কৈশোর ও স্বাস্থ্য

ডা. মিনতি অধিকারী

কৈশোরক

জীবনটা কত সহজই না ছিল

আদর ভালোবাসা মাখা সেই সব দিন রাত্রি মধুময় শৈশব

তারপর হঠাৎ কেমন সব পাল্টে গেল

যেদিন থেকে আমার গালে একটি পিম্পল দেখা দিল

আর আমার গলার স্বরে অদ্ভূত পরিবর্তন এলো

নিজেকে নিজের কাছেই কেমন অচেনা মনে হলো

আমার মনে সব অদ্ভূত ভাবনা এলো এলোমেলো

মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম-কেন এমন হয়!

সব কিছুতেই পরিবর্তন আসে-জীবনেও-

মা’র উদাসী জবাব

যখন প্রতিটি ফিসফিস শব্দ ও মনে হয় সমুদ্রের মহা কল্লোল

কখনও সব কিছুই কেমন কৌতুকময়

শুধু কথা-হাসি-গান অকারন বাচালতা

মন অবাধ্য-দূরন্ত-গতিশীল

আবার কখনও বা মন বেদনা বিধুর-কিছুই ভালো লাগে না আর

কপোল ভিজে যায় অশ্রুজলে অকারণে

মনে হয় বেঁচে থাকা অর্থহীন

এটা তাইÑ যাকে ওরা বলে বয়ঃসন্ধি

প্রাথমিক কথন

বয়ঃসন্ধি শিশুকাল ও ম্যাচুরিটির অন্তর্বর্তীকাল। অন্যভাবে বলতে গেলে যৌবনের প্রস্তুতিকালই বয়ঃসন্ধি। হরমোন ইস্ট্রোজেন ও টেসটোসটেরনের ফলে শারীরিক মানসিক কিছু পরিবর্তন আসে। এসময়ে জৈবিক পরিবর্তন আসে, সব কিছুতে উৎসুক মন, মনে আশা জাগে অধিক স্বাধীনতা উপভোগের। একটি অবাধ্য ও গতিশীল সময় বয়ঃসন্ধিকাল। এই সময়কালে জৈবিক পরিবর্তন এর ফলে কিছু ইমোশনাল সমস্যা দেখা দেয়। বিমূর্ত, দুর্জ্ঞেয় চিন্তাশক্তির বিকাশ লাভ ঘটে কিশোর-কিশোরীর মনে, তারা যৌনাচার সম্পর্কে সচেতন হয়, তাদের মনস্তাত্ত্বিক চেতনা বিকাশ লাভ করে। এক সময় তারা পিতামাতা থেকে আলাদা হয়ে যায়। তাদের মাঝে আইডেনটিটি ক্রাইসিস দেখা দেয়। এক কথায় মানবজীবনের ঝড়-ঝঞ্ঝার সময় এটি এবং এ সময়ে কনফ্লিক্ট স্বাভাবিক। বয়ঃসন্ধি এক দুরন্ত ভাবাবেগময় সময়। এ সময় সন্তান হঠাৎ করেই বাবা মা তথা অভিভাবক থেকে দূরে সরে যায়। পিতা-মাতা ও সন্তানের মধ্যে তৈরি হয় উপসাগরীয় ব্যবধান। কেন এমন হয়? বয়ঃসন্ধি এমন একটি সময় যখন শিশুর দেহ মনে আসে পরিবর্তন আকস্মিক বন্যার মতোই। আসে প্লাবনের মতো ভাবাবেগ। এ পরিবর্তন উত্তেজনায় পরিপূর্ণ। কিন্তু শিশুর ও সমানভাবে তাদের পিতামাতার জন্য তা কনফিউজিং, এক কথায় অ-আরামদায়ক।

বয়ঃসন্ধিকালে শারীরিক বিকাশ বা পরিবর্তনসমূহ

কিশোর-কিশোরীদের অতি দ্রুত শারীরিক পরিবর্তনই বয়ঃসন্ধি। মেয়েদের সাধারণত এগারো থেকে চৌদ্দ বছর বয়সে এবং ছেলেদের তেরো থেকে ষোলো বছর বয়সে বয়ঃসন্ধি ঘটে। তবে অধূনা উত্তম পুষ্টির কারণে উন্নত বিশ্বে ছেলেমেয়েদের আরও অল্প বয়সে বয়ঃসন্ধি ঘটে। সুতরাং বাবা-মাকে বলছি যে, আপনার সন্তানটির আপনার চেয়েও অল্প বয়সে বয়ঃসন্ধি ঘটতে পারে। বস্তুত হরমোনের রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলেই এ বয়ঃসন্ধি ঘটে থাকে এবং এ ক্রিয়া বহু আগে থেকেই শুরু হয়। এ সময় শিশুর মেজাজ-মর্জির পরিবর্তন ও স্বভাবের অস্থিরতার মধ্যে তা প্রকাশ পায়। পূর্বেই বলেছি যে, মেয়েদের মধ্যে এই পরিবর্তন আগে আসে এবং প্রথম তিন চার বছর এ পরিবর্তন এত দ্রুত হয় যে, সামলে ওঠা দায়। ওজন বাড়তে থাকে, হঠাৎ লম্বা হয়ে যায়, শরীরে অধিক পশম গজায়, কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন আসে, মুখে একনি দেখা দেয়।

মেয়েদের পরিবর্তন

মেয়েরা ঋতুবতী বা রজঃস্বলা হয়, শরীরের বিভিন্ন স্থান যেমন বগল ও শ্রোণীদেশে চুল গজায়। মাসিক সাধারণত ১২-১৪ বছর বয়সে হয়। তখন তারা ইমোশনাল, খিটখিটে মেজাজের হয়ে পড়ে। ক্লান্ত লাগে, চোখে জল এসে যায়। সিম্পটম কম হবে যদিÑ

নিয়মিত শরীর চর্চা কর

টাটকা খাবার খাও, নিয়মিত অল্প খাবার খাও

জাঙ্ক ফুড, লবণাক্ত খাবার (চিপস/ক্রিপস), চকলেট, কোলা কম খাও।

কারও কারও আগাম বয়ঃসন্ধি হতে পারে। তখন দেখা দিতে পারে নিঃসঙ্গতা, আত্মহত্যার প্রবণতা, ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে যেতে ইচ্ছে হয়।

আবার কারও দেরিতে বয়ঃসন্ধি হতে পারে যদিÑ

যদি খুব বেশি মোটা বা শুকনা হও

বেশি শরীর চর্চা কর

মানসিক চাপ থাকে

শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতা থাকে

ছেলেদের পরিবর্তন

কণ্ঠস্বর গভীর, শরীর বগল ও শ্রোণীদেশে চুল গজানো। মুখাবয়বে দাড়ি ও গোঁফ গজানো, ইরেকশন, ইজাকুলেশন, ওয়েট ড্রিম প্রভৃতি।

তবে উভয়েরই খুব দ্রুত পরিবর্তন ঘটে। সতের বছর বয়সে এসে তারা পূর্ণ যুবক-যুবতী এবং বাবা-মার চেয়েও মাথায় উঁচু; কিন্তু তখনও তাদের বাবা-মার সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। কিছু ছেলেমেয়ে তাদের এই আকৃতিগত পরিবর্তন সম্পর্কে ভীষণ সচেতন হয়ে যায়। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তাদের তখন প্রচুর এসুরেন্স দরকার হয় যে, এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। দ্রুত সেক্স অরগানগুলোর বৃদ্ধি ঘটে। কণ্ঠস্বর ও চেহারা-আকৃতিতে পরিবর্তন ঘটে। ফলে তারা ংঃৎবংংভঁষ হয়ে পড়ে।

আবার কারও কারও বয়ঃসন্ধি অতি ধীরে ধীরে আসে। তখন তারা চিন্তিত হয়ে পড়ে যে, তারা কেন অন্যদের মতো তাড়াতাড়ি বড় হচ্ছে না। কিন্তু তোমাদের বুঝতে হবে যে, বয়ঃসন্ধি কারও বেলায় আসে মাত্র নয় বছর বয়সে আবার কারও বেলায় ১৫-১৬ বছর বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। বয়ঃসন্ধিকালে এ আকৃতিগত পরিবর্তন আসে প্রচুর শক্তি ক্ষয়ের মাধ্যমে। তাই এ সময়ে তাদের প্রচুর আলস্য ও নিদ্রা আসে। তাই এটা নিছকই অলসতা নয়।

