সারাদেশে প্রকাশ্যে একের পর এক নৃশংসতায় উদ্বেগ বাড়ছে

প্রকাশ্যে একের পর এক নৃশংসতা বেড়েছে। দিনদুপুরে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। একটি ঘটনার রেশ না কাটতেই আরেকটি নৃশংস হত্যাকান্ড আলোচনায় আসছে। সারাদেশে রাজনৈতিক, পারিবারিক, ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িকসহ সব ধরনের হত্যাকান্ড বেড়েই চলেছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় প্রতিপক্ষকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। পারিবারিক কলহে স্বামী স্ত্রীকে, স্ত্রী স্বামীকে হত্যা করছে। এমনকি তুচ্ছ ঘটনায় সৃষ্ট দ্বন্দ্বে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনাও বেড়েছে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক অস্থিরতা, পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হওয়া, আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অপরাধীদের ছাড় পাওয়া, মাদকাসক্ততা ও অর্থনৈতিক কারণে এসব খুনের ঘটনা ঘটছে। একই সঙ্গে বিচার বিলম্বিত সংস্কৃতিও নৃশংস হত্যাকান্ড বৃদ্ধির নেপথ্যে কাজ করছে।

পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী- ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল অর্থাৎ ৫ বছরে সারাদেশে খুনের ঘটনা ঘটেছে ১৬ হাজার ৯৭৪টি। এর মধ্যে ২০১৭ সালে বিভিন্ন ঘটনায় খুন হয়েছেন ৩ হাজার ৫৪৯ জন। ২০১৬ সালে ৮৭৯ জন, ২০১৫ সালে ৪ হাজার ৩৫ জন, ২০১৪ সালে ৪ হাজার ৫২৩ জন, ২০১৩ সালে ৩ হাজার ৯৮৮ জন। একই সময় রাজধানীতে খুন হয়েছেন ১ হাজার ১২ জন। এর মধ্যে ২০১৭ সালে ২১৮ জন, ২০১৬ সালে ৪৮ জন, ২০১৫ সালে ২৩৯ জন, ২০১৪ সালে ২৬২ জন, ২০১৩ সালে ২৪৫ জন। এর মধ্যে অধিকাংশ হত্যাকা-ই নৃশংস।

পুরান ঢাকার বিশ্বজিৎ, সিলেটের খাদিজা অথবা সাম্প্রতিক বরগুনার রিফাত। দিনদুপুরে সবার সামনে নারকীয় ও লোমহর্ষক হামলার শিকার তারা। প্রেমঘটিত কারণে গত বুধবার বরগুনায় খুনের শিকার হন শাহনেওয়াজ ওরফে রিফাত শরিফ (২৬)। প্রকাশ্যে দিবালোকে ফিল্ম স্টাইলে রামদা দিয়ে কুপিয়ে তাকে হত্যা করে খুনিরা। এ সময় তার স্ত্রী মিন্নি শত চেষ্টা করেও রিফাতকে রক্ষা করতে পারেননি। এই ঘটনার পর দিন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে শিশু সন্তানের সামনে রাসেল ভূঁইয়া (৩২) নামের এক পিতাকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে সন্ত্রাসীরা। ব্যস্ততম মোগরাপাড়া চৌরাস্তার এলাকায় একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর সন্ত্রাসীরা অস্ত্র হাতে বীরদর্পে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

আহত রাসেল ভূঁইয়ার বাবা সিরাজুল হক ভূঁইয়া বলেন, সন্ত্রাসী বিশাল, রাসেল ও আরাফাত আমার ছেলের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে সন্ত্রাসীরা আমার ছেলেকে হত্যার উদ্দেশে প্রকাশ্যে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে। রাসেল আর্তচিৎকার করলেও কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। হামলাকারীরা বীরদর্পে পালিয়ে যায়। রাসেলকে কুপিয়ে আহতের ঘটনার রেশ না কাটতেই গত শুক্রবার পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলায় এএসআই রফিকুল ইসলাম (৩৬) নামে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। এক নারীকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তে গেলে অভিযুক্ত হায়দার তাকে কুপিয়ে জখম করে। এর আগে গত শুক্রবার ঠাকুরগাঁওয়ে হয়রানির প্রতিবাদ করায় বখাটে ভাতিজার ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তানজিনা আক্তার (২০) নামের এক নার্স। তানজিনা ঠাকুরগাঁও গ্রামীণ চক্ষু হাসপাতালের সেবিকা ছিলেন। গত ২০ জুন সকালে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে ধারালো অস্ত্র দিয়ে পিঠে, বুকে, হাতে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে তার সম্পর্কিত ভাইয়ের ছেলে মোহাম্মদ জীবন।

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. সোহেল রানা বলেন, হঠাৎ করে হয়তো কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। তবে যেসব হত্যাকান্ড আগ থেকে প্রতিহত করা সম্ভব, সেগুলোর ক্ষেত্রে আমরা সতর্ক। হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িতদের পুলিশ আইনের আওতায় নিয়ে আসছে। কিন্তু পারিবারিক হত্যাকান্ড কমাতে হলে নৈতিকতা ও সচেতনতা বাড়াতে হবে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেও সাম্প্রতিক সময়ে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটছে। আবার পরিবারের সঙ্গে শত্রুতা থাকায় প্রতিশোধ নিতে পরিবারের অন্য সদস্যদের আগুনে পুড়িয়ে হত্যা ও হত্যা চেষ্টার ঘটনাও ঘটছে। চলতি বছরে এরূপ আলোচিত বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে।

অধ্যক্ষের কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এবং অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করায় গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাতে মারা যান নুসরাত। দেশ-বিদেশে আলোচিত এই হত্যাকান্ডের রেশ না কাটতেই নরসিংদীতে ফুলন রানী বর্মন নামের এক তরুণীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় সজীব রায় নামে একজনকে পরে গ্রেফতার করা হয়।

শ্বশুর-শাশুড়ির মাদক ব্যবসায় সহযোগিতা করতে রাজি না হওয়ায় ২১ এপ্রিল গৃহবধূ জান্নাতি আক্তারের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় শ্বশুর বাড়ির লোকজন। গত ১০ জুন যৌতুক না দেয়ায় ময়মনসিংহে গৃহবধূ শিরিনকে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টা চালানো হয়। একের পর এক জনসম্মুখে এরূপ নৃশংস ঘটনাগুলো ঘটছে। যে কোন কারণে রাস্তা-ঘাটে কিংবা ঘরে গুলি করে, কুপিয়ে কিংবা গায়ে আগুন ধরিয়ে হত্যা করা হলেও আশপাশে থাকা লোকজন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। ভয়ে কিংবা আত্মরক্ষার্থে কেউ এগিয়ে আসছে না। যা চরম নৈতিকার অবক্ষয়।

রিফাতসহ সম্প্রতি প্রকাশ্যে সংঘটিত হওয়া বেশ কয়েকটি হত্যাকান্ড নিয়ে কথা বলতে গিয়ে গতকাল জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, আমরা এখনও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারিনি। যার ফলশ্রুতিতে, অপরাধীরা অপরাধ করে যাচ্ছে, মানুষ দাঁড়িয়ে দেখছে। আমরা সাধারণ মানুষের বা ভিকটিমের নিরাপত্তা যতদিন নিশ্চিত করতে না পারব, ততদিন পর্যন্ত মানুষ এগিয়ে আসবে না। তবে অনেক ঘটনার ক্ষেত্রে পরিবার কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাসময়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে ওইসব ঘটনা প্রতিহত করা সম্ভব বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম। তিনি বলেন, পারিবারিক কলহে খুন দীর্ঘদিনের মনোমালিন্য, ক্ষোভ কিংবা শত্রুতার বহিঃপ্রকাশ। এসব কলহ পরিবার বা স্বজনরা মিটিয়ে ফেললে কিংবা থানা পুলিশের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে আইনি ব্যবস্থা নিলে অন্তত হত্যার ঘটনা ঘটত না। তার মতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সীমাবদ্ধতার কারণেও এসব হত্যাকান্ড ঘটছে। আইনের প্রয়োগ না থাকায় মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে।

