বাধা অপরিকল্পিত ফ্লাইওভার

বাস্তবায়ন হয়নি কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা

সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাব ও অপরিকল্পিত অবকাঠামো

অপরিকল্পিতভাবে ফ্লাইওভার ও সড়ক অবকাঠামো নির্মাণের কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা এসটিপি। রাজধানীর যানজট ও ঢাকার আশপাশের জেলার পরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়নে ২০০৪ সালে প্রণয়ন করা এই পরিকল্পনা ২০২৪ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাব ও অপরিকল্পিতভাবে সড়ক অবকাঠামো নির্মাণের কারণে বাস্তবায়ন করা যায়নি এসটিপি। তাই নতুন করে প্রণয়ন করা হয়েছে সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি)। চারধাপে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত। এতে রাজধানীর যানজট নিরসন ও ঢাকার আশপাশের জেলার পরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়নে ৫টি ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) বা মেট্রোরেল ও দুটি বাস র‌্যাপিট ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকার চারপাশের বৃত্তাকার নৌপথ উন্নয়ন ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০ বছর মেয়াদি এই কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগ দরকার হবে বলে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। তবে সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নের এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারের অন্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের পাশাপাশি ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষকে (ডিটিসিএ) স্বাধীনভাবে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।

রাজধানী ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার, মানিকগঞ্জ এলাকার পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে গ্রহণ করা হয়েছিল এসটিপি। ২০০৫ সালে এসটিপির চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালে এটি অনুমোদন করে। ২০২৪ সালের মধ্যে চার স্তরে এটি বাস্তবায়নের কথা ছিল। সে সময়ে বৃহত্তর ঢাকার সম্ভাব্য জনসংখ্যা, যোগাযোগ ও পরিবহন চাহিদার নিরিখে এই পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। কিন্তু এই পরিকল্পনা অনুযায়ী কোন কাজে বাস্তবায়ন হয়নি নগরীতে। এই পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে বাস্তবায়ন করা হয়েছে গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার এবং মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের মতো বড় প্রকল্প। তাই রাজধানীতে এই প্রকল্পের কারণে এসটিপি বাস্তবায়ন অনেক ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তাই সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষকে (ডিটিসিএ) এসটিপি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা করে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। ২০১৬ সালে মন্ত্রিসভায় সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) অনুমোদন করা হয়। আরএসটিপিতে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) বা মেট্রোরেল; ৩টির পরিবর্তে ৫টি মেট্রোরেল এবং বাস র‌্যাপিড ট্রনজিট (বিআরটি) ৩টির পরিবর্তে ২টি নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। ঢাকার চারপাশের বৃত্তাকার নৌপথ উন্নয়ন ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ২০ বছরে প্রায় ৩ লাখ কোটি বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। সংশোধিত এসটিপিকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে (২০১৬-২০২০) সবচেয়ে কম বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। দ্বিতীয় ধাপে (২০২১-২০২৫) বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেড়গুণ করতে হবে। আর তৃতীয় (২০২৬-২০৩০) ও চতুর্থ (২০৩১-২০৩৫) ধাপে বিনিয়োগ আড়াইগুণে উন্নীত করতে হবে। এক্ষেত্রে সড়ক খাতে গড়ে বিনিয়োগ মোটামুটি স্থিতিশীল থাকবে। তবে মেট্রোরেল ও বিআরটি নির্মাণে ধাপে ধাপে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে জাপানের তিন পরামর্শক প্রতিষ্ঠানÑ এএলএমইসি করপোরেশন, ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্টস গ্লোবাল লিমিটেড ও কাটাহিরা অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্টারন্যাশনাল।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বর্তমানে ঢাকার জনসংখ্যা ১ কোটি ৭০ লাখ, ২০৩৫ সালে যা বেড়ে দাঁড়াবে ২ কোটি ৬৩ লাখে। এ সময় রাজধানীবাসীর যাতায়াত (ট্রিপ) ২ কোটি ৯৮ লাখ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ৫ কোটি ১১ লাখে। বিদ্যমান সড়কের মাধ্যমে এ চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। ফলে নতুন সড়ক ও এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে হবে। বিদ্যমান বৃত্তাকার নৌপথ ও বাংলাদেশ রেলওয়ের অবকাঠামো সুবিধার ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা বা মেট্রোরেল ও বিআরটি চালু করতে হবে। সড়ক ব্যবস্থা সম্প্রসারণে ২৯০ কিলোমিটার প্রাইমারি (ধমনি) সড়ক নির্মাণ করতে হবে। এসব সড়কে কোন ধরনের ধীরগতির যানবাহন চলাচল করবে না। থাকবে না কোন বাস স্টপেজ। এজন্য বিনিয়োগ করতে হবে ১০ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। আর জনবহুল ও ব্যস্ততম এলাকাগুলোয় ধমনি সড়কের পাশাপাশি থাকবে মাধ্যমিক সড়ক। এসব সড়ক বাস স্টপেজ, কার পার্কিংসহ বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনে ব্যবহার করা হবে। ৪৭১ কিলোমিটার মাধ্যমিক সড়ক নির্মাণে ব্যয় হবে ১৮ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। সড়কের বাইরে ৫টি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে হবে। এগুলো আশুলিয়া, মাওয়া, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও সিলেটের সঙ্গে ঢাকার দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনে ভূমিকা রাখবে। আর ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে বিকল্প সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে ৩টি বৃত্তাকার সড়ক নির্মাণ করতে হবে। ১২৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ৫টি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১ হাজার ৪২ কোটি টাকা। আর ৩১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ৩টি বৃত্তাকার সড়ক নির্মাণে ব্যয় হবে ৩৫ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে সড়ক খাতে ব্যয় হবে ৯৬ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা।

সড়ক অবকাঠামোর বাইরে পাঁচটি মেট্রোরেল ও ২টি বিআরটি নির্মাণে বিনিয়োগ করতে হবে ১ লাখ ৮১ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা। এছাড়া বিদ্যমান বাস সার্ভিস উন্নয়নে ব্যয় হবে ৫ হাজার ৪৭ কোটি, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ৪ হাজার ৬৮৭ কোটি ও নৌপরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়নে ৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ সংশোধিত এসটিপি বাস্তবায়নে ২০ বছরে বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে এসটিপির ৩টি মেট্রোরেল দ্রুত নির্মাণ করতে হবে। মেট্রোরেলের পাঁচটি রুটের মধ্যে বর্তমানে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল প্রকল্প চলমান রয়েছে, যা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট-৬ (এমআরটি-৬) নামে পরিচিত। ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। সংশোধিত এসটিপিতে এমআরটি-৬ উত্তরা থেকে আশুলিয়া ও মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের সুপারিশ করা হয়েছে। এতে মেট্রোরেলটির দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে ৪১ কিলোমিটার। বাড়তি ২১ কিলোমিটার নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০৯ কোটি ডলার। প্রথম অংশের মতো বর্ধিত অংশও হবে উড়ালপথে (এলিভেটেড)। উত্তরা-মতিঝিল ২০ কিলোমিটার ২০২১ সালের মধ্যে শেষ হলেও বর্ধিত ২১ কিলোমিটার ২০৩৫ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার সুপারিশ করা হয়েছে।

এছাড়া নতুন মেট্রোরেলগুলোর মধ্যে প্রস্তাবিত এমআরটি-১ গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর সড়ক দিয়ে বিদ্যমান রেলপথ ধরে কমলাপুর হয়ে ঝিলমিল পর্যন্ত যাবে। এক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে গাজীপুর-বিমানবন্দর অংশ ২০২৫ সালে ও দ্বিতীয় পর্যায়ে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর হয়ে ঝিলমিল পর্যন্ত ২০৩৫ সাল নাগাদ নির্মাণ করতে হবে। প্রথম পর্যায়ের দৈর্ঘ্য হবে ২৬ দশমক ৬ কিলোমিটার, যার ৬ কিলেমিটার হবে মাটির নিচে ও বাকি অংশ উড়ালপথে। আর দ্বিতীয় পর্যায়ের দৈর্ঘ্য হবে ৫২ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৪২ দশমিক ৭ কিলোমিটার উড়ালপথে ও ৯ দশমিক ৩ কিলোমিটার মাটির নিচ দিয়ে নির্মাণ করতে হবে। প্রথম পর্যায়ের জন্য ব্যয় হবে ২৮৩ কোটি ডলার ও দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য ৫৮৭ কোটি ডলার।

