বাজেটে কোম্পানি ও বিনিয়োগকারী উভয়েরই স্বার্থরক্ষা হয়েছে : বিএমবিএ

আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কোম্পানির রিটেইনড আর্নিংস বা অবণ্টিত মুনাফার ওপর করারোপের যে প্রস্তাব করা হয়েছিল, জাতীয় সংসদে অর্থবিল পাসের সময় তাতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সংশোধনী আনা হয়েছে স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ হারে করারোপের প্রস্তাবেও। বাজেটে এসব পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)।

সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, চূড়ান্ত বাজেটে নগদ লভ্যাংশকে উৎসাহিত করতে স্টক লভ্যাংশ ও রিটেইনড আর্নিংসের ওপর করহারে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে, তা পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এতে বিনিয়োগকারী ও তালিকাভুক্ত কোম্পানি দুই পক্ষেরই স্বার্থরক্ষা হয়েছে।

উল্লেখ্য, আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় কোম্পানিগুলোকে ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে উৎসাহিত করতে স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ হারে করারোপের প্রস্তাব করা হয়েছিল। তাছাড়া বাজেট প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছিল, কোন আয় বছরে কোন কোম্পানির রিটেইনড আর্নিংস ও রিজার্ভের সমষ্টি যদি পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি হয়, তাহলে বাড়তি অংশের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। জাতীয় সংসদে অর্থবিল পাসের সময় স্টক লভ্যাংশ ও রিটেইনড আর্নিংসের ওপর করের হার ১৫ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। অবশ্য এক্ষেত্রে কিছু শর্তারোপ করা হয়েছে।

এসব সংশোধনীর পক্ষে সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় আমরা কোম্পানিগুলোকে ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে উৎসাহিত করার জন্য স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ হারে করারোপের প্রস্তাব করেছিলাম। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী সমাজের কেউ কেউ আপত্তি জানিয়েছেন। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর জন্য ব্যাংকগুলো নগদ লভ্যাংশ দিতে পারে না। ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের এমন মন্তব্যের পাশাপাশি পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ আমাদের ভাবতে হবে। কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীও নগদ লভ্যাংশ প্রত্যাশা করেন। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আমি প্রস্তাব করছি, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোন কোম্পানি যে পরিমাণ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করবে, কমপক্ষে তার সমপরিমাণ নগদ লভ্যাংশ দিতে হবে। যদি কোম্পানির ঘোষিত স্টক লভ্যাংশের পরিমাণ নগদ লভ্যাংশের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে স্টক লভ্যাংশের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, নগদ লভ্যাংশ উৎসাহিত করায় আমরা আরও প্রস্তাব করেছিলাম, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি রিটেইনড আর্নিংস, রিজার্ভ থাকলে অতিরিক্ত রিটেইনস আর্নিংস, রিজার্ভের ওপর অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ হারে করারোপ করা হবে। এ বিষয়েও ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ আপত্তি করেছেন। সেই প্রেক্ষাপটে এ ধারার আংশিক সংশোধনপূর্বক আমি প্রস্তাব করছি, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোন কোম্পানি কোর অর্থবছরে কর-পরবর্তী নিট লাভের সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ রিটেইনড আর্নিংস, ফান্ড, রিজার্ভে স্থানান্তর করতে পারবে। অর্থাৎ কমপক্ষে ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে হবে। যদি কোন কোম্পানি এরূপ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে প্রতি বছরে রিটেইনড আর্নিংস, ফান্ড, রিজার্ভের মোট অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে করারোপ করা হবে। এ বিষয়গুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে পুঁজিবাজারসংক্রান্ত আয়কর আইনের প্রস্তাবিত ধারাগুলো তারা বিবেচনা করবেন বলে সংসদকে জানান প্রধানমন্ত্রী।

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০১৯ , ১৮ আষাঢ় ১৪২৫, ২৮ শাওয়াল ১৪৪০

বাজেটে কোম্পানি ও বিনিয়োগকারী উভয়েরই স্বার্থরক্ষা হয়েছে : বিএমবিএ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কোম্পানির রিটেইনড আর্নিংস বা অবণ্টিত মুনাফার ওপর করারোপের যে প্রস্তাব করা হয়েছিল, জাতীয় সংসদে অর্থবিল পাসের সময় তাতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সংশোধনী আনা হয়েছে স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ হারে করারোপের প্রস্তাবেও। বাজেটে এসব পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)।

সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, চূড়ান্ত বাজেটে নগদ লভ্যাংশকে উৎসাহিত করতে স্টক লভ্যাংশ ও রিটেইনড আর্নিংসের ওপর করহারে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে, তা পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এতে বিনিয়োগকারী ও তালিকাভুক্ত কোম্পানি দুই পক্ষেরই স্বার্থরক্ষা হয়েছে।

উল্লেখ্য, আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় কোম্পানিগুলোকে ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে উৎসাহিত করতে স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ হারে করারোপের প্রস্তাব করা হয়েছিল। তাছাড়া বাজেট প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছিল, কোন আয় বছরে কোন কোম্পানির রিটেইনড আর্নিংস ও রিজার্ভের সমষ্টি যদি পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি হয়, তাহলে বাড়তি অংশের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। জাতীয় সংসদে অর্থবিল পাসের সময় স্টক লভ্যাংশ ও রিটেইনড আর্নিংসের ওপর করের হার ১৫ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। অবশ্য এক্ষেত্রে কিছু শর্তারোপ করা হয়েছে।

এসব সংশোধনীর পক্ষে সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় আমরা কোম্পানিগুলোকে ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে উৎসাহিত করার জন্য স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ হারে করারোপের প্রস্তাব করেছিলাম। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী সমাজের কেউ কেউ আপত্তি জানিয়েছেন। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর জন্য ব্যাংকগুলো নগদ লভ্যাংশ দিতে পারে না। ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের এমন মন্তব্যের পাশাপাশি পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ আমাদের ভাবতে হবে। কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীও নগদ লভ্যাংশ প্রত্যাশা করেন। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আমি প্রস্তাব করছি, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোন কোম্পানি যে পরিমাণ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করবে, কমপক্ষে তার সমপরিমাণ নগদ লভ্যাংশ দিতে হবে। যদি কোম্পানির ঘোষিত স্টক লভ্যাংশের পরিমাণ নগদ লভ্যাংশের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে স্টক লভ্যাংশের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, নগদ লভ্যাংশ উৎসাহিত করায় আমরা আরও প্রস্তাব করেছিলাম, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি রিটেইনড আর্নিংস, রিজার্ভ থাকলে অতিরিক্ত রিটেইনস আর্নিংস, রিজার্ভের ওপর অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ হারে করারোপ করা হবে। এ বিষয়েও ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ আপত্তি করেছেন। সেই প্রেক্ষাপটে এ ধারার আংশিক সংশোধনপূর্বক আমি প্রস্তাব করছি, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোন কোম্পানি কোর অর্থবছরে কর-পরবর্তী নিট লাভের সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ রিটেইনড আর্নিংস, ফান্ড, রিজার্ভে স্থানান্তর করতে পারবে। অর্থাৎ কমপক্ষে ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে হবে। যদি কোন কোম্পানি এরূপ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে প্রতি বছরে রিটেইনড আর্নিংস, ফান্ড, রিজার্ভের মোট অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে করারোপ করা হবে। এ বিষয়গুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে পুঁজিবাজারসংক্রান্ত আয়কর আইনের প্রস্তাবিত ধারাগুলো তারা বিবেচনা করবেন বলে সংসদকে জানান প্রধানমন্ত্রী।