১০ হাজার ৪৭৬ ঋণখেলাপির তালিকা হাইকোর্টে জমা

দেশের ১০ হাজার ৪৭৬ ঋণখেলাপির তালিকা হাইকোর্টে জমা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব অ্যাকাউন্টের বিপরীতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। আর প্রতিটি অ্যাকাউন্টে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কোটি টাকার উপরে।

গতকাল বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ তালিকা দখিল করেন। এর পাশাপাশি ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলার আরও ২ মাসের জন্য স্থগিতের আদেশ দেয়া হয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মুনিরুজ্জামান। আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

শুনানি শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী মুনিরুজ্জামান বলেন, আগের আদেশ অনুসারে ঋণখেলাপিদের তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী ওই তালিকা গোপনীয় হওয়ায় তা সিল করা প্যাকেটে আদালতে দাখিল করা হয়েছে। কারণ ওই তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংক বা আমরা কেউই প্রকাশ করতে পারি না। ওই তালিকায় ১ কোটি টাকার উপরে খেলাপি ঋণের ১০ হাজার ৪৭৬টি অ্যাকাউন্টের নাম দেয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১ হাজার ১০৬টি অ্যাকাউন্ট কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৯ হাজার ৩৭০টি বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণখেলাপি। তিনি বলেন, শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মোট ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপি আছে বলে তথ্য দিয়েছেন। এছাড়া ৮০ হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নন-পারফর্মিং লোন (এলপিএল) হিসাবে পড়ে আছে। এর পাশাপাশি আরও ৩০ হাজার কোটি টাকা রয়েছে অবলোপিত। অর্থাৎ এই ৩০ হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাবে না আবার পাওয়া যেতেও পারে বলে ধরে নেয়া হয়েছে। তাই সব মিলিয়ে আপাতত ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা এই তিন ভাগে এলপিএল হিসেবে পড়ে আছে।

এদিকে শুনানি শেষে ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে গত ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলার আরও ২ মাস স্থগিত রাখার আদেশ দেন হাইকোর্ট।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত ১৬ মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে ‘ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা’ জারি করে ব্যাংকগুলোয় পাঠানো হয়। ওই নীতিমালা অনুযায়ী খেলাপি ঋণের অনারোপিত সুদ মওকুফ সুবিধার পাশাপাশি খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যাংকের করা মামলাও স্থগিত রাখার কথা বলা হয়। এছাড়া আরেকটি সার্কুলারে যারা নিয়মিত ঋণ শোধ করেন, তাদের সুদে ১০ শতাংশ রেয়াতি সুবিধা দেয়ার কথা বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

পরে কমিশন গঠন করে ওই সার্কুলার স্থগিত এবং ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারীদের তালিকা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ওই রিটের শুনানি নিয়ে ১ কোটি টাকার ওপর ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারীদের তালিকা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০১৯ , ১১ আষাঢ় ১৪২৫, ২১ শাওয়াল ১৪৪০

১০ হাজার ৪৭৬ ঋণখেলাপির তালিকা হাইকোর্টে জমা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

দেশের ১০ হাজার ৪৭৬ ঋণখেলাপির তালিকা হাইকোর্টে জমা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব অ্যাকাউন্টের বিপরীতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। আর প্রতিটি অ্যাকাউন্টে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কোটি টাকার উপরে।

গতকাল বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ তালিকা দখিল করেন। এর পাশাপাশি ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলার আরও ২ মাসের জন্য স্থগিতের আদেশ দেয়া হয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মুনিরুজ্জামান। আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

শুনানি শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী মুনিরুজ্জামান বলেন, আগের আদেশ অনুসারে ঋণখেলাপিদের তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী ওই তালিকা গোপনীয় হওয়ায় তা সিল করা প্যাকেটে আদালতে দাখিল করা হয়েছে। কারণ ওই তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংক বা আমরা কেউই প্রকাশ করতে পারি না। ওই তালিকায় ১ কোটি টাকার উপরে খেলাপি ঋণের ১০ হাজার ৪৭৬টি অ্যাকাউন্টের নাম দেয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১ হাজার ১০৬টি অ্যাকাউন্ট কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৯ হাজার ৩৭০টি বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণখেলাপি। তিনি বলেন, শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মোট ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপি আছে বলে তথ্য দিয়েছেন। এছাড়া ৮০ হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নন-পারফর্মিং লোন (এলপিএল) হিসাবে পড়ে আছে। এর পাশাপাশি আরও ৩০ হাজার কোটি টাকা রয়েছে অবলোপিত। অর্থাৎ এই ৩০ হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাবে না আবার পাওয়া যেতেও পারে বলে ধরে নেয়া হয়েছে। তাই সব মিলিয়ে আপাতত ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা এই তিন ভাগে এলপিএল হিসেবে পড়ে আছে।

এদিকে শুনানি শেষে ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে গত ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলার আরও ২ মাস স্থগিত রাখার আদেশ দেন হাইকোর্ট।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত ১৬ মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে ‘ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা’ জারি করে ব্যাংকগুলোয় পাঠানো হয়। ওই নীতিমালা অনুযায়ী খেলাপি ঋণের অনারোপিত সুদ মওকুফ সুবিধার পাশাপাশি খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যাংকের করা মামলাও স্থগিত রাখার কথা বলা হয়। এছাড়া আরেকটি সার্কুলারে যারা নিয়মিত ঋণ শোধ করেন, তাদের সুদে ১০ শতাংশ রেয়াতি সুবিধা দেয়ার কথা বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

পরে কমিশন গঠন করে ওই সার্কুলার স্থগিত এবং ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারীদের তালিকা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ওই রিটের শুনানি নিয়ে ১ কোটি টাকার ওপর ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারীদের তালিকা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।