ওসির এসি কক্ষে ১৫ ঘণ্টা ডিআইজি মিজান

দুদকের মানি লন্ডারিং আইনে করা মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে আদালতে নেয়ার আগ পর্যন্ত শাহবাগ থানার ওসির শীতাতপ কক্ষে ছিলেন ডিআইজি মিজানুর রহমান। গত সোমবার বিকালে হাইকোর্ট এলাকা থেকে গ্রেফতারের পর সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে তাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে আসা হয়। এরপর গতকাল সকাল ১০টায় আদালতে নিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় ১৫ ঘণ্টা ওসির কক্ষেই ছিলেন পুলিশের সদ্য সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এই ডিআইজি।

গ্রেফতারের পর থেকে শাহবাগ থানার ওসির কক্ষের বাইরে কোথাও না গেলেও আয়েশেই ছিলেন ডিআইজি মিজানুর রহমান। সেখানে তার দেখভালের জন্য ছিলেন অন্তত ৫ পুলিশ সদস্য। এছাড়া সার্বিকভাবে বিষয়টি তত্ত্বাবধান করেছেন ওসি আবুল হাসান। থানার পুলিশ সদস্যদের বাইরে আরও এক ব্যক্তি তার খোঁজখবর রেখেছেন। তবে তিনি নিজের নাম না বললেও পরিচয় দিয়েছেন থানার স্টাফ হিসেবে।

সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে মিজানুর রহমানকে গ্রেফতারের পর ডিএমপি রমনা জোনের এডিসি আজিমুল হকের গাড়িতে করে শাহবাগ থানায় নিয়ে আসা হয়। পুলিশি পাহারায় গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় থানার ওসি আবুল হাসানের কক্ষে। এরপর থেকে তিনি সেখানেই অবস্থান করেন। ডিআইজি মিজান ওসির কক্ষে প্রবেশের পর থেকে কক্ষটি ভেতর থেকে লক করে দেয়া হয়। ভেতর থেকে অনুমতি সাপেক্ষে পুলিশ সদস্যরা প্রবেশ করেন। ওসির কক্ষে মিজানুর রহমান ছাড়াও আরও দুই কর্মকর্তা ছিলেন। দু’জনই এসআই পদমর্যাদার। তাদের একজন পোশাকে ও অন্যজন সাদা পোশাকে ছিলেন। এই দু’জনের বাইরে ওসির কক্ষে নিয়মিত আনাগোনা করছেন আরও দুই এসআই।

ডিআইজি মিজান আসার পর নিজ কক্ষ ছেড়ে পাশের পরিদর্শকের (তদন্ত) কক্ষে বসে দাফতরিক কাজ সারেন ওসি আবুল হাসান। থানায় ওসির কাছে আসা সাহায্যপ্রার্থীরাও তার সঙ্গে দেখা করছেন ওই কক্ষে। রাত ৮টার দিকে ডিআইজি মিজানের জন্য খাবার নিয়ে আসেন ওসির বডি গার্ড কামরুল। একই ব্যক্তি রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাইরে থেকে পুলিশের এই কর্মকর্তার জন্য ওষুধ নিয়ে আসেন। অতিরিক্ত কাপড় নিয়ে আসা হয় রাত ৯টা ১৫ মিনিটে। রাত ১১টায় তার খোঁজখবর নিতে থানায় আসেন ডিএমপির এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। শাহবাগ থানায় ওসির কক্ষে ২০ মিনিট সময় কাটান তিনি। এই কর্মকর্তা বলেন, সৌজন্যতার খাতিরে এসেছি। এর বেশি কিছু নয়।

রাতের খাবারে মিজানকে কী দেয়া হয়েছে, তা সরাসরি বলতে রাজি হননি থানার কোন কর্মকর্তা। তবে ওসি আবুল হাসান বলেন, রাতের খাবার বাইরে থেকে আনা হয়েছে।

থানা সূত্র জানায়, অতিরিক্ত কাপড় নিয়ে আসার পর তিনি ড্রেস পাল্টান। এরপর রাতে ওসির কক্ষের ভেতরে থাকা বিশ্রাম কক্ষে ঘুমান। ডিআইজি মিজানুর রহমান খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেছেন বলে থানার একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সকাল ৮টার দিকে নাস্তা খান তিনি। তা বাইরে থেকে আলাদাভাবে আনা হয়। নাস্তা শেষে আদালতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হন মিজানুর রহমান। এরপর সকাল ১০টার দিকে শাহবাগ থানার গাড়িতে করে তাকে আদালতে নেয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে তার সঙ্গে বাইরে থেকে কেউ দেখা করতে আসেননি।

প্রসঙ্গত, এর আগে নারী নির্যাতনের অভিযোগে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার হওয়া মিজানুর রহমানের অবৈধ সম্পদের তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু এই তদন্ত করতে গিয়ে দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এছাড়া ১৯ জুন আদালত এক আদেশে মিজানুর রহমানের স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং ব্যাংক হিসাবের লেনদেন বন্ধ করার নির্দেশ দেন। ২৪ জুন ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০১৯ , ১৯ আষাঢ় ১৪২৫, ২৯ শাওয়াল ১৪৪০

