১১ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান। রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি ঋণচুক্তি ও বিনিময় নোট সই হয়েছে। চুক্তিতে সই করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মনোয়ার আহমেদ ও জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) চিফ রিপ্রেজেনটেটিভ হিতোয়েশি হিরাতা। বিনিময় নোট স্বাক্ষর করেন মনোয়ার আহমেদ ও জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোয়েশি ইজুমি। ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকার এই প্রকল্পে মোট ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা পর্যায়ক্রমিক ঋণ সহায়তা হিসেবে দেবে জাপান।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুতের অব্যাহত চাহিদা পূরণের জন্য প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায় মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিকাল কোল-ফায়ার্ড পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের কাজ চলছে। প্রকল্পের ডিপিপি একনেক ২০১৪ সালের ১২ আগস্ট অনুমোদিত হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপান পর্যায়ক্রমে ঋণ সহায়তা হিসেবে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা দেবে। এরই মধ্যে ৩৫তম, ৩৭তম, ৩৮তম ও ৩৯তম ইয়েন লোন প্যাকেজের আওতায় যথাক্রমে ৪১ হাজার ৪৯৮ মিলিয়ন, ৩৭ হাজার ৮২১ মিলিয়ন ১০ হাজার ৭৪৫ মিলিয়ন ও ৬৭ হাজার ৩১১ মিলিয়ন ইয়েনের ঋণচুক্তি সই হয়েছে। বর্তমান প্যাকেজসহ প্রকল্পের জন্য মোট ৩ লাখ ৫০২ মিলিয়ন জাপানিজ ইয়েনের ঋণচুক্তি হয়েছে।

অনুষ্ঠানে ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জাপান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় দুটি বিষয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে প্রকল্পগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ মনিটরিংয়ের কারণে জাপানিজ প্রকল্পগুলো নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শেষ হবে বলে জানান মনোয়ার আহমেদ।

জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোয়েশি ইজুমি বলেন, আধুনিক বাংলাদেশ গঠনে প্রকল্পগুলো ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশে এখন ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। দেশটির অবকাঠামো ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সহায়তা দিতে পেরে জাপান গর্বিত। বাংলাদেশের প্রতি আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। হিতোয়েশি হিরাতা বলেন, মাতারবাড়ি এলাকায় বিদ্যুৎ শিল্প হাব গড়ে উঠছে। সেগুলোয় সহায়তা দিচ্ছে জাইকা। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ হবে, অন্যদিকে দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠবে।

মাতারবাড়ি প্রকল্পের পরিচালক এনএম ওবায়দল্লা জানান, চলতি জুন পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ শতাংশ। তবে মে মাস পর্যন্ত প্রকল্পের ১৯ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বলা হয়, দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী দেশ জাপান। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত জাপান সরকার বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন খাতে উল্লেখযোগ্য সহায়তা দিয়েছে। চলতি অর্থবছরে জাপান সরকার ৪০তম ওডিএ লোন প্যাকেজভুক্ত পাঁচ প্রকল্পের জন্য মোট ২৭৫ বিলিয়ন ৭৮৬ মিলিয়ন ইয়েন (আনুমানিক ২১ হাজার ২০০ কোটি টাকা) ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পাঁচ প্রকল্পের মধ্যে মাতারবাড়ি পোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট, ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (মেট্রোরেল), ফরেইন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন প্রজেক্ট ও এনার্জি অ্যাফিশিয়েন্সি অ্যান্ড কনভারশন প্রমোশন ফিন্যান্সিং- এ চারটি প্রকল্পের জন্য মোট ১৩২ বিলিয়ন ৬৫৯ মিলিয়ন ইয়েন ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরে গত ২৯ মে এ সংক্রান্ত বিনিময় নোট ও ঋণচুক্তি সই হয়েছে।

সোমবার, ০১ জুলাই ২০১৯ , ১৭ আষাঢ় ১৪২৫, ২৭ শাওয়াল ১৪৪০

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রে

১১ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান। রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি ঋণচুক্তি ও বিনিময় নোট সই হয়েছে। চুক্তিতে সই করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মনোয়ার আহমেদ ও জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) চিফ রিপ্রেজেনটেটিভ হিতোয়েশি হিরাতা। বিনিময় নোট স্বাক্ষর করেন মনোয়ার আহমেদ ও জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোয়েশি ইজুমি। ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকার এই প্রকল্পে মোট ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা পর্যায়ক্রমিক ঋণ সহায়তা হিসেবে দেবে জাপান।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুতের অব্যাহত চাহিদা পূরণের জন্য প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায় মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিকাল কোল-ফায়ার্ড পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের কাজ চলছে। প্রকল্পের ডিপিপি একনেক ২০১৪ সালের ১২ আগস্ট অনুমোদিত হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপান পর্যায়ক্রমে ঋণ সহায়তা হিসেবে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা দেবে। এরই মধ্যে ৩৫তম, ৩৭তম, ৩৮তম ও ৩৯তম ইয়েন লোন প্যাকেজের আওতায় যথাক্রমে ৪১ হাজার ৪৯৮ মিলিয়ন, ৩৭ হাজার ৮২১ মিলিয়ন ১০ হাজার ৭৪৫ মিলিয়ন ও ৬৭ হাজার ৩১১ মিলিয়ন ইয়েনের ঋণচুক্তি সই হয়েছে। বর্তমান প্যাকেজসহ প্রকল্পের জন্য মোট ৩ লাখ ৫০২ মিলিয়ন জাপানিজ ইয়েনের ঋণচুক্তি হয়েছে।

অনুষ্ঠানে ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জাপান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় দুটি বিষয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে প্রকল্পগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ মনিটরিংয়ের কারণে জাপানিজ প্রকল্পগুলো নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শেষ হবে বলে জানান মনোয়ার আহমেদ।

জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোয়েশি ইজুমি বলেন, আধুনিক বাংলাদেশ গঠনে প্রকল্পগুলো ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশে এখন ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। দেশটির অবকাঠামো ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সহায়তা দিতে পেরে জাপান গর্বিত। বাংলাদেশের প্রতি আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। হিতোয়েশি হিরাতা বলেন, মাতারবাড়ি এলাকায় বিদ্যুৎ শিল্প হাব গড়ে উঠছে। সেগুলোয় সহায়তা দিচ্ছে জাইকা। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ হবে, অন্যদিকে দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠবে।

মাতারবাড়ি প্রকল্পের পরিচালক এনএম ওবায়দল্লা জানান, চলতি জুন পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ শতাংশ। তবে মে মাস পর্যন্ত প্রকল্পের ১৯ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বলা হয়, দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী দেশ জাপান। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত জাপান সরকার বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন খাতে উল্লেখযোগ্য সহায়তা দিয়েছে। চলতি অর্থবছরে জাপান সরকার ৪০তম ওডিএ লোন প্যাকেজভুক্ত পাঁচ প্রকল্পের জন্য মোট ২৭৫ বিলিয়ন ৭৮৬ মিলিয়ন ইয়েন (আনুমানিক ২১ হাজার ২০০ কোটি টাকা) ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পাঁচ প্রকল্পের মধ্যে মাতারবাড়ি পোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট, ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (মেট্রোরেল), ফরেইন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন প্রজেক্ট ও এনার্জি অ্যাফিশিয়েন্সি অ্যান্ড কনভারশন প্রমোশন ফিন্যান্সিং- এ চারটি প্রকল্পের জন্য মোট ১৩২ বিলিয়ন ৬৫৯ মিলিয়ন ইয়েন ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরে গত ২৯ মে এ সংক্রান্ত বিনিময় নোট ও ঋণচুক্তি সই হয়েছে।