পিডব্লিউসির বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা টিআইবির

‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া ছাড়া সরকারের হাতে আর কোন বিকল্প নেই’- প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে পর্যবেক্ষণে বহুজাতিক পরামর্শক সেবা প্রতিষ্ঠান প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারস (পিডব্লিউসি) বাংলাদেশের এমন বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলছে, অনৈতিক ও দৃশ্যত অকার্যকর একটি পদক্ষেপের পক্ষে ‘ভারতেও এই সুবিধা দেয়া হয়েছিল’- এমন যুক্তি দেয়াটা রীতিমতো অনৈতিক। টিআইবি আশা করে, সরকার বরং কঠোর অবস্থা নেবে কালো টাকার মালিকদের বিরুদ্ধে, সুরক্ষা বা নতুন সুযোগ দেবে না এবং এর মাধ্যমে দুর্নীতির বিকাশের ঝুঁকি বৃদ্ধি করবে না। গতকাল এক বিবৃবিতে এমন প্রতিক্রিয়া দেয় টিআইবি।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কালো টাকা প্রায় অবাধ ও নামমাত্র কর প্রদান সাপেক্ষে বৈধতা প্রদান ও ২০১৯-২০ বাজেটে ঘোষিত গুরুত্বপূর্ণ খাতসমূহে বিনিয়োগের সুযোগ করে দেয়া অসাংবিধানিক, অনৈতিক, বৈষম্যমূলক ও দুর্নীতি সহায়ক। অথচ প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্স সম্পূর্ণ অযাচিত, উদ্দেশ্যমূলক ও অনৈতিকভাবে এই প্রস্তাবকে সমর্থন দিচ্ছে। অন্য কোন দেশে এ ধরনের অনিয়মের চর্চা হয়ে থাকলে তা এ দেশেও অনুকরণের প্রস্তাবের পেছনে কোন নৈতিক ভিত্তি থাকতে পারে না। সুতরাং কালো টাকা সাদা করার পক্ষে প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্স যেভাবে ভারতের উদাহরণ টেনে এনেছে, সেটি একেবারেই ভিত্তিহীন, অযৌক্তিক, অযাচিত ও অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, ভারতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। আর তাদের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফাইনান্স অ্যান্ড পলিসি ২০১৩ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, কালো টাকা ভারতের মোট জিডিপির ৭১ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকতে পারে। অর্থমূল্যে এর পরিমাণ ছিল ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ ভারত সরকার দুই দশকেরও বেশি সময় আগে দিয়েছিল, তা কার্যত কোন সুফলই দিতে পারেনি। বরং বিগত বছরগুলোয় কালো টাকা নিয়ন্ত্রণে ব্ল্যাক মানি ল’ এবং ফিউজিটিভ ক্রিমিনাল অফেন্ডার্স অ্যাক্টের মতো কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ এবং মুদ্রা রহিতকরণের মতো পদক্ষেপের পর ১ লাখ ৩০ হাজারকোটি রুপি অপ্রদর্শিত অর্থ করের আওতায় এসেছে আর জব্দ করা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি রুপির সম্পদ।

বিশ^ব্যাপী প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্সের কর্মকান্ডের যে খতিয়ান পাওয়া যায়, এতে তাদের কাছ থেকে এমন পর্যবেক্ষণ অপ্রত্যাশিত ছিল না বলেই মন্তব্য করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্সের বিরুদ্ধে এমএফ গ্লোবাল ৩ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণের মামলা করেছে। কারণ তাদের পরামর্শে ৬.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে প্রতিষ্ঠানটিকে শেষ পর্যন্ত দেউলিয়া হতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আরেক মার্কিন প্রতিষ্ঠান টেইলর বিন অ্যান্ড হোয়াইটেকারও দেউলিয়া হয়েছে কার্যত প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্সের ব্যর্থতার কারণে। এছাড়া ব্যাংক অব টোকিও-মিতসুবিশির অনুরোধে অর্থনৈতিক প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগের পর নিউইয়র্ক স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেসকে ২৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়ে রফা করতে বাধ্য হয়েছে প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্স। এছাড়া ব্রিটিশ সুপারমার্কেট চেইন টেসকো ৩০০ মিলিয়ন ডলার ভুয়া লাভ দেখিয়েছিল তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে- যখন প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্স তাদের অডিটরের দায়িত্বে ছিল। ফলে টেসকোর ব্যবসামূল্য প্রায় ২.৩ বিলিয়ন ডলার কমে যায়। এমন অনেক উদাহরণ দেয়া যাবে প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্স কর্তৃক বিভিন্ন অবৈধতা ও দুর্নীতির সহায়ক ভূমিকার দৃষ্টান্ত হিসেবে। সুতরাং তারা যে বাংলাদেশে কালো টাকার বিস্তারের পক্ষের শক্তির সমর্থনে যুক্তি দিতে পারে, এটাই স্বাভাবিক।

কালো টাকা সাদার করার সুযোগ দেয়ার পেছনে সরকারের যুক্তির বিষয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সব সরকারই এ সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে ১৯৭২ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ১৮ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি অপ্রদর্শিত অর্থ করের আওতায় এসেছে। সেখানে বাংলাদেশ ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৮ সালনাগাদ ৫ লাখকোটি থেকে ৭ লাখকোটি টাকার অপ্রদর্শিত অর্থ দেশের অর্থনীতিতে ক্রিয়াশীল ছিল। আমরা আশা করি, সরকার এই বাস্তবতা বিবেচনায় নেবে এবং দুষ্টের পালন না করে বরং কঠোর আইন করে এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে। তা না হলে দেশের ভালো করদাতারা নিরুৎসাহিত হবেন নিশ্চিতভাবেই এবং আমরা অবাক হব না যদি তারাও বাড়তি সুবিধা পাবেন- এই নিশ্চয়তা থেকে রাতারাতি কালো টাকার মালিক হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন। তাই আমরা প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা’র নীতিতেই আস্থা রাখতে চাই।

আরও খবর
বাস্তবায়ন হয়নি কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা
মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদকে চিহ্নিত করবে সরকার
আজও সাকিবে ভর করে অজিদের হারাতে চায় টাইগাররা
বাংলাদেশের কাঁধে ১১ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা
অজি পেস আক্রমণ নিয়ে আমরা চিন্তিত নই : সাকিব
দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ২৪১
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির তালিকা হচ্ছে
ঢাকার সড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে কমিটি
মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স নিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল
অবশেষে পুলিশের অভিযানে ধরা পড়ল ডন আল-আমিন
আ’লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ সাব কমিটির সম্মেলন
বিশ্বে শরণার্থী ৭০ মিলিয়ন
সংরক্ষণাগার না থাকায় বিপাকে চাষিরা
জাতিসংঘ মহাসচিবের পদত্যাগ দাবি

বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০১৯ , ৫ আষাঢ় ১৪২৫, ১৫ শাওয়াল ১৪৪০

কালো টাকা সাদার পক্ষে

পিডব্লিউসির বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা টিআইবির

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া ছাড়া সরকারের হাতে আর কোন বিকল্প নেই’- প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে পর্যবেক্ষণে বহুজাতিক পরামর্শক সেবা প্রতিষ্ঠান প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারস (পিডব্লিউসি) বাংলাদেশের এমন বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলছে, অনৈতিক ও দৃশ্যত অকার্যকর একটি পদক্ষেপের পক্ষে ‘ভারতেও এই সুবিধা দেয়া হয়েছিল’- এমন যুক্তি দেয়াটা রীতিমতো অনৈতিক। টিআইবি আশা করে, সরকার বরং কঠোর অবস্থা নেবে কালো টাকার মালিকদের বিরুদ্ধে, সুরক্ষা বা নতুন সুযোগ দেবে না এবং এর মাধ্যমে দুর্নীতির বিকাশের ঝুঁকি বৃদ্ধি করবে না। গতকাল এক বিবৃবিতে এমন প্রতিক্রিয়া দেয় টিআইবি।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কালো টাকা প্রায় অবাধ ও নামমাত্র কর প্রদান সাপেক্ষে বৈধতা প্রদান ও ২০১৯-২০ বাজেটে ঘোষিত গুরুত্বপূর্ণ খাতসমূহে বিনিয়োগের সুযোগ করে দেয়া অসাংবিধানিক, অনৈতিক, বৈষম্যমূলক ও দুর্নীতি সহায়ক। অথচ প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্স সম্পূর্ণ অযাচিত, উদ্দেশ্যমূলক ও অনৈতিকভাবে এই প্রস্তাবকে সমর্থন দিচ্ছে। অন্য কোন দেশে এ ধরনের অনিয়মের চর্চা হয়ে থাকলে তা এ দেশেও অনুকরণের প্রস্তাবের পেছনে কোন নৈতিক ভিত্তি থাকতে পারে না। সুতরাং কালো টাকা সাদা করার পক্ষে প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্স যেভাবে ভারতের উদাহরণ টেনে এনেছে, সেটি একেবারেই ভিত্তিহীন, অযৌক্তিক, অযাচিত ও অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, ভারতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। আর তাদের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফাইনান্স অ্যান্ড পলিসি ২০১৩ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, কালো টাকা ভারতের মোট জিডিপির ৭১ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকতে পারে। অর্থমূল্যে এর পরিমাণ ছিল ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ ভারত সরকার দুই দশকেরও বেশি সময় আগে দিয়েছিল, তা কার্যত কোন সুফলই দিতে পারেনি। বরং বিগত বছরগুলোয় কালো টাকা নিয়ন্ত্রণে ব্ল্যাক মানি ল’ এবং ফিউজিটিভ ক্রিমিনাল অফেন্ডার্স অ্যাক্টের মতো কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ এবং মুদ্রা রহিতকরণের মতো পদক্ষেপের পর ১ লাখ ৩০ হাজারকোটি রুপি অপ্রদর্শিত অর্থ করের আওতায় এসেছে আর জব্দ করা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি রুপির সম্পদ।

বিশ^ব্যাপী প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্সের কর্মকান্ডের যে খতিয়ান পাওয়া যায়, এতে তাদের কাছ থেকে এমন পর্যবেক্ষণ অপ্রত্যাশিত ছিল না বলেই মন্তব্য করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্সের বিরুদ্ধে এমএফ গ্লোবাল ৩ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণের মামলা করেছে। কারণ তাদের পরামর্শে ৬.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে প্রতিষ্ঠানটিকে শেষ পর্যন্ত দেউলিয়া হতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আরেক মার্কিন প্রতিষ্ঠান টেইলর বিন অ্যান্ড হোয়াইটেকারও দেউলিয়া হয়েছে কার্যত প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্সের ব্যর্থতার কারণে। এছাড়া ব্যাংক অব টোকিও-মিতসুবিশির অনুরোধে অর্থনৈতিক প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগের পর নিউইয়র্ক স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেসকে ২৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়ে রফা করতে বাধ্য হয়েছে প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্স। এছাড়া ব্রিটিশ সুপারমার্কেট চেইন টেসকো ৩০০ মিলিয়ন ডলার ভুয়া লাভ দেখিয়েছিল তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে- যখন প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্স তাদের অডিটরের দায়িত্বে ছিল। ফলে টেসকোর ব্যবসামূল্য প্রায় ২.৩ বিলিয়ন ডলার কমে যায়। এমন অনেক উদাহরণ দেয়া যাবে প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্স কর্তৃক বিভিন্ন অবৈধতা ও দুর্নীতির সহায়ক ভূমিকার দৃষ্টান্ত হিসেবে। সুতরাং তারা যে বাংলাদেশে কালো টাকার বিস্তারের পক্ষের শক্তির সমর্থনে যুক্তি দিতে পারে, এটাই স্বাভাবিক।

কালো টাকা সাদার করার সুযোগ দেয়ার পেছনে সরকারের যুক্তির বিষয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সব সরকারই এ সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে ১৯৭২ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ১৮ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি অপ্রদর্শিত অর্থ করের আওতায় এসেছে। সেখানে বাংলাদেশ ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৮ সালনাগাদ ৫ লাখকোটি থেকে ৭ লাখকোটি টাকার অপ্রদর্শিত অর্থ দেশের অর্থনীতিতে ক্রিয়াশীল ছিল। আমরা আশা করি, সরকার এই বাস্তবতা বিবেচনায় নেবে এবং দুষ্টের পালন না করে বরং কঠোর আইন করে এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে। তা না হলে দেশের ভালো করদাতারা নিরুৎসাহিত হবেন নিশ্চিতভাবেই এবং আমরা অবাক হব না যদি তারাও বাড়তি সুবিধা পাবেন- এই নিশ্চয়তা থেকে রাতারাতি কালো টাকার মালিক হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন। তাই আমরা প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা’র নীতিতেই আস্থা রাখতে চাই।