জমি কিনে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকল না

অভিনন্দন জানাল রিহ্যাব

প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্ক এবং জমি, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট কেনা, দালান নির্মাণে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। তবে গত শনিবার জমি কেনায় কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রত্যাহার করে সংসদে অর্থবিল পাস হয়েছে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্ক, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট কেনা এবং দালান নির্মাণে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে। জমি কিনে কালো সাদা করার সুযোগ না থাকলেও ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট কেনার সুযোগ রাখার সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানিয়েছে দেশের আবাসন খাতের সংগঠন রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ১৩ জুন সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করেছিলেন তাতে ১০ শতাংশ কর দিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে পণ্য বা সেবা উৎপাদন থেকে অর্জিত আয়কে ১০ বছরের জন্য বিভিন্ন হারে কর অব্যাহতি সুবিধা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে শিল্প স্থাপনে অপ্রদর্শিত আয় থেকে বিনিয়োগকৃত অর্থের উৎসের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিলে ওই অর্থের উৎস সম্পর্কে আয়কর বিভাগ থেকে কোনো প্রশ্ন তোলা হবে না। এ সংক্রান্ত একটি বিধান আয়কর অধ্যাদেশে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করছি। বিদ্যমান আইনে নির্দিষ্ট হারে কর দেয়া হলে ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয় এবং দালান নির্মাণে বিনিয়োগ করা অর্থের উৎস সম্পর্কেও কোন প্রশ্ন তোলা হয় না। তবে এই হারটি অত্যধিক হওয়ায় করদাতারা খুব একটা সাড়া দিচ্ছেন না। ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট কেনা এবং দালান নির্মাণে বিনিয়োগ স্বপ্রণোদিতভাবে আয়কর নথিতে প্রদর্শনে করদাতাদের আরও আগ্রহী করার জন্য এ সংক্রান্ত বিদ্যমান করহার হ্রাস করার প্রস্তাব করছি। করের ওই হার কমে কত হবে, তার উল্লেখ অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় না থাকলেও তিনি বলেন, এ হ্রাসকৃত করহারের সুযোগ নিয়ে করদাতারা ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট কেনা এবং দালান নির্মাণে তাদের অপ্রদর্শিত বিনিয়োগ অতিদ্রুত আয়কর নথিতে প্রদর্শন করবেন এবং স্বেচ্ছায় স্বপ্রণোদিতভাবে করের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করবেন।

গতকাল রিহ্যাবের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাধারণ মানুষকে বিবেচনায় এনে রিয়েল এস্টেট খাতকে গুরুত্ব দিয়ে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পাশ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর চেয়ারম্যান সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) এর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। জাতীয় বাজেটে সরকার আবাসন খাতে রেজিস্ট্রেশন ব্যয় কমানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে তা এই খাতে রাজস্ব আহরণে অধিক মাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সরকারের এই যুগান্তকারি উদ্যোগ এর ফলে আবাসন খাতে বিদ্যমান স্থবিরতা বহুলাংশে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে বিশ্বাস করে রিহ্যাব। বাজেটে সরকার ফ্ল্যাট এবং এ্যাপার্টমেন্ট ক্রয়ে যে বিনিয়োগ সুবিধার প্রস্তাব করেছে তা এই খাতে ফলপ্রসু ভূমিকা রাখবে এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা যাতে ভাড়ার টাকায় মাথা গোঁজার একটা ঠিকানা খুঁজে পায় সেজন্য স্বল্প সুদের দীর্ঘমেয়াদী একটি তহবিল গঠনসহ রিহ্যাব এর অন্যান্য দাবি সমূহ আগামীতে সরকার বাস্তবায়ন করবে বলে আশা করে রিহ্যাব।

আয়কর অধ্যাদেশে কালো টাকা সাদা করার ক্ষেত্রে দুটি নিয়ম চালু আছে। প্রথমত, নির্ধারিত করের সঙ্গে অতিরিক্ত জরিমানা দিয়ে যে কোন খাতের কালো টাকা বিনিয়োগ করা যায়। দ্বিতীয়ত, সরকার বিভিন্ন সময়ে নির্দিষ্ট কিছু খাতে কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে থাকে। এছাড়া অর্থবিলে আরও কয়েকটি সংশোধন আনা হয়েছে। যেমন প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় কোম্পানিগুলোকে ক্যাশ ডিভিডেন্ডে উৎসাহিত করার জন্য স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছিল। সংশোধিত প্রস্তাবে স্টক ডিভিডেন্ডের সঙ্গে সমান হারে নগদ লভ্যাংশও দেয়ার প্রস্তাবসহ পুঁজিবাজারের আরও কয়েকটি বিষয়ে সংশোধিত প্রস্তাব আনা হয়েছে। ভ্যাটের ক্ষেত্রেও কয়েক কিছু সংশোধন আনা হয়েছে।