এমআরটি ২-এর সম্ভাব্য রুট ধরা হয়েছে আশুলিয়া থেকে শুরু করে সাভার, গাবতলী হয়ে মিরপুর রোড দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ভবনের (নগর ভবন) সামনে দিয়ে কমলাপুর পর্যন্ত। পুরোটাই উড়ালপথে প্রস্তাব করা হয়েছে। এ মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য হবে ৪০ কিলোমিটার ও ব্যয় ৩৭৫ কোটি ডলার। এমআরটি-৪ নির্মাণ করা হবে কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত। উড়ালপথে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেলটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭৪ কোটি ডলার। এমআরটি-৫টি হবে অনেকটা রিং মেট্রোরেল। এটি নির্মাণ করতে হবে ভুলতা থেকে বাড্ডা, মিরপুর সড়ক, মিরপুর-১০, গাবতলী বাস টার্মিনাল, ধানমন্ডি, বসুন্ধরা সিটি (পান্থপথ) হয়ে হাতিরঝিল লিংক রোড পর্যন্ত। এটি মূলত এমআরটি- ১, ২, ৪ ও ৬-কে যুক্ত করবে। ৩৫ কিলোমিটার এ মেট্রোর ৯ দশমিক ১ কিলোমিটর মাটির নিচ দিয়ে ও ২৪ দশমিক ৯ কিলোমিটার উড়ালপথে নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। এজন্য ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪২৮ কোটি ডলার।

পাঁচটি এমআরটির বাইরে দুইটি বিআরটি নির্মাণে সুপারিশ করা হয়েছে সংশোধিত এসটিপির প্রতিবেদনে। এর মধ্যে গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর সড়ক, মগবাজার, শান্তিনগর, গুলিস্তান হয়ে ঝিলমিল পর্যন্ত হবে বিআরটি-৩। বর্তমানে দুই প্রকল্পের আওতায় গাজীপুর-বিমানবন্দর সড়ক ও বিমানবন্দর সড়ক-ঝিলমিল অংশের বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের কাজ শেষ হয়েছে। গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রথম অংশের কাজ চলছে। এছাড়া শহরের পূর্বাংশে বিআরটি-৭ নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি নারায়ণগঞ্জ থেকে ইস্টার্ন বাইপাস হয়ে আশুলিয়া পর্যন্ত যাবে। এর দৈর্ঘ্য হবে ৩৬ কিলোমিটার আর সম্ভাব্য ব্যয় হবে ২৮ কোটি ডলার।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০৩৫ সাল নাগাদ রাজধানীর যানবাহন চাহিদার প্রায় ৬৪ শতাংশ পূরণ করতে পারবে পাঁচটি মেট্রোরেল ও দুইটি বিআরটি। এটি মূলত রাজধানী ও আশপাশের জনগণের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করবে। তবে রাজধানীর বাকি ৩৬ শতাংশ যানবাহনের চাহিদা মেটানো ও অন্য জেলার সঙ্গে দ্রুত সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে বেশকিছু সড়ক উন্নয়ন ও এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে হবে। এজন্য চার পর্যায়ে ৯৬ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকার চারপাশে তিনটি বৃত্তাকার সড়ক নির্মাণ করতে হবে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ বৃত্তাকার সড়কের দৈর্ঘ্য হবে ৭৩ কিলোমিটার, মধ্যবর্তী ১০৮ ও রাজধানীর বাইরের বৃত্তাকার সড়কের দৈর্ঘ্য ১২৯ কিলোমিটার। এজন্য মোট ব্যয় হবে ৩৫ হজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এছাড়া ঢাকার সঙ্গে অন্য জেলার সংযোগ উন্নয়নে ২৯০ কিলোমিটার প্রাইমারি সড়ক ও ৪৭১ কিলোমিটার সেকেন্ডারি সড়ক উন্নয়ন করতে হবে। এতে ব্যয় হবে যথাক্রমে ১০ হাজার ৯৮৪ কোটি ও ১৮ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। এর বাইরে ছয়টি এক্সপ্রেসওয়ে পূর্ণ বা আংশিকভাবে থাকবে ঢাকায়। ২০ কিলোমিটার ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ বর্তমানে চলছে। আর ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ, ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ, ঢাকা-সিলেট এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ ও ঢাকা-ময়মনসিংহ এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ নির্মাণ করতে হবে। সব মিলিয়ে দৈর্ঘ্য হবে ১২৬ কিলোমিটার আর নির্মাণে ব্যয় হবে ৩১ হাজার ৪২ কোটি টাকা।

জানা গেছে, রাজধানী ও আশপাশের জেলা যানজটমুক্ত করতে ২০০৪ সালে প্রণয়ন করা হয় ২০ বছর মেয়াদি এসটিপি। তবে সঠিক বাস্তবায়নের অভাবে ১০ বছরেই প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে এটি। সমন্বয়ের অভাবে ১০ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। তাই আরএসটিপি বাস্তবায়নে সরকারের অন্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের পাশাপাশি স্বাধীনভাবে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষকে (ডিটিসিএ) করা পরামর্শ পরিবহন বিশেষজ্ঞদের। পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশলের বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সামছুল হক সংবাদকে বলেন, পরিকল্পনা প্রণয়নের পাশাপাশি তা বাস্তবায়নে জোর দেয়া জরুরি। ২০০৪ সালে এসটিপি প্রণয়নের পর তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। উল্টো এর বাইরে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ফলে এটি কার্যকারিতা হারিয়েছে। সংশোধিত এসটিপির ক্ষেত্রে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। তা না হলে পরিকল্পনার কোন সুফল পাওয়া যাবে না। আর ঢাকা ক্রমশ বাসযোগ্যতা হারাবে। তাই আরএসটিপি বাস্তবায়নে সরকারের অন্য সংস্থারে সঙ্গে সমন্বয়ের পাশাপাশি ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষকে (ডিটিসিএ) স্বাধীনভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি।

image
আরও খবর
মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদকে চিহ্নিত করবে সরকার
আজও সাকিবে ভর করে অজিদের হারাতে চায় টাইগাররা
বাংলাদেশের কাঁধে ১১ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা
অজি পেস আক্রমণ নিয়ে আমরা চিন্তিত নই : সাকিব
দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ২৪১
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির তালিকা হচ্ছে
ঢাকার সড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে কমিটি
মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স নিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল
অবশেষে পুলিশের অভিযানে ধরা পড়ল ডন আল-আমিন
আ’লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ সাব কমিটির সম্মেলন
বিশ্বে শরণার্থী ৭০ মিলিয়ন
পিডব্লিউসির বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা টিআইবির
সংরক্ষণাগার না থাকায় বিপাকে চাষিরা
জাতিসংঘ মহাসচিবের পদত্যাগ দাবি

বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০১৯ , ৫ আষাঢ় ১৪২৫, ১৫ শাওয়াল ১৪৪০

বাধা অপরিকল্পিত ফ্লাইওভার

বাস্তবায়ন হয়নি কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা

সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাব ও অপরিকল্পিত অবকাঠামো

মাহমুদ আকাশ

image

অপরিকল্পিতভাবে ফ্লাইওভার ও সড়ক অবকাঠামো নির্মাণের কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা এসটিপি। রাজধানীর যানজট ও ঢাকার আশপাশের জেলার পরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়নে ২০০৪ সালে প্রণয়ন করা এই পরিকল্পনা ২০২৪ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাব ও অপরিকল্পিতভাবে সড়ক অবকাঠামো নির্মাণের কারণে বাস্তবায়ন করা যায়নি এসটিপি। তাই নতুন করে প্রণয়ন করা হয়েছে সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি)। চারধাপে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত। এতে রাজধানীর যানজট নিরসন ও ঢাকার আশপাশের জেলার পরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়নে ৫টি ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) বা মেট্রোরেল ও দুটি বাস র‌্যাপিট ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকার চারপাশের বৃত্তাকার নৌপথ উন্নয়ন ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০ বছর মেয়াদি এই কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগ দরকার হবে বলে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। তবে সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নের এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারের অন্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের পাশাপাশি ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষকে (ডিটিসিএ) স্বাধীনভাবে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।

রাজধানী ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার, মানিকগঞ্জ এলাকার পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে গ্রহণ করা হয়েছিল এসটিপি। ২০০৫ সালে এসটিপির চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালে এটি অনুমোদন করে। ২০২৪ সালের মধ্যে চার স্তরে এটি বাস্তবায়নের কথা ছিল। সে সময়ে বৃহত্তর ঢাকার সম্ভাব্য জনসংখ্যা, যোগাযোগ ও পরিবহন চাহিদার নিরিখে এই পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। কিন্তু এই পরিকল্পনা অনুযায়ী কোন কাজে বাস্তবায়ন হয়নি নগরীতে। এই পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে বাস্তবায়ন করা হয়েছে গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার এবং মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের মতো বড় প্রকল্প। তাই রাজধানীতে এই প্রকল্পের কারণে এসটিপি বাস্তবায়ন অনেক ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তাই সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষকে (ডিটিসিএ) এসটিপি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা করে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। ২০১৬ সালে মন্ত্রিসভায় সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) অনুমোদন করা হয়। আরএসটিপিতে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) বা মেট্রোরেল; ৩টির পরিবর্তে ৫টি মেট্রোরেল এবং বাস র‌্যাপিড ট্রনজিট (বিআরটি) ৩টির পরিবর্তে ২টি নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। ঢাকার চারপাশের বৃত্তাকার নৌপথ উন্নয়ন ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ২০ বছরে প্রায় ৩ লাখ কোটি বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। সংশোধিত এসটিপিকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে (২০১৬-২০২০) সবচেয়ে কম বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। দ্বিতীয় ধাপে (২০২১-২০২৫) বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেড়গুণ করতে হবে। আর তৃতীয় (২০২৬-২০৩০) ও চতুর্থ (২০৩১-২০৩৫) ধাপে বিনিয়োগ আড়াইগুণে উন্নীত করতে হবে। এক্ষেত্রে সড়ক খাতে গড়ে বিনিয়োগ মোটামুটি স্থিতিশীল থাকবে। তবে মেট্রোরেল ও বিআরটি নির্মাণে ধাপে ধাপে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে জাপানের তিন পরামর্শক প্রতিষ্ঠানÑ এএলএমইসি করপোরেশন, ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্টস গ্লোবাল লিমিটেড ও কাটাহিরা অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্টারন্যাশনাল।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বর্তমানে ঢাকার জনসংখ্যা ১ কোটি ৭০ লাখ, ২০৩৫ সালে যা বেড়ে দাঁড়াবে ২ কোটি ৬৩ লাখে। এ সময় রাজধানীবাসীর যাতায়াত (ট্রিপ) ২ কোটি ৯৮ লাখ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ৫ কোটি ১১ লাখে। বিদ্যমান সড়কের মাধ্যমে এ চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। ফলে নতুন সড়ক ও এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে হবে। বিদ্যমান বৃত্তাকার নৌপথ ও বাংলাদেশ রেলওয়ের অবকাঠামো সুবিধার ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা বা মেট্রোরেল ও বিআরটি চালু করতে হবে। সড়ক ব্যবস্থা সম্প্রসারণে ২৯০ কিলোমিটার প্রাইমারি (ধমনি) সড়ক নির্মাণ করতে হবে। এসব সড়কে কোন ধরনের ধীরগতির যানবাহন চলাচল করবে না। থাকবে না কোন বাস স্টপেজ। এজন্য বিনিয়োগ করতে হবে ১০ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। আর জনবহুল ও ব্যস্ততম এলাকাগুলোয় ধমনি সড়কের পাশাপাশি থাকবে মাধ্যমিক সড়ক। এসব সড়ক বাস স্টপেজ, কার পার্কিংসহ বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনে ব্যবহার করা হবে। ৪৭১ কিলোমিটার মাধ্যমিক সড়ক নির্মাণে ব্যয় হবে ১৮ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। সড়কের বাইরে ৫টি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে হবে। এগুলো আশুলিয়া, মাওয়া, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও সিলেটের সঙ্গে ঢাকার দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনে ভূমিকা রাখবে। আর ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে বিকল্প সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে ৩টি বৃত্তাকার সড়ক নির্মাণ করতে হবে। ১২৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ৫টি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১ হাজার ৪২ কোটি টাকা। আর ৩১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ৩টি বৃত্তাকার সড়ক নির্মাণে ব্যয় হবে ৩৫ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে সড়ক খাতে ব্যয় হবে ৯৬ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা।

