়ও তা উল্লেখ ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ৮ম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের রোঁয়েদাদে আয়কর প্রদানের দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের উপর ন্যস্ত করা হয়। এছাড়া হাইকোর্টে দায়ের করা রিট পিটিশন ১২০৩/১৯৯১ মামলায়ও নির্দেশনা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। পত্রিকা মালিকদের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মালিকপক্ষের দায়েরকৃত আপিল মামলায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। সুতরাং আদালতে বিচারাধীন বিষয়ে প্রশ্ন তুলে কি আদালত অবমাননার কাজটি করল না নোয়াব? নোয়াবের বিবৃতিতে ৯ম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের সুপারিশে বেতন-ভাতা বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে ৮ম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডে বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ৭৫%। এ কারণে গুটি কয়েক পত্রিকা ছাড়া অন্যরা ৮ম মজুরি বোর্ড বাস্তবায়ন করতে পারেনি।’ প্রশ্ন হলো বিষয়টি জানার পর নোয়াব কী পদক্ষেপ নিয়েছে? নোয়াব কি শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভাববে, নাকি গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি দায়িত্ব পালনও তাদের নৈতিকতার মধ্যে পড়ে? ৯ম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের বিরুদ্ধে তথা গণমাধ্যমকর্মীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে তারা যে বিরোধীতা করছে সেটি না করে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে যারা নিজেদের আখের গুছিয়েছে সেই মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে তারা অবস্থান নিলে মনে হতো যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছেন। সেটি তারা করেননি কেন? বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩) বিধান অনুযায়ী দেশের সংবাদপত্র এবং সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমকর্মীরা পরিচালিত হন। আইনের ১৪৩ ধারা অনুযায়ী সরকার মজুরি বোর্ড গঠন এবং ১৪৫ ধারা অনুযায়ী বোর্ড তাদের সিদ্ধান্ত প্রকাশ করে। ১৪৬ ধারায় অন্তর্বর্তীকালীন মজুরি ঘোষণা করা হয়। ১৪৮ ধারা অনুযায়ী ১৪৫ ধারার অধীন ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি প্রদানের বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু নোয়াব সদস্যরা এসব আইন দীর্ঘদিন ধরে লঙ্ঘন করে আসছেন। নোয়াবের সদস্য এমন অনেক পত্রিকা মালিকসহ দেশের খ্যাতিমান সংবাদপত্র মালিক মিথ্যা তথ্য দিয়ে ৮ম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের সর্বোচ্চ সুবিধাদি নিলেও কর্মীদের প্রাপ্য সুবিধাদি দেননি বা দেন না। এ বিষয়ে নোয়াবের স্পষ্ট ভূমিকা থাকা কি কাক্সিক্ষত ছিল না?
বিএফইউজে ও ডিইউজে মনে করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে যেসব পত্রিকা সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছে তার বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। নোয়াবের বিবৃতিতে যে সব তথ্য ও পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো আমলে নিয়ে ৮ম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হচ্ছে কি-না তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষী মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। শ্রম আইনের ২ (১০) ধারার কথা উল্লেখ করে নোয়াব বলেছে, ‘প্রতি বছর চাকরির জন্য একটি গ্র্যাচুইটির বিধান আছে।...সেখানে মজুরি বোর্ডে প্রতি বছরের জন্য ২টি গ্র্যাচুইটির বিধান একটি অবাস্তব আর্থিক চাপ।’ এছাড়া প্রতি ৩ বছর পরপর এক মাসের মোট বেতন ও ৩০ দিনের বিনোদন ছুটির বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে। নোয়াবের সঙ্গে যুক্তরা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংবাদপত্রের কর্মপ্রকৃতির তুলনা চলে না। বিশেষায়িত জরুরি পর্যায়ের পেশার কারণে সংবাদপত্রে কর্মরতরা সার্বক্ষণিক কর্মকা-ে বা কর্ম অপেক্ষায় থাকেন। যেটি বাংলাদেশে বা পৃথিবীতে আর ৪টি পেশায় নিয়োজিতদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি অন্য সেক্টরে কর্মরতরা ছুটি বা অবসর গ্রহণ অথবা অন্য কারণে যে সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন সংবাদপত্রে তার অনেকাংশই নেই। সে কারণে বছরে দুটি গ্র্যাচুইটি এবং এক মাসের বেতনসহ বিনোদন ছুটি অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত। মীমাংসিত বিষয়টি নিয়ে নতুনভাবে বিতর্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্য রহস্যজনক। নোয়াবের এই বিবৃতি গণমাধ্যমকর্মীদর বঞ্চিত করে সংবাদপত্র মালিকদের অধিক সুবিধা লাভের আশায় এমনটি উল্লেখ করে বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতারা বলেন, সংবাদপত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পর নোয়াবের সদস্যরা শিল্প মালিক হিসেবে সরকারের কাছ থেকে কী কী সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। গণমাধ্যমকর্মী আর সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের চাকরির ধরন একরকম নয় উল্লেখ করে নেতারা বলেন, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে দুই দিন ছুটি থাকলেও গণমাধ্যমকর্মীরা তা পান না। এমনকি সংবাদপত্রের জন্য নির্ধারিত ছুটির দিনেও তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। বিনিময়ে প্রাপ্য তেমন নেই বললেই চলে। সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও তাদের সমস্যা-সংকটে ন্যায্য পাওনাটুকু থেকেও বঞ্চিত হন। অসংখ্য সংবাদপত্রে নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট, গ্রুপ ইন্স্যুরেন্সসহ শ্রম আইন ও মজুরি বোর্ড অনুযায়ী অন্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে না। বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতারা বলেন, একজন সাংবাদিককে নানাভাবে প্রশিক্ষিত এবং বহুমুখী দায়িত্ব পালন করতে হয়। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা অন্য কোন শিল্প ও পেশার মতো নয়। সেটি মালিকরা নিজেরাও জানেন। তারা বলেন, যেকোন শিল্প প্রতিষ্ঠান রুগ্ন হয় তার অব্যবস্থাপনা অদক্ষতা এবং স্বেচ্ছাচারিতার কারণে। এর দায়-দায়িত্ব সরকার বা সংশ্লিষ্ট শ্রমিক-কর্মচারী নয়, পরিচালকদের উপরই বর্তায়। সেটি আমলে না নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের বেতন-ভাতা ও সুবিধাদি নিয়ে প্রশ্ন তোলা গর্হিত কাজ। মনে রাখতে হবে সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীরা বিপণন কর্মী নন। সুতরাং কোন প্রতিষ্ঠানের লাভ-লোকসানের সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মী তথা সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীদের কোন সম্পর্ক নেই। নেতারা বলেন, সংবাদপত্র শিল্পের উৎকর্ষ ও সাংবাদিক শ্রমিক-কর্মচারীদের যথাযথ কল্যাণে নোয়াব বা মালিকপক্ষ সরকারের কাছ থেকে আরও সুযোগ-সুবিধা পেলে বিএফইউজে ও ডিইউজের কোন আপত্তি নেই। তবে মজুরি বোর্ড ঘোষণার সূত্র ধরে সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারী ছাঁটাই করা হলে বা তাদের ন্যায্য সুবিধা বঞ্চিত করা হলে অবশ্যই তা মেনে নেয়া হবে না। প্রয়োজনে গণমাধ্যমকর্মী তথা সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।
রবিবার, ১৬ জুন ২০১৯ , ২ আষাঢ় ১৪২৫, ১২ শাওয়াল ১৪৪০
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
বিভিন্ন জাতীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত নিউজ পেপার ওনারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) ‘নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের সুপারিশ কতটা বাস্তব?’ শীর্ষক বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) গতকাল একটি বিবৃতি দিয়েছে। বিএফইউজে সভাপতি মোল্লা জালাল, মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ডিইউজে সভাপতি আবু জাফর সূর্য ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরীর দেয়া এ যৌথ বিবৃতিতে বলেন, নিউজ পেপার ওনারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) বিবৃতিটি সাংবাদিক সমাজকে দারুণভাবে মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন করেছে। সহকর্মী ও সহযোগীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে মালিক পক্ষের এ ধরনের ধারণা পোষণ করে দেয়া বিবৃতি বিএফইউজে- বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) কাছে অগ্রহণযোগ্য, অবাস্তব, প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করার অপপ্রয়াস ও নৈতিকতা বিবর্জিত বলে বিবেচিত হয়েছে।