বরগুনার নয়ন বন্ড রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় বেপরোয়া

রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় বরগুনার ত্রাস নয়ন বন্ড বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এক সময় ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও পরবর্তীতে ছাত্রলীগে যোগদান করে সে। ছিঁচকে চুরি, চাঁদাবাজি, পথে পথে ছাত্রী উত্যক্ত ও নির্যাতন, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। তার অপরাধ জগতকে আরও ভয়ঙ্কর করে তোলার জন্য নিজেই ফেইসবুকের মাধ্যমে একটি গ্রুপ তৈরি করে। তার গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ছিল অর্ধশতের বেশি। নানা অপরাধে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হলেও সে রাজনৈতিক প্রভাবে জামিনে ছাড়া পেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, বরগুনার শীর্ষ সন্ত্রাসী সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড গত ৫-৬ বছর আগে বরগুনা পৌর এলাকায় ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তখন থেকে সে এলাকায় ছোটখাটো অপরাধ করত। পরবর্তীতে সে ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত হয়। এরপর সে তার পরিকল্পনা মতো পাড়া-মহল্লায় আধিপত্য বিস্তার করে। নিজে একটি গ্যাং গ্রুপ তৈরি করে। তার গ্যাং গ্রুপের ভয়ে কেউ কথা বলার সাহস পেত না। স্কুল ও কলেজে পড়া ছাত্রীদের নানাভাবে উত্যক্ত করত। অনেক ছাত্রী দিনের পর দিন উত্যক্তের শিকার হয়ে বাড়িতে গিয়ে মা-বাবাকে বিষয়টি জানাত। কিন্তু ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পেত না। উল্টো লাঞ্ছিত ও নাজেহাল হতো। তার বিরুদ্ধে ছোটখাটো অভিযোগ করার পর পুলিশ ছোটখাটো অভিযোগকে গুরুত্ব দিত না। তখন সে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে।

আমাদের বরগুনা প্রতিনিধি জানান, বরগুনায় চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ডের নামে ৮টি ও ২য় আসামি রিফাত ফরাজী ৪টি মামলা নিয়ে ঘুরে বেড়াত নির্বিঘেœ। বন্ড ০০৭ গ্রুপের প্রায় ৫০ সদস্য নিয়ে সে গড়ে তুলেছিল অপরাধের স্বর্গরাজ্য। প্রশ্রয় পেয়েছিল রাজনৈতিক মহলের, সুযোগ নিয়েছিল প্রশাসনিক নীরবতার।

সাব্বির আহাম্মেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ডের নামে বরগুনা সদর থানায় ৮টি মামলা রয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগই মাদক, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মারামারি ও অস্ত্র আইনে। নয়নের অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যাবার পেছনে ছিল রাজনৈতিক নেতাদের কারও কারও সমর্থন এবং পুলিশ প্রশাসনের নীরব সমর্থন। যাতেকরে এতগুলো মামলা নিয়েও নয়নেরা ঘুরে বেড়িয়েছে সদম্ভে। তবে বাস্তবে নয়নের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রবণতার অভিযোগ আরও বেশি। নয়নের বিরুদ্ধে একটি মামলা হলো- জি,আর মামলা নং ৫৯/১৫ তারিখ ২৯/৫/১৫, বাদী মো. শাহ আলম, পিং আবুল কাসেম, সাং পটুয়াখালী। ধারা ৩২৩, ৩৪২, ৩৮৫, ৩৮৬, ৩৭৯ ও ৫০৬। মামলায় আসামি জামিনে রয়েছে। মামলা নং ১৩/১৭ তারিখ ৫/৩/১৭ মামলার বাদি এস আই মো. আবু জাফর ধারা ৩২৩, ৩৪২, ৩৮৫, ৩৮৬, ৩৭৯, ৫০৬ এবং ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিরোধ আইন। মামলা নং ৪৫/১৭, বাদী রবীন কুন্ডু, এস আই সদর থানা। ধারা ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য আইন। মামলা নং ২৫/১৬, বাদী শাহীন তালুকদার, বিষয় চাঁদার দাবিতে হত্যার উদ্দেশে জখম। ধারা ১৪৩, ৪৪৮, ৩২৩, ৩২৬, ৩০৭, ৩৮৫, ৩৭৯ ও ৩৮০। সব মামলায়ই আসামি জামিনে রয়েছে। ২নং আসামি রিফাত ফরাজীর নামে থানায় রয়েছে ৪টি মামলা। এ মামলা নিয়ে তারা সদম্ভে ঘুরে বেড়াত। বাস্তবে তাদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আরও বেশি। তাদের নির্যাতনের ভয়ে অনেকেই মুখ খুলত না বা মামলা করত না।

মামলার ৩নং আসামি রিশান ফরাজির বিরুদ্ধে থানায় ১টি, ৪নং আসামি চন্দন শীলের বিরুদ্ধে ১টি, ৫নং আসামি মুসার বিরুদ্ধে ৩টি এবং ৭নং আসামি মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাতের বিরুদ্ধে ২টি মামলা রয়েছে। বরগুনা পলিটেকনিক্যাল ইনিস্টিটিউটের ছাত্র সিফাত জানান, ২০১৫ সালে শহরের ডি কেপি সড়কের দীঘির পাড়ের একটি মেসে থেকে তারা লেখা-পড়া করত। একদিন দুপুরে নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা অস্ত্রের মুখে তাদের ৫টি ল্যাপটপ, ৩টি মোবাইল, ১টি ক্যামেরা এবং নগদ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এ সময় তারা মারধরের শিকার হয়। কিন্তু তারা স্থানীয় নয় বলে কোন মামলা হয়নি। বরগুনা সরকারি কলেজের একজন ছাত্র বলেন, যেখানে বসে রিফাত শরীফকে কোপানো হয়েছে ঠিক সেখানে বসে ৭ মাস আগে নয়ন বন্ড তার উপর অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তখন সে দৌড়ে কলেজের মধ্যে গিয়ে আত্মরক্ষা করে। সে থানায় মামলা মোকদ্দমা করেনি।

এ দিকে ভয়ঙ্কর এ অপরাধীকে ধরার জন্য পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশজুড়ে তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে তার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ইমিগ্রেশন পয়েন্টগুলোতে নজরদারি করা হচ্ছে। অপরাধী যতই শক্তিশালী হোক কাওকে ছাড় দেয়া হবে না বলে পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

সোমবার, ০১ জুলাই ২০১৯ , ১৭ আষাঢ় ১৪২৫, ২৭ শাওয়াল ১৪৪০

বরগুনার নয়ন বন্ড রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় বেপরোয়া

বাকী বিল্লাহ ও চিত্তরঞ্জন শীল

রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় বরগুনার ত্রাস নয়ন বন্ড বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এক সময় ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও পরবর্তীতে ছাত্রলীগে যোগদান করে সে। ছিঁচকে চুরি, চাঁদাবাজি, পথে পথে ছাত্রী উত্যক্ত ও নির্যাতন, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। তার অপরাধ জগতকে আরও ভয়ঙ্কর করে তোলার জন্য নিজেই ফেইসবুকের মাধ্যমে একটি গ্রুপ তৈরি করে। তার গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ছিল অর্ধশতের বেশি। নানা অপরাধে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হলেও সে রাজনৈতিক প্রভাবে জামিনে ছাড়া পেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, বরগুনার শীর্ষ সন্ত্রাসী সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড গত ৫-৬ বছর আগে বরগুনা পৌর এলাকায় ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তখন থেকে সে এলাকায় ছোটখাটো অপরাধ করত। পরবর্তীতে সে ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত হয়। এরপর সে তার পরিকল্পনা মতো পাড়া-মহল্লায় আধিপত্য বিস্তার করে। নিজে একটি গ্যাং গ্রুপ তৈরি করে। তার গ্যাং গ্রুপের ভয়ে কেউ কথা বলার সাহস পেত না। স্কুল ও কলেজে পড়া ছাত্রীদের নানাভাবে উত্যক্ত করত। অনেক ছাত্রী দিনের পর দিন উত্যক্তের শিকার হয়ে বাড়িতে গিয়ে মা-বাবাকে বিষয়টি জানাত। কিন্তু ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পেত না। উল্টো লাঞ্ছিত ও নাজেহাল হতো। তার বিরুদ্ধে ছোটখাটো অভিযোগ করার পর পুলিশ ছোটখাটো অভিযোগকে গুরুত্ব দিত না। তখন সে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে।

আমাদের বরগুনা প্রতিনিধি জানান, বরগুনায় চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ডের নামে ৮টি ও ২য় আসামি রিফাত ফরাজী ৪টি মামলা নিয়ে ঘুরে বেড়াত নির্বিঘেœ। বন্ড ০০৭ গ্রুপের প্রায় ৫০ সদস্য নিয়ে সে গড়ে তুলেছিল অপরাধের স্বর্গরাজ্য। প্রশ্রয় পেয়েছিল রাজনৈতিক মহলের, সুযোগ নিয়েছিল প্রশাসনিক নীরবতার।

সাব্বির আহাম্মেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ডের নামে বরগুনা সদর থানায় ৮টি মামলা রয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগই মাদক, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মারামারি ও অস্ত্র আইনে। নয়নের অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যাবার পেছনে ছিল রাজনৈতিক নেতাদের কারও কারও সমর্থন এবং পুলিশ প্রশাসনের নীরব সমর্থন। যাতেকরে এতগুলো মামলা নিয়েও নয়নেরা ঘুরে বেড়িয়েছে সদম্ভে। তবে বাস্তবে নয়নের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রবণতার অভিযোগ আরও বেশি। নয়নের বিরুদ্ধে একটি মামলা হলো- জি,আর মামলা নং ৫৯/১৫ তারিখ ২৯/৫/১৫, বাদী মো. শাহ আলম, পিং আবুল কাসেম, সাং পটুয়াখালী। ধারা ৩২৩, ৩৪২, ৩৮৫, ৩৮৬, ৩৭৯ ও ৫০৬। মামলায় আসামি জামিনে রয়েছে। মামলা নং ১৩/১৭ তারিখ ৫/৩/১৭ মামলার বাদি এস আই মো. আবু জাফর ধারা ৩২৩, ৩৪২, ৩৮৫, ৩৮৬, ৩৭৯, ৫০৬ এবং ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিরোধ আইন। মামলা নং ৪৫/১৭, বাদী রবীন কুন্ডু, এস আই সদর থানা। ধারা ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য আইন। মামলা নং ২৫/১৬, বাদী শাহীন তালুকদার, বিষয় চাঁদার দাবিতে হত্যার উদ্দেশে জখম। ধারা ১৪৩, ৪৪৮, ৩২৩, ৩২৬, ৩০৭, ৩৮৫, ৩৭৯ ও ৩৮০। সব মামলায়ই আসামি জামিনে রয়েছে। ২নং আসামি রিফাত ফরাজীর নামে থানায় রয়েছে ৪টি মামলা। এ মামলা নিয়ে তারা সদম্ভে ঘুরে বেড়াত। বাস্তবে তাদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আরও বেশি। তাদের নির্যাতনের ভয়ে অনেকেই মুখ খুলত না বা মামলা করত না।

মামলার ৩নং আসামি রিশান ফরাজির বিরুদ্ধে থানায় ১টি, ৪নং আসামি চন্দন শীলের বিরুদ্ধে ১টি, ৫নং আসামি মুসার বিরুদ্ধে ৩টি এবং ৭নং আসামি মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাতের বিরুদ্ধে ২টি মামলা রয়েছে। বরগুনা পলিটেকনিক্যাল ইনিস্টিটিউটের ছাত্র সিফাত জানান, ২০১৫ সালে শহরের ডি কেপি সড়কের দীঘির পাড়ের একটি মেসে থেকে তারা লেখা-পড়া করত। একদিন দুপুরে নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা অস্ত্রের মুখে তাদের ৫টি ল্যাপটপ, ৩টি মোবাইল, ১টি ক্যামেরা এবং নগদ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এ সময় তারা মারধরের শিকার হয়। কিন্তু তারা স্থানীয় নয় বলে কোন মামলা হয়নি। বরগুনা সরকারি কলেজের একজন ছাত্র বলেন, যেখানে বসে রিফাত শরীফকে কোপানো হয়েছে ঠিক সেখানে বসে ৭ মাস আগে নয়ন বন্ড তার উপর অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তখন সে দৌড়ে কলেজের মধ্যে গিয়ে আত্মরক্ষা করে। সে থানায় মামলা মোকদ্দমা করেনি।

এ দিকে ভয়ঙ্কর এ অপরাধীকে ধরার জন্য পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশজুড়ে তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে তার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ইমিগ্রেশন পয়েন্টগুলোতে নজরদারি করা হচ্ছে। অপরাধী যতই শক্তিশালী হোক কাওকে ছাড় দেয়া হবে না বলে পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।