বুধবার, ২৬ জুন ২০১৯ , ১২ আষাঢ় ১৪২৫, ২২ শাওয়াল ১৪৪০

কৈশোর ও স্বাস্থ্য

ডা. মিনতি অধিকারী

image

কৈশোরক

জীবনটা কত সহজই না ছিল

আদর ভালোবাসা মাখা সেই সব দিন রাত্রি মধুময় শৈশব

তারপর হঠাৎ কেমন সব পাল্টে গেল

যেদিন থেকে আমার গালে একটি পিম্পল দেখা দিল

আর আমার গলার স্বরে অদ্ভূত পরিবর্তন এলো

নিজেকে নিজের কাছেই কেমন অচেনা মনে হলো

আমার মনে সব অদ্ভূত ভাবনা এলো এলোমেলো

মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম-কেন এমন হয়!

সব কিছুতেই পরিবর্তন আসে-জীবনেও-

মা’র উদাসী জবাব

যখন প্রতিটি ফিসফিস শব্দ ও মনে হয় সমুদ্রের মহা কল্লোল

কখনও সব কিছুই কেমন কৌতুকময়

শুধু কথা-হাসি-গান অকারন বাচালতা

মন অবাধ্য-দূরন্ত-গতিশীল

আবার কখনও বা মন বেদনা বিধুর-কিছুই ভালো লাগে না আর

কপোল ভিজে যায় অশ্রুজলে অকারণে

মনে হয় বেঁচে থাকা অর্থহীন

এটা তাইÑ যাকে ওরা বলে বয়ঃসন্ধি

প্রাথমিক কথন

বয়ঃসন্ধি শিশুকাল ও ম্যাচুরিটির অন্তর্বর্তীকাল। অন্যভাবে বলতে গেলে যৌবনের প্রস্তুতিকালই বয়ঃসন্ধি। হরমোন ইস্ট্রোজেন ও টেসটোসটেরনের ফলে শারীরিক মানসিক কিছু পরিবর্তন আসে। এসময়ে জৈবিক পরিবর্তন আসে, সব কিছুতে উৎসুক মন, মনে আশা জাগে অধিক স্বাধীনতা উপভোগের। একটি অবাধ্য ও গতিশীল সময় বয়ঃসন্ধিকাল। এই সময়কালে জৈবিক পরিবর্তন এর ফলে কিছু ইমোশনাল সমস্যা দেখা দেয়। বিমূর্ত, দুর্জ্ঞেয় চিন্তাশক্তির বিকাশ লাভ ঘটে কিশোর-কিশোরীর মনে, তারা যৌনাচার সম্পর্কে সচেতন হয়, তাদের মনস্তাত্ত্বিক চেতনা বিকাশ লাভ করে। এক সময় তারা পিতামাতা থেকে আলাদা হয়ে যায়। তাদের মাঝে আইডেনটিটি ক্রাইসিস দেখা দেয়। এক কথায় মানবজীবনের ঝড়-ঝঞ্ঝার সময় এটি এবং এ সময়ে কনফ্লিক্ট স্বাভাবিক। বয়ঃসন্ধি এক দুরন্ত ভাবাবেগময় সময়। এ সময় সন্তান হঠাৎ করেই বাবা মা তথা অভিভাবক থেকে দূরে সরে যায়। পিতা-মাতা ও সন্তানের মধ্যে তৈরি হয় উপসাগরীয় ব্যবধান। কেন এমন হয়? বয়ঃসন্ধি এমন একটি সময় যখন শিশুর দেহ মনে আসে পরিবর্তন আকস্মিক বন্যার মতোই। আসে প্লাবনের মতো ভাবাবেগ। এ পরিবর্তন উত্তেজনায় পরিপূর্ণ। কিন্তু শিশুর ও সমানভাবে তাদের পিতামাতার জন্য তা কনফিউজিং, এক কথায় অ-আরামদায়ক।

বয়ঃসন্ধিকালে শারীরিক বিকাশ বা পরিবর্তনসমূহ

কিশোর-কিশোরীদের অতি দ্রুত শারীরিক পরিবর্তনই বয়ঃসন্ধি। মেয়েদের সাধারণত এগারো থেকে চৌদ্দ বছর বয়সে এবং ছেলেদের তেরো থেকে ষোলো বছর বয়সে বয়ঃসন্ধি ঘটে। তবে অধূনা উত্তম পুষ্টির কারণে উন্নত বিশ্বে ছেলেমেয়েদের আরও অল্প বয়সে বয়ঃসন্ধি ঘটে। সুতরাং বাবা-মাকে বলছি যে, আপনার সন্তানটির আপনার চেয়েও অল্প বয়সে বয়ঃসন্ধি ঘটতে পারে। বস্তুত হরমোনের রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলেই এ বয়ঃসন্ধি ঘটে থাকে এবং এ ক্রিয়া বহু আগে থেকেই শুরু হয়। এ সময় শিশুর মেজাজ-মর্জির পরিবর্তন ও স্বভাবের অস্থিরতার মধ্যে তা প্রকাশ পায়। পূর্বেই বলেছি যে, মেয়েদের মধ্যে এই পরিবর্তন আগে আসে এবং প্রথম তিন চার বছর এ পরিবর্তন এত দ্রুত হয় যে, সামলে ওঠা দায়। ওজন বাড়তে থাকে, হঠাৎ লম্বা হয়ে যায়, শরীরে অধিক পশম গজায়, কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন আসে, মুখে একনি দেখা দেয়।

মেয়েদের পরিবর্তন

মেয়েরা ঋতুবতী বা রজঃস্বলা হয়, শরীরের বিভিন্ন স্থান যেমন বগল ও শ্রোণীদেশে চুল গজায়। মাসিক সাধারণত ১২-১৪ বছর বয়সে হয়। তখন তারা ইমোশনাল, খিটখিটে মেজাজের হয়ে পড়ে। ক্লান্ত লাগে, চোখে জল এসে যায়। সিম্পটম কম হবে যদিÑ

নিয়মিত শরীর চর্চা কর

টাটকা খাবার খাও, নিয়মিত অল্প খাবার খাও

জাঙ্ক ফুড, লবণাক্ত খাবার (চিপস/ক্রিপস), চকলেট, কোলা কম খাও।

কারও কারও আগাম বয়ঃসন্ধি হতে পারে। তখন দেখা দিতে পারে নিঃসঙ্গতা, আত্মহত্যার প্রবণতা, ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে যেতে ইচ্ছে হয়।

আবার কারও দেরিতে বয়ঃসন্ধি হতে পারে যদিÑ

যদি খুব বেশি মোটা বা শুকনা হও

বেশি শরীর চর্চা কর

মানসিক চাপ থাকে

শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতা থাকে

ছেলেদের পরিবর্তন

কণ্ঠস্বর গভীর, শরীর বগল ও শ্রোণীদেশে চুল গজানো। মুখাবয়বে দাড়ি ও গোঁফ গজানো, ইরেকশন, ইজাকুলেশন, ওয়েট ড্রিম প্রভৃতি।

তবে উভয়েরই খুব দ্রুত পরিবর্তন ঘটে। সতের বছর বয়সে এসে তারা পূর্ণ যুবক-যুবতী এবং বাবা-মার চেয়েও মাথায় উঁচু; কিন্তু তখনও তাদের বাবা-মার সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। কিছু ছেলেমেয়ে তাদের এই আকৃতিগত পরিবর্তন সম্পর্কে ভীষণ সচেতন হয়ে যায়। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তাদের তখন প্রচুর এসুরেন্স দরকার হয় যে, এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। দ্রুত সেক্স অরগানগুলোর বৃদ্ধি ঘটে। কণ্ঠস্বর ও চেহারা-আকৃতিতে পরিবর্তন ঘটে। ফলে তারা ংঃৎবংংভঁষ হয়ে পড়ে।

আবার কারও কারও বয়ঃসন্ধি অতি ধীরে ধীরে আসে। তখন তারা চিন্তিত হয়ে পড়ে যে, তারা কেন অন্যদের মতো তাড়াতাড়ি বড় হচ্ছে না। কিন্তু তোমাদের বুঝতে হবে যে, বয়ঃসন্ধি কারও বেলায় আসে মাত্র নয় বছর বয়সে আবার কারও বেলায় ১৫-১৬ বছর বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। বয়ঃসন্ধিকালে এ আকৃতিগত পরিবর্তন আসে প্রচুর শক্তি ক্ষয়ের মাধ্যমে। তাই এ সময়ে তাদের প্রচুর আলস্য ও নিদ্রা আসে। তাই এটা নিছকই অলসতা নয়।