রবিবার, ৩০ জুন ২০১৯ , ১৬ আষাঢ় ১৪২৫, ২৬ শাওয়াল ১৪৪০

সারাদেশে প্রকাশ্যে একের পর এক নৃশংসতায় উদ্বেগ বাড়ছে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

প্রকাশ্যে একের পর এক নৃশংসতা বেড়েছে। দিনদুপুরে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। একটি ঘটনার রেশ না কাটতেই আরেকটি নৃশংস হত্যাকান্ড আলোচনায় আসছে। সারাদেশে রাজনৈতিক, পারিবারিক, ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িকসহ সব ধরনের হত্যাকান্ড বেড়েই চলেছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় প্রতিপক্ষকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। পারিবারিক কলহে স্বামী স্ত্রীকে, স্ত্রী স্বামীকে হত্যা করছে। এমনকি তুচ্ছ ঘটনায় সৃষ্ট দ্বন্দ্বে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনাও বেড়েছে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক অস্থিরতা, পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হওয়া, আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অপরাধীদের ছাড় পাওয়া, মাদকাসক্ততা ও অর্থনৈতিক কারণে এসব খুনের ঘটনা ঘটছে। একই সঙ্গে বিচার বিলম্বিত সংস্কৃতিও নৃশংস হত্যাকান্ড বৃদ্ধির নেপথ্যে কাজ করছে।

পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী- ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল অর্থাৎ ৫ বছরে সারাদেশে খুনের ঘটনা ঘটেছে ১৬ হাজার ৯৭৪টি। এর মধ্যে ২০১৭ সালে বিভিন্ন ঘটনায় খুন হয়েছেন ৩ হাজার ৫৪৯ জন। ২০১৬ সালে ৮৭৯ জন, ২০১৫ সালে ৪ হাজার ৩৫ জন, ২০১৪ সালে ৪ হাজার ৫২৩ জন, ২০১৩ সালে ৩ হাজার ৯৮৮ জন। একই সময় রাজধানীতে খুন হয়েছেন ১ হাজার ১২ জন। এর মধ্যে ২০১৭ সালে ২১৮ জন, ২০১৬ সালে ৪৮ জন, ২০১৫ সালে ২৩৯ জন, ২০১৪ সালে ২৬২ জন, ২০১৩ সালে ২৪৫ জন। এর মধ্যে অধিকাংশ হত্যাকা-ই নৃশংস।

পুরান ঢাকার বিশ্বজিৎ, সিলেটের খাদিজা অথবা সাম্প্রতিক বরগুনার রিফাত। দিনদুপুরে সবার সামনে নারকীয় ও লোমহর্ষক হামলার শিকার তারা। প্রেমঘটিত কারণে গত বুধবার বরগুনায় খুনের শিকার হন শাহনেওয়াজ ওরফে রিফাত শরিফ (২৬)। প্রকাশ্যে দিবালোকে ফিল্ম স্টাইলে রামদা দিয়ে কুপিয়ে তাকে হত্যা করে খুনিরা। এ সময় তার স্ত্রী মিন্নি শত চেষ্টা করেও রিফাতকে রক্ষা করতে পারেননি। এই ঘটনার পর দিন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে শিশু সন্তানের সামনে রাসেল ভূঁইয়া (৩২) নামের এক পিতাকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে সন্ত্রাসীরা। ব্যস্ততম মোগরাপাড়া চৌরাস্তার এলাকায় একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর সন্ত্রাসীরা অস্ত্র হাতে বীরদর্পে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

আহত রাসেল ভূঁইয়ার বাবা সিরাজুল হক ভূঁইয়া বলেন, সন্ত্রাসী বিশাল, রাসেল ও আরাফাত আমার ছেলের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে সন্ত্রাসীরা আমার ছেলেকে হত্যার উদ্দেশে প্রকাশ্যে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে। রাসেল আর্তচিৎকার করলেও কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। হামলাকারীরা বীরদর্পে পালিয়ে যায়। রাসেলকে কুপিয়ে আহতের ঘটনার রেশ না কাটতেই গত শুক্রবার পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলায় এএসআই রফিকুল ইসলাম (৩৬) নামে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। এক নারীকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তে গেলে অভিযুক্ত হায়দার তাকে কুপিয়ে জখম করে। এর আগে গত শুক্রবার ঠাকুরগাঁওয়ে হয়রানির প্রতিবাদ করায় বখাটে ভাতিজার ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তানজিনা আক্তার (২০) নামের এক নার্স। তানজিনা ঠাকুরগাঁও গ্রামীণ চক্ষু হাসপাতালের সেবিকা ছিলেন। গত ২০ জুন সকালে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে ধারালো অস্ত্র দিয়ে পিঠে, বুকে, হাতে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে তার সম্পর্কিত ভাইয়ের ছেলে মোহাম্মদ জীবন।

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. সোহেল রানা বলেন, হঠাৎ করে হয়তো কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। তবে যেসব হত্যাকান্ড আগ থেকে প্রতিহত করা সম্ভব, সেগুলোর ক্ষেত্রে আমরা সতর্ক। হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িতদের পুলিশ আইনের আওতায় নিয়ে আসছে। কিন্তু পারিবারিক হত্যাকান্ড কমাতে হলে নৈতিকতা ও সচেতনতা বাড়াতে হবে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেও সাম্প্রতিক সময়ে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটছে। আবার পরিবারের সঙ্গে শত্রুতা থাকায় প্রতিশোধ নিতে পরিবারের অন্য সদস্যদের আগুনে পুড়িয়ে হত্যা ও হত্যা চেষ্টার ঘটনাও ঘটছে। চলতি বছরে এরূপ আলোচিত বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে।

অধ্যক্ষের কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এবং অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করায় গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাতে মারা যান নুসরাত। দেশ-বিদেশে আলোচিত এই হত্যাকান্ডের রেশ না কাটতেই নরসিংদীতে ফুলন রানী বর্মন নামের এক তরুণীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় সজীব রায় নামে একজনকে পরে গ্রেফতার করা হয়।

শ্বশুর-শাশুড়ির মাদক ব্যবসায় সহযোগিতা করতে রাজি না হওয়ায় ২১ এপ্রিল গৃহবধূ জান্নাতি আক্তারের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় শ্বশুর বাড়ির লোকজন। গত ১০ জুন যৌতুক না দেয়ায় ময়মনসিংহে গৃহবধূ শিরিনকে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টা চালানো হয়। একের পর এক জনসম্মুখে এরূপ নৃশংস ঘটনাগুলো ঘটছে। যে কোন কারণে রাস্তা-ঘাটে কিংবা ঘরে গুলি করে, কুপিয়ে কিংবা গায়ে আগুন ধরিয়ে হত্যা করা হলেও আশপাশে থাকা লোকজন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। ভয়ে কিংবা আত্মরক্ষার্থে কেউ এগিয়ে আসছে না। যা চরম নৈতিকার অবক্ষয়।

রিফাতসহ সম্প্রতি প্রকাশ্যে সংঘটিত হওয়া বেশ কয়েকটি হত্যাকান্ড নিয়ে কথা বলতে গিয়ে গতকাল জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, আমরা এখনও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারিনি। যার ফলশ্রুতিতে, অপরাধীরা অপরাধ করে যাচ্ছে, মানুষ দাঁড়িয়ে দেখছে। আমরা সাধারণ মানুষের বা ভিকটিমের নিরাপত্তা যতদিন নিশ্চিত করতে না পারব, ততদিন পর্যন্ত মানুষ এগিয়ে আসবে না। তবে অনেক ঘটনার ক্ষেত্রে পরিবার কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাসময়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে ওইসব ঘটনা প্রতিহত করা সম্ভব বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম। তিনি বলেন, পারিবারিক কলহে খুন দীর্ঘদিনের মনোমালিন্য, ক্ষোভ কিংবা শত্রুতার বহিঃপ্রকাশ। এসব কলহ পরিবার বা স্বজনরা মিটিয়ে ফেললে কিংবা থানা পুলিশের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে আইনি ব্যবস্থা নিলে অন্তত হত্যার ঘটনা ঘটত না। তার মতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সীমাবদ্ধতার কারণেও এসব হত্যাকান্ড ঘটছে। আইনের প্রয়োগ না থাকায় মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে।