বাদীর জেরা শেষ, চার আসামির জামিন নামঞ্জুর

আজ দুই সহপাঠীর সাক্ষ্যগ্রহণ

সোনাগাজীর আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় গতকাল বাদী নুসরাতের ভাইয়ের জেরা শেষ করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। একই সঙ্গে চার আসামি আ’লীগ নেতা রুহুল আমিন, আফসার উদ্দিন, শামীম ও মণির শুনানির পর জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে এ জেরা অনুষ্ঠিত হয়।

সকাল সাড়ে ১১টা থেকে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানকে জেরা করেন আসামিপক্ষের ৭ আইনজীবী। আজ নুসরাতের দু’সহপাঠী নিশাত সুলতানা ও নাসরিন সুলতানা ফুর্তির সাক্ষ্যগ্রহণ হবে।

এর আগে গত ২৭ জুন মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান সাক্ষ্য দেন। আসামিপক্ষের কৌঁসুলিরা বাদীকে দ্বিতীয় দিনের মতো জেরা করেন। এ সময় আদালতের কাঠগড়ায় এই মামলার মোট ১৬ আসামি হাজির ছিলেন। আদালত সূত্রের বরাত দিয়ে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হাফেজ আহাম্মদ এ তথ্য জানান।

গত ২৭ জুন অভিযোগ গঠনের ছয় দিনের মাথায় ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ৩ জনকে আদালতে তাদের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য উপস্থাপন করা হয়। সাক্ষ্য শেষ না হওয়ায় সেদিন আদালত মুলতবি ঘোষণা করা হয়। এরও আগে ২০ জুন আদালত সাক্ষ্যগ্রহণের এই আদেশ দেন। ওইদিনও মামলার ১৬ আসামির পক্ষে জামিন আবেদন করেন তাদের আলাদা আলাদা ১৬ আইনজীবী। শুনানি শেষে তাদের আবেদন নামঞ্জুর করে ২৭ জুন সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর দিন ঠিক করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। এ মামলার চার্জশিট জমা দেয়ার আগে সাত সাক্ষী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রসায় আলিম পরীক্ষা কেন্দ্রে গেলে নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতহানির মামলা তুলে না নেয়ায় তাকে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে; যা মৃত্যুশয্যায় নুসরাত বলে গেছেন। ১০ এপ্রিল ঢাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীনে নুসরাতের মৃত্যু হয়। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ফেনীর পরিদর্শক শাহ আলম আদালতে মোট ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেন।

অভিযোগপত্রের ১৬ আসামি হলো মাদ্রসার অধ্যক্ষ ও হত্যার নির্দেশদাতা সিরাজ উদ-দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আবদুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মণি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আবদুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি ও আ’লীগ নেতা রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল।

এ মামলায় মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তদন্তে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় অন্য পাঁচজনকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করে পিবিআই। আদালত তা অনুমোদন করে। এছাড়া যৌন হয়রানির মামলার পর নুসরাতের জবানবন্দি গ্রহণের সময় তার ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে সাইবার আইনে মামলা হওয়ার পর সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে।

চেক জালিয়াতি মামলায় অধ্যক্ষ

সিরাজের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন

এদিকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকার একটি চেক জালিয়াতি মামলায় গতকাল আদালতে চার্জ গঠন করা হয়েছে। ফেনীর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুর রহিমের আদালতে এ চার্জ গঠন করা হয়।

এ মামলায় সিরাজসহ উম্মুল কুরা মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সদস্য নুর নবী নয়ন ও মোতাহের হোসেন মোর্তজার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে। ৭ জুলাই আদালত সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেছেন।

মামলার বাদী আবদুল কাইয়ুম জানান, উম্মুল কুরা সমিতির চেয়ারম্যান থাকাকালীন অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা জমি, গাড়ি, একটি ফার্নিচার শোরুম ও উম্মুল কুরা মাদ্রাসার জামানত বাবদ ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে।

সমিতির সাধারণ সভায় তা প্রমাণিত হলে সমিতির ১০৯ সদস্যের পক্ষে আবদুল কাইয়ুমের নামে ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকার একটি চেক দেন অধ্যক্ষ সিরাজ।

ইসলামী ব্যাংক, কলেজ রোড, ফেনী শাখায় চেকটি বারবার প্রত্যাখ্যাত হলে কাইয়ুম বাদী হয়ে ২০১৭ সালের ৯ অক্টোবর আদালতে একটি মামলা করেন।

