মাদকের ভয়াবহতা থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে হবে

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

‘মাদকের ভয়াবহতা থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করা আমাদের অঙ্গিকার’ উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ২০১৮ সালে সারাদেশে অভিযান পরিচালনা করে প্রচুর পরিমাণ ইয়াবা ট্যাবলেট, হেরোইন, কোকেন, আফিম, গাঁজা, ফেনসিডিলসহ অন্যান্য বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি ১ লাখ ৬১ হাজার ৩২৩ জনের বিরুদ্ধে ১ লাখ ১৯ হাজার ৮৭৮টি মামলা রুজু করা হয়েছে। মাদকদ্রব্যের ক্ষতি হ্রাস কার্যক্রমের ক্ষেত্রে দেশে মাদকাসক্তদের চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধির জন্য সরকারি হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বেসরকারি নিরাময়কেন্দ্রের লাইসেন্স সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে অপরাধীরা চ্যালেঞ্জ করে বলেই এ ধরনের (বন্ধুকযুদ্ধে মৃত্যু) দুঃখজনক ঘটনা ঘটে। তবে যারা আত্মসমর্পণ করে, তাদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে হত্যা করে না। বিভিন্ন উৎস থেকে আমরা যে তালিকা পাই, তা একত্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দেয়া হয়। তখন তারা বিভিন্ন অভিযানে যান, অপরাধী চ্যালেঞ্জ করলে এই ধরনের দুঃখজনক ঘটনা ঘটে। তবে যারা আত্মসমর্পণ করে, তাদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। বর্তমানে কারাগারের ধারণক্ষমতা প্রায় ৮২ হাজার। অধিক হারে মাদক কারবারি আত্মসমর্পণ করছে, তাই কারাবন্দীর মধ্যে অধিকাংশই মাদকের সঙ্গে জড়িত, যারা অবৈধ ব্যবসা করেন, তাদের পেশিশক্তির প্রয়োজন হয়। কিংবা তাদের অবৈধ অস্ত্রের প্রয়োজন হয়। যেখানে অবৈধ ব্যবসা আছে, সেখানেই অবৈধ অস্ত্র থাকে।

অপর এক প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নাফ নদী রক্তে রঞ্জিত হয়ে গিয়েছিল। তাই রোহিঙ্গাদের জীবন রক্ষার জন্য আমরা আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু তাদের জন্য আমাদের অবস্থা কাহিল হয়ে যাচ্ছে। কারণ আমাদের ফসলি জমি, পরিবেশ, বনভূমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমাদের সোসাইটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মানবতা দেখিয়ে অবশ্যই বাংলাদেশ উদাহরণ হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের দুর্ভোগগুলোও বাড়ছে। পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমার থেকে ইয়াবা আসে বাংলাদেশে। বাংলাদেশ-মায়ানমার বর্ডারের অধিকাংশই রোহিঙ্গা। এরপর মায়ানমারের অন্য জাতি-উপজাতিরা আছে। কাজেই ইয়াবার সাপ্লাইটা রোহিঙ্গাদের মাধ্যমেই আসে। আমাদের এত প্রতিরোধের পরও রোহিঙ্গারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ ব্যবসা করছে। এই অবৈধ ব্যবসা পরিচালনার সময় বিজিবির সঙ্গে গোলাগুলি হলে, বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটে। কারণ, সেলফ ডিফেন্স আইনের আওতায় নিরাপত্তা বাহিনী অস্ত্র চালান।

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সরকারি চাকরিতে ঢোকার আগে প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট বা মাদক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। যার পরীক্ষার ফলাফল নেতিবাচক হবে, তিনি চাকরির জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন। ডোপ টেস্টের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করলে যুবসমাজের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া, নিয়োগের সময় এ পরীক্ষা করলে শিক্ষার্থীরা সচেতন হবে, ভীতি তৈরি হবে। মাদকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এ জন্য ২০১৮ সালে ৮ হাজার ৮০০টি সেমিনার হয়েছে। ২৮ হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী কমিটি গঠিত হয়েছে। আমরা প্রতি জেলায় মাদক নিরাময় কেন্দ্রও প্রতিষ্ঠা করছি। বুধবার (২৬ জুন) আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস। ১৯৮৮ সাল থেকে জাতিসংঘের সিদ্ধান্তে এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এবারের প্রতিবাদ্য বিষয় ‘সুস্বাস্থ্যই সুবিচার, মাদকমুক্তির অঙ্গীকার’। দিবসটি পালনের জন্য সরকার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

