মুক্তিযুদ্ধে পাকস্তানি সেনাবাহিনীর চিহ্নিত ১৯৫ যুদ্ধাপরাধীর বিচারে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তৎপরতা চালাতে সরকারকে তাগিদ দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। গতকাল রাজধানীর বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবে ‘সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম- মুক্তিযুদ্ধ ৭১’র পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনে তারা একথা বলেন। বক্তারা সর্বোচ্চ আদালতে ৫৪ জন যুদ্ধারপরাধী মামলার আসামির আপিল দ্রুত নিষ্পত্তির দাবিও জানান।
প্রধান অতিথি হিসেবে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) একেএম শফিউল্লাহর সভাপতিত্বে সম্মেলনে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সংগঠনের সহ-সভাপতি নাট্যব্যক্তিত্ব ম হামিদ। সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী, সংস্কৃতিজন সৈয়দ হাসান ইমাম, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হারুন হাবীব, ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী, যুগ্ম-মহাসচিব আবুল কালাম আজাদ পাটোয়ারি, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান মমতাজ বেগম, সম্মেলনের প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নুরুল আলম প্রমুখ।
সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ও মন্ত্রী একে খন্দকারের বইয়ে ইতিহাস বিকৃতির বিরোধিতাকে ফোরামের সাহসী পদক্ষেপ মন্তব্য করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘ওটা ছিল ফরমায়েশি লেখা। এ ধরনের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে ফোরাম ভবিষ্যতেও সাহসী ভূমিকা পালন করবে বলে আমি মনে করি।’ একই নকশায় মুক্তিযোদ্ধাদের কবর, বধ্যভূমি ও যুদ্ধের স্থান সংরক্ষণে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের স্থান, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান ও ভারতের বাহিনীকে দেশে ফিরিয়ে নিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ঘোষণার স্থানগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, চলতি বছরেই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসদের তালিকা প্রণয়ন করে তা প্রকাশ করা হবে। ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় সেøাগান ঘোষণা করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিক মতাদর্শে ভিন্নতা থাকতে পারে, কিন্তু জয় বাংলা সেøাগান বা জাতির পিতা বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকা উচিৎ।’ তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর যাদের পদস্খলন ঘটেছে তারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নয়। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেন তারাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানানোর মধ্য দিয়ে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা করেছে। শুধু তাই না, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানই একাত্তরের পরাজিতদের পুনর্বাসন কাজ শুরু করেছিলেন।’ এতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তরান্বিত করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ানো, রাজাকারসহ যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা প্রকাশ, পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ, জাতীয় পরিচয়পত্রে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি যুক্তসহ ১৩ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
সারওয়ার আলী বলেন, ‘শীর্ষ অপরাধীদের বিচার হয়েছে এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ। কিন্তু ১৯৫ জন চিহ্নিত পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীর বিচারের কাজ এখনো শুরু হয়নি। এ ব্যাপারে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। এতে ফোরামের ভূমিকা রাখা প্রয়োজন বলেও আমি মনে করি।’
কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘বরগুনায় রিফাত হত্যার ঘটনা প্রমাণ করে আমরা এখনো সামাজিক অবক্ষয়ের মধ্যে রয়ে গেছি। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত এ অবক্ষয় ছড়িয়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখতে হবে। আপনারা জাতিকে অনেক দিয়েছেন। এখন যে অস্থিরতা-অবক্ষয় আছে, তা দূর করতে আপনাদের আরও কাজ করতে হবে।’
সৈয়দা হাসান ইমাম বলেন, জিয়ার আমলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেনি। এজন্যই মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা ভূলণ্ঠিত হয়েছে।’
২০০৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গঠন করা হয় সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে যুদ্ধাপরাধী প্রার্থীদের বয়কটের বিষয়ে সারাদেশে জনমত গঠনে ভূমিকা রাখে সংগঠনটি।
রবিবার, ৩০ জুন ২০১৯ , ১৬ আষাঢ় ১৪২৫, ২৬ শাওয়াল ১৪৪০