সড়ক অবকাঠামোর বাইরে পাঁচটি মেট্রোরেল ও ২টি বিআরটি নির্মাণে বিনিয়োগ করতে হবে ১ লাখ ৮১ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা। এছাড়া বিদ্যমান বাস সার্ভিস উন্নয়নে ব্যয় হবে ৫ হাজার ৪৭ কোটি, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ৪ হাজার ৬৮৭ কোটি ও নৌপরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়নে ৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ সংশোধিত এসটিপি বাস্তবায়নে ২০ বছরে বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে এসটিপির ৩টি মেট্রোরেল দ্রুত নির্মাণ করতে হবে। মেট্রোরেলের পাঁচটি রুটের মধ্যে বর্তমানে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল প্রকল্প চলমান রয়েছে, যা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট-৬ (এমআরটি-৬) নামে পরিচিত। ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। সংশোধিত এসটিপিতে এমআরটি-৬ উত্তরা থেকে আশুলিয়া ও মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের সুপারিশ করা হয়েছে। এতে মেট্রোরেলটির দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে ৪১ কিলোমিটার। বাড়তি ২১ কিলোমিটার নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০৯ কোটি ডলার। প্রথম অংশের মতো বর্ধিত অংশও হবে উড়ালপথে (এলিভেটেড)। উত্তরা-মতিঝিল ২০ কিলোমিটার ২০২১ সালের মধ্যে শেষ হলেও বর্ধিত ২১ কিলোমিটার ২০৩৫ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার সুপারিশ করা হয়েছে।

এছাড়া নতুন মেট্রোরেলগুলোর মধ্যে প্রস্তাবিত এমআরটি-১ গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর সড়ক দিয়ে বিদ্যমান রেলপথ ধরে কমলাপুর হয়ে ঝিলমিল পর্যন্ত যাবে। এক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে গাজীপুর-বিমানবন্দর অংশ ২০২৫ সালে ও দ্বিতীয় পর্যায়ে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর হয়ে ঝিলমিল পর্যন্ত ২০৩৫ সাল নাগাদ নির্মাণ করতে হবে। প্রথম পর্যায়ের দৈর্ঘ্য হবে ২৬ দশমক ৬ কিলোমিটার, যার ৬ কিলেমিটার হবে মাটির নিচে ও বাকি অংশ উড়ালপথে। আর দ্বিতীয় পর্যায়ের দৈর্ঘ্য হবে ৫২ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৪২ দশমিক ৭ কিলোমিটার উড়ালপথে ও ৯ দশমিক ৩ কিলোমিটার মাটির নিচ দিয়ে নির্মাণ করতে হবে। প্রথম পর্যায়ের জন্য ব্যয় হবে ২৮৩ কোটি ডলার ও দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য ৫৮৭ কোটি ডলার।

এমআরটি ২-এর সম্ভাব্য রুট ধরা হয়েছে আশুলিয়া থেকে শুরু করে সাভার, গাবতলী হয়ে মিরপুর রোড দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ভবনের (নগর ভবন) সামনে দিয়ে কমলাপুর পর্যন্ত। পুরোটাই উড়ালপথে প্রস্তাব করা হয়েছে। এ মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য হবে ৪০ কিলোমিটার ও ব্যয় ৩৭৫ কোটি ডলার। এমআরটি-৪ নির্মাণ করা হবে কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত। উড়ালপথে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেলটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭৪ কোটি ডলার। এমআরটি-৫টি হবে অনেকটা রিং মেট্রোরেল। এটি নির্মাণ করতে হবে ভুলতা থেকে বাড্ডা, মিরপুর সড়ক, মিরপুর-১০, গাবতলী বাস টার্মিনাল, ধানমন্ডি, বসুন্ধরা সিটি (পান্থপথ) হয়ে হাতিরঝিল লিংক রোড পর্যন্ত। এটি মূলত এমআরটি- ১, ২, ৪ ও ৬-কে যুক্ত করবে। ৩৫ কিলোমিটার এ মেট্রোর ৯ দশমিক ১ কিলোমিটর মাটির নিচ দিয়ে ও ২৪ দশমিক ৯ কিলোমিটার উড়ালপথে নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। এজন্য ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪২৮ কোটি ডলার।