সোমবার, ০১ জুলাই ২০১৯ , ১৭ আষাঢ় ১৪২৫, ২৭ শাওয়াল ১৪৪০

জমি কিনে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকল না

অভিনন্দন জানাল রিহ্যাব

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্ক এবং জমি, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট কেনা, দালান নির্মাণে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। তবে গত শনিবার জমি কেনায় কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রত্যাহার করে সংসদে অর্থবিল পাস হয়েছে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্ক, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট কেনা এবং দালান নির্মাণে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে। জমি কিনে কালো সাদা করার সুযোগ না থাকলেও ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট কেনার সুযোগ রাখার সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানিয়েছে দেশের আবাসন খাতের সংগঠন রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ১৩ জুন সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করেছিলেন তাতে ১০ শতাংশ কর দিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে পণ্য বা সেবা উৎপাদন থেকে অর্জিত আয়কে ১০ বছরের জন্য বিভিন্ন হারে কর অব্যাহতি সুবিধা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে শিল্প স্থাপনে অপ্রদর্শিত আয় থেকে বিনিয়োগকৃত অর্থের উৎসের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিলে ওই অর্থের উৎস সম্পর্কে আয়কর বিভাগ থেকে কোনো প্রশ্ন তোলা হবে না। এ সংক্রান্ত একটি বিধান আয়কর অধ্যাদেশে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করছি। বিদ্যমান আইনে নির্দিষ্ট হারে কর দেয়া হলে ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয় এবং দালান নির্মাণে বিনিয়োগ করা অর্থের উৎস সম্পর্কেও কোন প্রশ্ন তোলা হয় না। তবে এই হারটি অত্যধিক হওয়ায় করদাতারা খুব একটা সাড়া দিচ্ছেন না। ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট কেনা এবং দালান নির্মাণে বিনিয়োগ স্বপ্রণোদিতভাবে আয়কর নথিতে প্রদর্শনে করদাতাদের আরও আগ্রহী করার জন্য এ সংক্রান্ত বিদ্যমান করহার হ্রাস করার প্রস্তাব করছি। করের ওই হার কমে কত হবে, তার উল্লেখ অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় না থাকলেও তিনি বলেন, এ হ্রাসকৃত করহারের সুযোগ নিয়ে করদাতারা ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট কেনা এবং দালান নির্মাণে তাদের অপ্রদর্শিত বিনিয়োগ অতিদ্রুত আয়কর নথিতে প্রদর্শন করবেন এবং স্বেচ্ছায় স্বপ্রণোদিতভাবে করের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করবেন।

গতকাল রিহ্যাবের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাধারণ মানুষকে বিবেচনায় এনে রিয়েল এস্টেট খাতকে গুরুত্ব দিয়ে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পাশ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর চেয়ারম্যান সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) এর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। জাতীয় বাজেটে সরকার আবাসন খাতে রেজিস্ট্রেশন ব্যয় কমানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে তা এই খাতে রাজস্ব আহরণে অধিক মাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সরকারের এই যুগান্তকারি উদ্যোগ এর ফলে আবাসন খাতে বিদ্যমান স্থবিরতা বহুলাংশে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে বিশ্বাস করে রিহ্যাব। বাজেটে সরকার ফ্ল্যাট এবং এ্যাপার্টমেন্ট ক্রয়ে যে বিনিয়োগ সুবিধার প্রস্তাব করেছে তা এই খাতে ফলপ্রসু ভূমিকা রাখবে এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা যাতে ভাড়ার টাকায় মাথা গোঁজার একটা ঠিকানা খুঁজে পায় সেজন্য স্বল্প সুদের দীর্ঘমেয়াদী একটি তহবিল গঠনসহ রিহ্যাব এর অন্যান্য দাবি সমূহ আগামীতে সরকার বাস্তবায়ন করবে বলে আশা করে রিহ্যাব।

আয়কর অধ্যাদেশে কালো টাকা সাদা করার ক্ষেত্রে দুটি নিয়ম চালু আছে। প্রথমত, নির্ধারিত করের সঙ্গে অতিরিক্ত জরিমানা দিয়ে যে কোন খাতের কালো টাকা বিনিয়োগ করা যায়। দ্বিতীয়ত, সরকার বিভিন্ন সময়ে নির্দিষ্ট কিছু খাতে কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে থাকে। এছাড়া অর্থবিলে আরও কয়েকটি সংশোধন আনা হয়েছে। যেমন প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় কোম্পানিগুলোকে ক্যাশ ডিভিডেন্ডে উৎসাহিত করার জন্য স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছিল। সংশোধিত প্রস্তাবে স্টক ডিভিডেন্ডের সঙ্গে সমান হারে নগদ লভ্যাংশও দেয়ার প্রস্তাবসহ পুঁজিবাজারের আরও কয়েকটি বিষয়ে সংশোধিত প্রস্তাব আনা হয়েছে। ভ্যাটের ক্ষেত্রেও কয়েক কিছু সংশোধন আনা হয়েছে।