বাংলাদেশের লড়াকু সংগ্রহ

ডানহাতি আফগান স্পিনারদের সামাল দিতে টাইগারদের থিংক ট্যাংক ভেঙেছিল ওপেনিং কম্বিনেশন, পাকিস্তানি আম্পায়ার আলিম দারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে ব্যাকফায়ার করল সেই কৌশল। ২০১৫ বিশ্বকাপে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচে টাইগারদের বিপক্ষে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দেয়া পাকিস্তানি আম্পায়ার আবারও বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হিসাবে আবির্ভূত হলেন টিভি রিপ্লেতে পরিস্কার দেখা গেল লিটন দাসের ব্যাটে লাগা বলটায় হাশমতউল্লাহ শহিদির হাতে লেগে মাটি স্পর্শ করছে। অথচ সেই ক্যাচে থার্ড আম্পায়ার আলিম দারের সিদ্ধান্তে আউট হয়ে গেলেন ফর্মের মধ্যে থাকা টাইগার ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাস। তামিম-সাকিব-মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ-মোসাদ্দেকের ব্যাটে চড়ে শুরুর ধাক্কা কতটুকু সামাল দেয়া গিয়েছিল সেই হিসাব করা যাবে ম্যাচ শেষে। তবে, ছন্দপতন যে হয়েছিল, তা বলে দেয়া যায় কোন চিন্তা না করে। আপাতত সাউদাম্পটনে বিশ্বকাপের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ দলের স্কোর নির্ধারিত ৫০ ওভারে সাত উইকেটে ২৬২ রান। জয়ের জন্য আফগানদের টার্গেট ২৬৩ রান।

নির্বাচকরা সোমবারের ম্যাচে তামিমের উদ্বোধনী পার্টনার হিসাবে সৌম্য সরকারের জায়গায় পাঠিয়েছিলেন লিটন কুমার দাসকে। আফগান স্পিন ভালোই সামাল দিচ্ছিলেন এই ড্যাশিং ব্যাটসম্যান। এতদিন প্রথম বলটি সবসময় তামিম খেলতেন, সোমবার খেললেন লিটন। ছন্দে থাকা লিটনকে (১৬) ফিরে যেতে হয়েছে পাকিস্তানি আম্পায়ার আলিম দারের যাচ্ছেতাই সিদ্ধান্তের বলি হয়ে। মুজিব-উর-রহমানের বলে শর্ট কাভারে ক্যাচ নেন হাশমতউল্লাহ শহিদি। ফিল্ড আম্পায়ার নিশ্চিত ছিলেন না আউট নিয়ে। তাই থার্ড আম্পায়ারের সাহায্য চাওয়া হয়। টিভি রিপ্লেতে পরিস্কার দেখা যায়, বলটি শহিদির হাত ছুঁয়ে মাটি স্পর্শ করেছে। তারপরও আলিম দারের সিদ্ধান্তে কাটা পড়েন লিটন।

বিতর্কিত এই আউটের পর মনঃসংযোগে সমস্যা হচ্ছিল তামিম-সাকিবের। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার মিশনে নামেন টাইগারদের বহুল পরীক্ষিত এই দুই সৈনিক। দ্বিতীয় উইকেটে এরা ৫৯ রান যোগ করতেই আবারও ছন্দপতন। মোহাম্মদ নবির বলে বোল্ড হয়ে যান ৫৩ বলে ৩৬ রান করা তামিম ইকবাল।

রশিদের বলে সাকিবের বিপক্ষেও লেগ বিফোর উইকেটের আবেদনে সাড়া দিয়েছিলেন ফিল্ড আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে সেই সিদ্ধান্ত বাতিলে বাধ্য করেন সাকিব। আম্পায়ারদের বার বার এহেন আচরণে স্বাভাবিক খেলাটাই তখন হয়ে উঠছিল দুঃসাধ্য। মনে হচ্ছিল আফগানিস্তানের ১১ ক্রিকেটারের সঙ্গে তিন আম্পায়ারও সম্ভবত বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নেমেছে।

তামিম ফেরার পর মুশফিকের সঙ্গে সাকিবের জুটিটা তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছিল। চলতি বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচে টানা হাফ সেঞ্চুরি হাঁকানো সাকিব আল হাসানের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরিটাও পূর্ণ হয়ে যায়। ৬৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করে ব্যক্তিগত ৫১ রানেই মুজিব উর রহমানের দ্বিতীয় শিকার হন বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার। ভাঙে ৬১ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি।

মুশফিকের সঙ্গী হন সৌম্য সরকার। ব্যাটিং অর্ডারে পাঁচ নম্বরে নামা সৌম্য সরকার ক্রিজে সেট হওয়ারই সময় পাননি। মুজিব-উর-রহমানের বলে লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন ৩ রানে। রিভিউ নিয়েও সিদ্ধান্ত পাল্টানো যায়নি।

ভায়রা ভাই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে বাংলাদেশকে আবারও ম্যাচে ফেরান মুশফিক। ৫৬ বলে ক্যারিয়ারের ৩৫তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। হ্যামস্ট্রিংয়ে প্রচ- আঘাত সত্ত্বেও ব্যান্ডেজ বেধে মুশফিককে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছিলেন মাহমুদুল্লাহ। ষষ্ঠ উইকেটে ৫৬ রান আসার পর গুলবাদিন নাইবের বলে ২৭ রানে আউট হয়ে যান মাহমুদুল্লাহ, ক্যাচ দিয়েছেন মোহাম্মদ নবীর হাতে।

উইকেটে এসে মুশফিককে দারুণ সঙ্গ দেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। একের পর এক স্ট্রোক খেলে যাচ্ছিলেন তিনি। যোগ্য সঙ্গী পেয়ে বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন মুশফিক। ওভারও কমে আসছিল। ৪৯তম ওভারে রান তোলার তাড়া থেকেই দৌলত জাদরানকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মোহাম্মদ নবির তালুবন্দী হন ৮৭ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ৮৩ করা মুশফিক। গুলবাদিন নাইবের করা ইনিংসের শেষ বলে বোল্ড হওয়ার আগে মোসাদ্দেক খেলেন ২৪ বলে ৩৫ রানের ঝড়ো ইনিংস। নির্ধারিত ৫০ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ২৬২ রান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ৫০ ওভারে ২৬২/৭ (লিটন ১৬, তামিম ৩৬, সাকিব ৫১, মুশফিক ৮৩, সৌম্য ৩, মাহমুদউল্লাহ ২৭, মোসাদ্দেক ৩৫, সাইফ ২*; উইকেট পতন: ১/২৩, ২/৮২, ৩/১৪৩, ৪/১৫১, ৫/২০৭, ৬/২৫১, ৭/৬২; বোলিং: মুজিব ১০-০-৩৯-৩, দওলত ৯-০-৬৪-১, নবি ১০-০-৪৪-১, গুলবাদিন ১০-১-৫৬-২, রশিদ ১০-০-৫২-০, রহমত ১-০-৭-০)।

মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০১৯ , ১১ আষাঢ় ১৪২৫, ২১ শাওয়াল ১৪৪০

বাংলাদেশের লড়াকু সংগ্রহ

বিশেষ প্রতিনিধি

image

হাফ সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকের পুল শট খেলার একটি মুহূর্ত

ডানহাতি আফগান স্পিনারদের সামাল দিতে টাইগারদের থিংক ট্যাংক ভেঙেছিল ওপেনিং কম্বিনেশন, পাকিস্তানি আম্পায়ার আলিম দারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে ব্যাকফায়ার করল সেই কৌশল। ২০১৫ বিশ্বকাপে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচে টাইগারদের বিপক্ষে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দেয়া পাকিস্তানি আম্পায়ার আবারও বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হিসাবে আবির্ভূত হলেন টিভি রিপ্লেতে পরিস্কার দেখা গেল লিটন দাসের ব্যাটে লাগা বলটায় হাশমতউল্লাহ শহিদির হাতে লেগে মাটি স্পর্শ করছে। অথচ সেই ক্যাচে থার্ড আম্পায়ার আলিম দারের সিদ্ধান্তে আউট হয়ে গেলেন ফর্মের মধ্যে থাকা টাইগার ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাস। তামিম-সাকিব-মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ-মোসাদ্দেকের ব্যাটে চড়ে শুরুর ধাক্কা কতটুকু সামাল দেয়া গিয়েছিল সেই হিসাব করা যাবে ম্যাচ শেষে। তবে, ছন্দপতন যে হয়েছিল, তা বলে দেয়া যায় কোন চিন্তা না করে। আপাতত সাউদাম্পটনে বিশ্বকাপের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ দলের স্কোর নির্ধারিত ৫০ ওভারে সাত উইকেটে ২৬২ রান। জয়ের জন্য আফগানদের টার্গেট ২৬৩ রান।

নির্বাচকরা সোমবারের ম্যাচে তামিমের উদ্বোধনী পার্টনার হিসাবে সৌম্য সরকারের জায়গায় পাঠিয়েছিলেন লিটন কুমার দাসকে। আফগান স্পিন ভালোই সামাল দিচ্ছিলেন এই ড্যাশিং ব্যাটসম্যান। এতদিন প্রথম বলটি সবসময় তামিম খেলতেন, সোমবার খেললেন লিটন। ছন্দে থাকা লিটনকে (১৬) ফিরে যেতে হয়েছে পাকিস্তানি আম্পায়ার আলিম দারের যাচ্ছেতাই সিদ্ধান্তের বলি হয়ে। মুজিব-উর-রহমানের বলে শর্ট কাভারে ক্যাচ নেন হাশমতউল্লাহ শহিদি। ফিল্ড আম্পায়ার নিশ্চিত ছিলেন না আউট নিয়ে। তাই থার্ড আম্পায়ারের সাহায্য চাওয়া হয়। টিভি রিপ্লেতে পরিস্কার দেখা যায়, বলটি শহিদির হাত ছুঁয়ে মাটি স্পর্শ করেছে। তারপরও আলিম দারের সিদ্ধান্তে কাটা পড়েন লিটন।

বিতর্কিত এই আউটের পর মনঃসংযোগে সমস্যা হচ্ছিল তামিম-সাকিবের। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার মিশনে নামেন টাইগারদের বহুল পরীক্ষিত এই দুই সৈনিক। দ্বিতীয় উইকেটে এরা ৫৯ রান যোগ করতেই আবারও ছন্দপতন। মোহাম্মদ নবির বলে বোল্ড হয়ে যান ৫৩ বলে ৩৬ রান করা তামিম ইকবাল।

রশিদের বলে সাকিবের বিপক্ষেও লেগ বিফোর উইকেটের আবেদনে সাড়া দিয়েছিলেন ফিল্ড আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে সেই সিদ্ধান্ত বাতিলে বাধ্য করেন সাকিব। আম্পায়ারদের বার বার এহেন আচরণে স্বাভাবিক খেলাটাই তখন হয়ে উঠছিল দুঃসাধ্য। মনে হচ্ছিল আফগানিস্তানের ১১ ক্রিকেটারের সঙ্গে তিন আম্পায়ারও সম্ভবত বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নেমেছে।

তামিম ফেরার পর মুশফিকের সঙ্গে সাকিবের জুটিটা তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছিল। চলতি বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচে টানা হাফ সেঞ্চুরি হাঁকানো সাকিব আল হাসানের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরিটাও পূর্ণ হয়ে যায়। ৬৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করে ব্যক্তিগত ৫১ রানেই মুজিব উর রহমানের দ্বিতীয় শিকার হন বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার। ভাঙে ৬১ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি।

মুশফিকের সঙ্গী হন সৌম্য সরকার। ব্যাটিং অর্ডারে পাঁচ নম্বরে নামা সৌম্য সরকার ক্রিজে সেট হওয়ারই সময় পাননি। মুজিব-উর-রহমানের বলে লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন ৩ রানে। রিভিউ নিয়েও সিদ্ধান্ত পাল্টানো যায়নি।

ভায়রা ভাই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে বাংলাদেশকে আবারও ম্যাচে ফেরান মুশফিক। ৫৬ বলে ক্যারিয়ারের ৩৫তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। হ্যামস্ট্রিংয়ে প্রচ- আঘাত সত্ত্বেও ব্যান্ডেজ বেধে মুশফিককে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছিলেন মাহমুদুল্লাহ। ষষ্ঠ উইকেটে ৫৬ রান আসার পর গুলবাদিন নাইবের বলে ২৭ রানে আউট হয়ে যান মাহমুদুল্লাহ, ক্যাচ দিয়েছেন মোহাম্মদ নবীর হাতে।

উইকেটে এসে মুশফিককে দারুণ সঙ্গ দেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। একের পর এক স্ট্রোক খেলে যাচ্ছিলেন তিনি। যোগ্য সঙ্গী পেয়ে বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন মুশফিক। ওভারও কমে আসছিল। ৪৯তম ওভারে রান তোলার তাড়া থেকেই দৌলত জাদরানকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মোহাম্মদ নবির তালুবন্দী হন ৮৭ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ৮৩ করা মুশফিক। গুলবাদিন নাইবের করা ইনিংসের শেষ বলে বোল্ড হওয়ার আগে মোসাদ্দেক খেলেন ২৪ বলে ৩৫ রানের ঝড়ো ইনিংস। নির্ধারিত ৫০ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ২৬২ রান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ৫০ ওভারে ২৬২/৭ (লিটন ১৬, তামিম ৩৬, সাকিব ৫১, মুশফিক ৮৩, সৌম্য ৩, মাহমুদউল্লাহ ২৭, মোসাদ্দেক ৩৫, সাইফ ২*; উইকেট পতন: ১/২৩, ২/৮২, ৩/১৪৩, ৪/১৫১, ৫/২০৭, ৬/২৫১, ৭/৬২; বোলিং: মুজিব ১০-০-৩৯-৩, দওলত ৯-০-৬৪-১, নবি ১০-০-৪৪-১, গুলবাদিন ১০-১-৫৬-২, রশিদ ১০-০-৫২-০, রহমত ১-০-৭-০)।