বঙ্গবন্ধুকে ডি-লিট প্রদানের ঘোষণা
ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার মান অতীতে যে খুব উঁচুতে ছিল এবং এখন যে খুব অধঃপতিত, তা নয়। আসলে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমেছে। কারণ, এতে তারা কোন ভবিষ্যৎ দেখতে পায় না, জীবিকার নিশ্চয়তা দেখতে পায় না। বেকারত্বের সমস্যা ক্রমাগত বাড়ছেই। শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর গ্রহণক্ষমতা খুব বড় ব্যাপার। আগ্রহের অভাব ঘটলে গ্রহণক্ষমতা হ্রাস পায়।
গতকাল সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা উল্লেখ করে ‘মুজিববর্ষ-২০২০’ উপলক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার (ডি-লিট) ডিগ্রি প্রদান করা হবে বলে জানান। এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, কোষাধ্যক্ষ ড. মো. কামাল উদ্দীন, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম প্রমুখ।
বাংলাদেশে ভালো শিক্ষক পাওয়া এখন একটি বড় সমস্যা বলে মন্তব্য করে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মেধাবীদের শিক্ষকতায় নিয়ে আসতে হবে। জ্ঞানী, একই সঙ্গে সেই জ্ঞানকে অন্যের কাছে পৌঁছে দিতে এবং পৌঁছে দেয়ার প্রক্রিয়ায় নিজেকে সমৃদ্ধ করতে উৎসাহী তেমন শিক্ষক দরকার। তিনি বলেন, মেধাবী শিক্ষক হওয়ার অর্থ কেবল জ্ঞানী হওয়া নয়, শিক্ষকতায় আগ্রহীও হওয়া চাই। অন্য চাকরি পাননি বলে শিক্ষক হয়েছেন এমন লোকদের দিয়ে কুলাবে না। জ্ঞানী, জ্ঞানকে অন্যের কাছে পৌঁছে দিতে এবং পৌঁছে দেয়ার প্রক্রিয়ায় নিজেকে সমৃদ্ধ করতে উৎসাহীদের শিক্ষাক্ষেত্রে টেনে আনতে হলে বেতন-ভাতা সম্মানজনক হওয়া চাই। তিনি আরও বলেন, শিক্ষকের বেতন-ভাতা অন্য পেশাজীবীদের চেয়ে বেশি হওয়া বাঞ্ছনীয়, যাতে মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসেন এবং কোচিং সেন্টারে না গিয়ে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষাদানেই নিবিষ্টচিত্ত হন। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আজকাল যে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে, তা পর্যাপ্ত নয়। যেটুকুই-বা দেয়া হচ্ছে, তাও শিক্ষার্থী ঠিকভাবে গ্রহণ করতে পারছে না। তার সার্বক্ষণিক ভয় পরীক্ষার। আমাদের বিদ্যায়তনিক শিক্ষা সব সময়ই পরীক্ষামুখী ছিল, এখন সেটা রীতিমতো পরীক্ষাকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে।
আলোচনা সভায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ৯৮তম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসকে ‘মুজিববর্ষ ২০২০’, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উৎসব ২০২১’ এবং মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের আগমনী বার্তা হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, শিক্ষা ও গবেষণার উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ‘কমিটি ফর এক্সিলেন্স ইন এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’ শীর্ষক একটি কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটির পরামর্শ ও সুপারিশের ভিত্তিতে নতুন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। শিক্ষা ও গবেষণার গুণগত মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, এর মাধ্যমে বিশ্ব র্যাংকিং-এ ঢাবির অবস্থান সুসংহত হবে। ঢাবিকে অভীষ্ট লক্ষ্যে উন্নীত করতে তিনি সাবেক শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সমর্থন ও সহযোগিতা চান।
এর আগে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করেন ঢাবি উপাচার্য। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘গুণগত শিক্ষা, প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণ’। ১৯২১ সালের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে ক্যাম্পাসকে সাজানো হয় মনোরম সাজে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবন ও হল আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মধ্যে ছিল পতাকা উত্তোলন, পায়রা উড়ানো, কেক কাটা, উদ্বোধনী সংগীত, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, গবেষণা ও আবিষ্কার বিষয়ক প্রদর্শনী, সাইকেল র্যালি, প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ, শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা প্রভৃতি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে দুর্লভ পা-ুলপি প্রদর্শনী, কার্জন হলে বায়োমেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের উদ্ভাবিত চিকিৎসা প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি ও গবেষণা প্রদর্শনী, চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, ডাকসু’র উদ্যোগে সাঁতার প্রতিযোগিতা, সাইকেল র্যালি এবং প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া, দিবসটি উপলক্ষে ঢাবি সকল অনুষদ, বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও হল দিনব্যাপী নিজস্ব কর্মসূচি গ্রহণ করে। এ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ছিল, তবে অফিসসমূহ খোলা ছিল।
মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০১৯ , ১৮ আষাঢ় ১৪২৫, ২৮ শাওয়াল ১৪৪০
বঙ্গবন্ধুকে ডি-লিট প্রদানের ঘোষণা
প্রতিনিধি, ঢাবি
ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার মান অতীতে যে খুব উঁচুতে ছিল এবং এখন যে খুব অধঃপতিত, তা নয়। আসলে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমেছে। কারণ, এতে তারা কোন ভবিষ্যৎ দেখতে পায় না, জীবিকার নিশ্চয়তা দেখতে পায় না। বেকারত্বের সমস্যা ক্রমাগত বাড়ছেই। শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর গ্রহণক্ষমতা খুব বড় ব্যাপার। আগ্রহের অভাব ঘটলে গ্রহণক্ষমতা হ্রাস পায়।
গতকাল সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা উল্লেখ করে ‘মুজিববর্ষ-২০২০’ উপলক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার (ডি-লিট) ডিগ্রি প্রদান করা হবে বলে জানান। এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, কোষাধ্যক্ষ ড. মো. কামাল উদ্দীন, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম প্রমুখ।
বাংলাদেশে ভালো শিক্ষক পাওয়া এখন একটি বড় সমস্যা বলে মন্তব্য করে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মেধাবীদের শিক্ষকতায় নিয়ে আসতে হবে। জ্ঞানী, একই সঙ্গে সেই জ্ঞানকে অন্যের কাছে পৌঁছে দিতে এবং পৌঁছে দেয়ার প্রক্রিয়ায় নিজেকে সমৃদ্ধ করতে উৎসাহী তেমন শিক্ষক দরকার। তিনি বলেন, মেধাবী শিক্ষক হওয়ার অর্থ কেবল জ্ঞানী হওয়া নয়, শিক্ষকতায় আগ্রহীও হওয়া চাই। অন্য চাকরি পাননি বলে শিক্ষক হয়েছেন এমন লোকদের দিয়ে কুলাবে না। জ্ঞানী, জ্ঞানকে অন্যের কাছে পৌঁছে দিতে এবং পৌঁছে দেয়ার প্রক্রিয়ায় নিজেকে সমৃদ্ধ করতে উৎসাহীদের শিক্ষাক্ষেত্রে টেনে আনতে হলে বেতন-ভাতা সম্মানজনক হওয়া চাই। তিনি আরও বলেন, শিক্ষকের বেতন-ভাতা অন্য পেশাজীবীদের চেয়ে বেশি হওয়া বাঞ্ছনীয়, যাতে মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসেন এবং কোচিং সেন্টারে না গিয়ে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষাদানেই নিবিষ্টচিত্ত হন। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আজকাল যে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে, তা পর্যাপ্ত নয়। যেটুকুই-বা দেয়া হচ্ছে, তাও শিক্ষার্থী ঠিকভাবে গ্রহণ করতে পারছে না। তার সার্বক্ষণিক ভয় পরীক্ষার। আমাদের বিদ্যায়তনিক শিক্ষা সব সময়ই পরীক্ষামুখী ছিল, এখন সেটা রীতিমতো পরীক্ষাকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে।
আলোচনা সভায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ৯৮তম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসকে ‘মুজিববর্ষ ২০২০’, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উৎসব ২০২১’ এবং মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের আগমনী বার্তা হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, শিক্ষা ও গবেষণার উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ‘কমিটি ফর এক্সিলেন্স ইন এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’ শীর্ষক একটি কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটির পরামর্শ ও সুপারিশের ভিত্তিতে নতুন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। শিক্ষা ও গবেষণার গুণগত মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, এর মাধ্যমে বিশ্ব র্যাংকিং-এ ঢাবির অবস্থান সুসংহত হবে। ঢাবিকে অভীষ্ট লক্ষ্যে উন্নীত করতে তিনি সাবেক শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সমর্থন ও সহযোগিতা চান।
এর আগে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করেন ঢাবি উপাচার্য। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘গুণগত শিক্ষা, প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণ’। ১৯২১ সালের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে ক্যাম্পাসকে সাজানো হয় মনোরম সাজে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবন ও হল আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মধ্যে ছিল পতাকা উত্তোলন, পায়রা উড়ানো, কেক কাটা, উদ্বোধনী সংগীত, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, গবেষণা ও আবিষ্কার বিষয়ক প্রদর্শনী, সাইকেল র্যালি, প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ, শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা প্রভৃতি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে দুর্লভ পা-ুলপি প্রদর্শনী, কার্জন হলে বায়োমেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের উদ্ভাবিত চিকিৎসা প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি ও গবেষণা প্রদর্শনী, চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, ডাকসু’র উদ্যোগে সাঁতার প্রতিযোগিতা, সাইকেল র্যালি এবং প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া, দিবসটি উপলক্ষে ঢাবি সকল অনুষদ, বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও হল দিনব্যাপী নিজস্ব কর্মসূচি গ্রহণ করে। এ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ছিল, তবে অফিসসমূহ খোলা ছিল।