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, মালিক পক্ষের প্রতিষ্ঠানকে নিজের প্রতিষ্ঠান মনে করে সবসময় কাজ করে থাকেন সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীরা। সেখানে ৯ম মজুরি বোর্ড ঘোষণার চূড়ান্ত সময়ে গণমাধ্যমকর্মীদের রুটি-রুজি ও মর্যাদার জায়গাটিকে মালিক পক্ষ যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তা সংবাদপত্র শিল্পের জন্য নতুন সংকট তৈরি করবে। মালিকের সঙ্গে শ্রমিক তথা গণমাধ্যমকর্মীদের দূরত্ব ও বৈরী সম্পর্ক সৃষ্টি করবে। যার প্রভাব পুরো শিল্পকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
নোয়াবের দেয়া বিবৃতিতে ‘সরকারি বেতন স্কেলের অধীনে সেরা ছাত্ররা একজন সিভিল ক্যাডার শুরুতে গ্রেড-৯ এ যোগদান করেন ৩৫,৬০০ টাকা বেতনে।’-এটি সাংবাদিকদের সম্পর্কে অমর্যাদাকর বক্তব্য বলে মনে করে বিএফইউজে ও ডিইউজে। অংশটি পড়ে মনে হয়েছে সাংবাদিকদের মধ্যে সেরা ছাত্র নেই। ক্যাডাররাই একমাত্র সেরা। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী অসংখ্য সেরা ছাত্র সাংবাদিকতা পেশায় রয়েছেন।
বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতারা বিবৃতিতে বলেন, ২০১৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সরকার ৮ম মজুরি বোর্ড রোঁয়েদাদ ঘোষণা করে গেজেট প্রজ্ঞাপন জারি করলেও সংবাদপত্র মালিকরা নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছেন। ২০১৮ সালে সরকার ৯ম মজুরি বোর্ড ৪৫ শতাংশ হারে মহার্ঘ্য ভাতা প্রদানের প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও সংবাদপত্র মালিকরা সেটিকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে প্রায় একবছর ধরে গণমাধ্যমকর্মীদের মহার্ঘ্য ভাতা পরিশোধ না করে বঞ্চিত করছেন। যেটি বেআইনি। ৮ম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডে সাংবাদিক-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে ২৫০% শতাংশ বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছিল। মালিক পক্ষের চাপে সেসময় ৭৫% বেতন বৃদ্ধি করা হয়। ৯ম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড ৮৫% বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। অথচ সভায় গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য ২০০% বেতন-ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছিল। একইসঙ্গে মালিকদের প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিতের বিষয়টিও আমলে নেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। বিবৃতির একটি অংশে বলা বলা হয়েছে ‘নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান এককভাবে মজুরি বোর্ডের রোঁয়েদাদ চূড়ান্ত করে এ সংক্রান্ত সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন।...সপ্তম ও অষ্টম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডও এভাবে একতরফাভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল।’ যা সম্পূর্ণ অসত্য। ৯ম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের সভায় মালিক পক্ষের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ৮ম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডে নোয়াবের নেতা মাহফুজ আনাম, মতিউর রহমান, এনায়েত উল্লাহ খান, মতিউর রহমান চৌধুরী, এম এ মালেক, এ এস এম শহীদুল্লাহ খান মালিক প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন। ধারাবাহিকভাবে তারা বৈঠক করেছেন। মালিক পক্ষ লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন এবং বিভিন্ন অজুহাতে ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নে বিরোধিতা করেছিলেন। মালিকদের সুপারিশের ভিত্তিতে সার্কুলেশন এবং গ্রস আয়ের ভিত্তিতে পত্রিকার ক্যাটাগরি নির্ধারণ করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানের কোন জনবল কাঠামো এবং ভৌত অবকাঠামোর কথা সেসময় উল্লেখ করা হয়নি। যা ছিল বেআইনি। ৮ম মজুরি বোর্ড বেতন কাঠামো ৫টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হলেও নোয়াব বিবৃতিতে শুধুমাত্র ‘ক’ ক্যাটাগরির হিসাব দিয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীদের প্রারম্ভিক গ্রেড-৩ বলে যে তথ্য দেয়া হয়েছে তাও সঠিক নয়। গ্রেড-৩ হচ্ছে স্টাফ রিপোর্টারের গ্রেড। ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী প্রারম্ভিক বেতন গ্রেড হচ্ছে-৪। ‘ক’ ক্যাটাগরির একটি পত্রিকায় গ্রেড ৪-এর বেতন স্কেল হচ্ছে ১২,৬০০ টাকা, আর ‘ঙ’ গ্রেডের পত্রিকায় ৫,২৫০ টাকা। নোয়াব বা সংবাদপত্র মালিকরা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন, সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ও পেশা। সুতরাং এ বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান বা পেশার জন্য বিশেষভাবেই রাষ্ট্রকে ভাবতে হয়। সেখানে সরকারি চাকরির কোন গ্রেডের সঙ্গে এর তুলনা করা মানেই গণমাধ্যমকর্মীদের মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন তোলা। যা কখনোই মালিক পক্ষের কাছ থেকে কাম্য নয়। বিশেষায়িত পেশার কারণে অন্য কোন পেশার গ্রেডিংয়ের সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের গ্রেডের তুলনা চলে না বা এর সুবিধাদি নিয়েও প্রশ্ন তোলা অবান্তর।
নোয়াবের বিবৃতিতে আয়কর নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে সেটি ৮ম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডেও তোলা হয়েছিল। ৫ম মজুরি বোর্ড রোঁয়েদাদে আয়কর সংবাদপত্র মালিক পক্ষ কর্তৃক প্রদেয় হবে উল্লেখ ছিল এবং প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষ বরাবরই আয়কর প্রদানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ৭ম মজুরি বোর্ডের সুপারিশমালায়ও তা উল্লেখ ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ৮ম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের রোঁয়েদাদে আয়কর প্রদানের দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের উপর ন্যস্ত করা হয়। এছাড়া হাইকোর্টে দায়ের করা রিট পিটিশন ১২০৩/১৯৯১ মামলায়ও নির্দেশনা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। পত্রিকা মালিকদের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মালিকপক্ষের দায়েরকৃত আপিল মামলায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। সুতরাং আদালতে বিচারাধীন বিষয়ে প্রশ্ন তুলে কি আদালত অবমাননার কাজটি করল না নোয়াব? নোয়াবের বিবৃতিতে ৯ম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের সুপারিশে বেতন-ভাতা বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে ৮ম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডে বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ৭৫%। এ কারণে গুটি কয়েক পত্রিকা ছাড়া অন্যরা ৮ম মজুরি বোর্ড বাস্তবায়ন করতে পারেনি।’ প্রশ্ন হলো বিষয়টি জানার পর নোয়াব কী পদক্ষেপ নিয়েছে? নোয়াব কি শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভাববে, নাকি গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি দায়িত্ব পালনও তাদের নৈতিকতার মধ্যে পড়ে? ৯ম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের বিরুদ্ধে তথা গণমাধ্যমকর্মীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে তারা যে বিরোধীতা করছে সেটি না করে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে যারা নিজেদের আখের গুছিয়েছে সেই মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে তারা অবস্থান নিলে মনে হতো যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছেন। সেটি তারা করেননি কেন? বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩) বিধান অনুযায়ী দেশের সংবাদপত্র এবং সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমকর্মীরা পরিচালিত হন। আইনের ১৪৩ ধারা অনুযায়ী সরকার মজুরি বোর্ড গঠন এবং ১৪৫ ধারা অনুযায়ী বোর্ড তাদের সিদ্ধান্ত প্রকাশ করে। ১৪৬ ধারায় অন্তর্বর্তীকালীন মজুরি ঘোষণা করা হয়। ১৪৮ ধারা অনুযায়ী ১৪৫ ধারার অধীন ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি প্রদানের বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু নোয়াব সদস্যরা এসব আইন দীর্ঘদিন ধরে লঙ্ঘন করে আসছেন। নোয়াবের সদস্য এমন অনেক পত্রিকা মালিকসহ দেশের খ্যাতিমান সংবাদপত্র মালিক মিথ্যা তথ্য দিয়ে ৮ম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের সর্বোচ্চ সুবিধাদি নিলেও কর্মীদের প্রাপ্য সুবিধাদি দেননি বা দেন না। এ বিষয়ে নোয়াবের স্পষ্ট ভূমিকা থাকা কি কাক্সিক্ষত ছিল না?
