সহপাঠী নিশাথের সাক্ষ্য ও জেরা

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় তৃতীয় দিনে গতকাল তার সহপাঠী নিশাত সুলতানার সাক্ষ্যগ্রহণ ও আসামিপক্ষের কৌঁসুলিদের জেরা শেষ হয়েছে। ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে এ সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামিপক্ষের ১৬ কৌঁসুলি তাকে জেরা করেন। পরে আসামিপক্ষের ৪ আইনজীবী নুসরাতের অপর সহপাঠী নাসরিন সুলতানা ফূর্তির জেরা করে। ফূর্তিকে বাকি ১২ আইনজীবীর জেরা এবং পরবর্তী সাক্ষী মাদ্রাসার অফিস সহকারী নুরুল আমিনের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আজ দিন ধার্য করেন আদালত। এ সময় আদালতে হত্যার নির্দেশদাতা ও মামলার প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১৬ আসামি উপস্থিত ছিল। এর আগের দিন রোববার হত্যা মামলার বাদী ও নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্যগ্রহণ ও আসামিপক্ষের কৌঁসুলিদের জেরা শেষ হয়েছে।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু জানান, নাসরিন সুলতানা ফূর্তি আদালতে সাক্ষ্য প্রদানকালে জানিয়েছেন, তার শ্লীলতাহানিরও চেষ্টা করেছেন অধ্যক্ষ সিরাজ। অনেক ছাত্রীকেও ওই অধ্যক্ষ শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেছে।

আদালত সূত্রের বরাত দিয়ে সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হাফেজ আহাম্মদ বলেন, আদালতে নুসরাতের ভাই ও মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং জেরা শেষ হয় রোববার। নুসরাতের সহপাঠী নিশাত সুলতানার সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হলেও অপর সহপাঠী নাসরিন সুলতানা ফূতির্র সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হলে আদালত মঙ্গলবার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।

গত ২৭ জুন অভিযোগ গঠনের ছয় দিনের মাথায় ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ৩ জনকে আদালতে তাদের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য উপস্থাপন করা হয়। বাদীর সাক্ষ্য শেষ না হওয়ায় সেদিন আদালত মুলতবি ঘোষণা করা হয়। এরও আগে ২০ জুন আদালত সাক্ষ্যগ্রহণের এই আদেশ দেন। ওইদিনও মামলার ১৬ আসামির পক্ষে জামিন আবেদন করেন তাদের ১৬ আইনজীবী। শুনানি শেষে তাদের আবেদন নামঞ্জুর করে ২৭ জুন সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর দিন ঠিক করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। এ মামলার চার্জশিট জমা দেয়ার আগে সাত সাক্ষী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রসায় আলিম পরীক্ষা কেন্দ্রে গেলে নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতহানির মামলা তুলে না নেয়ায় তাকে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে; যা মৃত্যুশয্যায় নুসরাত বলে গেছেন। ১০ এপ্রিল ঢাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীনে নুসরাতের মৃত্যু হয়। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ফেনীর পরিদর্শক শাহ আলম আদালতে মোট ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেন।

অভিযোগপত্রের ১৬ আসামি হলো মাদ্রসার অধ্যক্ষ ও হত্যার নির্দেশদাতা সিরাজ উদ-দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আবদুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মণি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আবদুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি ও আ’লীগ নেতা রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল। এছাড়া যৌন হয়রানির মামলার পর নুসরাতের জবানবন্দি গ্রহণের সময় তার ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে সাইবার আইনে মামলা হওয়ার পর সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে।

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০১৯ , ১৮ আষাঢ় ১৪২৫, ২৮ শাওয়াল ১৪৪০

সহপাঠী নিশাথের সাক্ষ্য ও জেরা

প্রতিনিধি, ফেনী

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় তৃতীয় দিনে গতকাল তার সহপাঠী নিশাত সুলতানার সাক্ষ্যগ্রহণ ও আসামিপক্ষের কৌঁসুলিদের জেরা শেষ হয়েছে। ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে এ সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামিপক্ষের ১৬ কৌঁসুলি তাকে জেরা করেন। পরে আসামিপক্ষের ৪ আইনজীবী নুসরাতের অপর সহপাঠী নাসরিন সুলতানা ফূর্তির জেরা করে। ফূর্তিকে বাকি ১২ আইনজীবীর জেরা এবং পরবর্তী সাক্ষী মাদ্রাসার অফিস সহকারী নুরুল আমিনের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আজ দিন ধার্য করেন আদালত। এ সময় আদালতে হত্যার নির্দেশদাতা ও মামলার প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১৬ আসামি উপস্থিত ছিল। এর আগের দিন রোববার হত্যা মামলার বাদী ও নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্যগ্রহণ ও আসামিপক্ষের কৌঁসুলিদের জেরা শেষ হয়েছে।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু জানান, নাসরিন সুলতানা ফূর্তি আদালতে সাক্ষ্য প্রদানকালে জানিয়েছেন, তার শ্লীলতাহানিরও চেষ্টা করেছেন অধ্যক্ষ সিরাজ। অনেক ছাত্রীকেও ওই অধ্যক্ষ শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেছে।

আদালত সূত্রের বরাত দিয়ে সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হাফেজ আহাম্মদ বলেন, আদালতে নুসরাতের ভাই ও মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং জেরা শেষ হয় রোববার। নুসরাতের সহপাঠী নিশাত সুলতানার সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হলেও অপর সহপাঠী নাসরিন সুলতানা ফূতির্র সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হলে আদালত মঙ্গলবার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।

গত ২৭ জুন অভিযোগ গঠনের ছয় দিনের মাথায় ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ৩ জনকে আদালতে তাদের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য উপস্থাপন করা হয়। বাদীর সাক্ষ্য শেষ না হওয়ায় সেদিন আদালত মুলতবি ঘোষণা করা হয়। এরও আগে ২০ জুন আদালত সাক্ষ্যগ্রহণের এই আদেশ দেন। ওইদিনও মামলার ১৬ আসামির পক্ষে জামিন আবেদন করেন তাদের ১৬ আইনজীবী। শুনানি শেষে তাদের আবেদন নামঞ্জুর করে ২৭ জুন সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর দিন ঠিক করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। এ মামলার চার্জশিট জমা দেয়ার আগে সাত সাক্ষী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রসায় আলিম পরীক্ষা কেন্দ্রে গেলে নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতহানির মামলা তুলে না নেয়ায় তাকে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে; যা মৃত্যুশয্যায় নুসরাত বলে গেছেন। ১০ এপ্রিল ঢাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীনে নুসরাতের মৃত্যু হয়। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ফেনীর পরিদর্শক শাহ আলম আদালতে মোট ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেন।

অভিযোগপত্রের ১৬ আসামি হলো মাদ্রসার অধ্যক্ষ ও হত্যার নির্দেশদাতা সিরাজ উদ-দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আবদুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মণি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আবদুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি ও আ’লীগ নেতা রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল। এছাড়া যৌন হয়রানির মামলার পর নুসরাতের জবানবন্দি গ্রহণের সময় তার ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে সাইবার আইনে মামলা হওয়ার পর সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে।