নতুন অর্থবছরের ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট পাস

জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের স্তর পেরিয়ে ধারাবাহিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে একটি শান্তিপূর্ণ, সুখী, উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্য সামনে রেখে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট গতকাল কণ্ঠভোটে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। তা আজ ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে আটকে রেখেই ৮ দশমিক ২০ শতাংশ মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীরর সভাপতিত্বে গতকাল দুপুরে একাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় (বাজেট) অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রস্তাবিত ‘নির্দিষ্টকরণ বিল ২০১৯’ কণ্ঠভোটে সর্বসম্মতিক্রমে পাসের মধ্য দিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়। এরপর সংসদ সদস্যরা অনেকক্ষণ ধরে টেবিলে চাপড়ে নতুন বাজেটকে স্বাগত জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় উপনেতা নেতা রওশন এরশাদ সংসদে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকালে অধিবেশনের শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্ব টেবিলে উপস্থাপিত হয় ও মঞ্জুরি দাবিতে আলোচনা শুরু হয়।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ১৩ জুন জাতীয় সংসদে ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ স্লোগান সংবলিত এ বাজেট পেশ করেন। বাজেট পেশের একপর্যায়ে অসুস্থ অর্থমন্ত্রী বক্তব্য দিতে সমস্যা বোধ করায় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পক্ষে বাজেট বক্তৃতা উপস্থাপন করেন।

টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকারের এটি টানা ১১তম বাজেট ও একাদশ জাতীয় সংসদে জয়লাভের পর প্রথম বছরের প্রথম বাজেট। অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালের এটি প্রথম বাজেট। এদিকে গত ১৩ জুন বাজেট পেশ করার পর ১৬ থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত মোট ১২ কার্যদিবস সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও অন্যান্য মন্ত্রীসহ সরকারি ও বিরোধী দলের ২৫৫ সংসদ সদস্য মোট ৫১ ঘণ্টা ৫২ মিনিট বাজেটের ওপর আলোচনা করেন। তা শনিবার শেষ হয়। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর ১৪ সংসদ সদস্য ৩ ঘণ্টা ৪৪ মিনিট আলোচনা করেন।

২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার এই বাজেট বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৮ দশমিক ১ শতাংশের সমান। এতে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ২২ শতাংশ বেশি। এবার পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ১০ হাজার ২৬২ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে ১৬ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে ৬০ হাজার ১০৯ কোটি টাকা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধেই যাবে, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের ১৯ শতাংশের বেশি।

নতুন অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের ৭২ শতাংশ রাজস্ব খাত থেকে পাওয়ার আশা করছে সরকার। বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ১৯ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে সরকারের তরফ থেকে আশা করা হচ্ছে। ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ।

গতবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকেÑ ১ লাখ ২৩ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৭ দশমিক ২১ শতাংশের মতো। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। লক্ষ্য পূরণ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। আয়কর ও মুনাফার ওপর কর থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯১২ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। বিদায়ী সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৯৫ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। এছাড়া নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৩৬ হাজার ৪৯৮ কোটি, সম্পূরক শুল্কে থেকে ৪৮ হাজার ১৫৩ কোটি, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৫৪ কোটি, আবগারি শুল্ক থেকে ২ হাজার ২৩৯ কোটি এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। বৈদেশিক অনুদান থেকে ৪ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন। অর্থমন্ত্রী বলছেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে তিনি এবার নতুন কোনো কর আরোপ করছেন না। বরং করের আওতা বাড়িয়ে তিনি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে চান।

অর্থমন্ত্রী সংসদের সামনে যে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন, তাতে আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশের সমান। এই ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রীর সহায় অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণ। তিনি আশা করছেন, বিদেশ থেকে ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি ও অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ঋণ করে ওই ঘাটতি মেটানো যাবে। এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে আটকে রেখেই ৮ দশমিক ২০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী।

প্রস্তাবিত বাজেটে কোম্পানির রিটেইনড আর্নিংস বা অবণ্টিত মুনাফার ওপর করারোপের যে প্রস্তাব করা হয়েছিল, তাতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সংশোধনী আনা হয়েছে স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ হারে করারোপের প্রস্তাবেও। ভ্যাটের ক্ষেত্রেও কিছু পরিবর্তন এসেছে।

নির্দিষ্টকরণ বিল ২০১৯ : নির্দিষ্টকরণ বিল পাসের মাধ্যমে সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত ৬ লাখ ৪২ হাজার ৪৭৮ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে সংসদের ওপর দায় ১ লাখ ৬১ হাজার ৯৬৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এই টাকা অনুমোদনের জন্য সংসদ কর্তৃক কোন ভোটের প্রয়োজন হয় না। সরাসরি সংসদ এই টাকা অনুমোদন করে দেয়। অবশিষ্ট ৪ লাখ ৮০ হাজার ৫১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪০ হাজার টাকা ভোটের মাধ্যমে সংসদে গৃহীত হয়।

সংসদে পাসকৃত এ বাজেটটি মূলত গ্রস বাজেট। বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও অন্যান্য খাতে বাজেটে সরকারের কিছু অর্থ বরাদ্দের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তা কখনও ব্যয় হয় না। এটি বাজেটের আয়-ব্যয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে হিসাবে মেলানো হয়। এই বাধ্যবাধকতার কারণে এবারের বাজেটেও ১ লাখ ১৯ হাজার ২৮৮ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার টাকা বাজেটে অতিরিক্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তা ব্যয় হবে না। গত ১৩ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী যে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করেছেন, সোিই ব্যয় হবে। এটিই আগামী অর্থবছরের নেট বাজেট।

মঞ্জুরি দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাব : স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনের শুরুতেই মঞ্জুরি দাবিতে আলোচনা করার কথা জানান। বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা এসব দাবিতে আলোচনা করেন। আগামী অর্থবছরের বাজেটের ওপর সংসদে উত্থাপিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খাতের ৫৯টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বিএনপির সদস্যরা ৪৮৪টি বিভিন্ন ধরনের ছাঁটাই প্রস্তাব আনেন। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সদস্যদের আলোচনার পর সব প্রস্তাব কণ্ঠভোটে বাতিল হয়ে যায়।

সোমবার, ০১ জুলাই ২০১৯ , ১৭ আষাঢ় ১৪২৫, ২৭ শাওয়াল ১৪৪০

নতুন অর্থবছরের ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট পাস

সংসদ বার্তা পরিবেশক

image

জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের স্তর পেরিয়ে ধারাবাহিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে একটি শান্তিপূর্ণ, সুখী, উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্য সামনে রেখে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট গতকাল কণ্ঠভোটে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। তা আজ ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে আটকে রেখেই ৮ দশমিক ২০ শতাংশ মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীরর সভাপতিত্বে গতকাল দুপুরে একাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় (বাজেট) অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রস্তাবিত ‘নির্দিষ্টকরণ বিল ২০১৯’ কণ্ঠভোটে সর্বসম্মতিক্রমে পাসের মধ্য দিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়। এরপর সংসদ সদস্যরা অনেকক্ষণ ধরে টেবিলে চাপড়ে নতুন বাজেটকে স্বাগত জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় উপনেতা নেতা রওশন এরশাদ সংসদে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকালে অধিবেশনের শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্ব টেবিলে উপস্থাপিত হয় ও মঞ্জুরি দাবিতে আলোচনা শুরু হয়।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ১৩ জুন জাতীয় সংসদে ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ স্লোগান সংবলিত এ বাজেট পেশ করেন। বাজেট পেশের একপর্যায়ে অসুস্থ অর্থমন্ত্রী বক্তব্য দিতে সমস্যা বোধ করায় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পক্ষে বাজেট বক্তৃতা উপস্থাপন করেন।

টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকারের এটি টানা ১১তম বাজেট ও একাদশ জাতীয় সংসদে জয়লাভের পর প্রথম বছরের প্রথম বাজেট। অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালের এটি প্রথম বাজেট। এদিকে গত ১৩ জুন বাজেট পেশ করার পর ১৬ থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত মোট ১২ কার্যদিবস সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও অন্যান্য মন্ত্রীসহ সরকারি ও বিরোধী দলের ২৫৫ সংসদ সদস্য মোট ৫১ ঘণ্টা ৫২ মিনিট বাজেটের ওপর আলোচনা করেন। তা শনিবার শেষ হয়। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর ১৪ সংসদ সদস্য ৩ ঘণ্টা ৪৪ মিনিট আলোচনা করেন।

২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার এই বাজেট বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৮ দশমিক ১ শতাংশের সমান। এতে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ২২ শতাংশ বেশি। এবার পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ১০ হাজার ২৬২ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে ১৬ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে ৬০ হাজার ১০৯ কোটি টাকা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধেই যাবে, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের ১৯ শতাংশের বেশি।

নতুন অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের ৭২ শতাংশ রাজস্ব খাত থেকে পাওয়ার আশা করছে সরকার। বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ১৯ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে সরকারের তরফ থেকে আশা করা হচ্ছে। ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ।

গতবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকেÑ ১ লাখ ২৩ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৭ দশমিক ২১ শতাংশের মতো। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। লক্ষ্য পূরণ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। আয়কর ও মুনাফার ওপর কর থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯১২ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। বিদায়ী সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৯৫ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। এছাড়া নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৩৬ হাজার ৪৯৮ কোটি, সম্পূরক শুল্কে থেকে ৪৮ হাজার ১৫৩ কোটি, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৫৪ কোটি, আবগারি শুল্ক থেকে ২ হাজার ২৩৯ কোটি এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। বৈদেশিক অনুদান থেকে ৪ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন। অর্থমন্ত্রী বলছেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে তিনি এবার নতুন কোনো কর আরোপ করছেন না। বরং করের আওতা বাড়িয়ে তিনি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে চান।

অর্থমন্ত্রী সংসদের সামনে যে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন, তাতে আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশের সমান। এই ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রীর সহায় অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণ। তিনি আশা করছেন, বিদেশ থেকে ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি ও অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ঋণ করে ওই ঘাটতি মেটানো যাবে। এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে আটকে রেখেই ৮ দশমিক ২০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী।

প্রস্তাবিত বাজেটে কোম্পানির রিটেইনড আর্নিংস বা অবণ্টিত মুনাফার ওপর করারোপের যে প্রস্তাব করা হয়েছিল, তাতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সংশোধনী আনা হয়েছে স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ হারে করারোপের প্রস্তাবেও। ভ্যাটের ক্ষেত্রেও কিছু পরিবর্তন এসেছে।

নির্দিষ্টকরণ বিল ২০১৯ : নির্দিষ্টকরণ বিল পাসের মাধ্যমে সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত ৬ লাখ ৪২ হাজার ৪৭৮ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে সংসদের ওপর দায় ১ লাখ ৬১ হাজার ৯৬৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এই টাকা অনুমোদনের জন্য সংসদ কর্তৃক কোন ভোটের প্রয়োজন হয় না। সরাসরি সংসদ এই টাকা অনুমোদন করে দেয়। অবশিষ্ট ৪ লাখ ৮০ হাজার ৫১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪০ হাজার টাকা ভোটের মাধ্যমে সংসদে গৃহীত হয়।

সংসদে পাসকৃত এ বাজেটটি মূলত গ্রস বাজেট। বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও অন্যান্য খাতে বাজেটে সরকারের কিছু অর্থ বরাদ্দের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তা কখনও ব্যয় হয় না। এটি বাজেটের আয়-ব্যয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে হিসাবে মেলানো হয়। এই বাধ্যবাধকতার কারণে এবারের বাজেটেও ১ লাখ ১৯ হাজার ২৮৮ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার টাকা বাজেটে অতিরিক্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তা ব্যয় হবে না। গত ১৩ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী যে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করেছেন, সোিই ব্যয় হবে। এটিই আগামী অর্থবছরের নেট বাজেট।

মঞ্জুরি দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাব : স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনের শুরুতেই মঞ্জুরি দাবিতে আলোচনা করার কথা জানান। বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা এসব দাবিতে আলোচনা করেন। আগামী অর্থবছরের বাজেটের ওপর সংসদে উত্থাপিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খাতের ৫৯টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বিএনপির সদস্যরা ৪৮৪টি বিভিন্ন ধরনের ছাঁটাই প্রস্তাব আনেন। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সদস্যদের আলোচনার পর সব প্রস্তাব কণ্ঠভোটে বাতিল হয়ে যায়।