সোমবার, ০১ জুলাই ২০১৯ , ১৭ আষাঢ় ১৪২৫, ২৭ শাওয়াল ১৪৪০

বাদীর জেরা শেষ, চার আসামির জামিন নামঞ্জুর

আজ দুই সহপাঠীর সাক্ষ্যগ্রহণ

প্রতিনিধি, ফেনী

সোনাগাজীর আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় গতকাল বাদী নুসরাতের ভাইয়ের জেরা শেষ করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। একই সঙ্গে চার আসামি আ’লীগ নেতা রুহুল আমিন, আফসার উদ্দিন, শামীম ও মণির শুনানির পর জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে এ জেরা অনুষ্ঠিত হয়।

সকাল সাড়ে ১১টা থেকে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানকে জেরা করেন আসামিপক্ষের ৭ আইনজীবী। আজ নুসরাতের দু’সহপাঠী নিশাত সুলতানা ও নাসরিন সুলতানা ফুর্তির সাক্ষ্যগ্রহণ হবে।

এর আগে গত ২৭ জুন মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান সাক্ষ্য দেন। আসামিপক্ষের কৌঁসুলিরা বাদীকে দ্বিতীয় দিনের মতো জেরা করেন। এ সময় আদালতের কাঠগড়ায় এই মামলার মোট ১৬ আসামি হাজির ছিলেন। আদালত সূত্রের বরাত দিয়ে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হাফেজ আহাম্মদ এ তথ্য জানান।

গত ২৭ জুন অভিযোগ গঠনের ছয় দিনের মাথায় ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ৩ জনকে আদালতে তাদের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য উপস্থাপন করা হয়। সাক্ষ্য শেষ না হওয়ায় সেদিন আদালত মুলতবি ঘোষণা করা হয়। এরও আগে ২০ জুন আদালত সাক্ষ্যগ্রহণের এই আদেশ দেন। ওইদিনও মামলার ১৬ আসামির পক্ষে জামিন আবেদন করেন তাদের আলাদা আলাদা ১৬ আইনজীবী। শুনানি শেষে তাদের আবেদন নামঞ্জুর করে ২৭ জুন সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর দিন ঠিক করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। এ মামলার চার্জশিট জমা দেয়ার আগে সাত সাক্ষী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রসায় আলিম পরীক্ষা কেন্দ্রে গেলে নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতহানির মামলা তুলে না নেয়ায় তাকে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে; যা মৃত্যুশয্যায় নুসরাত বলে গেছেন। ১০ এপ্রিল ঢাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীনে নুসরাতের মৃত্যু হয়। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ফেনীর পরিদর্শক শাহ আলম আদালতে মোট ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেন।

অভিযোগপত্রের ১৬ আসামি হলো মাদ্রসার অধ্যক্ষ ও হত্যার নির্দেশদাতা সিরাজ উদ-দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আবদুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মণি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আবদুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি ও আ’লীগ নেতা রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল।

এ মামলায় মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তদন্তে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় অন্য পাঁচজনকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করে পিবিআই। আদালত তা অনুমোদন করে। এছাড়া যৌন হয়রানির মামলার পর নুসরাতের জবানবন্দি গ্রহণের সময় তার ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে সাইবার আইনে মামলা হওয়ার পর সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে।

চেক জালিয়াতি মামলায় অধ্যক্ষ

সিরাজের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন

এদিকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকার একটি চেক জালিয়াতি মামলায় গতকাল আদালতে চার্জ গঠন করা হয়েছে। ফেনীর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুর রহিমের আদালতে এ চার্জ গঠন করা হয়।

এ মামলায় সিরাজসহ উম্মুল কুরা মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সদস্য নুর নবী নয়ন ও মোতাহের হোসেন মোর্তজার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে। ৭ জুলাই আদালত সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেছেন।

মামলার বাদী আবদুল কাইয়ুম জানান, উম্মুল কুরা সমিতির চেয়ারম্যান থাকাকালীন অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা জমি, গাড়ি, একটি ফার্নিচার শোরুম ও উম্মুল কুরা মাদ্রাসার জামানত বাবদ ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে।

সমিতির সাধারণ সভায় তা প্রমাণিত হলে সমিতির ১০৯ সদস্যের পক্ষে আবদুল কাইয়ুমের নামে ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকার একটি চেক দেন অধ্যক্ষ সিরাজ।

ইসলামী ব্যাংক, কলেজ রোড, ফেনী শাখায় চেকটি বারবার প্রত্যাখ্যাত হলে কাইয়ুম বাদী হয়ে ২০১৭ সালের ৯ অক্টোবর আদালতে একটি মামলা করেন।