বিলীন হচ্ছে কক্সবাজার সৈকতের ঝাউ বাগান

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের মনোরম সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলবাসীদের রক্ষা করে আসছিল বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত সমুদ্র পাড়ের ঝাউ বাগান। উপকূলবাসীর রক্ষাকবচ ও সৌন্দর্যবর্ধনকারী ঝাউবাগান বর্তমানে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জোয়ারে ঢেউয়ের তোড়ে গোড়ালি থেকে মাটি সরে গিয়ে উপড়ে পড়ছে এসব ঝাউগাছ। পাশাপাশি কিছু ঝাউগাছ কাঠ চোর চক্রও কেটে নিয়ে যাচ্ছে। কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, কক্সবাজার সদর রেঞ্জের নাজিরারটেক থেকে শীলখালী পর্যন্ত ১৯৭২-১৯৭৩ সাল থেকে ২০১৭-১৮ সাল পর্যন্ত ৪শ ৮৫ হেক্টর বালিয়াড়িতে ঝাউ গাছের চারা রোপণ করা হয়। বর্তমানে সেখানে অর্ধেক এর মতো ঝাউগাছ রয়েছে। কিন্তু বন বিভাগের দেয়া তথ্যের সঙ্গে ব্যাপক গড়মিল রয়েছে। কারন স্থানীয়দের দাবি বর্তমানে যে পরিমাণ ঝাউগাছ রয়েছে সেখানে অর্ধলক্ষাধিক এর চেয়ে বেশি হবে না। ৪শ’ ৮৫ হেক্টরের মধ্যে বর্তমানে ৪০ থেকে ৫০ হেক্টর জমিতে ঝাউগাছ রয়েছে। এছাড়া ইনানী, হোয়াক্যং, শিলখালী ও টেকনাফ রেঞ্জের আওতাধীন ঝাউ বাগান নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। তবে সব চেয়ে সৌন্দর্য বর্ধনকারী পর্যটকদের প্রধান আর্কষণ সৈকতের হিমছড়ি থেকে নাজিরার টেক পর্যন্ত প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে ঝাউবীথি। জোয়ারের ঢেউয়ের তোড়ে উপড়ে পড়ছে ঝাউগাছ গুলি। এই এলাকার সৌন্দর্য ধরে রাখা জরুরী।

সূত্রমতে, কক্সবাজার সদর রেঞ্জের নাজিরারটেক থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত ১৯৬১-৬২ সালে ১২ হেক্টর বালিয়াড়িতে প্রথমে সৃজন করা হয় ঝাউ গাছ। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ঝাউবাগানের প্রসার ঘটানো হয়। তখন থেকেই এ ঝাউ বাগান সমুদ্র পাড়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলবাসীদের রক্ষা করে আসছে। তবে ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরি ঘূর্ণিঝড়ে অর্ধেকের বেশি বাগান বিলীন হয়। সূত্র আরো জানায়, ১৯৯১-৯২ সালে ১২ হেক্টর বালিয়াড়িতে নতুন করে প্রায় ৩০ হাজার চারা রোপণ করা হয়। ১৯৯৬-৯৭ সালে ১১৫ হেক্টর বালিয়াড়িতে রোপণ করা হয় ৩ লক্ষাধিক ঝাউ চারা। ১৯৯৭-৯৮ সালে ৪০ হেক্টরে লক্ষাধিক চারা, ১৯৯৮-৯৯ সালে ৫ হেক্টরে সাড়ে ১২ হাজার চারা, ২০০২-০৩ সালে ৮ হেক্টরে ২০ হাজার চারা, ২০০৩-০৪ সালে ৮৭ হেক্টরে ২ লাখ ১৭ হাজার চারা ও ২০১০-১১ সালে ৫ হেক্টরে সাড়ে ১২ হাজার চারা রোপণ করা হয়। প্রতি হেক্টরে আড়াই হাজার করে প্রায় ৩শ হেক্টরে সাড়ে ৭ লক্ষাধিক ঝাউগাছ সৃজন করা হয়। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জোয়ারের ঢেউয়ের ধাক্কায় ভাঙতে থাকে সৈকতের বালিয়াড়ি। সমুদ্রপৃষ্ঠের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জোয়ারের ঢেউয়ের তোড়ে গোড়া থেকে বালি সরে যায়।

