রোহিতের সেঞ্চুরিতে ভারতের রানের পাহাড়

পাকিস্তানের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক তথা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরানের উপদেশ ছিল আকাশের অবস্থা মেঘলা থাকলে টস জিতে যেন ব্যাটিং নেন সরফরাজ আহমেদ। ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে টানা তিনদিনের বৃষ্টি বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আগুন জ্বলতে দেবে কি না সেই শঙ্কার মাঝে রোববার সকাল থেকেই সূয্যিমামার হাসি। শঙ্কা কাটিয়ে ম্যাচ শুরুর আগে হলো মুদ্রানিক্ষেপ। জিতলেন পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ। ইমরানের উপদেশ না মেনে ভারতকে ডাকলেন ব্যাটিংয়ে। ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলিও বলছিলেন টস জিতলে বোলিং করতেন। কিন্তু ম্যাচের দৃশ্যপট বলছে ইমরানই সঠিক ছিলেন। ভারতের ওপেনার রোহিত শর্মা তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের ২৪তম বিশ্বকাপের তৃতীয় ও পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। অধিনায়ক বিরাট কোহলি হাফ সেঞ্চুরির ইনিংসের সঙ্গে ভারতের অধিনায়ক দ্রুততম ১১ হাজার রানের মাইলফলকের রেকর্ডে নিজের নাম লিখিয়েছেন। শিখর ধাওয়ানের ইনজুরিতে ওপেনার হিসেবে পাওয়া সুযোগের সদ্ব্যবহার করে শুরুতে দেখেশুনে খেলে হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন লোকেশ রাহুল। শেষদিকে পাকিস্তানি বোলারদের দাপটে উইকেটের পতন এবং ইনিংসের ৪৭তম ওভারে বৃষ্টির বাগড়ায় কিছুটা সময় খেলা বন্ধ থাকলেও ভারত পৌঁছে গেছে ৩৩৬ রানে। হাইভোল্টেজ এই ম্যাচে জয়ের জন্য ৩৩৭ রানের টার্গেট পাকিস্তানের জন্য মানসিক চাপ তো বটেই। তার ওপরে বিশ্বকাপে এত রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডও নেই। আপাতত এই হলো বিশ্বকাপে রোববারের ম্যাচে ভারতের ইনিংসের সারমর্ম।

টস হেরে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পাওয়া ভারতীয় দলের দুই ওপেনার এতটাই সাবধানী সূচনা করেছিলেন যে, মোহাম্মদ আমিরের করা প্রথম ওভারটাই মেডেন হয়ে যায়। দ্বিতীয় ওভার করতে এসে হাসান আলী দেন ৯ রান। পঞ্চম ওভার পর্যন্ত রয়েসয়েই এগোচ্ছিলেন লোকেশ রাহুল ও রোহিত শর্মা। উইকেটে থিতু হয়েই হাত খুলতে শুরু করেন তারা। বার দুয়েক রান আউটের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া রোহিত শর্মা ৩৪ বলে পৌঁছে যান হাফ সেঞ্চুরিতে। দুটো ছক্কার সঙ্গে হাঁকান ছটি বাউন্ডারি। পার্টনারের রণমূর্তি দেখে হাত খোলেন লোকেশ রাহুলও। আঠারোতম ওভারেই ভারত স্পর্শ করে শতরানের কোটা। ধীরে ধীরে লোকেশ রাহুলও পূর্ণ করেন হাফ সেঞ্চুরি। এর জন্য ৬৯টি বল খরচ হয় তার, তিনটি বাউন্ডারির সঙ্গে হাঁকান একটি ছক্কা। ভারতের স্কোর ১৩৬ রান পৌঁছার পর প্রথম সাফল্য পায় পাকিস্তান। ওয়াহাব রিয়াজের বলে কাভারে বাবর আজমের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে থামেন লোকেশ রাহুল (৫৭)।

সহ-অধিনায়ক রোহিতের সঙ্গে জমে ওঠে ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলির দ্বিতীয় উইকেটের পার্টনারশিপ। ১৫৪ বলে ভারত পৌঁছে যায় ১৫০ রানে। অধিনায়ককে সঙ্গে পেয়ে রোহিত ৮৫ বলে পূর্ণ করেন সেঞ্চুরি। শতরানের কোটা পূর্ণ হওয়ার পর কিছুটা আগ্রাসী হওয়ার খেসারত দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন ভারতীয় ওপেনার। পাকিস্তানি বোলার হাসান আলী মার খাচ্ছিলেন। ৩৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলটা দিলেন তিনি অফ স্ট্যাম্পের বাইরে। উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে ফাইন লেগে স্কুপ করলেন রোহিত। ধরা পড়লেন ওয়াহাব রিয়াজের হাতে। থামল রোহিতের ১১৩ বলে ১৪ বাউন্ডারি ও তিন ছক্কায় খেলা ১৪০ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস। ততক্ষণে ভারতের স্কোর ২৩৪। অর্থাৎ কোহলির সঙ্গে রোহিতের জুটি ৯৮ রানের। হার্দিক পান্ডিয়া স্বভাবসুলভ ধুম-ধাড়াক্কা ব্যাটিংয়ে ১৯ বলে দুই বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ২৬ রানের ইনিংস খেলে আমিরের শিকারে পরিণত হবার আগে কোহলির সাথে ৫১ রানের জুটি গড়েন। সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি (১) কট বিহাইন্ড হন আমিরের বলেই। ফলে ২৮৫ থেকে ২৯৮ রানের মধ্যে দুটো উইকেট হারায় ভারত। মোহাম্মদ আমির আবারও আঘাত হানেন ভারতের ইনিংসে ৩১৪ রানের মাথায়। ফেরেন ৬৫ বলে সাত বাউন্ডারিতে ৭৭ রান করা কোহলি। এর আগে ভারতের ইনিংসে ৩০৪ রান উঠতেই বৃষ্টির কারণে বেশ কিছুটা সময় বন্ধ থাকে ম্যাচ। বিজয় শংকর (১৫) এবং কেদার যাদব (৯) অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়ার সময়ে ভারতের ৩৩৬ রানের সংগ্রহ বিশ্বকাপের চাপ বিবেচনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে কাগজে কলমে নিরাপদই বলা যায়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর : ভারত ৫০ ওভারে ৩৩৬/৫ (রাহুল ৫৭, রোহিত ১৪০, কোহলি ৭৭, পান্ডিয়া ২৬, ধোনি ১, শঙ্কর ১৫*, কেদার ৯*; আমির ১০-১-৪৭-৩, হাসান ৯-০-৮৪-১, ওয়াহাব ১০-০-৭১-১)।

সোমবার, ১৭ জুন ২০১৯ , ৩ আষাঢ় ১৪২৫, ১৩ শাওয়াল ১৪৪০

রোহিতের সেঞ্চুরিতে ভারতের রানের পাহাড়

বিশেষ প্রতিনিধি

পাকিস্তানের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক তথা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরানের উপদেশ ছিল আকাশের অবস্থা মেঘলা থাকলে টস জিতে যেন ব্যাটিং নেন সরফরাজ আহমেদ। ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে টানা তিনদিনের বৃষ্টি বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আগুন জ্বলতে দেবে কি না সেই শঙ্কার মাঝে রোববার সকাল থেকেই সূয্যিমামার হাসি। শঙ্কা কাটিয়ে ম্যাচ শুরুর আগে হলো মুদ্রানিক্ষেপ। জিতলেন পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ। ইমরানের উপদেশ না মেনে ভারতকে ডাকলেন ব্যাটিংয়ে। ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলিও বলছিলেন টস জিতলে বোলিং করতেন। কিন্তু ম্যাচের দৃশ্যপট বলছে ইমরানই সঠিক ছিলেন। ভারতের ওপেনার রোহিত শর্মা তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের ২৪তম বিশ্বকাপের তৃতীয় ও পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। অধিনায়ক বিরাট কোহলি হাফ সেঞ্চুরির ইনিংসের সঙ্গে ভারতের অধিনায়ক দ্রুততম ১১ হাজার রানের মাইলফলকের রেকর্ডে নিজের নাম লিখিয়েছেন। শিখর ধাওয়ানের ইনজুরিতে ওপেনার হিসেবে পাওয়া সুযোগের সদ্ব্যবহার করে শুরুতে দেখেশুনে খেলে হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন লোকেশ রাহুল। শেষদিকে পাকিস্তানি বোলারদের দাপটে উইকেটের পতন এবং ইনিংসের ৪৭তম ওভারে বৃষ্টির বাগড়ায় কিছুটা সময় খেলা বন্ধ থাকলেও ভারত পৌঁছে গেছে ৩৩৬ রানে। হাইভোল্টেজ এই ম্যাচে জয়ের জন্য ৩৩৭ রানের টার্গেট পাকিস্তানের জন্য মানসিক চাপ তো বটেই। তার ওপরে বিশ্বকাপে এত রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডও নেই। আপাতত এই হলো বিশ্বকাপে রোববারের ম্যাচে ভারতের ইনিংসের সারমর্ম।

টস হেরে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পাওয়া ভারতীয় দলের দুই ওপেনার এতটাই সাবধানী সূচনা করেছিলেন যে, মোহাম্মদ আমিরের করা প্রথম ওভারটাই মেডেন হয়ে যায়। দ্বিতীয় ওভার করতে এসে হাসান আলী দেন ৯ রান। পঞ্চম ওভার পর্যন্ত রয়েসয়েই এগোচ্ছিলেন লোকেশ রাহুল ও রোহিত শর্মা। উইকেটে থিতু হয়েই হাত খুলতে শুরু করেন তারা। বার দুয়েক রান আউটের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া রোহিত শর্মা ৩৪ বলে পৌঁছে যান হাফ সেঞ্চুরিতে। দুটো ছক্কার সঙ্গে হাঁকান ছটি বাউন্ডারি। পার্টনারের রণমূর্তি দেখে হাত খোলেন লোকেশ রাহুলও। আঠারোতম ওভারেই ভারত স্পর্শ করে শতরানের কোটা। ধীরে ধীরে লোকেশ রাহুলও পূর্ণ করেন হাফ সেঞ্চুরি। এর জন্য ৬৯টি বল খরচ হয় তার, তিনটি বাউন্ডারির সঙ্গে হাঁকান একটি ছক্কা। ভারতের স্কোর ১৩৬ রান পৌঁছার পর প্রথম সাফল্য পায় পাকিস্তান। ওয়াহাব রিয়াজের বলে কাভারে বাবর আজমের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে থামেন লোকেশ রাহুল (৫৭)।

সহ-অধিনায়ক রোহিতের সঙ্গে জমে ওঠে ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলির দ্বিতীয় উইকেটের পার্টনারশিপ। ১৫৪ বলে ভারত পৌঁছে যায় ১৫০ রানে। অধিনায়ককে সঙ্গে পেয়ে রোহিত ৮৫ বলে পূর্ণ করেন সেঞ্চুরি। শতরানের কোটা পূর্ণ হওয়ার পর কিছুটা আগ্রাসী হওয়ার খেসারত দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন ভারতীয় ওপেনার। পাকিস্তানি বোলার হাসান আলী মার খাচ্ছিলেন। ৩৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলটা দিলেন তিনি অফ স্ট্যাম্পের বাইরে। উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে ফাইন লেগে স্কুপ করলেন রোহিত। ধরা পড়লেন ওয়াহাব রিয়াজের হাতে। থামল রোহিতের ১১৩ বলে ১৪ বাউন্ডারি ও তিন ছক্কায় খেলা ১৪০ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস। ততক্ষণে ভারতের স্কোর ২৩৪। অর্থাৎ কোহলির সঙ্গে রোহিতের জুটি ৯৮ রানের। হার্দিক পান্ডিয়া স্বভাবসুলভ ধুম-ধাড়াক্কা ব্যাটিংয়ে ১৯ বলে দুই বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ২৬ রানের ইনিংস খেলে আমিরের শিকারে পরিণত হবার আগে কোহলির সাথে ৫১ রানের জুটি গড়েন। সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি (১) কট বিহাইন্ড হন আমিরের বলেই। ফলে ২৮৫ থেকে ২৯৮ রানের মধ্যে দুটো উইকেট হারায় ভারত। মোহাম্মদ আমির আবারও আঘাত হানেন ভারতের ইনিংসে ৩১৪ রানের মাথায়। ফেরেন ৬৫ বলে সাত বাউন্ডারিতে ৭৭ রান করা কোহলি। এর আগে ভারতের ইনিংসে ৩০৪ রান উঠতেই বৃষ্টির কারণে বেশ কিছুটা সময় বন্ধ থাকে ম্যাচ। বিজয় শংকর (১৫) এবং কেদার যাদব (৯) অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়ার সময়ে ভারতের ৩৩৬ রানের সংগ্রহ বিশ্বকাপের চাপ বিবেচনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে কাগজে কলমে নিরাপদই বলা যায়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর : ভারত ৫০ ওভারে ৩৩৬/৫ (রাহুল ৫৭, রোহিত ১৪০, কোহলি ৭৭, পান্ডিয়া ২৬, ধোনি ১, শঙ্কর ১৫*, কেদার ৯*; আমির ১০-১-৪৭-৩, হাসান ৯-০-৮৪-১, ওয়াহাব ১০-০-৭১-১)।