অস্ট্রেলিয়ার রানের পাহাড়

অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের পঞ্চম ওভারে ডেভিড ওয়ার্নারের দেয়া দুরূহ ক্যাচটা সাব্বির রহমান ফেলে না দিলে কি হতো তা বলা যাচ্ছে না। বাস্তবতা হলো নটিংহামের ব্যাটিংস্বর্গে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়ান দল ডেভিড ওয়ার্নারের সেঞ্চুরি, অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চের হাফ সেঞ্চুরি এবং চলতি বিশ্বকাপে আগের চারটা ম্যাচে নিজের ছায়া হয়ে থাকা ওসমান খাজার ঝড়ো হাফ সেঞ্চুরির সঙ্গে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ১০ বলে ৩২ রানের ইনিংসে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে অস্ট্রেলিয়া পাঁচ উইকেটে পেয়েছে ৩৮১ রানের বিশাল সংগ্রহ। মেথডে জয়ের জন্য বাংলাদেশের টার্গেট ৫০ ওভারে ৩৮২ রান। যা কিছুটা দুরূহ তো বটেই।

রুবেলকে একাদশে না রাখা নিয়ে যারা সমালোচনা করছিলেন, তারা এখন কি বলবেন? অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নটিংহামের ট্রেন্টব্রিজে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ম্যাচে রুবেলই সবচেয়ে খরুচে বোলার। ক্রিকেটের ‘ল অব এভারেজে’ সাকিব বল হাতে গতকাল ছিলেন নিস্প্রভ। পার্ট টাইম বোলার সৌম্য সরকারের মিডিয়াম পেসে পতন ঘটানো তিনটি উইকেট এবং তারই করা ৪৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে বিধ্বংসী গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের রান আউটের বাইরে একটা উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ। বাকি সব বোলারকে অজি ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টের বেধড়ক মার সহ্য করতে হয়েছে নিরবে। সাতের নিচে ইকোনমি রেট কেবল মিরাজের। সাকিব ৬ ওভারে দেন ৫০ রান, ইকোনমি রেট ৮.৩৩। মাশরাফির ইকোনমি ৭, মোস্তাফিজের ৭.৬৬, সৌম্যর ৭.২৫।

ব্যাটিং স্বর্গে অস্ট্রেলিয়ার ওপর শুরুতেই আঘাত হানার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল বাংলাদেশ দলের। কিছুটা দেখেশুনে ব্যাটিংয়ে থাকা ডেভিড ওয়ার্নার ১৮ বল মোকাবেলায় ১০ রানে থাকার সময়ে তার ক্যাচ ফেলে দেন বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো সুযোগ পাওয়া সাব্বির রহমান। মাশরাফির করা ওই ওভারে ক্যাচটা উঠেছিল ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে। সাব্বির বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সুযোগ পেয়ে উদারভাবে ওয়ার্নারকে যে জীবনটা দিয়েছিলেন, তার সদ্ব্যবহার করতে এতটুকু কার্পণ্য করেননি অজি ওপেনার। চলতি বিশ্বকাপে তুলে নিলেন নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি ক্যারিয়ারের ১৬তম সেঞ্চুরি তুলে নিতে ভয়ঙ্কর এই হার্ডহিটার খেলেছেন ১১০ বল, সাত বাউন্ডারির সঙ্গে হাঁকিয়েছেন দুটো ছক্কা। ওয়ার্নার এতটাই ক্যাকুলেটিভ ক্রিকেট খেলেছেন যে, প্রথম ৫০ রানে পৌঁছতে ৫৫ বলের পর দ্বিতীয় ৫০ রানও করেছেন তিনি ৫৫ বলে। তবে এরপরই বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন। পরের ৫০ রানে পৌঁছতে তার প্রয়োজন পড়ে মাত্র ২৯ বলের।

ডেভিড ওয়ার্নার শতরানে পৌঁছার পথে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ এবং ওসমান খাজাকে। ফিঞ্চ ওয়ার্নারের উদ্বোধনী তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছিল। জুটি ভাঙতে গলদঘর্ম হওয়া টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি কোন উপায় না দেখে বল তুলে দেন পার্টটাইম বোলার সৌম্য সরকারের হাতে। অধিনায়ককে হতাশ করেননি সৌম্য। এনে দেন গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রু। রুবেল হোসেনের হাতে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন পাঁচ বাউন্ডারি ও দুই ছক্কায় ৫১ বলে ৫৩ রানের ইনিংস খেলা অ্যারন ফিঞ্চ।

দলীয় ১২১ রানে প্রথম উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়ানদের রান দ্বিতীয় উইকেটে উঠে ১৯২ রান। দলীয় ৩১৩ রানের সময়ে ফেরেন ডেভিড ওয়ার্নার। এবারের সাফল্যটিও সৌম্য সরকারের। ১১০ বলে সেঞ্চুরি হাঁকানো ওয়ার্নার পরের ৩৭ বলে আরো ৬৬ রান তোলার পর ৪৫ তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ক্যাচ দেন থার্ডম্যানে। এবারও সৌম্যর জুড়ি রুবেল।

ইনিংসের শেষ ওভারগুলোতে ঝড় তোলার তাগিদে স্টিভেন স্মিথকে না পাঠিয়ে ব্যাটিং লাইন আপে প্রমোশন দিয়ে পাঠানো হয় গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে। উইকেটের চারপাশে বাংলাদেশের বোলারদের সীমানার দড়ি দেখাচ্ছিলেন ম্যাক্সওয়েল। এবারও ত্রাতার ভূমিকার দেখা গেল রুবেল-সৌম্য জুটিকে। সৌম্যর করা ৪৭ তম ওভারের দ্বিতীয় বলটা পয়েন্টে ঠেলেই দৌড় দিয়েছিলেন ম্যাক্সওয়েল। রুবেলের থ্রোয়ে ভাঙে তার স্ট্যাম্প। ফেরার আগে ১০ বলে দুটো বাউন্ডারি ও তিন ছক্কায় উপহার দেন ৩২ রান। একই ওভারের পঞ্চম বলে সৌম্য ফেরান বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরির পথে এগোতে থাকা ওসমান খাজাকে। উইকেটের পেছনে মুশফিকের গ্লাভসে বল জমা দেয়ার আগে খাজার স্কোর ৭২ বলে ৮৯ রান।

স্টিভেন স্মিথ ক্রিজে নেমেই হাঁকাতে চেয়ে মোস্তাফিজের শিকারে পরিণত হন। অবশ্য ৪৮তম ওভারে ব্যাটিংয়ে নামলে আর থিতু হওয়ার সময় পাওয়ার কথাও নয়। মোস্তাফিজের বল সরাসরি স্মিথের প্যাডে আঘাত করলে লেগ বিফোর উইকেট হন এক রান করা স্মিথ। রিভিউ নিয়েও রক্ষা হয়নি তার। বৃষ্টির কারণে ৪৯তম ওভারে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। বৃষ্টির পর ঝলমলে রোদে আবারও ব্যাটিংয়ে নামে অজিরা। মার্কাস স্টয়নিস (১) ও অ্যালেক্স ক্যারে (১১) অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়ার সময়ে অজিদের সংগ্রহ ৩৮১ রান। জয়ের জন্য অসম্ভবকে সম্ভব করে টাইগারদের করতে হবে ৩৮২ রান।

শুক্রবার, ২১ জুন ২০১৯ , ৭ আষাঢ় ১৪২৫, ১৭ শাওয়াল ১৪৪০

অস্ট্রেলিয়ার রানের পাহাড়

বিশেষ প্রতিনিধি

অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের পঞ্চম ওভারে ডেভিড ওয়ার্নারের দেয়া দুরূহ ক্যাচটা সাব্বির রহমান ফেলে না দিলে কি হতো তা বলা যাচ্ছে না। বাস্তবতা হলো নটিংহামের ব্যাটিংস্বর্গে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়ান দল ডেভিড ওয়ার্নারের সেঞ্চুরি, অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চের হাফ সেঞ্চুরি এবং চলতি বিশ্বকাপে আগের চারটা ম্যাচে নিজের ছায়া হয়ে থাকা ওসমান খাজার ঝড়ো হাফ সেঞ্চুরির সঙ্গে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ১০ বলে ৩২ রানের ইনিংসে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে অস্ট্রেলিয়া পাঁচ উইকেটে পেয়েছে ৩৮১ রানের বিশাল সংগ্রহ। মেথডে জয়ের জন্য বাংলাদেশের টার্গেট ৫০ ওভারে ৩৮২ রান। যা কিছুটা দুরূহ তো বটেই।

রুবেলকে একাদশে না রাখা নিয়ে যারা সমালোচনা করছিলেন, তারা এখন কি বলবেন? অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নটিংহামের ট্রেন্টব্রিজে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ম্যাচে রুবেলই সবচেয়ে খরুচে বোলার। ক্রিকেটের ‘ল অব এভারেজে’ সাকিব বল হাতে গতকাল ছিলেন নিস্প্রভ। পার্ট টাইম বোলার সৌম্য সরকারের মিডিয়াম পেসে পতন ঘটানো তিনটি উইকেট এবং তারই করা ৪৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে বিধ্বংসী গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের রান আউটের বাইরে একটা উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ। বাকি সব বোলারকে অজি ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টের বেধড়ক মার সহ্য করতে হয়েছে নিরবে। সাতের নিচে ইকোনমি রেট কেবল মিরাজের। সাকিব ৬ ওভারে দেন ৫০ রান, ইকোনমি রেট ৮.৩৩। মাশরাফির ইকোনমি ৭, মোস্তাফিজের ৭.৬৬, সৌম্যর ৭.২৫।

ব্যাটিং স্বর্গে অস্ট্রেলিয়ার ওপর শুরুতেই আঘাত হানার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল বাংলাদেশ দলের। কিছুটা দেখেশুনে ব্যাটিংয়ে থাকা ডেভিড ওয়ার্নার ১৮ বল মোকাবেলায় ১০ রানে থাকার সময়ে তার ক্যাচ ফেলে দেন বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো সুযোগ পাওয়া সাব্বির রহমান। মাশরাফির করা ওই ওভারে ক্যাচটা উঠেছিল ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে। সাব্বির বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সুযোগ পেয়ে উদারভাবে ওয়ার্নারকে যে জীবনটা দিয়েছিলেন, তার সদ্ব্যবহার করতে এতটুকু কার্পণ্য করেননি অজি ওপেনার। চলতি বিশ্বকাপে তুলে নিলেন নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি ক্যারিয়ারের ১৬তম সেঞ্চুরি তুলে নিতে ভয়ঙ্কর এই হার্ডহিটার খেলেছেন ১১০ বল, সাত বাউন্ডারির সঙ্গে হাঁকিয়েছেন দুটো ছক্কা। ওয়ার্নার এতটাই ক্যাকুলেটিভ ক্রিকেট খেলেছেন যে, প্রথম ৫০ রানে পৌঁছতে ৫৫ বলের পর দ্বিতীয় ৫০ রানও করেছেন তিনি ৫৫ বলে। তবে এরপরই বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন। পরের ৫০ রানে পৌঁছতে তার প্রয়োজন পড়ে মাত্র ২৯ বলের।

ডেভিড ওয়ার্নার শতরানে পৌঁছার পথে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ এবং ওসমান খাজাকে। ফিঞ্চ ওয়ার্নারের উদ্বোধনী তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছিল। জুটি ভাঙতে গলদঘর্ম হওয়া টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি কোন উপায় না দেখে বল তুলে দেন পার্টটাইম বোলার সৌম্য সরকারের হাতে। অধিনায়ককে হতাশ করেননি সৌম্য। এনে দেন গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রু। রুবেল হোসেনের হাতে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন পাঁচ বাউন্ডারি ও দুই ছক্কায় ৫১ বলে ৫৩ রানের ইনিংস খেলা অ্যারন ফিঞ্চ।

দলীয় ১২১ রানে প্রথম উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়ানদের রান দ্বিতীয় উইকেটে উঠে ১৯২ রান। দলীয় ৩১৩ রানের সময়ে ফেরেন ডেভিড ওয়ার্নার। এবারের সাফল্যটিও সৌম্য সরকারের। ১১০ বলে সেঞ্চুরি হাঁকানো ওয়ার্নার পরের ৩৭ বলে আরো ৬৬ রান তোলার পর ৪৫ তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ক্যাচ দেন থার্ডম্যানে। এবারও সৌম্যর জুড়ি রুবেল।

ইনিংসের শেষ ওভারগুলোতে ঝড় তোলার তাগিদে স্টিভেন স্মিথকে না পাঠিয়ে ব্যাটিং লাইন আপে প্রমোশন দিয়ে পাঠানো হয় গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে। উইকেটের চারপাশে বাংলাদেশের বোলারদের সীমানার দড়ি দেখাচ্ছিলেন ম্যাক্সওয়েল। এবারও ত্রাতার ভূমিকার দেখা গেল রুবেল-সৌম্য জুটিকে। সৌম্যর করা ৪৭ তম ওভারের দ্বিতীয় বলটা পয়েন্টে ঠেলেই দৌড় দিয়েছিলেন ম্যাক্সওয়েল। রুবেলের থ্রোয়ে ভাঙে তার স্ট্যাম্প। ফেরার আগে ১০ বলে দুটো বাউন্ডারি ও তিন ছক্কায় উপহার দেন ৩২ রান। একই ওভারের পঞ্চম বলে সৌম্য ফেরান বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরির পথে এগোতে থাকা ওসমান খাজাকে। উইকেটের পেছনে মুশফিকের গ্লাভসে বল জমা দেয়ার আগে খাজার স্কোর ৭২ বলে ৮৯ রান।

স্টিভেন স্মিথ ক্রিজে নেমেই হাঁকাতে চেয়ে মোস্তাফিজের শিকারে পরিণত হন। অবশ্য ৪৮তম ওভারে ব্যাটিংয়ে নামলে আর থিতু হওয়ার সময় পাওয়ার কথাও নয়। মোস্তাফিজের বল সরাসরি স্মিথের প্যাডে আঘাত করলে লেগ বিফোর উইকেট হন এক রান করা স্মিথ। রিভিউ নিয়েও রক্ষা হয়নি তার। বৃষ্টির কারণে ৪৯তম ওভারে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। বৃষ্টির পর ঝলমলে রোদে আবারও ব্যাটিংয়ে নামে অজিরা। মার্কাস স্টয়নিস (১) ও অ্যালেক্স ক্যারে (১১) অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়ার সময়ে অজিদের সংগ্রহ ৩৮১ রান। জয়ের জন্য অসম্ভবকে সম্ভব করে টাইগারদের করতে হবে ৩৮২ রান।