বিদায়ী অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে রেকর্ড

সাড়ে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

সদ্য বিদায়ী (২০১৮-১৯) অর্থবছরে সাড়ে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রবাসী আয়ে। এ সময় ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা মোট ১ হাজার ৬৪০ কোটি (১৬.৪০ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। আগের অর্থবছর এর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার। এছাড়া গত অর্থবছরের রেমিটেন্সের এই অঙ্ক অতীতের যে কোন বছরের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক বছরে এই পরিমাণ রেমিটেন্স আসেনি। ২০১৪-১৫ অর্বছরে ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়ীত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স আনতে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছে। এছাড়া হুন্ডি ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্সের পরিমাণ বাড়িয়েছে। চলতি অর্থবছর রেমিটেন্সের পরিমাণ আরও বড়াবে। কেননা এ বছর বাজেটে রেমিটেন্সের বিভিন্ন প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ রেমিটেন্সের তথ্যে দেখা যায়, বছরের শেষ মাস জুনে ১৩৪ কোটি ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সবমিলিয়ে ১২ মাসে (জুলাই-জুন) ১ হাজার ৬৪০ কোটি ডলারের রেমিটেন্স এসেছে দেশে। প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সাড়ে ৯ শতাংশ রেমিটেন্স বেশি পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসীরা দেশে বেশি অর্থ পাঠানোয় মে মাসে ১৭৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলার রেমিটেন্সে আসে, যা ছিল মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর আগে এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছিল চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে- ১৫৯ কোটি ৭২ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, বছর জুড়েই রেমিটেন্স প্রবাহ ভালো ছিল। রেকর্ড গড়ে অর্থবছর শেষ হলো। প্রণোদনা দেয়ায় নতুন অর্থবছরে রেমিটেন্স আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, রেমিটেন্সে প্রণোদনা দিয়ে একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর ফলে প্রবাসীরা দেশে বেশি অর্থ পাঠাবেন।

২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ মুস্তফা কামাল। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রেমিটেন্সে এ ধরনের প্রণাদনা দেয়া হচ্ছে। ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা ১০০ টাকা দেশে পাঠালে ২ টাকা প্রণোদনা পাবেন। আর এ জন্য নতুন বাজেটে ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, রেমিটেন্স প্রেরণে বর্ধিত আয় লাঘব করা এবং বৈধ পথে অর্থ প্রেরণ উৎসাহিত করার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত অর্থের ওপর আগামী অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা প্রদান করা হবে। এর ফলে বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে এবং হুন্ডি ব্যবসা নিরুৎসাহিত হবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ১৭ লাখ (১৪.৯৮ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি ছিল। বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হলো বিদেশে থাকা বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স। বর্তমানে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। জিডিপিতে তাদের পাঠানো অর্থের অবদান ১২ শতাংশের মতো।

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০১৯ , ১৯ আষাঢ় ১৪২৫, ২৯ শাওয়াল ১৪৪০

বিদায়ী অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে রেকর্ড

সাড়ে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

রোকন মাহমুদ

সদ্য বিদায়ী (২০১৮-১৯) অর্থবছরে সাড়ে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রবাসী আয়ে। এ সময় ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা মোট ১ হাজার ৬৪০ কোটি (১৬.৪০ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। আগের অর্থবছর এর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার। এছাড়া গত অর্থবছরের রেমিটেন্সের এই অঙ্ক অতীতের যে কোন বছরের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক বছরে এই পরিমাণ রেমিটেন্স আসেনি। ২০১৪-১৫ অর্বছরে ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়ীত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স আনতে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছে। এছাড়া হুন্ডি ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্সের পরিমাণ বাড়িয়েছে। চলতি অর্থবছর রেমিটেন্সের পরিমাণ আরও বড়াবে। কেননা এ বছর বাজেটে রেমিটেন্সের বিভিন্ন প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ রেমিটেন্সের তথ্যে দেখা যায়, বছরের শেষ মাস জুনে ১৩৪ কোটি ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সবমিলিয়ে ১২ মাসে (জুলাই-জুন) ১ হাজার ৬৪০ কোটি ডলারের রেমিটেন্স এসেছে দেশে। প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সাড়ে ৯ শতাংশ রেমিটেন্স বেশি পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসীরা দেশে বেশি অর্থ পাঠানোয় মে মাসে ১৭৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলার রেমিটেন্সে আসে, যা ছিল মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর আগে এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছিল চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে- ১৫৯ কোটি ৭২ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, বছর জুড়েই রেমিটেন্স প্রবাহ ভালো ছিল। রেকর্ড গড়ে অর্থবছর শেষ হলো। প্রণোদনা দেয়ায় নতুন অর্থবছরে রেমিটেন্স আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, রেমিটেন্সে প্রণোদনা দিয়ে একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর ফলে প্রবাসীরা দেশে বেশি অর্থ পাঠাবেন।

২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ মুস্তফা কামাল। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রেমিটেন্সে এ ধরনের প্রণাদনা দেয়া হচ্ছে। ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা ১০০ টাকা দেশে পাঠালে ২ টাকা প্রণোদনা পাবেন। আর এ জন্য নতুন বাজেটে ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, রেমিটেন্স প্রেরণে বর্ধিত আয় লাঘব করা এবং বৈধ পথে অর্থ প্রেরণ উৎসাহিত করার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত অর্থের ওপর আগামী অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা প্রদান করা হবে। এর ফলে বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে এবং হুন্ডি ব্যবসা নিরুৎসাহিত হবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ১৭ লাখ (১৪.৯৮ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি ছিল। বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হলো বিদেশে থাকা বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স। বর্তমানে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। জিডিপিতে তাদের পাঠানো অর্থের অবদান ১২ শতাংশের মতো।