ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী : ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা এলাকায় চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণের পর ধর্ষকের পরিবারের সদস্যরা ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রী গন্ডামারা ২ নং ওয়ার্ড এলাকার দিনমজুর আনিছের মেয়ে। সে ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ায় তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়লে ঘটনাটি জানাজানি হয়। বর্তমানে সে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) এবং বিভাগীয় ডিএনও ল্যাবরেটরিতে চিকিৎসাধীন।

এদিকে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে একটি চক্র। তারা জিনের কারণে ওই ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার গন্ডামারা ইউনিয়নের ৭৭ নং পূর্ব গন্ডামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ২০১৮ সালের বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ওই ছাত্রীকে পূর্ব থেকেই একই ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডে নিজের বাড়িতে কাজকর্ম করার জন্য রেখেছিলেন ওই স্কুলের শিক্ষিকা হোসনে আরা বেগম। প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা বেতন দেয়া হতো তাকে। কিন্তু সেখানে জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহতার শিকার হয় সে। প্রথমে ওই ছাত্রী লজ্জায় কারো কাছে মুখ না খুললেও পরে একের পর এক লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা প্রদান করে। শিক্ষিকা হোসনে আরার স্বামী রহম আলী রাউজান উপজেলার ওআরসি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তাই তিনি চাকরির সুবাদে বেশিরভাগ সময় রাউজানেই থাকেন। ঘরে শিক্ষিকা হোসেনে আরা ও তার এক শিশুকন্যা এবং ওই ছাত্রী থাকত। শিক্ষিকা হোসনে আরার ভাসুর আলী হোসেন বেশ কয়েক বছর ধরে সৌদি আরবে থাকেন। তার তিন ছেলে রয়েছে। তার বড় পুত্র মহিউদ্দীন। ওই শিক্ষিকা বাড়িতে থাকা অবস্থাতেও মহিউদ্দীন প্রায় সময় রাতের অন্ধকারে বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকে ওই ছাত্রীর সঙ্গে মেলামেশা করত। ফলে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। শুধু তা-ই নয়, এ ঘটনাটি কাউকে জানালে তাকে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দিত মহিউদ্দীন। গতকাল সকালে ঘটনাস্থলে সরেজমিন পরিদর্শনকালে ভিকটিম ওই ছাত্রী স্থানীয় সংবাদকর্মীদের কাছে এভাবেই ঘটনার বর্ণনা প্রদান করে।

এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হয় ৭৭ নং পূর্ব গন্ডামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হোসনে আরা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, ওই ছাত্রীকে আমার পরিবারে কাজকর্ম করার জন্য মাসিক বেতন দিয়ে রাখতাম। সে আমার বাড়িতে থেকে কাজকর্ম করে লেখাপড়া করত। আমি যে বিদ্যালয়ে চাকরি করি, ওই বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীতে ২০১৮ সালের বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় সে। পরে সে আমার বাড়িতে আসা বন্ধ করে দেয় এবং স্কুলেও আর আসে না। দীর্ঘ সময় ধরে তার এই অনুপস্থিতিতে আমার সন্দেহ হলে তার পরিবারের সদস্যদের বলি তাকে আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য। তখন দেখি তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে। তার কাছ থেকে কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে আমাকে জানায় তার পেটে গ্যাস জমেছে। কিন্তু আমি তার কথা বিশ্বাস করিনি। পেটে গ্যাস জমলে এই অবস্থা হতে পারে না। তার পা ফুলে গেছে দেখলাম। পরে জানতে পারি সে অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু কী কারণে এমনটি হয়েছে, তা জানি না।

এদিকে এ ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় ইউপির ২ সদস্য নুরুল হাকিম ও আবদুল জাব্বার গত ২৮ জুন ঘটনাটি নিয়ে সালিশী বৈঠকের আহ্বান করেন। এ সময় নির্যাতিত ছাত্রী মহিউদ্দিনকে তার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ব্যাপারে দায়ী করে। কিন্তু প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে ওই দরিদ্র ছাত্রীর কথা কেউ আমলে না নিয়ে জিনের কারণে এ অবস্থা হয়েছে বলে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়।

অন্তঃসত্ত্বা হওয়া ছাত্রীর বাবা আনিছ ও মা রাজিয়া বেগম জানান, আমার মেয়ে ওই শিক্ষিকার ঘরে থাকা অবস্থায় মহিউদ্দীন আমার মেয়েকে জোরপূর্বক মেলামেশার কারণে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। তবে সে ভয়ে আমাদের ঘটনাটি জানায়নি। আমরা এ ঘটনাটির জন্য আইনের আশ্রয় নেব।

গন্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আলী হায়দার চৌধুরী আসিফ বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। জিনের কারণে ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কথা বিশ্বাস করি না। এ ঘটনাটি সঠিকভাবে তদন্তপূর্বক প্রকৃত দোষীকে খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি প্রদানের দাবি জানাচ্ছি প্রশাসনের প্রতি।

এ ব্যাপারে বাঁশখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০১৯ , ১৯ আষাঢ় ১৪২৫, ২৯ শাওয়াল ১৪৪০

চট্টগ্রামের বাঁশখালী

ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী : ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা

প্রতিনিধি, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম)

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা এলাকায় চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণের পর ধর্ষকের পরিবারের সদস্যরা ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রী গন্ডামারা ২ নং ওয়ার্ড এলাকার দিনমজুর আনিছের মেয়ে। সে ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ায় তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়লে ঘটনাটি জানাজানি হয়। বর্তমানে সে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) এবং বিভাগীয় ডিএনও ল্যাবরেটরিতে চিকিৎসাধীন।

এদিকে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে একটি চক্র। তারা জিনের কারণে ওই ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার গন্ডামারা ইউনিয়নের ৭৭ নং পূর্ব গন্ডামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ২০১৮ সালের বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ওই ছাত্রীকে পূর্ব থেকেই একই ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডে নিজের বাড়িতে কাজকর্ম করার জন্য রেখেছিলেন ওই স্কুলের শিক্ষিকা হোসনে আরা বেগম। প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা বেতন দেয়া হতো তাকে। কিন্তু সেখানে জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহতার শিকার হয় সে। প্রথমে ওই ছাত্রী লজ্জায় কারো কাছে মুখ না খুললেও পরে একের পর এক লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা প্রদান করে। শিক্ষিকা হোসনে আরার স্বামী রহম আলী রাউজান উপজেলার ওআরসি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তাই তিনি চাকরির সুবাদে বেশিরভাগ সময় রাউজানেই থাকেন। ঘরে শিক্ষিকা হোসেনে আরা ও তার এক শিশুকন্যা এবং ওই ছাত্রী থাকত। শিক্ষিকা হোসনে আরার ভাসুর আলী হোসেন বেশ কয়েক বছর ধরে সৌদি আরবে থাকেন। তার তিন ছেলে রয়েছে। তার বড় পুত্র মহিউদ্দীন। ওই শিক্ষিকা বাড়িতে থাকা অবস্থাতেও মহিউদ্দীন প্রায় সময় রাতের অন্ধকারে বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকে ওই ছাত্রীর সঙ্গে মেলামেশা করত। ফলে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। শুধু তা-ই নয়, এ ঘটনাটি কাউকে জানালে তাকে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দিত মহিউদ্দীন। গতকাল সকালে ঘটনাস্থলে সরেজমিন পরিদর্শনকালে ভিকটিম ওই ছাত্রী স্থানীয় সংবাদকর্মীদের কাছে এভাবেই ঘটনার বর্ণনা প্রদান করে।

এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হয় ৭৭ নং পূর্ব গন্ডামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হোসনে আরা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, ওই ছাত্রীকে আমার পরিবারে কাজকর্ম করার জন্য মাসিক বেতন দিয়ে রাখতাম। সে আমার বাড়িতে থেকে কাজকর্ম করে লেখাপড়া করত। আমি যে বিদ্যালয়ে চাকরি করি, ওই বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীতে ২০১৮ সালের বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় সে। পরে সে আমার বাড়িতে আসা বন্ধ করে দেয় এবং স্কুলেও আর আসে না। দীর্ঘ সময় ধরে তার এই অনুপস্থিতিতে আমার সন্দেহ হলে তার পরিবারের সদস্যদের বলি তাকে আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য। তখন দেখি তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে। তার কাছ থেকে কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে আমাকে জানায় তার পেটে গ্যাস জমেছে। কিন্তু আমি তার কথা বিশ্বাস করিনি। পেটে গ্যাস জমলে এই অবস্থা হতে পারে না। তার পা ফুলে গেছে দেখলাম। পরে জানতে পারি সে অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু কী কারণে এমনটি হয়েছে, তা জানি না।

এদিকে এ ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় ইউপির ২ সদস্য নুরুল হাকিম ও আবদুল জাব্বার গত ২৮ জুন ঘটনাটি নিয়ে সালিশী বৈঠকের আহ্বান করেন। এ সময় নির্যাতিত ছাত্রী মহিউদ্দিনকে তার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ব্যাপারে দায়ী করে। কিন্তু প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে ওই দরিদ্র ছাত্রীর কথা কেউ আমলে না নিয়ে জিনের কারণে এ অবস্থা হয়েছে বলে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়।

অন্তঃসত্ত্বা হওয়া ছাত্রীর বাবা আনিছ ও মা রাজিয়া বেগম জানান, আমার মেয়ে ওই শিক্ষিকার ঘরে থাকা অবস্থায় মহিউদ্দীন আমার মেয়েকে জোরপূর্বক মেলামেশার কারণে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। তবে সে ভয়ে আমাদের ঘটনাটি জানায়নি। আমরা এ ঘটনাটির জন্য আইনের আশ্রয় নেব।

গন্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আলী হায়দার চৌধুরী আসিফ বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। জিনের কারণে ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কথা বিশ্বাস করি না। এ ঘটনাটি সঠিকভাবে তদন্তপূর্বক প্রকৃত দোষীকে খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি প্রদানের দাবি জানাচ্ছি প্রশাসনের প্রতি।

এ ব্যাপারে বাঁশখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।