ডিআইজি মিজান গ্রেফতার

অবৈধ সম্পদের মামলায় সাময়িক বরখাস্ত ডিআইজি মিজানুর রহমানের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে গতকাল মিজানের উপস্থিতিতে শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, সে (মিজান) পুলিশের ভাবমূর্তি পুরোপুরি নষ্ট করেছে। আমরা টিভিতে দেখেছি, (দুদকের একজন পরিচালককে) ঘুষ দেয়ার ব্যাপারে সে ডেসপারেট বক্তব্য দিয়েছে। এদিকে হাইকোর্টের নির্দেশের পর গতকাল বিকেলে তাকে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, আমরা আদালতের নির্দেশে তাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে এসেছি। আজ (গতকাল) তাকে কোর্টে উঠানো হবে।

এ মামলার আরেক আসামি ডিআইজি মিজানের ভাগ্নে পুলিশের এসআই মাহমুদুল হাসানকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এক নারীকে জোর করে বিয়ের পর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠায় গত বছর জানুয়ারিতে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় ডিআইজি মিজানুর রহমানকে। তার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে থাকা এক দুদক কর্মকর্তাকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দেয়ার কথা নিজেই ফাঁস করে দিয়ে সম্প্রতি নতুন করে আলোচনায় আসেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। এরপর মিজান, তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রতœা, ভাগ্নে মাহমুদুল হাসান এবং ছোট ভাই মাহবুবুর রহমানকে আসামি করে গত ২৪ জুন এই মামলা দয়ের করেন দুদকের পরিচালক মনজুর মোরশেদ। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা ১-এ দায়ের করা এ মামলায় তিন কোটি সাত লাখ ৫ হাজার ২১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং তিন কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে। মামলা হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে ডিআইজি মিজানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে। হাইকোর্টের আদেশের পর মিজানকে ঘণ্টা দুই আদালত কক্ষে বসিয়ে রেখে পরে তাকে নিয়ে শাহবাগ থানায় যান পুলিশ কর্মকর্তারা। রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার এইচ এম আজিমুল হক সেখানে সাংবাদিকদের বলেন, রাতে মিজানকে শাহবাগ থানায় রাখা হবে। আজ সকালে তাকে নিম্ন আদালতে হাজির করা হবে।

মিজানের পক্ষে হাইকোর্টে শুনানি করেন আইনজীবী মমতাজ উদ্দিন মেহেদী। তিনি দাবি করেন, মিজান খুবই সৎ একজন পুলিশ অফিসার এবং তিনি সুনামের সঙ্গে সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমন করেছেন। শুনানি শেষে জামিন নাকচ করে হাইকোর্ট আদালতে উপস্থিত মিজানকে গ্রেফতারে নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে ঢাকার মহানগর বিশেষ জজ আদালতে হাজির করতে বলা হয়। আদালতে দুদকের পক্ষে খুরশীদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রাফি আহমেদ শুনানি করেন। এসআই মাহমুদুল হাসানের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম।

এদিকে দুদকের পরিচালক মনজুর মোরশেদের আবেদনে ইতোমধ্যে ডিআইজি মিজানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি এবং ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ দিয়েছে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত। তার তিনটি ফ্ল্যাট, তিনটি প্লট ও দুইটি দোকান ক্রোক করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এসব সম্পত্তির দাম ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪৬০ টাকা। এছাড়া সিটি ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখায় মিজানের হিসাবও ‘ফ্রিজ’ করতে বলেছে আদালত। তার ওই অ্যাকাউন্টে ১০ লাখ টাকা রয়েছে। ডিআইজি মিজানের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানের দায়িত্বে ছিলেন দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির। কিন্তু মিজান ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ এনে একটি অডিও টেপ ফাঁস করলে বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করে দুদক। এরপর গত ১২ জুন মিজানের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানের দায়িত্ব পান মঞ্জুর মোরশেদ। গত বুধবার তিনি আদালতে ডিআইজি মিজানের সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব জব্দের আবেদন করেন। সেখানে বলা হয়, ডিআইজি মিজান নামে-বেনামে ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভূত’ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সেই অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য দুদকের পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল কাজ করছে।

তিনি (মিজান) বৈধ আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ বিক্রি ও স্থানান্তর করার চেষ্টা করছেন মর্মে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ/সম্পত্তির বিষয়ে কোন ব্যবস্থা না নিলে তা বেহাত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে তা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ১৪ ধারার বিধান মতে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না বিধায় রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ কারণে তার বৈধ আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ অর্জিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ/সম্পত্তি ক্রোক/ফ্রিজ করার আর্জি জানাচ্ছে দুদক।

গত বৃহস্পতিবার বিচারকের আদেশে বলা হয়, ক্রোক করা সম্পত্তি হস্তান্তর, বিক্রি বা মালিকানাস্বত্ব যেন বদল করা না হয়, ঢাকা জেলার রেজিস্ট্রার, নিবন্ধন পরিদফতরের মহাপরিদর্শক, তেজগাঁও শিল্প এলাকার ঢাকা রেজিস্ট্রার কমপ্লেক্স, নারায়ণগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার এবং ভূমির সহকারী কমিশনারকে তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সিটি ব্যাংক লিমিটেডের ধানমন্ডি শাখার ব্যবস্থাপককে বলা হয়েছে, এই আদেশ কার্যকর থাকা অবস্থায় মিজানের অ্যাকাউন্টে অর্থ জমা করা যাবে, কিন্তু কোন অবস্থাতেই তোলা যাবে না।

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০১৯ , ১৮ আষাঢ় ১৪২৫, ২৮ শাওয়াল ১৪৪০

ডিআইজি মিজান গ্রেফতার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

অবৈধ সম্পদের মামলায় সাময়িক বরখাস্ত ডিআইজি মিজানুর রহমানের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে গতকাল মিজানের উপস্থিতিতে শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, সে (মিজান) পুলিশের ভাবমূর্তি পুরোপুরি নষ্ট করেছে। আমরা টিভিতে দেখেছি, (দুদকের একজন পরিচালককে) ঘুষ দেয়ার ব্যাপারে সে ডেসপারেট বক্তব্য দিয়েছে। এদিকে হাইকোর্টের নির্দেশের পর গতকাল বিকেলে তাকে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, আমরা আদালতের নির্দেশে তাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে এসেছি। আজ (গতকাল) তাকে কোর্টে উঠানো হবে।

এ মামলার আরেক আসামি ডিআইজি মিজানের ভাগ্নে পুলিশের এসআই মাহমুদুল হাসানকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এক নারীকে জোর করে বিয়ের পর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠায় গত বছর জানুয়ারিতে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় ডিআইজি মিজানুর রহমানকে। তার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে থাকা এক দুদক কর্মকর্তাকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দেয়ার কথা নিজেই ফাঁস করে দিয়ে সম্প্রতি নতুন করে আলোচনায় আসেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। এরপর মিজান, তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রতœা, ভাগ্নে মাহমুদুল হাসান এবং ছোট ভাই মাহবুবুর রহমানকে আসামি করে গত ২৪ জুন এই মামলা দয়ের করেন দুদকের পরিচালক মনজুর মোরশেদ। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা ১-এ দায়ের করা এ মামলায় তিন কোটি সাত লাখ ৫ হাজার ২১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং তিন কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে। মামলা হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে ডিআইজি মিজানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে। হাইকোর্টের আদেশের পর মিজানকে ঘণ্টা দুই আদালত কক্ষে বসিয়ে রেখে পরে তাকে নিয়ে শাহবাগ থানায় যান পুলিশ কর্মকর্তারা। রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার এইচ এম আজিমুল হক সেখানে সাংবাদিকদের বলেন, রাতে মিজানকে শাহবাগ থানায় রাখা হবে। আজ সকালে তাকে নিম্ন আদালতে হাজির করা হবে।

মিজানের পক্ষে হাইকোর্টে শুনানি করেন আইনজীবী মমতাজ উদ্দিন মেহেদী। তিনি দাবি করেন, মিজান খুবই সৎ একজন পুলিশ অফিসার এবং তিনি সুনামের সঙ্গে সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমন করেছেন। শুনানি শেষে জামিন নাকচ করে হাইকোর্ট আদালতে উপস্থিত মিজানকে গ্রেফতারে নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে ঢাকার মহানগর বিশেষ জজ আদালতে হাজির করতে বলা হয়। আদালতে দুদকের পক্ষে খুরশীদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রাফি আহমেদ শুনানি করেন। এসআই মাহমুদুল হাসানের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম।

এদিকে দুদকের পরিচালক মনজুর মোরশেদের আবেদনে ইতোমধ্যে ডিআইজি মিজানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি এবং ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ দিয়েছে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত। তার তিনটি ফ্ল্যাট, তিনটি প্লট ও দুইটি দোকান ক্রোক করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এসব সম্পত্তির দাম ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪৬০ টাকা। এছাড়া সিটি ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখায় মিজানের হিসাবও ‘ফ্রিজ’ করতে বলেছে আদালত। তার ওই অ্যাকাউন্টে ১০ লাখ টাকা রয়েছে। ডিআইজি মিজানের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানের দায়িত্বে ছিলেন দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির। কিন্তু মিজান ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ এনে একটি অডিও টেপ ফাঁস করলে বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করে দুদক। এরপর গত ১২ জুন মিজানের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানের দায়িত্ব পান মঞ্জুর মোরশেদ। গত বুধবার তিনি আদালতে ডিআইজি মিজানের সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব জব্দের আবেদন করেন। সেখানে বলা হয়, ডিআইজি মিজান নামে-বেনামে ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভূত’ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সেই অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য দুদকের পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল কাজ করছে।

তিনি (মিজান) বৈধ আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ বিক্রি ও স্থানান্তর করার চেষ্টা করছেন মর্মে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ/সম্পত্তির বিষয়ে কোন ব্যবস্থা না নিলে তা বেহাত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে তা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ১৪ ধারার বিধান মতে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না বিধায় রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ কারণে তার বৈধ আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ অর্জিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ/সম্পত্তি ক্রোক/ফ্রিজ করার আর্জি জানাচ্ছে দুদক।

গত বৃহস্পতিবার বিচারকের আদেশে বলা হয়, ক্রোক করা সম্পত্তি হস্তান্তর, বিক্রি বা মালিকানাস্বত্ব যেন বদল করা না হয়, ঢাকা জেলার রেজিস্ট্রার, নিবন্ধন পরিদফতরের মহাপরিদর্শক, তেজগাঁও শিল্প এলাকার ঢাকা রেজিস্ট্রার কমপ্লেক্স, নারায়ণগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার এবং ভূমির সহকারী কমিশনারকে তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সিটি ব্যাংক লিমিটেডের ধানমন্ডি শাখার ব্যবস্থাপককে বলা হয়েছে, এই আদেশ কার্যকর থাকা অবস্থায় মিজানের অ্যাকাউন্টে অর্থ জমা করা যাবে, কিন্তু কোন অবস্থাতেই তোলা যাবে না।