জাবির বাজেটে উপেক্ষিত শিক্ষা ও গবেষণা খাত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। এ বছরের বাজেট ধরা হয়েছে ২৫৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

বাজেটের আয়ের উৎস হিসেবে দেখানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুদান ও নিজস্ব আয়। এর মধ্যে ইউজিসি ২৩৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। নিজস্ব আয় বাবদ ধরা হয়েছে ২৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সে হিসাবে ঘাটতি বাজেট দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো রেজিস্ট্রার ভবনের সিনেট হলে অনুষ্ঠিত ৩৮তম সিনেট অধিবেশনে এ বাজেট উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ শেখ মো. মনজুরুল হক।

তবে এত বড় বাজেটের একটা বড় অংশই রাখা হয়েছে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও পেনশনের জন্য। আর বাকি আনুষঙ্গিক বিষয় শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও শিক্ষা খাতের উন্নয়নে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ৫ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিনেটের বার্ষিক সভায় এ বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়। এতে গবেষণা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তিন কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের ১.১৫ শতাংশ। এবার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। যা মোট বাজেটের ৩২.৮৭%। অবসরকালীন সুবিধা বাবদ বরাদ্দ ৪০ কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের ১৫.৩৯%। প্রশাসনিক ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। যা মোট বরাদ্দের ১১.৪২%। বিবিধ ব্যয় বাবদ বরাদ্দ ১৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। যা মোট বাজেটের ৭.৫৭%।

এদিকে শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট খাতগুলোর মধ্যে ছাত্রবৃত্তি ও ফেলোশিপে বরাদ্দ ০.০৬% কমিয়ে ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। পরীক্ষার খরচ বাবদ বরাদ্দ ০.২৬% কমিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

বাজেট বিশ্লেষকরা বলছেন, উপাচার্যের গাড়ির জ্বালানি বাবদ ব্যয় এক লাখ টাকা বৃদ্ধি করে ৬ লাখ টাকা করলেও শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী তেমন বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি। বাজেট বাড়েনি শিক্ষির্থীদের চিকিৎসা খাতেও। মেডিকেল সেন্টার (ডাক্তার ও কর্মচারিদের বেতন সহ ওষুধ অন্য আনুষঙ্গিক) বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ কোটি ২৬ লাখ।

টাকা যা গত বছর ছিল ৩ কোটি ১২ লাখ। এছাড়া বিভিন্ন হলে বরাদ্দের মধ্যেও রয়েছে অসামঞ্জস্য। আবার গবেষণা খাতকে একেবারেই উপেক্ষিত রাখা হয়েছে। এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান গবেষণাগার ‘ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র’র জন্য তেমন বরাদ্দ রাখা হয়নি। অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নূরুল আলম, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. আমির হোসেন, কোষাধ্যক্ষ শেখ মো. মনজুরুল হক, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ, সিন্ডিকেট সদস্য ও রেজিস্ট্রার গ্রাজুয়েট প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। অধিবেশনের কার্যসূচিতে ৮টি বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। এগুলো হলো- উপাচার্যের ভাষণ, ৩৬তম সিনেট অধিবেশনের কার্যবিবরণী নিশ্চিতকরণ, ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরের রেকারিং বাজেট কার্যোত্তর অনুমোদন, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরের রেকারিং বাজেট অনুমোদন বিবেচনা, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের খসড়া প্রতিবেদন অনুমোদন বিবেচনা, ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের খসড়া সংবিধি বিবেচনা, ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন্সিংয়ের নাম পরিবর্তন ও বিবিধ।

রবিবার, ৩০ জুন ২০১৯ , ১৬ আষাঢ় ১৪২৫, ২৬ শাওয়াল ১৪৪০

জাবির বাজেটে উপেক্ষিত শিক্ষা ও গবেষণা খাত

প্রতিনিধি, জাবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। এ বছরের বাজেট ধরা হয়েছে ২৫৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

বাজেটের আয়ের উৎস হিসেবে দেখানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুদান ও নিজস্ব আয়। এর মধ্যে ইউজিসি ২৩৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। নিজস্ব আয় বাবদ ধরা হয়েছে ২৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সে হিসাবে ঘাটতি বাজেট দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো রেজিস্ট্রার ভবনের সিনেট হলে অনুষ্ঠিত ৩৮তম সিনেট অধিবেশনে এ বাজেট উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ শেখ মো. মনজুরুল হক।

তবে এত বড় বাজেটের একটা বড় অংশই রাখা হয়েছে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও পেনশনের জন্য। আর বাকি আনুষঙ্গিক বিষয় শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও শিক্ষা খাতের উন্নয়নে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ৫ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিনেটের বার্ষিক সভায় এ বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়। এতে গবেষণা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তিন কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের ১.১৫ শতাংশ। এবার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। যা মোট বাজেটের ৩২.৮৭%। অবসরকালীন সুবিধা বাবদ বরাদ্দ ৪০ কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের ১৫.৩৯%। প্রশাসনিক ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। যা মোট বরাদ্দের ১১.৪২%। বিবিধ ব্যয় বাবদ বরাদ্দ ১৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। যা মোট বাজেটের ৭.৫৭%।

এদিকে শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট খাতগুলোর মধ্যে ছাত্রবৃত্তি ও ফেলোশিপে বরাদ্দ ০.০৬% কমিয়ে ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। পরীক্ষার খরচ বাবদ বরাদ্দ ০.২৬% কমিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

বাজেট বিশ্লেষকরা বলছেন, উপাচার্যের গাড়ির জ্বালানি বাবদ ব্যয় এক লাখ টাকা বৃদ্ধি করে ৬ লাখ টাকা করলেও শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী তেমন বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি। বাজেট বাড়েনি শিক্ষির্থীদের চিকিৎসা খাতেও। মেডিকেল সেন্টার (ডাক্তার ও কর্মচারিদের বেতন সহ ওষুধ অন্য আনুষঙ্গিক) বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ কোটি ২৬ লাখ।

টাকা যা গত বছর ছিল ৩ কোটি ১২ লাখ। এছাড়া বিভিন্ন হলে বরাদ্দের মধ্যেও রয়েছে অসামঞ্জস্য। আবার গবেষণা খাতকে একেবারেই উপেক্ষিত রাখা হয়েছে। এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান গবেষণাগার ‘ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র’র জন্য তেমন বরাদ্দ রাখা হয়নি। অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নূরুল আলম, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. আমির হোসেন, কোষাধ্যক্ষ শেখ মো. মনজুরুল হক, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ, সিন্ডিকেট সদস্য ও রেজিস্ট্রার গ্রাজুয়েট প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। অধিবেশনের কার্যসূচিতে ৮টি বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। এগুলো হলো- উপাচার্যের ভাষণ, ৩৬তম সিনেট অধিবেশনের কার্যবিবরণী নিশ্চিতকরণ, ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরের রেকারিং বাজেট কার্যোত্তর অনুমোদন, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরের রেকারিং বাজেট অনুমোদন বিবেচনা, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের খসড়া প্রতিবেদন অনুমোদন বিবেচনা, ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের খসড়া সংবিধি বিবেচনা, ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন্সিংয়ের নাম পরিবর্তন ও বিবিধ।