এতে বিলীন হতে থাকে নয়নাভিরাম ঝাউবাগান। স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী আবু সায়েম জানান, ১৯৯১ সালে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে সৈকতের ১০০ মিটারের অধিক প্রস্থে ঝাউ বাগান বিলীন হয়ে যায়। নতুন করে ঝাউ বাগান সৃজন করা হলেও ভাঙ্গন রোধ করার কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। পরিবেশ সংগঠনের নেতারা বলেন, ঝাউগাছ বিলীনের বিষয়টি দীর্ঘদিনের। এই বিষয়ে অনেক আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কোন দপ্তর ঝাউবীতি রক্ষার্থে এগিয়ে আসেনি। কক্সবাজারবাসীর দাবি পর্যটন মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় যদি পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে হলেও সৈকতের হিমছড়ি থেকে নাজিরারটেক পর্যন্ত একটি বাঁধ নির্মাণ করা যায় তাহলে উপকূলবাসীর পাশাপাশি রক্ষা পাবে ঝাউবীথি। কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ন কবির সংবাদকে জানান, প্রাকৃতিক কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে জোয়ারের সময় ঢেউয়ের ধাক্কায় ঝাউ গাছের গোড়া থেকে বালি মাটি সরে যাওয়ায় বিলীন হতে থাকে ঝাউ বাগান। তবে ১৯৭২-৭৩ সাল থেকে এই পর্যন্ত ৪শ’ ৮৫ হেক্টর জমিতে ঝাউগাছ লাগানো হয়েছে। চলতি বছরেও ৬০ হেক্টর বালিয়াড়িতে ঝাউ গাছ সৃজনের কাজ চলছে।

image

কক্সবাজার : অযত্নে অবহেলায় মাটি সরে এভাবেই বিলীন হচ্ছে ঝাউবন -সংবাদ

আরও খবর
আউটসোর্সিং কর্মীদের ভাতার টাকা আত্মসাৎ
বদরগঞ্জে মহিলা বিষয়ক কর্তার অনিয়ম : তদন্ত শুরু
প্রতিযোগিতায় টিকতে চাই পেশাগত জ্ঞান
বরুড়ায় দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ২৫ হাজার
শাজাহানপুরে এলজিএসপি’র টাকায় নিম্নমানের কাজ
পটিয়ায় মসজিদের নাম নিয়ে দ্বন্দ্বে জনতা-পুলিশ
রেলের অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাতে জালিয়াতি
মীরসরাই পাবলিক লাইব্রেরিতে বই পড়তে দেয়া হয় না!
মাধবদীতে কালভার্ট ভাঙা রাস্তা চলাচলের অযোগ্য
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাহবাজপুর নতুন সেতু চালু শীঘ্রই
সাভারে ঝুঁকিপূর্ণ দুই ভবন সিলগালা
নরসিংদীতে পবিসের প্রিপেইড মিটারের প্রতিবাদে মানববন্ধন
শ্রীপুরের জৈনাবাজার দেশের বৃহত্তম কাঁঠালের হাট
সাভারে তুরাগে ডুবে শিশুর মৃত্যু
শেরপুরে বিদ্যুতে গৃহবধূর মৃত্যু

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০১৯ , ১৮ আষাঢ় ১৪২৫, ২৮ শাওয়াল ১৪৪০

বিলীন হচ্ছে কক্সবাজার সৈকতের ঝাউ বাগান

প্রতিনিধি, কক্সবাজার

image

কক্সবাজার : অযত্নে অবহেলায় মাটি সরে এভাবেই বিলীন হচ্ছে ঝাউবন -সংবাদ

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের মনোরম সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলবাসীদের রক্ষা করে আসছিল বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত সমুদ্র পাড়ের ঝাউ বাগান। উপকূলবাসীর রক্ষাকবচ ও সৌন্দর্যবর্ধনকারী ঝাউবাগান বর্তমানে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জোয়ারে ঢেউয়ের তোড়ে গোড়ালি থেকে মাটি সরে গিয়ে উপড়ে পড়ছে এসব ঝাউগাছ। পাশাপাশি কিছু ঝাউগাছ কাঠ চোর চক্রও কেটে নিয়ে যাচ্ছে। কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, কক্সবাজার সদর রেঞ্জের নাজিরারটেক থেকে শীলখালী পর্যন্ত ১৯৭২-১৯৭৩ সাল থেকে ২০১৭-১৮ সাল পর্যন্ত ৪শ ৮৫ হেক্টর বালিয়াড়িতে ঝাউ গাছের চারা রোপণ করা হয়। বর্তমানে সেখানে অর্ধেক এর মতো ঝাউগাছ রয়েছে। কিন্তু বন বিভাগের দেয়া তথ্যের সঙ্গে ব্যাপক গড়মিল রয়েছে। কারন স্থানীয়দের দাবি বর্তমানে যে পরিমাণ ঝাউগাছ রয়েছে সেখানে অর্ধলক্ষাধিক এর চেয়ে বেশি হবে না। ৪শ’ ৮৫ হেক্টরের মধ্যে বর্তমানে ৪০ থেকে ৫০ হেক্টর জমিতে ঝাউগাছ রয়েছে। এছাড়া ইনানী, হোয়াক্যং, শিলখালী ও টেকনাফ রেঞ্জের আওতাধীন ঝাউ বাগান নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। তবে সব চেয়ে সৌন্দর্য বর্ধনকারী পর্যটকদের প্রধান আর্কষণ সৈকতের হিমছড়ি থেকে নাজিরার টেক পর্যন্ত প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে ঝাউবীথি। জোয়ারের ঢেউয়ের তোড়ে উপড়ে পড়ছে ঝাউগাছ গুলি। এই এলাকার সৌন্দর্য ধরে রাখা জরুরী।

সূত্রমতে, কক্সবাজার সদর রেঞ্জের নাজিরারটেক থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত ১৯৬১-৬২ সালে ১২ হেক্টর বালিয়াড়িতে প্রথমে সৃজন করা হয় ঝাউ গাছ। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ঝাউবাগানের প্রসার ঘটানো হয়। তখন থেকেই এ ঝাউ বাগান সমুদ্র পাড়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলবাসীদের রক্ষা করে আসছে। তবে ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরি ঘূর্ণিঝড়ে অর্ধেকের বেশি বাগান বিলীন হয়। সূত্র আরো জানায়, ১৯৯১-৯২ সালে ১২ হেক্টর বালিয়াড়িতে নতুন করে প্রায় ৩০ হাজার চারা রোপণ করা হয়। ১৯৯৬-৯৭ সালে ১১৫ হেক্টর বালিয়াড়িতে রোপণ করা হয় ৩ লক্ষাধিক ঝাউ চারা। ১৯৯৭-৯৮ সালে ৪০ হেক্টরে লক্ষাধিক চারা, ১৯৯৮-৯৯ সালে ৫ হেক্টরে সাড়ে ১২ হাজার চারা, ২০০২-০৩ সালে ৮ হেক্টরে ২০ হাজার চারা, ২০০৩-০৪ সালে ৮৭ হেক্টরে ২ লাখ ১৭ হাজার চারা ও ২০১০-১১ সালে ৫ হেক্টরে সাড়ে ১২ হাজার চারা রোপণ করা হয়। প্রতি হেক্টরে আড়াই হাজার করে প্রায় ৩শ হেক্টরে সাড়ে ৭ লক্ষাধিক ঝাউগাছ সৃজন করা হয়। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জোয়ারের ঢেউয়ের ধাক্কায় ভাঙতে থাকে সৈকতের বালিয়াড়ি। সমুদ্রপৃষ্ঠের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জোয়ারের ঢেউয়ের তোড়ে গোড়া থেকে বালি সরে যায়।

এতে বিলীন হতে থাকে নয়নাভিরাম ঝাউবাগান। স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী আবু সায়েম জানান, ১৯৯১ সালে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে সৈকতের ১০০ মিটারের অধিক প্রস্থে ঝাউ বাগান বিলীন হয়ে যায়। নতুন করে ঝাউ বাগান সৃজন করা হলেও ভাঙ্গন রোধ করার কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। পরিবেশ সংগঠনের নেতারা বলেন, ঝাউগাছ বিলীনের বিষয়টি দীর্ঘদিনের। এই বিষয়ে অনেক আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কোন দপ্তর ঝাউবীতি রক্ষার্থে এগিয়ে আসেনি। কক্সবাজারবাসীর দাবি পর্যটন মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় যদি পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে হলেও সৈকতের হিমছড়ি থেকে নাজিরারটেক পর্যন্ত একটি বাঁধ নির্মাণ করা যায় তাহলে উপকূলবাসীর পাশাপাশি রক্ষা পাবে ঝাউবীথি। কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ন কবির সংবাদকে জানান, প্রাকৃতিক কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে জোয়ারের সময় ঢেউয়ের ধাক্কায় ঝাউ গাছের গোড়া থেকে বালি মাটি সরে যাওয়ায় বিলীন হতে থাকে ঝাউ বাগান। তবে ১৯৭২-৭৩ সাল থেকে এই পর্যন্ত ৪শ’ ৮৫ হেক্টর জমিতে ঝাউগাছ লাগানো হয়েছে। চলতি বছরেও ৬০ হেক্টর বালিয়াড়িতে ঝাউ গাছ সৃজনের কাজ চলছে।