বিএফইউজে ও ডিইউজে মনে করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে যেসব পত্রিকা সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছে তার বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। নোয়াবের বিবৃতিতে যে সব তথ্য ও পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো আমলে নিয়ে ৮ম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হচ্ছে কি-না তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষী মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। শ্রম আইনের ২ (১০) ধারার কথা উল্লেখ করে নোয়াব বলেছে, ‘প্রতি বছর চাকরির জন্য একটি গ্র্যাচুইটির বিধান আছে।...সেখানে মজুরি বোর্ডে প্রতি বছরের জন্য ২টি গ্র্যাচুইটির বিধান একটি অবাস্তব আর্থিক চাপ।’ এছাড়া প্রতি ৩ বছর পরপর এক মাসের মোট বেতন ও ৩০ দিনের বিনোদন ছুটির বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে। নোয়াবের সঙ্গে যুক্তরা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংবাদপত্রের কর্মপ্রকৃতির তুলনা চলে না। বিশেষায়িত জরুরি পর্যায়ের পেশার কারণে সংবাদপত্রে কর্মরতরা সার্বক্ষণিক কর্মকা-ে বা কর্ম অপেক্ষায় থাকেন। যেটি বাংলাদেশে বা পৃথিবীতে আর ৪টি পেশায় নিয়োজিতদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি অন্য সেক্টরে কর্মরতরা ছুটি বা অবসর গ্রহণ অথবা অন্য কারণে যে সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন সংবাদপত্রে তার অনেকাংশই নেই। সে কারণে বছরে দুটি গ্র্যাচুইটি এবং এক মাসের বেতনসহ বিনোদন ছুটি অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত। মীমাংসিত বিষয়টি নিয়ে নতুনভাবে বিতর্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্য রহস্যজনক। নোয়াবের এই বিবৃতি গণমাধ্যমকর্মীদর বঞ্চিত করে সংবাদপত্র মালিকদের অধিক সুবিধা লাভের আশায় এমনটি উল্লেখ করে বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতারা বলেন, সংবাদপত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পর নোয়াবের সদস্যরা শিল্প মালিক হিসেবে সরকারের কাছ থেকে কী কী সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। গণমাধ্যমকর্মী আর সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের চাকরির ধরন একরকম নয় উল্লেখ করে নেতারা বলেন, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে দুই দিন ছুটি থাকলেও গণমাধ্যমকর্মীরা তা পান না। এমনকি সংবাদপত্রের জন্য নির্ধারিত ছুটির দিনেও তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। বিনিময়ে প্রাপ্য তেমন নেই বললেই চলে। সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও তাদের সমস্যা-সংকটে ন্যায্য পাওনাটুকু থেকেও বঞ্চিত হন। অসংখ্য সংবাদপত্রে নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট, গ্রুপ ইন্স্যুরেন্সসহ শ্রম আইন ও মজুরি বোর্ড অনুযায়ী অন্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে না। বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতারা বলেন, একজন সাংবাদিককে নানাভাবে প্রশিক্ষিত এবং বহুমুখী দায়িত্ব পালন করতে হয়। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা অন্য কোন শিল্প ও পেশার মতো নয়। সেটি মালিকরা নিজেরাও জানেন। তারা বলেন, যেকোন শিল্প প্রতিষ্ঠান রুগ্ন হয় তার অব্যবস্থাপনা অদক্ষতা এবং স্বেচ্ছাচারিতার কারণে। এর দায়-দায়িত্ব সরকার বা সংশ্লিষ্ট শ্রমিক-কর্মচারী নয়, পরিচালকদের উপরই বর্তায়। সেটি আমলে না নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের বেতন-ভাতা ও সুবিধাদি নিয়ে প্রশ্ন তোলা গর্হিত কাজ। মনে রাখতে হবে সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীরা বিপণন কর্মী নন। সুতরাং কোন প্রতিষ্ঠানের লাভ-লোকসানের সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মী তথা সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীদের কোন সম্পর্ক নেই। নেতারা বলেন, সংবাদপত্র শিল্পের উৎকর্ষ ও সাংবাদিক শ্রমিক-কর্মচারীদের যথাযথ কল্যাণে নোয়াব বা মালিকপক্ষ সরকারের কাছ থেকে আরও সুযোগ-সুবিধা পেলে বিএফইউজে ও ডিইউজের কোন আপত্তি নেই। তবে মজুরি বোর্ড ঘোষণার সূত্র ধরে সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারী ছাঁটাই করা হলে বা তাদের ন্যায্য সুবিধা বঞ্চিত করা হলে অবশ্যই তা মেনে নেয়া হবে না। প্রয়োজনে গণমাধ্যমকর্মী তথা সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।