গ্রেফতারের পর

ওসির এসি কক্ষে ১৫ ঘণ্টা ডিআইজি মিজান

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

দুদকের মানি লন্ডারিং আইনে করা মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে আদালতে নেয়ার আগ পর্যন্ত শাহবাগ থানার ওসির শীতাতপ কক্ষে ছিলেন ডিআইজি মিজানুর রহমান। গত সোমবার বিকালে হাইকোর্ট এলাকা থেকে গ্রেফতারের পর সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে তাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে আসা হয়। এরপর গতকাল সকাল ১০টায় আদালতে নিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় ১৫ ঘণ্টা ওসির কক্ষেই ছিলেন পুলিশের সদ্য সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এই ডিআইজি।

গ্রেফতারের পর থেকে শাহবাগ থানার ওসির কক্ষের বাইরে কোথাও না গেলেও আয়েশেই ছিলেন ডিআইজি মিজানুর রহমান। সেখানে তার দেখভালের জন্য ছিলেন অন্তত ৫ পুলিশ সদস্য। এছাড়া সার্বিকভাবে বিষয়টি তত্ত্বাবধান করেছেন ওসি আবুল হাসান। থানার পুলিশ সদস্যদের বাইরে আরও এক ব্যক্তি তার খোঁজখবর রেখেছেন। তবে তিনি নিজের নাম না বললেও পরিচয় দিয়েছেন থানার স্টাফ হিসেবে।

সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে মিজানুর রহমানকে গ্রেফতারের পর ডিএমপি রমনা জোনের এডিসি আজিমুল হকের গাড়িতে করে শাহবাগ থানায় নিয়ে আসা হয়। পুলিশি পাহারায় গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় থানার ওসি আবুল হাসানের কক্ষে। এরপর থেকে তিনি সেখানেই অবস্থান করেন। ডিআইজি মিজান ওসির কক্ষে প্রবেশের পর থেকে কক্ষটি ভেতর থেকে লক করে দেয়া হয়। ভেতর থেকে অনুমতি সাপেক্ষে পুলিশ সদস্যরা প্রবেশ করেন। ওসির কক্ষে মিজানুর রহমান ছাড়াও আরও দুই কর্মকর্তা ছিলেন। দু’জনই এসআই পদমর্যাদার। তাদের একজন পোশাকে ও অন্যজন সাদা পোশাকে ছিলেন। এই দু’জনের বাইরে ওসির কক্ষে নিয়মিত আনাগোনা করছেন আরও দুই এসআই।

ডিআইজি মিজান আসার পর নিজ কক্ষ ছেড়ে পাশের পরিদর্শকের (তদন্ত) কক্ষে বসে দাফতরিক কাজ সারেন ওসি আবুল হাসান। থানায় ওসির কাছে আসা সাহায্যপ্রার্থীরাও তার সঙ্গে দেখা করছেন ওই কক্ষে। রাত ৮টার দিকে ডিআইজি মিজানের জন্য খাবার নিয়ে আসেন ওসির বডি গার্ড কামরুল। একই ব্যক্তি রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাইরে থেকে পুলিশের এই কর্মকর্তার জন্য ওষুধ নিয়ে আসেন। অতিরিক্ত কাপড় নিয়ে আসা হয় রাত ৯টা ১৫ মিনিটে। রাত ১১টায় তার খোঁজখবর নিতে থানায় আসেন ডিএমপির এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। শাহবাগ থানায় ওসির কক্ষে ২০ মিনিট সময় কাটান তিনি। এই কর্মকর্তা বলেন, সৌজন্যতার খাতিরে এসেছি। এর বেশি কিছু নয়।

রাতের খাবারে মিজানকে কী দেয়া হয়েছে, তা সরাসরি বলতে রাজি হননি থানার কোন কর্মকর্তা। তবে ওসি আবুল হাসান বলেন, রাতের খাবার বাইরে থেকে আনা হয়েছে।

থানা সূত্র জানায়, অতিরিক্ত কাপড় নিয়ে আসার পর তিনি ড্রেস পাল্টান। এরপর রাতে ওসির কক্ষের ভেতরে থাকা বিশ্রাম কক্ষে ঘুমান। ডিআইজি মিজানুর রহমান খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেছেন বলে থানার একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সকাল ৮টার দিকে নাস্তা খান তিনি। তা বাইরে থেকে আলাদাভাবে আনা হয়। নাস্তা শেষে আদালতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হন মিজানুর রহমান। এরপর সকাল ১০টার দিকে শাহবাগ থানার গাড়িতে করে তাকে আদালতে নেয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে তার সঙ্গে বাইরে থেকে কেউ দেখা করতে আসেননি।

প্রসঙ্গত, এর আগে নারী নির্যাতনের অভিযোগে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার হওয়া মিজানুর রহমানের অবৈধ সম্পদের তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু এই তদন্ত করতে গিয়ে দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এছাড়া ১৯ জুন আদালত এক আদেশে মিজানুর রহমানের স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং ব্যাংক হিসাবের লেনদেন বন্ধ করার নির্দেশ দেন। ২৪ জুন ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।