পাওনা ৫০ হাজার কোটি টাকা
বাংলাদেশের শীর্ষ ৩০০ ঋণখেলাপির তালিকা সংসদে প্রকাশ করা হয়েছে। শীর্ষ ৩০০ ঋণখেলাপির কাছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাওনা আছে ৫০ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। এদিকে দেশে বর্তমানে ঋণখেলাপির সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৯০ জন এবং খেলাপি ঋণের অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ২ হাজার ৩১৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। গতকাল একাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় (বাজেট) অধিবেশনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. ইসরাফিল আলম এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য লুৎফুন নেসা খানের পৃথক দুটি প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব তালিকা ও তথ্য প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানির কাছ থেকে পাঁচ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছেন, এমন ১৪ হাজার ৬১৭ জনের পূর্ণাঙ্গ তথ্যও দেন অর্থমন্ত্রী। এর আগে বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর পর্ব টেবিলে উপস্থাপিত হয়।
অর্থমন্ত্রীর দেয়া তালিকা অনুযায়ী শীর্ষ ১০ ঋণখেলাপির তালিকা : চট্টগ্রামের সামানাজ সুপার অয়েল (এক হাজার ৪৯ কোটি), গাজীপুরের গ্যালাক্সি সোয়েটার অ্যান্ড ইয়ার্ন ডায়িং (৯৮৪ কোটি), সাভারের রিমেক্স ফুটওয়্যার (৯৭৬ কোটি), ঢাকার কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেম (৮২৮ কোটি), চট্টগ্রামের মাহিন এন্টারপ্রাইজ (৮২৫ কোটি), ঢাকার রূপালী কম্পোজিট (৭৯৮ কোটি), ঢাকার ক্রিসেন্ট লেদার ওয়্যার (৭৭৬ কোটি), চট্টগ্রামের এসএ অয়েল রিফাইনারি (৭০৭ কোটি), গাজীপুরের সুপ্রভ কম্পোজিট নিট (৬১০ কোটি), গ্রামীণ শক্তি (৬০১ কোটি)।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, মার্চ প্রান্তিকে শুধু ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ডিসেম্বরের তুলনায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। এটিই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। তথ্যে দেখা যায়, জানু-মার্চ প্রান্তিকে ১৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকাকে শ্রেণীকৃত ঋণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রান্তিক হিসেবে এমন বৃদ্ধি আগে হয়নি। এটিও খেলাপি ঋণ সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, এখন মোট ঋণের ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ খেলাপি ঋণ। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ছিল ১০ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং ২০১৮ সালের মার্চে শতাংশ হিসেবে তা ছিল ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০১৮ সালের শেষে ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঋণখেলাপিদের একগুচ্ছ সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। ফলে অনেক ঋণখেলাপি টাকা পরিশোধ না করে অপেক্ষায় রয়েছে সেই সুবিধা নেয়ার আশায়। সেই ঘোষণা শেষ পর্যন্ত সত্য হয় ১৬ মে। সেদিন বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণখেলাপিদের জন্য একগুচ্ছ বিশেষ সুবিধা প্রকাশ করে। নতুন নীতি অনুযায়ী ঋণখেলাপিরা তাদের ঋণ বর্তমানের ১০ থেকে ৫০ শতাংশ হারের পরিবর্তে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে শ্রেণীকৃত ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারবে। যদিও বা শেষ পর্যন্ত হাইকোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ঘোষণার ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। এই স্থগিতাদেশ এ মাসের শেষের দিকে শেষ হয়ে যেতে পারে। তাই খেলাপি গ্রাহকরা এখনও মনে করছেন যে, তাদের সেই সুবিধাটি পুনর্বহাল থাকবে।
বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, এই সিদ্ধন্তের মাধ্যমে যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন কিন্তু সেটি ফেরত দিচ্ছে না, তাদের শাস্তির বদলে উল্টো সুবিধা দেয়া হচ্ছে। ফলে দেশে ঋণখেলাপির পরিমাণ আর কমবে না। বরং বাড়তে থাকবে। অনেকে ইচ্ছকৃতভাবে খেলাপি হতে চাইবে। কেননা খেলাপি হলেই লাভ বেশি।
এ বিষয়ে সাবেক ব্যাংকার নুরুল আমিন বলেন, ২০১৫ সালে ১৫টি ঋণখেলাপি বড় কোম্পানিকে বিশেষ ছাড় দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তখন মাত্র দুটি কোম্পানি টাকা পরিশোধ করেছিল। খুব সুখকর রেজাল্ট আমরা লক্ষ্য করিনি। মাত্র দুটি কোম্পানি টাকা পরিশোধ করেছিল। বাকিরা টাকা না দিয়ে আবার খেলাপি হয়েছেন। অথচ অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে আ হ ম মুস্তফা কামাল ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশে আর এক টাকাও খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়তে দেয়া হবে না।
অর্থমন্ত্রী গতকাল সংসদে জানান, শীর্ষ ৩০০ ঋণখেলাপির কাছে পাওনার পরিমাণ ৭০ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা আর শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ ৫২ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। সংসদ সদস্য মো. ইসরাফিল আলমের অপর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সুদ মওকুফ সুবিধা প্রাপ্ত ঋণ গ্রহীতা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অনুমোদিত শর্ত মোতাবেক সুদ মওকুফ-উত্তর অবশিষ্ট অর্থ পরিশোধ করতে পারলে অনুমোদিত সুদ মওকুফ সুবিধা কার্যকর হয়। কোন অবস্থাতেই মূল ঋণ মওকুফ করা যায় না।
ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য লুৎফুন নেসা খানের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি ডাটাবেজে রক্ষিত ডিসেম্বর ২০১৮ ভিত্তিক দেশের সব তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপির সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৯০ জন এবং খেলাপি অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ২ হাজার ৩১৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। তিনি জানান, ২০১৫ সালে ঋণখেলাপির সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১১ হাজার ৯৫৪ জন এবং তাদের কাছে প্রাপ্ত ঋণের অর্থের পরিমাণ ছিল ৫৯ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে ঋণখেলাপির সংখ্যা বেড়েছে ৫৮ হাজার ৪৩৬ এবং খেলাপি অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ৪৩ হাজার ২১০ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
অর্থমন্ত্রী জানান, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেয়া ১৪ হাজার ৬১৭ জনের বড় একটি অংশ ঋণখেলাপি, যাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ১৮৩ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে দেশে ১৫ হাজার ৫৯ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে : চলতি অর্থবছরে মে পর্যন্ত প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১৫ হাজার ৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ হাজার ৪৬২ মিলিয়ন ডলার বেশি। গতকাল সংসদে সরকারি দলের সদস্য মো. আনোয়ারুল আজীমের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব তথ্য জানান।
দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ৫ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার : সরকারি দলের সদস্য মোরশেদ আলমের অপর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গত মে পর্যন্ত দাতা দেশ/ সংস্থাসমূহের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সর্বমোট ৫ হাজার ২১৩ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ঋণ বাবদ ৪ হাজার ৯৭৪ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং অনুদান বাবদ ২৩৮ দশমিক ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওয়া গেছে।
দেশে টিআইএনধারী করদাতার সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ ৫০ হাজার : সরকারি দলের মামুনুর রশীদ কিরণের এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, দেশে বর্তমানে টিআইএনধারী করদাতার সংখ্যা ৪০ লাখ ৩৭ হাজার ৪২৯ জন। গতকাল সংসদে তিনি বলেন, করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সরকার করদাতা শনাক্তকরণ ও কর আদায় আরও ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। অর্থমন্ত্রী সরকারি দলের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর অপর এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে জানান, চলতি অর্থ বছরে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮০ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৯১ হাজার ৯৫৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা আদায় হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ৬৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
রবিবার, ২৩ জুন ২০১৯ , ৯ আষাঢ় ১৪২৫, ১৯ শাওয়াল ১৪৪০
পাওনা ৫০ হাজার কোটি টাকা
সংসদ বার্তা পরিবেশক
বাংলাদেশের শীর্ষ ৩০০ ঋণখেলাপির তালিকা সংসদে প্রকাশ করা হয়েছে। শীর্ষ ৩০০ ঋণখেলাপির কাছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাওনা আছে ৫০ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। এদিকে দেশে বর্তমানে ঋণখেলাপির সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৯০ জন এবং খেলাপি ঋণের অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ২ হাজার ৩১৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। গতকাল একাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় (বাজেট) অধিবেশনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. ইসরাফিল আলম এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য লুৎফুন নেসা খানের পৃথক দুটি প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব তালিকা ও তথ্য প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানির কাছ থেকে পাঁচ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছেন, এমন ১৪ হাজার ৬১৭ জনের পূর্ণাঙ্গ তথ্যও দেন অর্থমন্ত্রী। এর আগে বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর পর্ব টেবিলে উপস্থাপিত হয়।
অর্থমন্ত্রীর দেয়া তালিকা অনুযায়ী শীর্ষ ১০ ঋণখেলাপির তালিকা : চট্টগ্রামের সামানাজ সুপার অয়েল (এক হাজার ৪৯ কোটি), গাজীপুরের গ্যালাক্সি সোয়েটার অ্যান্ড ইয়ার্ন ডায়িং (৯৮৪ কোটি), সাভারের রিমেক্স ফুটওয়্যার (৯৭৬ কোটি), ঢাকার কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেম (৮২৮ কোটি), চট্টগ্রামের মাহিন এন্টারপ্রাইজ (৮২৫ কোটি), ঢাকার রূপালী কম্পোজিট (৭৯৮ কোটি), ঢাকার ক্রিসেন্ট লেদার ওয়্যার (৭৭৬ কোটি), চট্টগ্রামের এসএ অয়েল রিফাইনারি (৭০৭ কোটি), গাজীপুরের সুপ্রভ কম্পোজিট নিট (৬১০ কোটি), গ্রামীণ শক্তি (৬০১ কোটি)।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, মার্চ প্রান্তিকে শুধু ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ডিসেম্বরের তুলনায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। এটিই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। তথ্যে দেখা যায়, জানু-মার্চ প্রান্তিকে ১৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকাকে শ্রেণীকৃত ঋণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রান্তিক হিসেবে এমন বৃদ্ধি আগে হয়নি। এটিও খেলাপি ঋণ সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, এখন মোট ঋণের ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ খেলাপি ঋণ। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ছিল ১০ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং ২০১৮ সালের মার্চে শতাংশ হিসেবে তা ছিল ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০১৮ সালের শেষে ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঋণখেলাপিদের একগুচ্ছ সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। ফলে অনেক ঋণখেলাপি টাকা পরিশোধ না করে অপেক্ষায় রয়েছে সেই সুবিধা নেয়ার আশায়। সেই ঘোষণা শেষ পর্যন্ত সত্য হয় ১৬ মে। সেদিন বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণখেলাপিদের জন্য একগুচ্ছ বিশেষ সুবিধা প্রকাশ করে। নতুন নীতি অনুযায়ী ঋণখেলাপিরা তাদের ঋণ বর্তমানের ১০ থেকে ৫০ শতাংশ হারের পরিবর্তে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে শ্রেণীকৃত ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারবে। যদিও বা শেষ পর্যন্ত হাইকোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ঘোষণার ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। এই স্থগিতাদেশ এ মাসের শেষের দিকে শেষ হয়ে যেতে পারে। তাই খেলাপি গ্রাহকরা এখনও মনে করছেন যে, তাদের সেই সুবিধাটি পুনর্বহাল থাকবে।
বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, এই সিদ্ধন্তের মাধ্যমে যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন কিন্তু সেটি ফেরত দিচ্ছে না, তাদের শাস্তির বদলে উল্টো সুবিধা দেয়া হচ্ছে। ফলে দেশে ঋণখেলাপির পরিমাণ আর কমবে না। বরং বাড়তে থাকবে। অনেকে ইচ্ছকৃতভাবে খেলাপি হতে চাইবে। কেননা খেলাপি হলেই লাভ বেশি।
এ বিষয়ে সাবেক ব্যাংকার নুরুল আমিন বলেন, ২০১৫ সালে ১৫টি ঋণখেলাপি বড় কোম্পানিকে বিশেষ ছাড় দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তখন মাত্র দুটি কোম্পানি টাকা পরিশোধ করেছিল। খুব সুখকর রেজাল্ট আমরা লক্ষ্য করিনি। মাত্র দুটি কোম্পানি টাকা পরিশোধ করেছিল। বাকিরা টাকা না দিয়ে আবার খেলাপি হয়েছেন। অথচ অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে আ হ ম মুস্তফা কামাল ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশে আর এক টাকাও খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়তে দেয়া হবে না।
অর্থমন্ত্রী গতকাল সংসদে জানান, শীর্ষ ৩০০ ঋণখেলাপির কাছে পাওনার পরিমাণ ৭০ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা আর শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ ৫২ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। সংসদ সদস্য মো. ইসরাফিল আলমের অপর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সুদ মওকুফ সুবিধা প্রাপ্ত ঋণ গ্রহীতা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অনুমোদিত শর্ত মোতাবেক সুদ মওকুফ-উত্তর অবশিষ্ট অর্থ পরিশোধ করতে পারলে অনুমোদিত সুদ মওকুফ সুবিধা কার্যকর হয়। কোন অবস্থাতেই মূল ঋণ মওকুফ করা যায় না।
ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য লুৎফুন নেসা খানের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি ডাটাবেজে রক্ষিত ডিসেম্বর ২০১৮ ভিত্তিক দেশের সব তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপির সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৯০ জন এবং খেলাপি অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ২ হাজার ৩১৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। তিনি জানান, ২০১৫ সালে ঋণখেলাপির সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১১ হাজার ৯৫৪ জন এবং তাদের কাছে প্রাপ্ত ঋণের অর্থের পরিমাণ ছিল ৫৯ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে ঋণখেলাপির সংখ্যা বেড়েছে ৫৮ হাজার ৪৩৬ এবং খেলাপি অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ৪৩ হাজার ২১০ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
অর্থমন্ত্রী জানান, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেয়া ১৪ হাজার ৬১৭ জনের বড় একটি অংশ ঋণখেলাপি, যাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ১৮৩ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে দেশে ১৫ হাজার ৫৯ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে : চলতি অর্থবছরে মে পর্যন্ত প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১৫ হাজার ৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ হাজার ৪৬২ মিলিয়ন ডলার বেশি। গতকাল সংসদে সরকারি দলের সদস্য মো. আনোয়ারুল আজীমের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব তথ্য জানান।
দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ৫ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার : সরকারি দলের সদস্য মোরশেদ আলমের অপর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গত মে পর্যন্ত দাতা দেশ/ সংস্থাসমূহের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সর্বমোট ৫ হাজার ২১৩ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ঋণ বাবদ ৪ হাজার ৯৭৪ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং অনুদান বাবদ ২৩৮ দশমিক ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওয়া গেছে।
দেশে টিআইএনধারী করদাতার সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ ৫০ হাজার : সরকারি দলের মামুনুর রশীদ কিরণের এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, দেশে বর্তমানে টিআইএনধারী করদাতার সংখ্যা ৪০ লাখ ৩৭ হাজার ৪২৯ জন। গতকাল সংসদে তিনি বলেন, করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সরকার করদাতা শনাক্তকরণ ও কর আদায় আরও ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। অর্থমন্ত্রী সরকারি দলের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর অপর এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে জানান, চলতি অর্থ বছরে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮০ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৯১ হাজার ৯৫৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা আদায় হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ৬৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ।