রিফাত হত্যার বিচার দাবিতে উত্তাল বরগুনা

মানববন্ধনে পরিবার

রিফাত হত্যার আসামিদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে বরগুনায় সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বিগত ৩ দিন ধরে এ কর্মসূচি পালন করছে সর্বস্তরের নাগরিক, বরগুনা সরকারি কলেজের ছাত্র ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি। শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বরগুনা প্রেসক্লাবের সামনে সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য রাখেন- নিহত রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রইসুল আলম রিপন, জেলা যুবলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ, বুড়িরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন সাবু, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুনাম দেবনাথ ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি অনিক। বক্তারা আসামিদের গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। রিফাতের মা শয্যাশায়ী, গত ১৮ বছর ধরে তিনি প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। রিফাতের বাবা ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেছেন। এর আগে গত ২৭ জুন শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বরগুনা সরকারি কলেজের ছাত্ররা। কলেজ থেকে বের হওয়া বিক্ষোভ মিছিলের পর বরগুনা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে তারা। একই দাবিতে শুক্রবার বিকেলে বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন বরগুনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি রিফাত হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও শাস্তি দাবির পাশাপাশি রিফাত হত্যার আসামি তার আত্মীয় বলে উল্লেখ করে বিভিন্ন মাধ্যমে অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানান। এদিকে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে রিফাত শরীফকে হত্যার বিচার দাবি জানিয়েছেন বরগুনা জেলা মহিলা পরিষদের সভানেত্রী নাজমা বেগম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সেলিনা আক্তার, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মাধবী দেবনাধ ও হোসনে আরা চম্পা, জাগো নারীর নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা হাসি, শুকতরা মহিলা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক কাজল রানী দাস, বিশিষ্ট নাগরিক আ. রাজ্জাক, স্বপন বরণ দাস প্রমুখ। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, বরগুনায় প্রকাশ্যে নিষ্ঠুরভাবে রিফাত হত্যার ঘটনা একটা নষ্ট প্রজন্মের স্বাক্ষর। এসব তরুণ রাজনৈতিক ছত্রছায়া ও প্রশাসনের ব্যর্থ ভূমিকায় গড়ে উঠেছে। ঘটনার ৩ দিনের মাথায় ‘সব দোষ নন্দ ঘোষ’র মতো ঘটনা নারীর ঘাড়ে চাপানো সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত বিভিন্ন বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন তারা।

উল্লেখ্য, বুধবার (২৬ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে শাহনেওয়াজ রিফাতকে। তার স্ত্রী আয়েশা আক্তার মিন্নি হামলাকারীদের প্রাণপণ বাধা দিয়েও স্বামীকে বাঁচাতে পারেননি। একাধারে রিফাতকে কুপিয়ে বীরদর্পে অস্ত্র উঁচিয়ে এলাকা ত্যাগ করে দুর্বৃত্তরা। তারা চেহারা আড়াল করারও কোন চেষ্টা করেনি। গুরুতর আহত রিফাতকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

আসামিদের দু’দিনের মধ্যেই গ্রেফতার : বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেছেন, রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আসামিদের পালাবার সব পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দু’দিনের মধ্যেই পুলিশ এজাহারভুক্ত সব আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হবে।

শনিবার দুপুরে পুলিশ সুপার তার কার্যালয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে রিফাত হত্যা মামলার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনাকালে বলেন, পুলিশ বসে নেই। জালের ফাঁস ছোট হয়ে আসছে, আসামিদের পালানোর সব পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ সময় তিনি বলেন, পুলিশকে সবার সহযোগিতা করা প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে গত বুধবার বেলা ১১টায় প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে স্বামী শাহনেওয়াজ রিফাত শরিফকে (২৫) কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। সদ্যবিবাহিত নববধূ আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি ও পথচারী এক যুবক বাধা দিয়েও সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি রিফাতকে। এদিকে শাহনেওয়াজ রিফাত শরিফকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়। এতে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়।

পুলিশ সুপারের প্রেসবিজ্ঞপ্তি : বেশকিছু অনলাইনে প্রকাশিত খবর প্রসঙ্গে বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন শনিবার এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানান, গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজ গেটের সামনে রাস্তার উপর সকাল ১০টায় মো. শাহনেওয়াজ রিফাত (২৬) পিতা মো. আ. হালিম দুলাল, সাং উ. বড় লবণগোলা, ৬ নং বুড়িরচর ইউপি, থানা ও জেলা বরগুনাকে কতিপয় দুষ্কৃতিকারী পরস্পর যোগসাজশে প্রকাশ্যে ধারাল অস্ত্র দ্বারা এলোপাতাড়িভাবে শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় বরগুনা সদর থানার ইনচার্জ আরিফ মোহম্মদ হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে মর্মে বিভিন্ন অনলাইনে প্রকাশিত হয়। যার কোন সত্যতা নেই।

রবিবার, ৩০ জুন ২০১৯ , ১৬ আষাঢ় ১৪২৫, ২৬ শাওয়াল ১৪৪০

রিফাত হত্যার বিচার দাবিতে উত্তাল বরগুনা

মানববন্ধনে পরিবার

প্রতিনিধি, বরগুনা

রিফাত হত্যার আসামিদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে বরগুনায় সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বিগত ৩ দিন ধরে এ কর্মসূচি পালন করছে সর্বস্তরের নাগরিক, বরগুনা সরকারি কলেজের ছাত্র ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি। শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বরগুনা প্রেসক্লাবের সামনে সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য রাখেন- নিহত রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রইসুল আলম রিপন, জেলা যুবলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ, বুড়িরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন সাবু, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুনাম দেবনাথ ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি অনিক। বক্তারা আসামিদের গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। রিফাতের মা শয্যাশায়ী, গত ১৮ বছর ধরে তিনি প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। রিফাতের বাবা ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেছেন। এর আগে গত ২৭ জুন শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বরগুনা সরকারি কলেজের ছাত্ররা। কলেজ থেকে বের হওয়া বিক্ষোভ মিছিলের পর বরগুনা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে তারা। একই দাবিতে শুক্রবার বিকেলে বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন বরগুনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি রিফাত হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও শাস্তি দাবির পাশাপাশি রিফাত হত্যার আসামি তার আত্মীয় বলে উল্লেখ করে বিভিন্ন মাধ্যমে অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানান। এদিকে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে রিফাত শরীফকে হত্যার বিচার দাবি জানিয়েছেন বরগুনা জেলা মহিলা পরিষদের সভানেত্রী নাজমা বেগম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সেলিনা আক্তার, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মাধবী দেবনাধ ও হোসনে আরা চম্পা, জাগো নারীর নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা হাসি, শুকতরা মহিলা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক কাজল রানী দাস, বিশিষ্ট নাগরিক আ. রাজ্জাক, স্বপন বরণ দাস প্রমুখ। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, বরগুনায় প্রকাশ্যে নিষ্ঠুরভাবে রিফাত হত্যার ঘটনা একটা নষ্ট প্রজন্মের স্বাক্ষর। এসব তরুণ রাজনৈতিক ছত্রছায়া ও প্রশাসনের ব্যর্থ ভূমিকায় গড়ে উঠেছে। ঘটনার ৩ দিনের মাথায় ‘সব দোষ নন্দ ঘোষ’র মতো ঘটনা নারীর ঘাড়ে চাপানো সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত বিভিন্ন বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন তারা।

উল্লেখ্য, বুধবার (২৬ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে শাহনেওয়াজ রিফাতকে। তার স্ত্রী আয়েশা আক্তার মিন্নি হামলাকারীদের প্রাণপণ বাধা দিয়েও স্বামীকে বাঁচাতে পারেননি। একাধারে রিফাতকে কুপিয়ে বীরদর্পে অস্ত্র উঁচিয়ে এলাকা ত্যাগ করে দুর্বৃত্তরা। তারা চেহারা আড়াল করারও কোন চেষ্টা করেনি। গুরুতর আহত রিফাতকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

আসামিদের দু’দিনের মধ্যেই গ্রেফতার : বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেছেন, রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আসামিদের পালাবার সব পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দু’দিনের মধ্যেই পুলিশ এজাহারভুক্ত সব আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হবে।

শনিবার দুপুরে পুলিশ সুপার তার কার্যালয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে রিফাত হত্যা মামলার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনাকালে বলেন, পুলিশ বসে নেই। জালের ফাঁস ছোট হয়ে আসছে, আসামিদের পালানোর সব পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ সময় তিনি বলেন, পুলিশকে সবার সহযোগিতা করা প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে গত বুধবার বেলা ১১টায় প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে স্বামী শাহনেওয়াজ রিফাত শরিফকে (২৫) কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। সদ্যবিবাহিত নববধূ আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি ও পথচারী এক যুবক বাধা দিয়েও সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি রিফাতকে। এদিকে শাহনেওয়াজ রিফাত শরিফকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়। এতে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়।

পুলিশ সুপারের প্রেসবিজ্ঞপ্তি : বেশকিছু অনলাইনে প্রকাশিত খবর প্রসঙ্গে বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন শনিবার এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানান, গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজ গেটের সামনে রাস্তার উপর সকাল ১০টায় মো. শাহনেওয়াজ রিফাত (২৬) পিতা মো. আ. হালিম দুলাল, সাং উ. বড় লবণগোলা, ৬ নং বুড়িরচর ইউপি, থানা ও জেলা বরগুনাকে কতিপয় দুষ্কৃতিকারী পরস্পর যোগসাজশে প্রকাশ্যে ধারাল অস্ত্র দ্বারা এলোপাতাড়িভাবে শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় বরগুনা সদর থানার ইনচার্জ আরিফ মোহম্মদ হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে মর্মে বিভিন্ন অনলাইনে প্রকাশিত হয়। যার কোন সত্যতা নেই।