রেলের দুর্নীতির দশ উৎস

  • অবৈধ সম্পদের মালিক কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী
  • দুর্নীতি প্রতিরোধে ১৫ সুপারিশ দুদকের

রেলওয়েতে কেনাকাটায় বছরের পর বছর ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে। এছাড়া রেলের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াতেও বড় ধরনের দুর্নীতি রয়েছে। রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অবৈধ সম্পদেরও মালিক হয়েছেন। ওয়ার্কশপগুলো কার্যকর না করে আমদানির মাধ্যমে বিভিন্নভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়। স্লিপার ফ্যাক্টরি অকার্যকর রেখে সরকারের আর্থিক ক্ষতিসাধন করা হয়ে থাকে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে কালোবাজারি হয়ে থাকে। এসব দুর্নীতির কারণে রেলওয়ে যেমন লোকসানে রয়েছে, তেমনি সরকারও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদফতর বা প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির উৎস অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে রেলের এমন ১০ ধরনের দুর্নীতির উৎস খুঁজে পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের গঠিত অনুসন্ধান টিম এসব দুর্নীতি প্রতিরোধে ১৫ দফা সুপারিশ করেছে। গতকাল দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খানের নেতৃত্বে দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে গঠিত ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক টিম’-এর পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের কাছে হস্তান্তর করেন।

প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর দুদক কমিশনার বলেন, দুদক ২০১৭ সালে দেশের ২৫টি মন্ত্রণালয়, অধিদফতর বা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান আইন, বিধি-বিধানের পদ্ধতিগত ত্রুটি, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাব এবং জনবল সংকটের কারণে যেসব দুর্নীতির ক্ষেত্র তৈরি হয়, এর উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধ বা প্রতিরোধে পৃথক ২৫টি প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করে। এ পর্যন্ত কমিশন ১২টি প্রতিবেদন ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করেছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনটি ১৩তম।

দুদক কমিশনার বলেন, এই প্রতিবেদনে দুর্নীতির ১০টি উৎস চিহ্নিত করে তা নিরসনে ১৫টি সুপারিশ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ প্রতিবেদন কোন বিশেষজ্ঞ মতামত সংবলিত প্রতিবেদন নয়। তবে এটি কমিশনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি টিমের প্রতিবেদন। টিম বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদি অ্যানালাইসিস করে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার বলেন, দুদকের নজরদারি কেবল রেলপথ মন্ত্রণালয়ে নয়, দেশের সর্বত্রই দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দমনে নজরদারি রয়েছে। দুর্নীতির প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শূন্য সহনশীলতার নীতির কারণে কমিশন দুর্নীতি দমন, প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে নিরলসভাবে কাজ করছে। এক্ষেত্রে কাউকেই ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। দেশের বিকাশমান অর্থনৈতিক গতিধারা অব্যাহত রাখতে হলে দুর্নীতি দমন, প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই।

দুদক সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদফতর বা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান আইন, বিধি-বিধানের পদ্ধতিগত ত্রুটি, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাব এবং জনবল সংকটের কারণে যেসব দুর্নীতির ক্ষেত্র তৈরি হয়, এর উৎস চিহ্নিতকরণসহ তা বন্ধ বা প্রতিরোধে বাস্তবতার নিরিখে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে, এ বিষয়ে সুপারিশমালা প্রণয়নের নিমিত্ত দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক বিভিন্ন মন্ত্রণালয়,অধিদফতর বা প্রতিষ্ঠানের জন্য পৃথক ২৫টি প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের আইন, বিধি, পরিচালন পদ্ধতি, সরকারি অর্থ অপচয়ের দিকগুলো পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে ওই প্রতিষ্ঠানের সীমাবদ্ধতা, প্রতিবন্ধকতা ও দুর্নীতি প্রতিরোধের নিমিত্ত সুপারিশমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে কমিশনের এক পরিচালকের নেতৃত্বে এক উপ-পরিচালক ও এক সহকারী পরিচালকের সমন্বয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের দুর্নীতি সংক্রান্ত একটি প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করা হয়। এই প্রাতিষ্ঠানিক টিম তাদের অনুসন্ধানকালে রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বর্তমানে কর্মরত কর্মকর্তা ও এ বিষয়ে যারা সম্যক ধারণা রাখেন, তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহপূর্বক তা পর্যালোচনা করে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক টিম তাদের অনুসন্ধানকালে রেলওয়ের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি সম্পর্কিত বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যসহ ভুক্তভোগী রেলওয়ে যাত্রীদের বক্তব্য, প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক বিবৃতি, নিরীক্ষা ও অডিট প্রতিবেদনও পর্যালোচনা করে। সার্বিক পর্যালোচনার ভিত্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক টিম রেলওয়ের দুর্নীতির উৎস ও ক্ষেত্র চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধে প্রণীত সুপারিশমালা প্রতিবেদন আকারে কমিশনে দাখিল করে। দাখিলকৃত প্রতিবেদনে নি¤œবর্ণিত দুর্নীতির উৎস ও সুপারিশমালার বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের জন্য কমিশনে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

রেলওয়ের দুর্নীতির উৎস : বাংলাদেশ রেলওয়ে (পূর্বাঞ্চল) চট্টগ্রাম ও (পশ্চিমাঞ্চল) রাজশাহীর অধীন বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি লিজ/হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়ে থাকে। যেমনÑ রেলওয়ের অনেক জলাশয়/পুকুর নিয়মবহির্ভূতভাবে লিজ প্রদান করা হয়। ফলে সরকারি রাজস্ব যথাযথভাবে আদায় হয় না। রেলওয়ের জায়গায় রেল সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে স্থাপনা নির্মাণ করতে দেয়া হয় এবং এ থেকে রেলওয়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীরা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়ে থাকেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে। সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা, যথাযথ তদারকি ও মনিটরিংয়ের অভাবে রেল বিভাগের শত শত একর ভূমি বেদখল হয়ে আছে। এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি রেলওয়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীরা কর্তৃক অবৈধভাবে দখল করে বাসাবাড়িসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রেলওয়ের অধীন ওয়াগন, কোচ, লোকোমোটিভ, ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডিএমইউ) ক্রয়/সংগ্রহসহ অন্যান্য ক্রয়-সংগ্রহ কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়ে থাকে। রেলওয়ের বিভিন্ন সেকশনের স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থা পুনর্বাসন ও আধুনিকীকরণ কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি সংঘটিত হয়ে থাকে। রেলওয়ের ডাবললাইন, সিঙ্গেললাইন, ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণকাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি সংঘটিত হয়ে থাকে। রেলওয়েতে ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কাজে দুর্নীতি হয়ে থাকে। রেলওয়ের ডিএস/কারখানা সৈয়দপুর, নীলফামারী; বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল, পাকশী; বাংলাদেশ রেলওয়ে, ঢাকা; বাংলাদেশ রেলওয়ে, লালমনিরহাট; পাহাড়তলী, চট্টগ্রামের বিজি এবং এমজি যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসন নিলামে যন্ত্রাংশ বিক্রয় প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের আর্থিক ক্ষতিসাধন হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে যথাযথ ব্লাস্ট লাইনে না দেয়া, যন্ত্রাংশ সংস্থাপন যথাযথভাবে না করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়ে থাকে। রেলওয়ের অধীন ওয়ার্কশপগুলো কার্যকর না করে আমদানির মাধ্যমে বিভিন্নভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়। এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ে স্লিপার ফ্যাক্টরি অকার্যকর রেখে সরকারের আর্থিক ক্ষতিসাধন করা হয়ে থাকে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। রেলওয়ের টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে কালোবাজারি হয়ে থাকে। এ কালোবাজারিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মচারীরা জড়িত থাকেন। কতিপয় দালাল বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মচারীদের সহযোগিতায় আন্তঃনগর ট্রেনের অধিক সংখ্যক টিকিট ক্রয়ের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। এ কারণে জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। যাত্রীবাহী ট্রেন ইজারা প্রদানে দুর্নীতি সংঘটিত হয়ে থাকে। যাত্রীবাহী ট্রেনে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছ থেকে জনসাধারণ কাক্সিক্ষত সেবাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। আন্তঃনগরসহ অন্যান্য ট্রেনে সরবরাহ ও বিক্রিকৃত খাবারের মান নি¤œমানের ও জনস্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক নয় মর্মে জানা যায়। এছাড়া ট্রেনে সরবরাহকৃত খাবারের দামও তুলনামূলকভাবে বেশি। এক্ষেত্রে যথাযথ তদারকি ও মনিটরিংয়ের অভাব রয়েছে।

সুপারিশমালা : রেলওয়েতে বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগে বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের (আইবিএ, বুয়েট, বিএমসি) সহযোগিতা গ্রহণ করা যেতে পারে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রতিটি পদক্ষেপে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা গ্রহণের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। বিভিন্ন প্রকার ক্রয়ে প্রতিযোগিতামূলক প্রকাশ্য/ই-টেন্ডারিং, দরপত্র আহ্বান থেকে শুরু করে কার্যাদেশ প্রদান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় অভিজ্ঞ সিনিয়র কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন কর্মকর্তা/কর্মচারীদের দায়িত্ব প্রদান করা যেতে পারে। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় পিপিআর অনুযায়ী পরামর্শক নিয়োগে বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের (বুয়েট, রুয়েট, চুয়েট, কুয়েট, ডুয়েট ইত্যাদি) সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। রেলওয়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের কোয়ার্টার/বাসভবন/অফিস স্থাপনার সম্পত্তিগুলো ডিজিটাল ডেটা অ্যান্ট্রির মাধ্যমে তালিকা প্রস্তুত করাসহ অবৈধভাবে দখলকৃত সম্পত্তিগুলো নিজস্ব তত্ত্বাবধানে আনতে হবে। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ ও দক্ষ আইনজীবী প্যানেল গঠনপূর্বক বিজ্ঞ আদালতগুলোয় যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে নিয়মিত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ের সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার উৎকর্ষ সাধনের জন্য একটি ডেটাবেজ তৈরি করা যেতে পারে। ওই ডেটাবেজে যেসব সম্পত্তি অবৈধ দখলদারদের দখলে রয়েছে, এর তালিকা তৈরি করে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা যেতে পারে। পরে উদ্ধারকৃত সম্পত্তি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এনে তা রক্ষার জন্য প্রয়োজনে একটি সেল গঠন করা যেতে পারে। রেলওয়ের ওয়ার্কশপ ও স্লিপার ফ্যাক্টরিগুলো সচল ও কার্যকর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। কোচ আমদানি নিরুৎসাহিত করে রেলওয়ের নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে কোচ নির্মাণ করার সক্ষমতা সৃষ্টি করা যেতে পারে। মনোপলি বা একচেটিয়া ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে পিপিএ এবং পিপিআর অনুসরণ করা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের (বুয়েট, চুয়েট, কুয়েট, রুয়েট, ডুয়েট) মাধ্যমে নতুন লাইন নির্মাণ/সংস্কার কাজ তদারকির ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। অডিট কার্যক্রম জোরদার করা এবং অডিট আপত্তি জরুরিভাবে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। পিপিআর অনুযায়ী স্বচ্ছতার সঙ্গে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির মাধ্যমে রেলওয়ের পুরনো মালপত্র (লৌহজাত) বিক্রির ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। টিকিট কালোবাজারি রোধে টিকিট বিক্রিতে ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার ও নিয়মিত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারেÑ যাতে কোন অবস্থাতেই টিকিট কালোবাজারি না হয়। রেলওয়ের পদোন্নতি ও বদলির ক্ষেত্রে সততা, দক্ষতা ও নিষ্ঠাকে মানদ- হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। আধুনিকায়নের মাধ্যমে যাত্রীসেবা বৃদ্ধি করা, বিশেষ করে নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুযায়ী ট্রেন চলাচল নিশ্চিতকরণ; যাত্রী নিরাপত্তা ও মালপত্র পরিবহনে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা, পর্যাপ্ত বগি, লোকোমোটিভ ও ওয়াগন ক্রয়সহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা প্রয়োজন। আন্তঃনগরসহ অন্যান্য ট্রেনে সরবরাহকৃত/বিক্রিকৃত খাবার মানসম্মত বা স্বাস্থ্যসম্মত কি না, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ট্রেনের পরিচালকের (গার্ড) নেতৃত্বে একটি যথাযথ তদারকি ব্যবস্থা থাকা দরকার। এছাড়া খাবারের দামও যৌক্তিক নির্ধারণের জন্য অর্থাৎ কোন খাবারের কত দাম, তা কেবল মুনাফার কথা চিন্তা না করে যাত্রীরা যাতে যৌক্তিক দামে খাবার ক্রয় করতে পারে, এ বিষয়েও যথাযথ তদারকি ও মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকা দরকার। রেলওয়ের সব কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয় (অটোমেশন) পদ্ধতির আওতায় আনা যেতে পারে।

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০১৯ , ১৯ আষাঢ় ১৪২৫, ২৯ শাওয়াল ১৪৪০

রেলের দুর্নীতির দশ উৎস

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

  • অবৈধ সম্পদের মালিক কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী
  • দুর্নীতি প্রতিরোধে ১৫ সুপারিশ দুদকের

রেলওয়েতে কেনাকাটায় বছরের পর বছর ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে। এছাড়া রেলের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াতেও বড় ধরনের দুর্নীতি রয়েছে। রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অবৈধ সম্পদেরও মালিক হয়েছেন। ওয়ার্কশপগুলো কার্যকর না করে আমদানির মাধ্যমে বিভিন্নভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়। স্লিপার ফ্যাক্টরি অকার্যকর রেখে সরকারের আর্থিক ক্ষতিসাধন করা হয়ে থাকে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে কালোবাজারি হয়ে থাকে। এসব দুর্নীতির কারণে রেলওয়ে যেমন লোকসানে রয়েছে, তেমনি সরকারও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদফতর বা প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির উৎস অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে রেলের এমন ১০ ধরনের দুর্নীতির উৎস খুঁজে পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের গঠিত অনুসন্ধান টিম এসব দুর্নীতি প্রতিরোধে ১৫ দফা সুপারিশ করেছে। গতকাল দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খানের নেতৃত্বে দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে গঠিত ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক টিম’-এর পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের কাছে হস্তান্তর করেন।

প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর দুদক কমিশনার বলেন, দুদক ২০১৭ সালে দেশের ২৫টি মন্ত্রণালয়, অধিদফতর বা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান আইন, বিধি-বিধানের পদ্ধতিগত ত্রুটি, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাব এবং জনবল সংকটের কারণে যেসব দুর্নীতির ক্ষেত্র তৈরি হয়, এর উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধ বা প্রতিরোধে পৃথক ২৫টি প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করে। এ পর্যন্ত কমিশন ১২টি প্রতিবেদন ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করেছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনটি ১৩তম।

দুদক কমিশনার বলেন, এই প্রতিবেদনে দুর্নীতির ১০টি উৎস চিহ্নিত করে তা নিরসনে ১৫টি সুপারিশ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ প্রতিবেদন কোন বিশেষজ্ঞ মতামত সংবলিত প্রতিবেদন নয়। তবে এটি কমিশনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি টিমের প্রতিবেদন। টিম বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদি অ্যানালাইসিস করে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার বলেন, দুদকের নজরদারি কেবল রেলপথ মন্ত্রণালয়ে নয়, দেশের সর্বত্রই দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দমনে নজরদারি রয়েছে। দুর্নীতির প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শূন্য সহনশীলতার নীতির কারণে কমিশন দুর্নীতি দমন, প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে নিরলসভাবে কাজ করছে। এক্ষেত্রে কাউকেই ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। দেশের বিকাশমান অর্থনৈতিক গতিধারা অব্যাহত রাখতে হলে দুর্নীতি দমন, প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই।

দুদক সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদফতর বা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান আইন, বিধি-বিধানের পদ্ধতিগত ত্রুটি, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাব এবং জনবল সংকটের কারণে যেসব দুর্নীতির ক্ষেত্র তৈরি হয়, এর উৎস চিহ্নিতকরণসহ তা বন্ধ বা প্রতিরোধে বাস্তবতার নিরিখে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে, এ বিষয়ে সুপারিশমালা প্রণয়নের নিমিত্ত দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক বিভিন্ন মন্ত্রণালয়,অধিদফতর বা প্রতিষ্ঠানের জন্য পৃথক ২৫টি প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের আইন, বিধি, পরিচালন পদ্ধতি, সরকারি অর্থ অপচয়ের দিকগুলো পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে ওই প্রতিষ্ঠানের সীমাবদ্ধতা, প্রতিবন্ধকতা ও দুর্নীতি প্রতিরোধের নিমিত্ত সুপারিশমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে কমিশনের এক পরিচালকের নেতৃত্বে এক উপ-পরিচালক ও এক সহকারী পরিচালকের সমন্বয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের দুর্নীতি সংক্রান্ত একটি প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করা হয়। এই প্রাতিষ্ঠানিক টিম তাদের অনুসন্ধানকালে রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বর্তমানে কর্মরত কর্মকর্তা ও এ বিষয়ে যারা সম্যক ধারণা রাখেন, তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহপূর্বক তা পর্যালোচনা করে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক টিম তাদের অনুসন্ধানকালে রেলওয়ের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি সম্পর্কিত বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যসহ ভুক্তভোগী রেলওয়ে যাত্রীদের বক্তব্য, প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক বিবৃতি, নিরীক্ষা ও অডিট প্রতিবেদনও পর্যালোচনা করে। সার্বিক পর্যালোচনার ভিত্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক টিম রেলওয়ের দুর্নীতির উৎস ও ক্ষেত্র চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধে প্রণীত সুপারিশমালা প্রতিবেদন আকারে কমিশনে দাখিল করে। দাখিলকৃত প্রতিবেদনে নি¤œবর্ণিত দুর্নীতির উৎস ও সুপারিশমালার বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের জন্য কমিশনে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

রেলওয়ের দুর্নীতির উৎস : বাংলাদেশ রেলওয়ে (পূর্বাঞ্চল) চট্টগ্রাম ও (পশ্চিমাঞ্চল) রাজশাহীর অধীন বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি লিজ/হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়ে থাকে। যেমনÑ রেলওয়ের অনেক জলাশয়/পুকুর নিয়মবহির্ভূতভাবে লিজ প্রদান করা হয়। ফলে সরকারি রাজস্ব যথাযথভাবে আদায় হয় না। রেলওয়ের জায়গায় রেল সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে স্থাপনা নির্মাণ করতে দেয়া হয় এবং এ থেকে রেলওয়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীরা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়ে থাকেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে। সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা, যথাযথ তদারকি ও মনিটরিংয়ের অভাবে রেল বিভাগের শত শত একর ভূমি বেদখল হয়ে আছে। এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি রেলওয়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীরা কর্তৃক অবৈধভাবে দখল করে বাসাবাড়িসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রেলওয়ের অধীন ওয়াগন, কোচ, লোকোমোটিভ, ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডিএমইউ) ক্রয়/সংগ্রহসহ অন্যান্য ক্রয়-সংগ্রহ কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়ে থাকে। রেলওয়ের বিভিন্ন সেকশনের স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থা পুনর্বাসন ও আধুনিকীকরণ কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি সংঘটিত হয়ে থাকে। রেলওয়ের ডাবললাইন, সিঙ্গেললাইন, ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণকাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি সংঘটিত হয়ে থাকে। রেলওয়েতে ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কাজে দুর্নীতি হয়ে থাকে। রেলওয়ের ডিএস/কারখানা সৈয়দপুর, নীলফামারী; বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল, পাকশী; বাংলাদেশ রেলওয়ে, ঢাকা; বাংলাদেশ রেলওয়ে, লালমনিরহাট; পাহাড়তলী, চট্টগ্রামের বিজি এবং এমজি যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসন নিলামে যন্ত্রাংশ বিক্রয় প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের আর্থিক ক্ষতিসাধন হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে যথাযথ ব্লাস্ট লাইনে না দেয়া, যন্ত্রাংশ সংস্থাপন যথাযথভাবে না করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়ে থাকে। রেলওয়ের অধীন ওয়ার্কশপগুলো কার্যকর না করে আমদানির মাধ্যমে বিভিন্নভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়। এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ে স্লিপার ফ্যাক্টরি অকার্যকর রেখে সরকারের আর্থিক ক্ষতিসাধন করা হয়ে থাকে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। রেলওয়ের টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে কালোবাজারি হয়ে থাকে। এ কালোবাজারিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মচারীরা জড়িত থাকেন। কতিপয় দালাল বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মচারীদের সহযোগিতায় আন্তঃনগর ট্রেনের অধিক সংখ্যক টিকিট ক্রয়ের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। এ কারণে জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। যাত্রীবাহী ট্রেন ইজারা প্রদানে দুর্নীতি সংঘটিত হয়ে থাকে। যাত্রীবাহী ট্রেনে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছ থেকে জনসাধারণ কাক্সিক্ষত সেবাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। আন্তঃনগরসহ অন্যান্য ট্রেনে সরবরাহ ও বিক্রিকৃত খাবারের মান নি¤œমানের ও জনস্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক নয় মর্মে জানা যায়। এছাড়া ট্রেনে সরবরাহকৃত খাবারের দামও তুলনামূলকভাবে বেশি। এক্ষেত্রে যথাযথ তদারকি ও মনিটরিংয়ের অভাব রয়েছে।

সুপারিশমালা : রেলওয়েতে বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগে বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের (আইবিএ, বুয়েট, বিএমসি) সহযোগিতা গ্রহণ করা যেতে পারে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রতিটি পদক্ষেপে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা গ্রহণের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। বিভিন্ন প্রকার ক্রয়ে প্রতিযোগিতামূলক প্রকাশ্য/ই-টেন্ডারিং, দরপত্র আহ্বান থেকে শুরু করে কার্যাদেশ প্রদান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় অভিজ্ঞ সিনিয়র কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন কর্মকর্তা/কর্মচারীদের দায়িত্ব প্রদান করা যেতে পারে। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় পিপিআর অনুযায়ী পরামর্শক নিয়োগে বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের (বুয়েট, রুয়েট, চুয়েট, কুয়েট, ডুয়েট ইত্যাদি) সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। রেলওয়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের কোয়ার্টার/বাসভবন/অফিস স্থাপনার সম্পত্তিগুলো ডিজিটাল ডেটা অ্যান্ট্রির মাধ্যমে তালিকা প্রস্তুত করাসহ অবৈধভাবে দখলকৃত সম্পত্তিগুলো নিজস্ব তত্ত্বাবধানে আনতে হবে। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ ও দক্ষ আইনজীবী প্যানেল গঠনপূর্বক বিজ্ঞ আদালতগুলোয় যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে নিয়মিত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ের সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার উৎকর্ষ সাধনের জন্য একটি ডেটাবেজ তৈরি করা যেতে পারে। ওই ডেটাবেজে যেসব সম্পত্তি অবৈধ দখলদারদের দখলে রয়েছে, এর তালিকা তৈরি করে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা যেতে পারে। পরে উদ্ধারকৃত সম্পত্তি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এনে তা রক্ষার জন্য প্রয়োজনে একটি সেল গঠন করা যেতে পারে। রেলওয়ের ওয়ার্কশপ ও স্লিপার ফ্যাক্টরিগুলো সচল ও কার্যকর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। কোচ আমদানি নিরুৎসাহিত করে রেলওয়ের নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে কোচ নির্মাণ করার সক্ষমতা সৃষ্টি করা যেতে পারে। মনোপলি বা একচেটিয়া ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে পিপিএ এবং পিপিআর অনুসরণ করা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের (বুয়েট, চুয়েট, কুয়েট, রুয়েট, ডুয়েট) মাধ্যমে নতুন লাইন নির্মাণ/সংস্কার কাজ তদারকির ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। অডিট কার্যক্রম জোরদার করা এবং অডিট আপত্তি জরুরিভাবে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। পিপিআর অনুযায়ী স্বচ্ছতার সঙ্গে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির মাধ্যমে রেলওয়ের পুরনো মালপত্র (লৌহজাত) বিক্রির ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। টিকিট কালোবাজারি রোধে টিকিট বিক্রিতে ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার ও নিয়মিত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারেÑ যাতে কোন অবস্থাতেই টিকিট কালোবাজারি না হয়। রেলওয়ের পদোন্নতি ও বদলির ক্ষেত্রে সততা, দক্ষতা ও নিষ্ঠাকে মানদ- হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। আধুনিকায়নের মাধ্যমে যাত্রীসেবা বৃদ্ধি করা, বিশেষ করে নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুযায়ী ট্রেন চলাচল নিশ্চিতকরণ; যাত্রী নিরাপত্তা ও মালপত্র পরিবহনে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা, পর্যাপ্ত বগি, লোকোমোটিভ ও ওয়াগন ক্রয়সহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা প্রয়োজন। আন্তঃনগরসহ অন্যান্য ট্রেনে সরবরাহকৃত/বিক্রিকৃত খাবার মানসম্মত বা স্বাস্থ্যসম্মত কি না, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ট্রেনের পরিচালকের (গার্ড) নেতৃত্বে একটি যথাযথ তদারকি ব্যবস্থা থাকা দরকার। এছাড়া খাবারের দামও যৌক্তিক নির্ধারণের জন্য অর্থাৎ কোন খাবারের কত দাম, তা কেবল মুনাফার কথা চিন্তা না করে যাত্রীরা যাতে যৌক্তিক দামে খাবার ক্রয় করতে পারে, এ বিষয়েও যথাযথ তদারকি ও মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকা দরকার। রেলওয়ের সব কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয় (অটোমেশন) পদ্ধতির আওতায় আনা যেতে পারে।