অটোরিকশা চালক থেকে অন্ধকার জগতের সম্রাট

অবশেষে পুলিশের অভিযানে ধরা পড়ল ডন আল-আমিন

  • বিলাসবহুল বাড়ি ও ফ্ল্যাটে তার বসবাস
  • নিজ বাড়িতে সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত টর্চার সেল

রাজধানীর অদূরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন এলাকার বাসিন্দা আল-আমিন এক সময় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে কোনমতে সংসার চালাত। কিন্তু হঠাৎ করে সে অন্ধকার জগতের ডন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে। গড়ে তোলে নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। অন্ধকার জগতের মাদকসম্রাট হিসেবে এখন গাজীপুরে তার ব্যাপক পরিচিতি। তার রয়েছে নিজস্ব টর্চার সেল। নিরীহ মানুষকে চাকরি দেয়ার কথা বলে টর্চার সেলে ডেকে নিয়ে জিম্মি করে নির্যাতন চালিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে। নির্মাণ করেছে সাততলা বাড়ি। নামে-বেনামে ফ্ল্যাটসহ বহু সম্পদের মালিক বনে গেছে সে।

সম্প্রতি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ গোপন খবরের ভিত্তিতে অন্ধকার জগতের এই ডনকে গ্রেফতার করেছে। তার সঙ্গে রয়েছে সহযোগীরা। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করা হয়েছে। তার বাহিনীর ক্যাডারদের ধরতে চলছে পুলিশের অভিযান। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পুলিশের এক গোপন প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ১৪ জুন গোপন খবরের ভিত্তিতে গাজীপুর মেট্রোপলিটন এলাকার সদর থানার ছোট দেওড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭ জন আল-আমিন, মনিরুল ইসলাম, আশরাফুল ইসলাম, ইয়াসমিন আক্তার, ব্ল্যাক শাহীন, মাসুদ ও রাশেলকে গ্রেফতার করেছে। তাদের আস্তানা থেকে ১২টি লোহার ধারালো অস্ত্র, তিনটি কালো রঙের মোটরওয়ালা ওয়্যারলেসসেট, একটি মেটাল ডিটেক্টর, পুলিশের পোশাক একসেট, ইয়াবা ট্যাবলেট ও গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক, ৪২ হাজার ৫০০ টাকা, গোপন টর্চার সেলের চারপাশে ব্যবহৃত ১০টি সিসিটিভি ক্যামরা উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্ন আইনে তার বিরুদ্ধে গাজীপুর সদর থানায় পৃথক ৩টি মামলা করা হয়েছে। মামলা নম্বর ২৭, ২৮ ও ২৯। তারিখ ১৫ জুন ২০১৯।

পুলিশের তথ্যে বলা হয়েছে, মাদক ব্যবসায়ী আল-আমিন, পিতা হযরত আলী, গ্রাম-ছোট দেওড়া, থানা-সদর, গাজীপুর। আল-আমিন দুই বছর আগে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহত করত। তার কিছু জমি থাকলেও তা সরকার অধিগ্রহণ করে তাকে টাকা দিয়েছে। এরপর হঠাৎ করে সে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে। বর্তমানে অটোরিকশা চালানো বাদ দিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে। সে অন্ধকার জগতে ঢুকে বিশাল এক সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে। একই সঙ্গে নিজে সন্ত্রাসী ও মাদকসম্্রাট হিসেবে এলাকায় আত্মপ্রকাশ করে। তার নিজ বাড়িতে এক বিশাল টর্চার সেল বানায়। নিরীহ মানুষকে ধরে নিয়ে তাদের ওপর বর্বর নির্যাতন চালিয়ে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করত। অন্ধকার জগতের ডন ও মাদক সম্্রাট এবং রাতারাতি বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার নেপথ্য উদ্ঘাটনে পুলিশের একাধিক টিম তদন্তে নেমেছে।

গাজীপুর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ মিজানুর রহমান বলেন, সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি দেয়ার কথা বলে এক যুবককে চাকরি দেয় আলী। পরে তাকে বাড়িতে আটক করে কড়া নজরদারিত্বে রাখে। একপর্যায়ে তার কাছে মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের টাকার জন্য তাকে টর্চার সেলে আটক করে নির্যাতন চালায়। তার চিৎকার যাতে কেউ শুনতে না পারে, এর জন্য উচ্চৈঃস্বরে ক্যাসেট চালাত। এরপর নির্যাতিতের পরিবার থেকে ফোনে মুক্তিপণ আদায় করত। সম্প্রতি সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়া ওই যুবক পুলিশকে ওই খবর দিলে (৯৯৯ নম্বরে) পুলিশ আরও গোপন তদন্ত করে অভিযান চালিয়ে অপরাধ জগতের এই ডনকে গ্রেফতার করে। গত এক থেকে দেড় বছরের ব্যবধানে সে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছে। তার সম্পর্কে আরও তথ্য উদ্ঘাটনে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি চলছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আনোয়ার হোসেনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আল-আমিন সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন। অন্ধকার জগতে তার সঙ্গে কারা জড়িত, তা বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

image
আরও খবর
বাস্তবায়ন হয়নি কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা
মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদকে চিহ্নিত করবে সরকার
আজও সাকিবে ভর করে অজিদের হারাতে চায় টাইগাররা
বাংলাদেশের কাঁধে ১১ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা
অজি পেস আক্রমণ নিয়ে আমরা চিন্তিত নই : সাকিব
দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ২৪১
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির তালিকা হচ্ছে
ঢাকার সড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে কমিটি
মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স নিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল
আ’লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ সাব কমিটির সম্মেলন
বিশ্বে শরণার্থী ৭০ মিলিয়ন
পিডব্লিউসির বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা টিআইবির
সংরক্ষণাগার না থাকায় বিপাকে চাষিরা
জাতিসংঘ মহাসচিবের পদত্যাগ দাবি

বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০১৯ , ৫ আষাঢ় ১৪২৫, ১৫ শাওয়াল ১৪৪০

অটোরিকশা চালক থেকে অন্ধকার জগতের সম্রাট

অবশেষে পুলিশের অভিযানে ধরা পড়ল ডন আল-আমিন

বাকী বিল্লাহ, গাজীপুর থেকে ফিরে

image

  • বিলাসবহুল বাড়ি ও ফ্ল্যাটে তার বসবাস
  • নিজ বাড়িতে সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত টর্চার সেল

রাজধানীর অদূরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন এলাকার বাসিন্দা আল-আমিন এক সময় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে কোনমতে সংসার চালাত। কিন্তু হঠাৎ করে সে অন্ধকার জগতের ডন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে। গড়ে তোলে নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। অন্ধকার জগতের মাদকসম্রাট হিসেবে এখন গাজীপুরে তার ব্যাপক পরিচিতি। তার রয়েছে নিজস্ব টর্চার সেল। নিরীহ মানুষকে চাকরি দেয়ার কথা বলে টর্চার সেলে ডেকে নিয়ে জিম্মি করে নির্যাতন চালিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে। নির্মাণ করেছে সাততলা বাড়ি। নামে-বেনামে ফ্ল্যাটসহ বহু সম্পদের মালিক বনে গেছে সে।

সম্প্রতি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ গোপন খবরের ভিত্তিতে অন্ধকার জগতের এই ডনকে গ্রেফতার করেছে। তার সঙ্গে রয়েছে সহযোগীরা। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করা হয়েছে। তার বাহিনীর ক্যাডারদের ধরতে চলছে পুলিশের অভিযান। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পুলিশের এক গোপন প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ১৪ জুন গোপন খবরের ভিত্তিতে গাজীপুর মেট্রোপলিটন এলাকার সদর থানার ছোট দেওড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭ জন আল-আমিন, মনিরুল ইসলাম, আশরাফুল ইসলাম, ইয়াসমিন আক্তার, ব্ল্যাক শাহীন, মাসুদ ও রাশেলকে গ্রেফতার করেছে। তাদের আস্তানা থেকে ১২টি লোহার ধারালো অস্ত্র, তিনটি কালো রঙের মোটরওয়ালা ওয়্যারলেসসেট, একটি মেটাল ডিটেক্টর, পুলিশের পোশাক একসেট, ইয়াবা ট্যাবলেট ও গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক, ৪২ হাজার ৫০০ টাকা, গোপন টর্চার সেলের চারপাশে ব্যবহৃত ১০টি সিসিটিভি ক্যামরা উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্ন আইনে তার বিরুদ্ধে গাজীপুর সদর থানায় পৃথক ৩টি মামলা করা হয়েছে। মামলা নম্বর ২৭, ২৮ ও ২৯। তারিখ ১৫ জুন ২০১৯।

পুলিশের তথ্যে বলা হয়েছে, মাদক ব্যবসায়ী আল-আমিন, পিতা হযরত আলী, গ্রাম-ছোট দেওড়া, থানা-সদর, গাজীপুর। আল-আমিন দুই বছর আগে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহত করত। তার কিছু জমি থাকলেও তা সরকার অধিগ্রহণ করে তাকে টাকা দিয়েছে। এরপর হঠাৎ করে সে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে। বর্তমানে অটোরিকশা চালানো বাদ দিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে। সে অন্ধকার জগতে ঢুকে বিশাল এক সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে। একই সঙ্গে নিজে সন্ত্রাসী ও মাদকসম্্রাট হিসেবে এলাকায় আত্মপ্রকাশ করে। তার নিজ বাড়িতে এক বিশাল টর্চার সেল বানায়। নিরীহ মানুষকে ধরে নিয়ে তাদের ওপর বর্বর নির্যাতন চালিয়ে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করত। অন্ধকার জগতের ডন ও মাদক সম্্রাট এবং রাতারাতি বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার নেপথ্য উদ্ঘাটনে পুলিশের একাধিক টিম তদন্তে নেমেছে।

গাজীপুর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ মিজানুর রহমান বলেন, সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি দেয়ার কথা বলে এক যুবককে চাকরি দেয় আলী। পরে তাকে বাড়িতে আটক করে কড়া নজরদারিত্বে রাখে। একপর্যায়ে তার কাছে মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের টাকার জন্য তাকে টর্চার সেলে আটক করে নির্যাতন চালায়। তার চিৎকার যাতে কেউ শুনতে না পারে, এর জন্য উচ্চৈঃস্বরে ক্যাসেট চালাত। এরপর নির্যাতিতের পরিবার থেকে ফোনে মুক্তিপণ আদায় করত। সম্প্রতি সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়া ওই যুবক পুলিশকে ওই খবর দিলে (৯৯৯ নম্বরে) পুলিশ আরও গোপন তদন্ত করে অভিযান চালিয়ে অপরাধ জগতের এই ডনকে গ্রেফতার করে। গত এক থেকে দেড় বছরের ব্যবধানে সে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছে। তার সম্পর্কে আরও তথ্য উদ্ঘাটনে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি চলছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আনোয়ার হোসেনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আল-আমিন সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন। অন্ধকার জগতে তার সঙ্গে কারা জড়িত, তা বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।