বুধবার, ২৬ জুন ২০১৯ , ১২ আষাঢ় ১৪২৫, ২২ শাওয়াল ১৪৪০

মাদকের ভয়াবহতা থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে হবে

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

‘মাদকের ভয়াবহতা থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করা আমাদের অঙ্গিকার’ উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ২০১৮ সালে সারাদেশে অভিযান পরিচালনা করে প্রচুর পরিমাণ ইয়াবা ট্যাবলেট, হেরোইন, কোকেন, আফিম, গাঁজা, ফেনসিডিলসহ অন্যান্য বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি ১ লাখ ৬১ হাজার ৩২৩ জনের বিরুদ্ধে ১ লাখ ১৯ হাজার ৮৭৮টি মামলা রুজু করা হয়েছে। মাদকদ্রব্যের ক্ষতি হ্রাস কার্যক্রমের ক্ষেত্রে দেশে মাদকাসক্তদের চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধির জন্য সরকারি হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বেসরকারি নিরাময়কেন্দ্রের লাইসেন্স সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে অপরাধীরা চ্যালেঞ্জ করে বলেই এ ধরনের (বন্ধুকযুদ্ধে মৃত্যু) দুঃখজনক ঘটনা ঘটে। তবে যারা আত্মসমর্পণ করে, তাদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে হত্যা করে না। বিভিন্ন উৎস থেকে আমরা যে তালিকা পাই, তা একত্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দেয়া হয়। তখন তারা বিভিন্ন অভিযানে যান, অপরাধী চ্যালেঞ্জ করলে এই ধরনের দুঃখজনক ঘটনা ঘটে। তবে যারা আত্মসমর্পণ করে, তাদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। বর্তমানে কারাগারের ধারণক্ষমতা প্রায় ৮২ হাজার। অধিক হারে মাদক কারবারি আত্মসমর্পণ করছে, তাই কারাবন্দীর মধ্যে অধিকাংশই মাদকের সঙ্গে জড়িত, যারা অবৈধ ব্যবসা করেন, তাদের পেশিশক্তির প্রয়োজন হয়। কিংবা তাদের অবৈধ অস্ত্রের প্রয়োজন হয়। যেখানে অবৈধ ব্যবসা আছে, সেখানেই অবৈধ অস্ত্র থাকে।

অপর এক প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নাফ নদী রক্তে রঞ্জিত হয়ে গিয়েছিল। তাই রোহিঙ্গাদের জীবন রক্ষার জন্য আমরা আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু তাদের জন্য আমাদের অবস্থা কাহিল হয়ে যাচ্ছে। কারণ আমাদের ফসলি জমি, পরিবেশ, বনভূমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমাদের সোসাইটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মানবতা দেখিয়ে অবশ্যই বাংলাদেশ উদাহরণ হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের দুর্ভোগগুলোও বাড়ছে। পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমার থেকে ইয়াবা আসে বাংলাদেশে। বাংলাদেশ-মায়ানমার বর্ডারের অধিকাংশই রোহিঙ্গা। এরপর মায়ানমারের অন্য জাতি-উপজাতিরা আছে। কাজেই ইয়াবার সাপ্লাইটা রোহিঙ্গাদের মাধ্যমেই আসে। আমাদের এত প্রতিরোধের পরও রোহিঙ্গারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ ব্যবসা করছে। এই অবৈধ ব্যবসা পরিচালনার সময় বিজিবির সঙ্গে গোলাগুলি হলে, বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটে। কারণ, সেলফ ডিফেন্স আইনের আওতায় নিরাপত্তা বাহিনী অস্ত্র চালান।

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সরকারি চাকরিতে ঢোকার আগে প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট বা মাদক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। যার পরীক্ষার ফলাফল নেতিবাচক হবে, তিনি চাকরির জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন। ডোপ টেস্টের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করলে যুবসমাজের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া, নিয়োগের সময় এ পরীক্ষা করলে শিক্ষার্থীরা সচেতন হবে, ভীতি তৈরি হবে। মাদকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এ জন্য ২০১৮ সালে ৮ হাজার ৮০০টি সেমিনার হয়েছে। ২৮ হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী কমিটি গঠিত হয়েছে। আমরা প্রতি জেলায় মাদক নিরাময় কেন্দ্রও প্রতিষ্ঠা করছি। বুধবার (২৬ জুন) আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস। ১৯৮৮ সাল থেকে জাতিসংঘের সিদ্ধান্তে এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এবারের প্রতিবাদ্য বিষয় ‘সুস্বাস্থ্যই সুবিচার, মাদকমুক্তির অঙ্গীকার’। দিবসটি পালনের জন্য সরকার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।