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
মুক্তিযুদ্ধে পাকস্তানি সেনাবাহিনীর চিহ্নিত ১৯৫ যুদ্ধাপরাধীর বিচারে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তৎপরতা চালাতে সরকারকে তাগিদ দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। গতকাল রাজধানীর বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবে ‘সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম- মুক্তিযুদ্ধ ৭১’র পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনে তারা একথা বলেন। বক্তারা সর্বোচ্চ আদালতে ৫৪ জন যুদ্ধারপরাধী মামলার আসামির আপিল দ্রুত নিষ্পত্তির দাবিও জানান।
প্রধান অতিথি হিসেবে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) একেএম শফিউল্লাহর সভাপতিত্বে সম্মেলনে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সংগঠনের সহ-সভাপতি নাট্যব্যক্তিত্ব ম হামিদ। সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী, সংস্কৃতিজন সৈয়দ হাসান ইমাম, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হারুন হাবীব, ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী, যুগ্ম-মহাসচিব আবুল কালাম আজাদ পাটোয়ারি, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান মমতাজ বেগম, সম্মেলনের প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নুরুল আলম প্রমুখ।
সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ও মন্ত্রী একে খন্দকারের বইয়ে ইতিহাস বিকৃতির বিরোধিতাকে ফোরামের সাহসী পদক্ষেপ মন্তব্য করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘ওটা ছিল ফরমায়েশি লেখা। এ ধরনের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে ফোরাম ভবিষ্যতেও সাহসী ভূমিকা পালন করবে বলে আমি মনে করি।’ একই নকশায় মুক্তিযোদ্ধাদের কবর, বধ্যভূমি ও যুদ্ধের স্থান সংরক্ষণে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের স্থান, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান ও ভারতের বাহিনীকে দেশে ফিরিয়ে নিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ঘোষণার স্থানগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, চলতি বছরেই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসদের তালিকা প্রণয়ন করে তা প্রকাশ করা হবে। ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় সেøাগান ঘোষণা করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিক মতাদর্শে ভিন্নতা থাকতে পারে, কিন্তু জয় বাংলা সেøাগান বা জাতির পিতা বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকা উচিৎ।’ তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর যাদের পদস্খলন ঘটেছে তারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নয়। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেন তারাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানানোর মধ্য দিয়ে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা করেছে। শুধু তাই না, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানই একাত্তরের পরাজিতদের পুনর্বাসন কাজ শুরু করেছিলেন।’ এতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তরান্বিত করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ানো, রাজাকারসহ যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা প্রকাশ, পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ, জাতীয় পরিচয়পত্রে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি যুক্তসহ ১৩ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
সারওয়ার আলী বলেন, ‘শীর্ষ অপরাধীদের বিচার হয়েছে এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ। কিন্তু ১৯৫ জন চিহ্নিত পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীর বিচারের কাজ এখনো শুরু হয়নি। এ ব্যাপারে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। এতে ফোরামের ভূমিকা রাখা প্রয়োজন বলেও আমি মনে করি।’
কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘বরগুনায় রিফাত হত্যার ঘটনা প্রমাণ করে আমরা এখনো সামাজিক অবক্ষয়ের মধ্যে রয়ে গেছি। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত এ অবক্ষয় ছড়িয়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখতে হবে। আপনারা জাতিকে অনেক দিয়েছেন। এখন যে অস্থিরতা-অবক্ষয় আছে, তা দূর করতে আপনাদের আরও কাজ করতে হবে।’
সৈয়দা হাসান ইমাম বলেন, জিয়ার আমলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেনি। এজন্যই মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা ভূলণ্ঠিত হয়েছে।’
২০০৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গঠন করা হয় সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে যুদ্ধাপরাধী প্রার্থীদের বয়কটের বিষয়ে সারাদেশে জনমত গঠনে ভূমিকা রাখে সংগঠনটি।