সিমেন্ট কারখানা বনাঞ্চল ধ্বংস করবে, হুমকিতে পড়বে জলজপ্রাণী

বিশেষজ্ঞগণ

সিমেন্ট তৈরির উপাদান চক, চুনাপাথর, সিলিকা, আয়রন অক্সাইড এবং অ্যালুমিনাসহ অন্যান্য উপাদান সুন্দরবনের উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণে বাধা প্রদান করে বনাঞ্চল ধ্বংস করবে। পাশাপাশি পানি এবং পানির নিচের মাটি দূষণের মাধ্যমে জলজপ্রাণীর অস্তিত্বকে হুমকির মধ্যে ফেলবে বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ইতোমধ্যে সুন্দরবনের পার্শবর্তী এলাকায় যে সিমেন্ট ফ্যাক্টরি রয়েছে সেগুলোর পরিবেশ দূষণের মাত্রা নির্ণয় করলেই এই তথ্য পাওয়া যাবে।

গতকাল জাতীয় সংসদের প্রশ্ন-উত্তর পর্বে বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন জানান, বাগেরহাটের সুন্দরবনসংলগ্ন মংলা পোর্ট এলাকায় আরও ৫টি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি করার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সুন্দরবন এলাকার ৬ কিলোমিটার দূরে এই ফ্যাক্টরিগুলো নির্মাণ করা হবে। পরিবেশ অধিদফতর অনুমোদিত এই সিমেন্ট ফ্যাক্টরিগুলোর ওপর নজরদারি করবে, যাতে তারা পরিবেশ দূষণ করতে না পারে। পরিবেশ অধিদফতরের সব নীতিমালা মেনেই সেখানে ফ্যাক্টরি স্থাপন করতে হবে।

পরিবেশ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী আবদুস সোবহান এই বিষয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক সমীক্ষা অনুযায়ী ঢাকার চাইতে নারায়ণগঞ্জের বায়ু দূষণের মাত্রা বেশি। এর প্রধান কারণ সেখানকার সিমেন্ট ফ্যাক্টরি। সিমেন্টের চক, চুনাপাথর, সিলিকা, আয়রন অক্সাইড এবং অ্যালুমিনা বাতাসের সঙ্গে মিশে বায়ু দূষণ করে। তিনি বলেন, সুন্দরবনে সিমেন্টের এসব উপদান যখন বাতাসের সঙ্গে মিশে গাছের পতার গায়ে লাগবে তখন গাছের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে সুন্দরবনের বনভূমিকে ধ্বংস করবে। সিমেন্টর ডাস্ট শুধু বায়ু দূষণই করবে না সুন্দরবনের নদীর পানিকেও দূষিত করবে। এছাড়া সেখানে নতুন নতুন ফ্যাক্টরি স্থাপনের ফলে বনভূমি ধ্বংস করে রাস্তাঘাট ও বসতি নির্মাণ করা হবে। কয়েক বছরের মধ্যেই যার নেতিবাচক প্রভাব পরবে সুন্দরবনের ওপর।

নতুন অনুমোদিত সিমেন্ট ফ্যাক্টরিগুলোর মধ্যে রয়েছে মেঘনা সিমেন্ট মিলস লি., বসুন্ধরা সিমেন্ট মিলস লি., মোংলা সিমেন্ট মিলস লি., দুবাই বাংলা সিমেন্ট মিলস লি. এবং হোলসিম (বাংলাদেশ) লি.। এছাড়াও সেখানে আগে থেকে আরও তিনটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটার এলাকায় কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ আগে থেকেই নিষিদ্ধ। তার ওপর এ ধরনের সিমেন্ট ফ্যাক্টরির অনুমোদন কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। কারণ এই সিমেন্ট ফ্যাক্টরির ক্লিংকার আনা-নেয়ার জন্য সুন্দরবনের নদীপথ ব্যবহার করা হবে। যেটা নদীর ওপর চাপ বৃদ্ধি করবে। এছড়াও এই ফ্যাক্টরির আশপাশে বসতি গড়ে ওঠবে যা বনভূমি ধ্বংস করবে। তিনি বলেন, সিমেন্ট ফ্যাক্টরির ফাইন পার্টিকল বাতাসের সঙ্গে মিশে শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করে। যা বন্যপ্রাণীর অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

রবিবার, ৩০ জুন ২০১৯ , ১৬ আষাঢ় ১৪২৫, ২৬ শাওয়াল ১৪৪০

সিমেন্ট কারখানা বনাঞ্চল ধ্বংস করবে, হুমকিতে পড়বে জলজপ্রাণী

বিশেষজ্ঞগণ

ওয়ালিদ খান

সিমেন্ট তৈরির উপাদান চক, চুনাপাথর, সিলিকা, আয়রন অক্সাইড এবং অ্যালুমিনাসহ অন্যান্য উপাদান সুন্দরবনের উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণে বাধা প্রদান করে বনাঞ্চল ধ্বংস করবে। পাশাপাশি পানি এবং পানির নিচের মাটি দূষণের মাধ্যমে জলজপ্রাণীর অস্তিত্বকে হুমকির মধ্যে ফেলবে বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ইতোমধ্যে সুন্দরবনের পার্শবর্তী এলাকায় যে সিমেন্ট ফ্যাক্টরি রয়েছে সেগুলোর পরিবেশ দূষণের মাত্রা নির্ণয় করলেই এই তথ্য পাওয়া যাবে।

গতকাল জাতীয় সংসদের প্রশ্ন-উত্তর পর্বে বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন জানান, বাগেরহাটের সুন্দরবনসংলগ্ন মংলা পোর্ট এলাকায় আরও ৫টি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি করার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সুন্দরবন এলাকার ৬ কিলোমিটার দূরে এই ফ্যাক্টরিগুলো নির্মাণ করা হবে। পরিবেশ অধিদফতর অনুমোদিত এই সিমেন্ট ফ্যাক্টরিগুলোর ওপর নজরদারি করবে, যাতে তারা পরিবেশ দূষণ করতে না পারে। পরিবেশ অধিদফতরের সব নীতিমালা মেনেই সেখানে ফ্যাক্টরি স্থাপন করতে হবে।

পরিবেশ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী আবদুস সোবহান এই বিষয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক সমীক্ষা অনুযায়ী ঢাকার চাইতে নারায়ণগঞ্জের বায়ু দূষণের মাত্রা বেশি। এর প্রধান কারণ সেখানকার সিমেন্ট ফ্যাক্টরি। সিমেন্টের চক, চুনাপাথর, সিলিকা, আয়রন অক্সাইড এবং অ্যালুমিনা বাতাসের সঙ্গে মিশে বায়ু দূষণ করে। তিনি বলেন, সুন্দরবনে সিমেন্টের এসব উপদান যখন বাতাসের সঙ্গে মিশে গাছের পতার গায়ে লাগবে তখন গাছের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে সুন্দরবনের বনভূমিকে ধ্বংস করবে। সিমেন্টর ডাস্ট শুধু বায়ু দূষণই করবে না সুন্দরবনের নদীর পানিকেও দূষিত করবে। এছাড়া সেখানে নতুন নতুন ফ্যাক্টরি স্থাপনের ফলে বনভূমি ধ্বংস করে রাস্তাঘাট ও বসতি নির্মাণ করা হবে। কয়েক বছরের মধ্যেই যার নেতিবাচক প্রভাব পরবে সুন্দরবনের ওপর।

নতুন অনুমোদিত সিমেন্ট ফ্যাক্টরিগুলোর মধ্যে রয়েছে মেঘনা সিমেন্ট মিলস লি., বসুন্ধরা সিমেন্ট মিলস লি., মোংলা সিমেন্ট মিলস লি., দুবাই বাংলা সিমেন্ট মিলস লি. এবং হোলসিম (বাংলাদেশ) লি.। এছাড়াও সেখানে আগে থেকে আরও তিনটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটার এলাকায় কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ আগে থেকেই নিষিদ্ধ। তার ওপর এ ধরনের সিমেন্ট ফ্যাক্টরির অনুমোদন কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। কারণ এই সিমেন্ট ফ্যাক্টরির ক্লিংকার আনা-নেয়ার জন্য সুন্দরবনের নদীপথ ব্যবহার করা হবে। যেটা নদীর ওপর চাপ বৃদ্ধি করবে। এছড়াও এই ফ্যাক্টরির আশপাশে বসতি গড়ে ওঠবে যা বনভূমি ধ্বংস করবে। তিনি বলেন, সিমেন্ট ফ্যাক্টরির ফাইন পার্টিকল বাতাসের সঙ্গে মিশে শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করে। যা বন্যপ্রাণীর অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।