পাঁচটি এমআরটির বাইরে দুইটি বিআরটি নির্মাণে সুপারিশ করা হয়েছে সংশোধিত এসটিপির প্রতিবেদনে। এর মধ্যে গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর সড়ক, মগবাজার, শান্তিনগর, গুলিস্তান হয়ে ঝিলমিল পর্যন্ত হবে বিআরটি-৩। বর্তমানে দুই প্রকল্পের আওতায় গাজীপুর-বিমানবন্দর সড়ক ও বিমানবন্দর সড়ক-ঝিলমিল অংশের বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের কাজ শেষ হয়েছে। গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রথম অংশের কাজ চলছে। এছাড়া শহরের পূর্বাংশে বিআরটি-৭ নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি নারায়ণগঞ্জ থেকে ইস্টার্ন বাইপাস হয়ে আশুলিয়া পর্যন্ত যাবে। এর দৈর্ঘ্য হবে ৩৬ কিলোমিটার আর সম্ভাব্য ব্যয় হবে ২৮ কোটি ডলার।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০৩৫ সাল নাগাদ রাজধানীর যানবাহন চাহিদার প্রায় ৬৪ শতাংশ পূরণ করতে পারবে পাঁচটি মেট্রোরেল ও দুইটি বিআরটি। এটি মূলত রাজধানী ও আশপাশের জনগণের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করবে। তবে রাজধানীর বাকি ৩৬ শতাংশ যানবাহনের চাহিদা মেটানো ও অন্য জেলার সঙ্গে দ্রুত সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে বেশকিছু সড়ক উন্নয়ন ও এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে হবে। এজন্য চার পর্যায়ে ৯৬ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকার চারপাশে তিনটি বৃত্তাকার সড়ক নির্মাণ করতে হবে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ বৃত্তাকার সড়কের দৈর্ঘ্য হবে ৭৩ কিলোমিটার, মধ্যবর্তী ১০৮ ও রাজধানীর বাইরের বৃত্তাকার সড়কের দৈর্ঘ্য ১২৯ কিলোমিটার। এজন্য মোট ব্যয় হবে ৩৫ হজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এছাড়া ঢাকার সঙ্গে অন্য জেলার সংযোগ উন্নয়নে ২৯০ কিলোমিটার প্রাইমারি সড়ক ও ৪৭১ কিলোমিটার সেকেন্ডারি সড়ক উন্নয়ন করতে হবে। এতে ব্যয় হবে যথাক্রমে ১০ হাজার ৯৮৪ কোটি ও ১৮ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। এর বাইরে ছয়টি এক্সপ্রেসওয়ে পূর্ণ বা আংশিকভাবে থাকবে ঢাকায়। ২০ কিলোমিটার ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ বর্তমানে চলছে। আর ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ, ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ, ঢাকা-সিলেট এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ ও ঢাকা-ময়মনসিংহ এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ নির্মাণ করতে হবে। সব মিলিয়ে দৈর্ঘ্য হবে ১২৬ কিলোমিটার আর নির্মাণে ব্যয় হবে ৩১ হাজার ৪২ কোটি টাকা।

জানা গেছে, রাজধানী ও আশপাশের জেলা যানজটমুক্ত করতে ২০০৪ সালে প্রণয়ন করা হয় ২০ বছর মেয়াদি এসটিপি। তবে সঠিক বাস্তবায়নের অভাবে ১০ বছরেই প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে এটি। সমন্বয়ের অভাবে ১০ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। তাই আরএসটিপি বাস্তবায়নে সরকারের অন্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের পাশাপাশি স্বাধীনভাবে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষকে (ডিটিসিএ) করা পরামর্শ পরিবহন বিশেষজ্ঞদের। পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশলের বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সামছুল হক সংবাদকে বলেন, পরিকল্পনা প্রণয়নের পাশাপাশি তা বাস্তবায়নে জোর দেয়া জরুরি। ২০০৪ সালে এসটিপি প্রণয়নের পর তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। উল্টো এর বাইরে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ফলে এটি কার্যকারিতা হারিয়েছে। সংশোধিত এসটিপির ক্ষেত্রে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। তা না হলে পরিকল্পনার কোন সুফল পাওয়া যাবে না। আর ঢাকা ক্রমশ বাসযোগ্যতা হারাবে। তাই আরএসটিপি বাস্তবায়নে সরকারের অন্য সংস্থারে সঙ্গে সমন্বয়ের পাশাপাশি ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষকে (ডিটিসিএ) স্বাধীনভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি।